প্রতি বছর ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথি থেকে শুরু হয় পিতৃপক্ষ। চলে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত। এই ১৫ দিন ধরে পালিত হয় পিতৃপক্ষ। এর পর শুরু হয় দেবীপক্ষ।
এই বছর সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে পিতৃপক্ষ। কথিত আছে, এই সময়কালে পূর্বপুরুষেরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের হাত থেকে জলগ্রহণের জন্য মর্ত্যে নেমে আসেন।
যে কোনও প্রেতকর্ম করার জন্য পিতৃপক্ষ উপযুক্ত। যে সকল মানুষ তাঁদের নিকটাত্মীয়ের চলে যাওয়ার পর তাঁদের শ্রাদ্ধশান্তি করতে পারেন না, তাঁরা এই সময় প্রয়াত মানুষদের আত্মার শান্তির উদ্দেশে শ্রাদ্ধ পালন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর সঠিক তিথি মেনে শ্রাদ্ধকর্ম করতে হবে।
হিন্দু ধর্মে পিতৃপক্ষের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। এই সময় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করলে তাঁদের আত্মা শান্তি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এ ছাড়াও, তাঁদের উদ্দেশে এই ১৫ দিন সন্ধ্যাবেলা বাড়ির নানা স্থানে প্রদীপ জ্বালালেও বিশেষ ফলপ্রাপ্তি ঘটে।
যে সকল মানুষের কোষ্ঠীতে পিতৃদোষ বর্তমান, তাঁদের এই ১৫ দিন সচেতন থাকার নির্দেশ দিচ্ছে জ্যোতিষশাস্ত্র। পিতৃদোষের প্রভাবে জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। সমস্যা পিছু ছাড়তে চায় না। পিতৃদোষ না থাকলেও, পূর্বপুরুষেরা যদি কোনও কারণে আমাদের উপর রেগে যান, তা হলেও নানা ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। সেই কারণে এই সময় তর্পণ করা উচিত।
পিতৃপক্ষের কিছু না কিছু প্রভাব সকল রাশির উপরই পড়বে। কারও জীবনে এই সময়কাল আশীর্বাদ রূপে নেমে এলেও, বহু মানুষকেই নানা শাপের ভাগীদার হতে হবে। দেখে নিন রাশি মিলিয়ে কে কেমন ফল পাবেন।
মেষ- রাশিচক্রের প্রথম রাশি মেষকে এই সময় ব্যক্তিগত জীবনে নানা অযাচিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই মাথা গরম করা যাবে না। সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন কিছু ভাবতে হবে, পুরনো ভাবধারা নিয়ে এগিয়ো চললে হবে না। এই ১৫ দিন নিয়মিত কাকদের খাবার দিতে হবে।
বৃষ- বৃষ রাশির ব্যক্তিদের নিজের মনের কথার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। মন যদি কোনও কিছুকে ভাল বলে, তা হলে সেই ব্যাপারে বেশি না ভেবে এগিয়ে যেতে হবে। বেশি ভাবনা কাজের ক্ষতি করবে। পূর্বপুরুষেরা এই সময় আপনার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চাইতে পারেন, পিতৃপক্ষের ১৫ দিন তাই একটু নিয়মমাফিক জীবন কাটাতে পারলে ভাল হয়।
মিথুন- কাজের ব্যাপারে গড়িমসি করার স্বভাব মিথুন রাশির জাতক-জাতিকাদের ছাড়তে হবে। হাতে থাকা কাজ ফেলে রাখলে চলবে না। তা হলে পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদও লাভ করবেন না। তাঁদের আশীর্বাদ লাভের জন্য কিছু পুজো-অর্চনা করতে পারলে ভাল হয়।
কর্কট- আবেগতাড়িত কর্কটের জন্য পিতৃপক্ষের ১৫ দিন সমস্যাপূর্ণ হতে পারে। এই রাশির ব্যক্তিদের আবেগের তারতম্য আগের থেকে আরও বৃদ্ধি পাবে, কোনও কাজেই মন বসবে না। সম্পর্কে টালমাটাল সময় চলবে। যৌক্তিকতার ধার ধারবেন না এঁরা। মনকে শান্ত করতে নিয়মিত গরুকে খাবার দিতে পারলে ভাল হয়।
সিংহ- সিংহ রাশির জন্য পিতৃপক্ষের ১৫ দিন আশীর্বাদ হয়ে নেমে আসবে। পেশাক্ষেত্রে সফলতার স্বাদ পাবেন। কাজের জায়গায় কোনও রকম বাধার সম্মুখীন হতে হবে। পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ সর্বদা আপনার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু কোনও বড় সিদ্ধান্ত এই সময় নেওয়া ঠিক হবে না। ভাল ফল পেতে নিয়মিত কাকদের খাবার খাওয়ান।
কন্যা- পেশাক্ষেত্রে কন্যা রাশির ব্যক্তিদের নানা সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। শারীরিক দিক থেকেও নানা জটিলতায় ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। ভাগ্যের দুর্দশা কাটাতে ব্রাহ্মণ দম্পতিকে খাদ্যদ্রব্য ও পোশাক দান করতে পারলে খুব ভাল হয়।
তুলা- তুলা রাশির জাতক-জাতিকাদের ভেবেচিন্তে কথা বলতে হবে। ভুল জায়গায় বেফাঁস কথা বলার ফলে সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারেন। বিপরীতে থাকা মানুষটির মনে কী চলছে সেটা বুঝে সকলের সঙ্গে মিশতে পারলে ভাল হয়। বাড়তি পরিশ্রম করতে হতে পারে। সুফল পেতে এই ১৫ দিন সন্ধ্যাবেলা অশ্বত্থ গাছের তলায় প্রদীপ জ্বালাতে পারলে ভাল হয়।
বৃশ্চিক- বৃশ্চিক রাশির ব্যক্তিদের মাথা ঠান্ডা রেখে চলতে হবে। না হলে কর্মক্ষেত্রে নানা জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে। ছোটখাটো ব্যাপারে মাথা গরম করা চলবে না। এই সময়কাল আপনাদের জন্য ভাল হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সম্পর্কে বিবাদ দেখা দিতে পারে। কোনও নতুন সম্পর্ক শুরু করার জন্যও এই সময়টি উপযুক্ত নয়। পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ লাভের উদ্দেশে গৃহশান্তির পুজো করতে পারলে খুব ভাল হয়।
ধনু- ধনু রাশির ব্যক্তিদের এই সময় নানা দিক থেকে হারের শিকার হতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে কোনও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিশেষ ভাল ফল লাভ করবেন না। ফলত আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ণ হতে পারে। শুভ ফলপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে যে কোনও পশুকে খাবার খাওয়াতে পারেন।
মকর- এই ১৫ দিন মকর রাশিকে নানা দিক থেকে বাধার সম্মুখীন হতে হবে। বিশেষ করে পেশাক্ষেত্রে নানা জটিলতার মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু চিন্তার কোনও কারণ নেই, পূর্বপুরুষদের কৃপায় সমস্ত বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরের খাবার খাওয়া বর্জন করতে হবে। পুরোহিতের সাহচর্যে তর্পণ করতে হবে।
কুম্ভ- কুম্ভ রাশির জন্য পিতৃপক্ষের ১৫ দিন আশীর্বাদ হয়ে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। সর্ব ক্ষেত্রে যে কোনও প্রকার বাধার কবল থেকে মুক্তি পাবেন। পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ সর্বদা আপনাদের সঙ্গে থাকবে। তাঁদের উদ্দেশে গীতাপাঠ করলে ভাল ফলের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
মীন- কোনও কিছু শুরু করার ক্ষেত্রে পিতৃপক্ষের সময়কালটি মীনের জন্য শুভ হবে না। সম্পর্ক থেকে ব্যবসা, সব ক্ষেত্রেই নতুন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে বিরত থাকতে হবে। ভাল ফল পেতে এই ১৫ দিন সন্ধ্যাবেলা অশ্বত্থ গাছের তলায় সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালতে হবে।