Gold Mine in Jabalpur

জবলপুরে জ্যাকপট! আরও এক রাজ্যের মাটির গভীরে লুকিয়ে ‘কুবেরের ধন’? গর্ত খুঁড়লেই উঠে আসবে টন টন সোনা?

ওড়িশার পর এ বার মধ্যপ্রদেশ। আরও একটি রাজ্যের মাটির নীচে সোনার হদিস পেল ‘জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ বা জিএসআই। ‘হলুদ ধাতু’র খোঁজ মেলায় বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:১৩
Share:
০১ ১৭

বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। তার মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো শাটডাউনের কবলে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকদের দাবি, খুব দ্রুত মন্দা এবং মারাত্মক মুদ্রাস্ফীতি গ্রাস করতে পারে আমেরিকার অর্থনীতিকে। সেই আঁচের ছ্যাঁকা ভারতের গায়ে লাগার আশঙ্কা ষোলো আনা। আর তাই সুরক্ষিত বিনিয়োগের কথা মাথায় রেখে সোনা কেনা শুরু করেছেন লগ্নিকারীদের একাংশ। ফলে প্রতি দিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ‘হলুদ ধাতু’র দাম।

০২ ১৭

এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই লুকিয়ে থাকা ‘কুবেরের ধন’-এর হদিস পেল কেন্দ্রীয় সংস্থা। মানচিত্র অনুযায়ী মধ্যপ্রদেশকে ভারতের হৃৎপিণ্ড বললে অত্যুক্তি হবে না। সম্প্রতি সেখানকার জবলপুরের মাটিতে সোনার অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে ‘ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ’ বা জিএসআই (জিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া)। এর ফলে আগামী দিনে বিজেপিশাসিত রাজ্যটির তো বটেই, দেশের অর্থনীতির পালেও হাওয়া লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement
০৩ ১৭

জবলপুরের মাটির গভীরে সোনার উপস্থিতি নিয়ে কিছু দিন আগেই গণমাধ্যমে মুখ খোলেন জিএসআইয়ের ডিরেক্টর-জেনারেল (ডিজি) অসিত সাহা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বেলা ও বিনাইকা এবং তার আশপাশের গ্রামে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধান চালাচ্ছিলাম। ওখানকার মাটিতে সোনার উপস্থিতি রয়েছে।’’ এ বিষয়ে আরও অনুসন্ধান চলছে বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।

০৪ ১৭

মধ্যপ্রদেশের জবলপুর খনিজ সমৃদ্ধ এলাকা। বিশ্লেষকদের একাংশের অনুমান, ওখানকার স্বর্ণখনিতে মজুত আছে ৩.৩ লক্ষ টন ‘হলুদ ধাতু’। তবে তা মাটির উপরে তোলা মোটেই সহজ কাজ নয়। এলাকাবাসীদের দাবি, বর্তমানে খনির গভীরতা পরিমাপ করছে জিএসআই। এর জন্য বিশেষ কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে সেখানে হাজির হয়েছে তারা। স্বর্ণখনির জন্য মোট ১০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন হতে পারে, জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।

০৫ ১৭

জিএসআইয়ের এ-হেন উদ্যোগ অবশ্য সমাজমাধ্যমের কল্যাণে ইতিমধ্যেই সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্থাটির কর্মী ও অফিসারদের যন্ত্রপাতি নিয়ে স্বর্ণখনির অনুসন্ধানের ছবি ফেসবুক ও এক্স হ্যান্ডলে (আগে নাম ছিল টুইটার) ভাইরাল করেছেন নেটাগরিকদের একাংশ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, গত কয়েক মাস ধরেই ওই এলাকায় খনিজ সম্পদের খোঁজ চালাচ্ছিল ‘ভারতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ’। কিন্তু শেষ দু’মাস ধরে তাদের তৎপরতা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, দাবি এলাকাবাসীর।

০৬ ১৭

জবলপুরের মাটিতে সোনার অস্তিত্ব মেলার পরও সাবধানি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন জিএসআইয়ের ডিজি অসিত সাহা। তিনি বলেন, ‘‘এখানে বিপুল পরিমাণে সোনা পাওয়ার আশা খুবই প্রবল। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধান প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই এখনই স্বর্ণখনি অবিষ্কার হয়ে গিয়েছে, এ কথা বলাটা ঠিক হবে না।’’ তবে গোটা বিষয়টি আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে পরিষ্কার হতে যাবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

০৭ ১৭

সূত্রের খবর, বর্তমানে জবলপুরের ওই এলাকায় খনন এবং রাসায়নিক বিশ্লেষণের কাজ করছে জিএসআই। এর মাধ্যমে মাটির ঠিক কোন অংশে কতটা সোনা মজুত রয়েছে, তা নিশ্চিত করবে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা। এর পর খনির পরিকল্পনা করা হবে। সব শেষে হলুদ ধাতু উত্তোলন করবে সরকার।

০৮ ১৭

খনিজ সমৃদ্ধ মধ্যপ্রদেশে দিন-রাত এক করে ৪০টি নতুন আকরিকের অনুসন্ধান চালাচ্ছে জিয়োলজিক্যাল সার্ভে। বিজেপিশাসিত রাজ্যটির জবলপুর এবং কাটনি জেলায় রয়েছে লোহা এবং তামার খনি। এ ছাড়া বালাঘাটে পাওয়া যায় ম্যাঙ্গানিজ়। পাশাপাশি চুনাপাথর এবং মার্বেলও প্রচুর পরিমাণে মজুত রয়েছে ওই এলাকায়।

০৯ ১৭

ভারতের সর্ববৃহৎ স্বর্ণখনি রয়েছে কর্নাটকের হুট্টিতে। এ ছাড়া রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডের মাটির গভীর থেকে ‘হলুদ ধাতু’ উত্তোলন করে সরকার। গত বছর থেকে নতুন নতুন খনিজের অনুসন্ধানে জোর দিয়েছে বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশ। এতে বিনিয়োগ যে রাজ্যের অর্থনীতিকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করবে, তা বলাই বাহুল্য।

১০ ১৭

চলতি বছরের এপ্রিলে সোনা মজুত নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেন ওড়িশার খনিমন্ত্রী বিভূতি জেনা। তাঁর দাবি, সুন্দরগড়, নবরঙ্গপুর, কেন্দুঝর এবং দেওগড়ের মতো জেলাগুলিতে মাটির নীচে রয়েছে বিপুল পরিমাণে ‘হলুদ ধাতু’। এই এলাকাগুলির মধ্যে দেওগড় জেলায় আদাসা-রামপল্লিতে সবচেয়ে বেশি সোনার সন্ধান পাওয়ার ইঙ্গিত দেন তিনি। তাঁর ওই মন্তব্যের পর হইচই পড়ে যায়।

১১ ১৭

এ ছাড়া ওড়িশার মালকানগিরি, সম্বলপুরের মতো জেলায় খোঁজ চালাচ্ছে সরকার। সূত্রের খবর, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেখানে ‘হলুদ ধাতু’র উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছে। এ প্রসঙ্গে বিধানসভায় খনিমন্ত্রী বিভূতি জেনা বলেন, ‘‘জশিপুর, সুরিয়াগুড়া, রুয়ানসি, ইদেলকুচা, মারেডিহি, সুলেইপাত এবং বাদামপাহাড়ের মতো এলাকাতেও স্বর্ণখনির হদিস মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। হলদু ধাতু থাকতে পারে ময়ূরভঞ্জ জেলাতেও।’’

১২ ১৭

বাংলার পড়শি রাজ্যে স্বর্ণখনির অনুসন্ধানে জিএসআইয়ের সঙ্গে রয়েছে সেখানকার রাজ্য সরকারি সংস্থা ‘ওড়িশা মাইনিং কর্পোরেশন’। বিজেপিশাসিত রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি জানিয়েছেন, ‘হলুদ ধাতু’র উত্তোলন শুরু হলে খনির ব্লক নিলাম করবে সরকার। তার প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই নিয়ে রেখেছে প্রশাসন।

১৩ ১৭

ভারতে সোনার ব্যবহার মূলত হয়ে থাকে গয়নার জন্য। এ ছাড়া রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআইয়ের হাতে রয়েছে বিরাট একটি স্বর্ণভান্ডার। দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধিতে এর ভূমিকা অপরিসীম। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত কয়েক বছর ধরেই ‘হলুদ ধাতু’র মজুত বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। ২০২৫ সালের শেষেও তা অব্যাহত রয়েছে বলে খবর সূত্রের।

১৪ ১৭

গত ফেব্রুয়ারিতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সোনা মজুত নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তিনি বলেন, ‘‘আরবিআই তাদের পোর্টফোলিয়োতে ভারসাম্য রাখতে সোনা মজুত করছে। দেশের বিদেশি মুদ্রাভান্ডারে কিছু বৈচিত্র থাকার প্রয়োজন রয়েছে। সেই কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক।’

১৫ ১৭

‘ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল’-এর দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের অগস্ট পর্যন্ত ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে মজুত থাকা সোনার পরিমাণ ছিল ৮৮৮ টন, বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নিরিখে যা নবম। সেপ্টেম্বরে এই অঙ্ক আরও কিছুটা বাড়িয়েছে আরবিআই। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের স্বর্ণভান্ডারের বাজারমূল্য ২২৩.৮ কোটি ডলার বেড়ে ৯৫০১.৭০ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট তালিকাটির এক নম্বরে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

১৬ ১৭

অন্য দিকে ন্যাশনাল মিনারেল ইনভেন্টরি (এনএমআই) বা জাতীয় খনিজ তালিকার ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আনুমানিক স্বর্ণ আকরিক মজুত আছে ৫০১৮.৪ লক্ষ টন। রাজ্যভিত্তিক হিসাবে সর্বাধিক ‘হলুদ ধাতু’র অস্তিত্ব রয়েছে বিহারের মাটিতে, যেটা প্রায় ৪৪ শতাংশ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান দখল করে রেখেছে রাজস্থান এবং কর্নাটক। এই পরিমাণ যথাক্রমে ২৫ শতাংশ এবং ২১ শতাংশ।

১৭ ১৭

এ বছরের অক্টোবরের পয়লা তারিখ থেকে আমেরিকায় শাটডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেড়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা। ফলে বিশ্ববাজারে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে সোনার দাম। ৩ অক্টোবর বাজার খুলতেই একধাক্কায় ২,৯৫০ টাকা চড়ে যায় হলুদ ধাতুর দর। ফলে ২৪ ক্যারেটের ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ১.২ লক্ষ টাকায় পৌঁছে গিয়েছে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement