Anant Ambani's Vantara

বিশ্বদরবারে জয়জয়কার অনন্তের! ‘বনতারা’য় বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে ব্রতী অম্বানী-পুত্র পেলেন গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড

অনন্ত অম্বানীই এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি যিনি অনন্য এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত এই পুরস্কার পেলেন। তিনি ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার’-এর কনিষ্ঠতম প্রাপকও বটে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৩৩
Share:
০১ ২১

বিশ্বদরবারে জয়জয়কার অনন্ত অম্বানী এবং তাঁর স্বপ্নের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র বনতারার। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্তকে মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার’ দিল ‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’।

০২ ২১

অনন্তই এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি যিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত এবং অনন্য এই পুরস্কার পেলেন। তিনি ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার’-এর কনিষ্ঠতম প্রাপকও বটে।

Advertisement
০৩ ২১

‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’ হল ‘আমেরিকান হিউম্যান সোসাইটি’র আন্তর্জাতিক শাখা, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি মানবিক সংস্থা যা প্রাণীদের কল্যাণের মান যাচাই করে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রাণী কল্যাণে ব্রতী সংস্থার তকমাও পেয়েছে সেটি।

০৪ ২১

প্রতি বছর বিশ্ব জুড়ে ১০০ কোটিরও বেশি প্রাণীর কল্যাণের মান যাচাই করে সংস্থাটি। বহু দিন ধরে প্রাণীদের উদ্ধার করা, যত্ন নেওয়া এবং সুরক্ষা প্রদানের দিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’।

০৫ ২১

১৮৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আমেরিকান হিউম্যান সোসাইটি’ প্রায় ১৫০ বছর ধরে প্রাণীকল্যাণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। ২০১০ সালে রবিন গ্যাঞ্জার্ট সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটেছে। প্রাণীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

০৬ ২১

সেই ‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’ই এ বার বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ এবং প্রাণীকল্যাণে ব্রতী থাকার জন্য বনতারার প্রতিষ্ঠাতা অনন্তকে ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে সম্মানিত করল।

০৭ ২১

বন্যপ্রাণী সুরক্ষা এবং প্রাণীকল্যাণে উদ্যোগী মানুষদের উপস্থিতিতে আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসির আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অনন্তের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

০৮ ২১

প্রাণীকল্যাণ ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বীকৃতি হিসাবে বিবেচিত হয় ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার’।

০৯ ২১

প্রাণীকল্যাণ কর্মসূচি, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ উদ্যোগ এবং বিশ্বব্যাপী ঝুঁকির মুখে থাকা প্রজাতিগুলিকে রক্ষায় আপ্রাণ প্রচেষ্টার জন্য অনন্তের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এই অনন্য সম্মান তাঁদেরই দেওয়া হয়, যাঁরা তাঁদের সারা জীবন বন্যপ্রাণী এবং মানুষ— উভয়ের হিতে কাজ করার জন্য উৎসর্গ করেছেন।

১০ ২১

গুজরাতের জামনগরে অবস্থিত বনতারা অভয়ারণ্য দু’হাজারেরও বেশি প্রজাতির প্রাণীর আশ্রয়স্থল। দেড় লক্ষেরও বেশি প্রাণী রয়েছে বনতারায়, যার মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করা এবং বিপন্ন প্রাণীরাও রয়েছে।

১১ ২১

বনতারার বন্যপ্রাণী হাসপাতাল এবং পশুচিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে প্রাণীদের শুশ্রূষার জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আইসিইউ-এর ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বন্যপ্রাণীদের জন্য অ্যানাস্থেশিয়া, কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, এন্ডোস্কোপি, দন্ত্যচিকিৎসার ব্যবস্থা। এই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন মুকেশ-পুত্র অনন্ত। তিনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে পুরোটা দেখাশোনা করেন।

১২ ২১

বনতারার বিশেষত্ব হল এর দ্বৈত কাঠামো— এক দিকে এক্স সিটু সুরক্ষা অর্থাৎ, প্রাণীকে তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে বাইরে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, পুনর্বাসন দেওয়া এবং ইন সিটু, যেখানে ওই প্রাণীদের আবার তাদের স্বাভাবিক পরিবেশে ফেরানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এই দুই প্রক্রিয়াকে একত্রে বাস্তবায়িত করতে পৃথিবীর খুব কম সংস্থাই পারে। কিন্তু বনতারা পেরেছে।

১৩ ২১

এর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পশুচিকিৎসা কাঠামো, প্রজাতি বিশেষে আচরণজ্ঞান, উৎকৃষ্ট পরিবেশ এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ব্যবস্থা রয়েছে বনতারায়। এবং এ সবই বনতারাকে বিশ্বের অন্যতম অগ্রগণ্য সংরক্ষণ মডেলে পরিণত করেছে।

১৪ ২১

বনতারা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দূরদর্শী চিন্তাভাবনা এবং প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগের জন্যই অনন্তকে ওই পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’। প্রাণীকল্যাণের জন্য অনন্তের চেষ্টা, আবেগ এবং অটল নিষ্ঠাকেও কুর্নিশ জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে।

১৫ ২১

অনন্তের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ‘গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট রবিন গ্যাঞ্জার্ট। তখন তাঁর বক্তব্যই স্পষ্ট করে দেয় কেন এই সম্মান এত বিশেষ। গ্যাঞ্জার্টের কথায়, ‘‘বনতারার এই সম্মান অর্জন কেবল প্রাণীদের যত্ন করার জন্য নয়, বরং প্রতিটি প্রাণীকে যথাযথ মর্যাদা, নিরাময় এবং আশা প্রদানের জন্য দেওয়া হয়েছে। এ এক গভীর নিষ্ঠার প্রতিফলন। এই দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই মহান।’’

১৬ ২১

গ্যানজ়ার্ট আরও বলেন, ‘‘প্রাণী সংরক্ষণ এবং কল্যাণের ক্ষেত্রে বনতারা বদ্ধপরিকর এবং অসাধারণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি একটি ‘হিলিং স্যাংচুয়ারি।’ বিপন্ন বন্যপ্রাণীকে কেবল উদ্ধার করার থেকেও অনেক বেশি কিছু করে সংরক্ষণকেন্দ্রটি।’’

১৭ ২১

অন্য দিকে পুরস্কার গ্রহণের সময় অনন্তের নিজের বক্তব্যেই প্রকাশ পায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির মূলনীতি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশেষ সম্মান পাওয়ার পর অনন্ত বলেন, ‘‘আমি এই সম্মানের জন্য গ্লোবাল হিউম্যান সোসাইটিকে ধন্যবাদ জানাই। এ সম্মান আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমাদের চিরন্তন দর্শন— ‘সর্বভূত হিত’, অর্থাৎ, সকল প্রাণীর কল্যাণ নিশ্চিত করা।’’

১৮ ২১

অনন্ত আরও বলেন, ‘‘প্রাণীরা আমাদের ভারসাম্য, নম্রতা এবং বিশ্বাস শেখায়। বনতারা শুরুর উদ্দেশ্য সমস্ত প্রাণীকে মর্যাদা দেওয়া, যত্ন করা এবং সেবার চেতনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। সংরক্ষণ যে কেবল আগামী দিনের জন্য প্রয়োজনীয় তেমনটা নয়। এটি আমার কাছে ধর্মপালনের মতো, যা আমাদের আজই করতে হবে।’’ অনন্তের কথাতেই স্পষ্ট যে, প্রাণী সংরক্ষণ তাঁর কাছে কোনও প্রকল্প নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ব। ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পরিবেশবোধের সঙ্গে গভীর ভাবে মিশে আছে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।

১৯ ২১

অনন্তকে পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করার জন্য যে আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ার্ভেশন অফ নেচার) স্পিসিস সারভাইভাল কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জন পল রডরিগেজ়, কলসাল বায়োসায়েন্সেসের প্রধান প্রাণীকর্তা ম্যাট জেমস, নক্সভিল চিড়িয়াখানার প্রেসিডেন্ট তথা সিইও উইলিয়াম স্ট্রিট, কলম্বাস চিড়িয়াখানার প্রসিডেন্ট তথা সিইও টমাস শ্মিড, ব্রুকফিল্ড চিড়িয়াখানা শিকাগোর প্রসিডেন্ট তথা সিইও মাইকেল অ্যাডকেসন এবং সমুদ্রজীববিজ্ঞানী ক্যাথলিন ডুডজিনস্কি।

২০ ২১

এ ছাড়াও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বেশ কয়েক জন বিখ্যাত সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ। এঁদের মধ্যে অন্যতম নীলম খায়ের, ভিবি প্রকাশ এবং কেকে শর্মা। এঁদের তিন জনই ভারতে বন্যপ্রাণী গবেষণা এবং সংরক্ষণের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এঁরা সকলেই কুর্নিশ জানিয়েছেন অনন্তের প্রচেষ্টাকে। বনতারাকে আগামী দিনে সংরক্ষণ গবেষণার ‘রেফারেন্স মডেল’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন তাঁরা।

২১ ২১

অনন্তের আগে ‘গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপকদের তালিকায় রয়েছে শার্লি ম্যাকলেইন, জন ওয়েন এবং বেটি হোয়াইটের মতো হলিউড কিংবদন্তিদের নাম। জন এফ কেনেডি এবং বিল ক্লিনটনের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এই পুরস্কার পেয়েছেন। সেই তালিকাতেই নাম জুড়ল তরুণ প্রজন্মের অগ্রদূত অনন্তের। ভারতকে বিশ্বদরবারে বিশেষ জায়গাও করে দিল তাঁর বনতারা।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement