Marguerite Alibert scandal

টাকার জন্য একাধিক সম্পর্ক, স্বামীকে খুন! ধনী হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে ভয়ঙ্কর পথ বেছে নেন সুন্দরী যৌনকর্মী মার্গারেট

ধনী হওয়ার তাগিদে জীবনকে বাঁকা পথে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মার্গারেট। একের পর এক সম্পর্ক, টাকা হাতানো, একাধিক বিয়ে এবং খুন— এত কিছু দিয়ে ভরা মার্গারেটের জীবন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৩:৫৩
Share:
০১ ২০

মার্গারেট অ্যালিব্যার্ট। প্যারিসের অতি নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই উচ্চবিত্তের জীবন কাটানোর ইচ্ছে ছিল, কাটালেনও বটে। কিন্তু সঙ্গে জমে উঠল একের পর এক ভুলের পাহাড়!

০২ ২০

মার্গারেট জীবন কাটিয়েছেন কখনও মার্গারিট লরেন্ট নামে, কখনও প্রিন্সেস ফাহমি পরিচয়ে, আবার কখনও ম্যাগি মেলার নামে। এখানেই শেষ নয়! তিনি আরও একাধিক ছদ্মনাম জুড়েছিলেন নিজের সঙ্গে।

Advertisement
০৩ ২০

ধনী হওয়ার তাগিদে জীবনকে বাঁকা পথে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মার্গারেট । একের পর এক সম্পর্ক, টাকা হাতানো, একাধিক বিয়ে এবং খুন— এত কিছু দিয়ে ভরা ছিল তাঁর জীবন।

০৪ ২০

১৮৯০ সালের ৯ ডিসেম্বর, প্যারিসের এক অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় মার্গারেটের। সে সময় ওই শহরে ধনী-দরিদ্রের ফারাক শুধু টাকাপয়সা দিয়েই করা হত না। পোশাক, জামাকাপড়, চালচলন-সহ সব কিছুতেই বিস্তর পার্থক্য ছিল।

০৫ ২০

মার্গারেটের মা গৃহবধূ ছিলেন, বাবা এক ধনী পরিবারে ঘোড়া চালানোর কাজ করতেন। কোনওরকমে দিন চলত তাদের। অভাব থাকা সত্ত্বেও দুই সন্তান নিয়ে সুখ-দুঃখে দিন কাটত অ্যালিব্যার্ট পরিবারের।

০৬ ২০

কিন্তু একটা দুর্ঘটনা উথালপাতাল করে দেয় অ্যালিব্যার্ট পরিবারকে। একদিন মার্গারেট তাঁর ভাইকে নিয়ে দোকানে গিয়েছিলেন। হঠাৎ একটি ট্রাক এসে ভাইকে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই চিরকালের মতো তাঁকে হারিয়ে ফেলেন মার্গারেট।

০৭ ২০

সেটি মার্গারেটের জীবনে প্রথম বড় ধাক্কা। বাড়ির সকলে ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য তাঁকেই দোষারোপ করতে থাকেন। বাড়িতেও আর ঠাঁই হয় না তাঁর, পাঠিয়ে দেওয়া হয় ক্যাথলিক আবাসিক স্কুলে।

০৮ ২০

১৫ বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা, তাঁর সুন্দর মুখশ্রী সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করবে যে কোনও পুরুষের। আবাসিক স্কুলে থাকাকালীন তাঁকে একটি বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজে পাঠানো শুরু করেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ। কাজ থেকে ফিরে তাঁর উপর অত্যাচার চলত বলেও শোনা যায়।

০৯ ২০

কড়া নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন মার্গারেট। অতঃপর স্কুলের নানেরা মার্গারেটকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। বাড়ি ফিরে এসেও লাঞ্ছনা, অত্যাচার ছাড়া কিছুই পাননি মার্গারেট। কোনও মতে সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু আর তো চাকরি করেন না, সন্তানের দেখভাল করবেন কী ভাবে!

১০ ২০

এমন পরিস্থিতিতেও মার্গারেট নিজের স্বপ্নের কথা ভুলে যাননি। উচ্চবিত্তের জীবন কাটানো যায় কী উপায়ে সেই ফন্দিই আঁটতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত জীবনকে একেবারে অন্য দিকে চালনা করেন।

১১ ২০

পড়াশোনা তেমন ভাবে করেননি, বাড়ির অর্থনৈতিক হাল খারাপ। তাই যৌনকর্মীর পেশা বেছে নেন মার্গারেট। সেই সময় প্যারিসের যৌনপল্লিতে ধনী পরিবারের পুরুষদের নিত্য যাতায়াত ছিল। মার্গারেট সেই সুযোগকেই কাজে লাগান।

১২ ২০

যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতে করতেই নজরে পড়েন মাদাম ডেনার্টের। কিছু দিন মাদামের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করার পর তাঁর পরের শিকার হন আন্দ্রে মেলার। তত দিনে কথার জালে প্রেমের ফাঁদ ভালই পাততে শিখে গিয়েছিলেন মার্গারেট।

১৩ ২০

মেলার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করতে থাকেন মার্গারেট। মেলার ছিলেন প্যারিসের বিখ্যাত মদ ব্যবসায়ী। তবে তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার পরেও মার্গারেটকে বিয়ে করেন মেলার। যদিও এটি বৈধ বিয়ে ছিল না। সামাজিক ভাবে বিয়ে না করে শহরের একটি ফ্ল্যাটে দু’জনে একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। কিন্ত সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। যদিও ওই ক’দিনের মধ্যেই মোটা টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন মার্গারেট।

১৪ ২০

মেলার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই সম্পর্কে জড়ান ব্রিটিশ রাজপরিবারের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স এডওয়ার্ডের সঙ্গে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য এডওয়ার্ড সেই সময় ফ্রান্সে ছিলেন। চিঠি আদানপ্রদান করেই প্রেম করতেন দু’জনে।

১৫ ২০

কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই এডওয়ার্ডের মন যায় অন্য মহিলার উপর, আর মার্গারেটের সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানেন তিনি। এই ঘটনার পর, এডওয়ার্ডের দেওয়া সমস্ত চিঠির কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন মার্গারেট। অবশেষে, মোটা টাকার বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখতে রাজি হন।

১৬ ২০

মার্গারেটের পরের শিকার হন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা চার্লস লরেন্ট। তবে এ বার একেবারে ভিন্ন পন্থা। মার্গারেট সোজা বিয়ে করে নেন চার্লসকে। এটিই ছিল মার্গারেটের প্রথম বৈধ বিবাহ। কিন্তু ছ’মাস পর এ সম্পর্কও ভেঙে যায়। চার্লসের থেকে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষতিপূরণও নেন মার্গারেট।

১৭ ২০

সব ক’টি সম্পর্কেই নানা ছদ্মনামে থাকতেন তিনি। একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে বেশ ভাল টাকা জমিয়ে ফেলেছিলেন। বাড়িও কিনেছিলেন। বিত্তশালী জীবন কাটাতে শুরু করেন। কিন্তু এত খরচ সামাল দেবেন কী ভাবে! তাই ফের একটি সম্পর্কের দিকে পা দেন।

১৮ ২০

ক্যাথলিক থেকে ইসলাম ধর্ম নেন। বিয়ে করেন মিশরের ধনী ব্যবসায়ী আলি কামেল ফাহমি বে-কে। তবে এটি তাঁর জীবনে এত দিনে করে আসা সব ক’টি কাজের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। মার্গারেট ভেবেছিলেন আলি অবিবাহিত। কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারেন একাধিক স্ত্রী রয়েছে আলির।

১৯ ২০

এই পরিস্থিতি দেখে মার্গারেট বিবাহবিচ্ছেদ চাইলে তা নাকচ করে দেন আলি। দিনের পর দিন সতীন নিয়ে সংসার করতে হয় মার্গারেটকে। স্বামীর ভালবাসা তো দূরের কথা, জুটত শুধু অত্যাচার। কী ভাবে কী করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। স্বাধীন ভাবে জীবন কাটিয়ে আসা মার্গারেট যে বন্দি হয়ে গিয়েছেন, তা ভাল ভাবেই উপলব্ধি করতে পারছিলেন।

২০ ২০

স্বামীর থেকে মুক্তি পেতে শেষমেশ বন্দুক হাতে তুলে নেন। হত্যা করেন আলিকে। ঘটনায় গ্রেফতারও হন মার্গারেট। কিন্তু নারী হিসাবে তিনি কতটা অসহায় হয়ে তবেই এমন কাজ করেছেন তা জানিয়ে ছাড়া পেয়ে যান। ফিরে যান নিজের স্বাধীন জীবনে। একের পর এক ভুল করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন মার্গারেট। শেষজীবন অতি সাধারণ ভাবে একলা কেটেছিল তাঁর। সব ক’টি সম্পর্কই শুধু টাকা নেওয়ার জন্য হয়েছিল, না কি কারও সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তা আর জানা যায়নি। সেই অনুভূতি মার্গারেট কখনওই প্রকাশ্যে আনেননি।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement