হরিয়ানার মানুষের কাছে তিনি ইউটিউবার। বাধ্য পুত্রের মতো সকাল-বিকাল বাবার ব্যবসাও সামলাতেন। অন্তরালে তিনিই ছিলেন প্রতিবেশী দেশের চর! বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতের গোপন তথ্য তুলে দিচ্ছিলেন পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাতে।
কথা হচ্ছে হরিয়ানার ইউটিউবার ওয়াসিম আক্রমকে নিয়ে। পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে হরিয়ানার পলওয়াল জেলার বাসিন্দা ওয়াসিমকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ওয়াসিম পলওয়াল জেলার কোট গ্রামের বাসিন্দা। ইউটিউবে মেওয়াতের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সংক্রান্ত তথ্যমূলক ভিডিয়ো পোস্ট করতেন তিনি। পাশাপাশি, বাবার ওষুধের ব্যবসাও সামলাতেন।
সপ্তাহ দুয়েক আগে পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে তৌফিক নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, তৌফিককে জেরার সময়ই ওয়াসিমের নাম উঠে আসে। তদন্তে নামে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত তিন বছর ধরে পাক গুপ্তচরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ওয়াসিমের। পাক গুপ্তচরদের নাকি সিমকার্ড সরবরাহ করতেন তিনি। পাচার করতেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও।
পুলিশ সুপার বরুণ সিঙ্গলা জানিয়েছেন, তৌফিক এবং ওয়াসিম দু’জনেরই যোগাযোগ ছিল আইএসআই আধিকারিক এবং পাকিস্তানের হাই কমিশনের সঙ্গে।
অভিযোগ, নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনের হয়েও চরবৃত্তি করতেন ওয়াসিম। হোয়াট্সঅ্যাপ এবং ইন্টারনেট কলের মাধ্যমে দু’পক্ষের যোগাযোগ হত।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ২০২১ সালে পাকিস্তানের ভিসার আবেদন করেছিলেন ওয়াসিম। কিন্তু তাঁর পরিবার ভিসা পায়নি। সেই সময়ই দানিশ নামে এক পাকিস্তানি এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ওয়াসিমের।
এর পর নিয়মিত দিল্লি যাতায়াত শুরু করেন ওয়াসিম। দিল্লি গিয়ে প্রায়ই তিনি আইএসআই চরদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন বলে অভিযোগ। সেই ওয়াসিমকেই এ বার গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারির পর ওয়াসিমের ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেই ফোন থেকে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। বেশ কিছু তথ্য মুছেও ফেলা হয়েছে। সেই তথ্যই এখন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
যদিও ওয়াসিমের পরিবার কোনও চরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত থাকার বা পাকিস্তান ভ্রমণের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
তবে ২০২২ সাল থেকে পাকিস্তানে সংবেদনশীল তথ্য পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন অন্য অভিযুক্ত তৌফিক। উভয়ের বিরুদ্ধেই রাষ্ট্রদ্রোহ এবং জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আসরে নেমেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারাও।
তৌফিক এবং ওয়াসিম— দু’জনেই বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। এই মামলায় আরও একাধিক জনের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
তবে এই প্রথম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আইএসআইয়ের হয়ে চরবৃত্তির অভিযোগে আরও কয়েক জন ভারতীয় ইউটিউবারকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে হরিয়ানারই ভ্লগার তথা ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জ্যোতির বিরুদ্ধে পাক চরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অভিযোগ ছিল। একাধিক বার পাকিস্তান সফরেও গিয়েছিলেন তিনি। তখনই তিনি ভারতের সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে পাচার করেছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।
জুন মাসেও একই রকম অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন পঞ্জাবের রূপনগর জেলার বাসিন্দা জসবীর সিংহ। জসবীরও ইউটিউবার। তাঁর চ্যানেলের নাম ছিল ‘জানমহল’। ইউটিউবে ১১ লক্ষেরও বেশি অনুরাগী ছিল তাঁর।
মূলত ভ্রমণ এবং রান্না সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো বানাতেন জসবীর। অভিযোগ, ওই ভিডিয়োর আড়ালে আইএসআইকে কৌশলগত তথ্য পাচার করতেন। তাঁর সঙ্গে জ্যোতির যোগাযোগ ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে।
ওয়াসিমের গ্রেফতারির ঘটনা ইতিমধ্যেই দেশ জু়ড়ে হইচই ফেলেছে। পাশাপাশি ভারতের অভ্যন্তরে সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ এবং তা পাচারের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সমাজমাধ্যমের ব্যবহার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞেরা।