জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জন্মছক বিচার করে যে কোনও ব্যক্তির ভাগ্য, সম্মান, প্রতিপত্তি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। নির্দিষ্ট কারও জন্মছকে থাকা সমস্ত গ্রহের কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। জন্মছকে গ্রহের অবস্থান দেখে সেগুলি সম্পর্কে বলে দেওয়া সম্ভব।
জ্যোতিষশাস্ত্র বিশাল এবং সকলেই এই বিষয়ের সূক্ষ্ম জ্ঞান লাভ করতে পারেন না। জ্যোতিষের জ্ঞানের পরিধি কম হলেও সমস্যা নেই। আরও কয়েকটি উপায় আছে যেগুলি লক্ষ বা বিচার করলে জন্মছক ছাড়াই বলে দেওয়া সম্ভব হবে কার কোন গ্রহ দুর্বল বা তুঙ্গে রয়েছে কি না। প্রতিটি গ্রহের জন্য কিছু স্পষ্ট লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলে জানা সম্ভব এগুলি। তার জন্য জন্মছক বিশ্লেষণ না করলেও চলে।
গ্রহের ভাল-খারাপের উপরেই নির্ভর করে কোনও মানুষের ভাগ্যে কতটা কী প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি রয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই লক্ষণগুলি। নেতিবাচক অভ্যাস এবং জীবনে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা অনুধাবন করলে গ্রহের দুর্বলতা ধরা যায়।
শনি: সবচেয়ে ধীর গতির গ্রহ হল শনি। এই গ্রহ শৃঙ্খলা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির প্রতীক। কোনও ব্যক্তির শনি দুর্বল হলে এই লক্ষণগুলি তাঁর জীবনে পরিস্ফুট হয়ে উঠতে পারে। সমস্ত কাজে বিলম্ব, দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্ণতা, কোনও স্বীকৃতি বা পুরস্কার ছাড়াই কাজের দায়িত্ব শনির দুর্বল হওয়ার লক্ষণ। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অসুবিধা, সম্মানহানি, প্রতারণা এবং কর্মজীবনে ব্যর্থতাও আসে কর্মফলদায়ী গ্রহটি দুর্বল হওয়ার কারণে।
এ ছাড়াও স্বাস্থ্যসমস্যা, বেকারত্ব, একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং বিষণ্ণতা হল দুর্বল শনির কিছু সাধারণ লক্ষণ। হতাশা এবং একাকিত্ব ঘিরে ধরে জীবনে।
মঙ্গল: মঙ্গল হল শক্তি, সাহস এবং শারীরিক ক্ষমতার অধিপতি গ্রহ। মঙ্গল দুর্বল হলে ছোটখাটো কিন্তু ঘন ঘন আঘাত পাওয়ার প্রবণতা থাকে। জাতকের মধ্যে আগ্রাসন, রাগ, আবেগ নিয়ন্ত্রণের অভাব, মারামারি বা দ্বন্দ্বের লক্ষণ প্রকাশ পায়। মঙ্গলের পরিস্থিতি সঠিক না থাকলে ব্যক্তিকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়।
মঙ্গল গ্রহের অশুভ প্রভাবে অশান্তি বৃদ্ধি পায়। দাম্পত্য জীবনে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সম্পর্কে ব্যর্থতা আসে। মঙ্গল অশুভ অবস্থানে থাকার ফলে জাতক প্রতিটি বিষয়ে মেজাজ হারান। এই ধরনের লক্ষণ ফুটে উঠলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তির জীবনে মঙ্গলের কুপ্রভাব রয়েছে।
সূর্য: আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি থেকে শুরু করে বাবা-ছেলের সম্পর্কে বাধা থাকলে ধরে নিতে হবে সেই ব্যক্তির জীবনে সূর্যের প্রভাব অত্যন্ত দুর্বল। দুর্বল সূর্যের প্রভাব স্বাস্থ্যের উপরও পড়তে দেখা যায়।
সূর্য আত্মবিশ্বাস, শক্তি এবং সাফল্যের প্রতীক। কোনও জাতক বা জাতিকার রবি গ্রহের খারাপ অবস্থানের ফলে যথেষ্ট পরিশ্রম করা সত্ত্বেও কর্মে উন্নতি হয় না। যতই চেষ্টা করা হোক না কেন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে সর্বদা লড়াই করে যেতে হয় তাঁদের।
চন্দ্র: মন, আবেগের নিয়ন্ত্রক গ্রহ হল চন্দ্র। দৈনন্দিন মেজাজকেও প্রভাবিত করে গ্রহটি। ঘুমের অভাব, মেজাজের পরিবর্তন, দুঃস্বপ্ন এবং মানসিক অস্থিরতা দুর্বল চন্দ্রের লক্ষণ। চন্দ্র সরাসরি আমাদের মনের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই কোনও ব্যক্তির জন্মছকে চন্দ্র দুর্বল বা পীড়িত থাকলে জাতক বা জাতিকার আত্মবিশ্বাস খানিকটা নড়িয়ে দেয়।
যাদের জন্মছকে চন্দ্র খারাপ থাকে তাঁদের কোনও না কোনও ভাবে বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। চন্দ্রের অশুভ প্রভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দ্রুত আবেগপ্রবণ হয়ে যান, ছোটখাটো বিষয়ে মন ভারাক্রান্ত হতে থাকে। আবেগের বশবর্তী হয়ে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত পরবর্তী কালে অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বুধ: ব্যক্তির চিন্তাশক্তি, কথা বলা এবং ছোট ভ্রমণের উপর কর্তৃত্ব করে বুধ। বুধ গ্রহকে বুদ্ধির কারক গ্রহ হিসাবে মনে করা হয়। দুর্বল বুধের লক্ষণগুলি হল ভুল বোঝাবুঝি, ভাষা শেখার ক্ষেত্রে সমস্যা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং অল্পতেই অস্থির হয়ে পড়া ইত্যাদি।
সমস্ত গ্রহের মধ্যে ক্ষুদ্রতম গ্রহ হলেও কোনও ব্যক্তির জন্মছকে বুধের অবস্থান দুর্বল থাকলে চিন্তা সঠিক ভাবে প্রকাশ পায় না। গ্রহ পীড়িত থাকলে ব্যক্তি নিজের ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস হারান। বুদ্ধির অবনতি ঘটতে শুরু করে। বিশ্লেষণ ক্ষমতার অভাব, ভুল বোঝার প্রবণতা, জীবনে বার বার দুঃখ এবং দুশ্চিন্তা, কিছু তার্কিক ব্যক্তির জন্য ধারাবাহিক মানসিক চাপের মতো সমস্যা আজীবন ভোগ করতে হয়।
শুক্র: শুক্র গ্রহ প্রেম, অর্থ, সৌন্দর্যের প্রতিনিধিত্ব করে। দুর্বল শুক্র গ্রহ হলে রোম্যান্টিক সম্পর্কে সমস্যা তৈরি হয়। জীবনে আনন্দের অভাব দেখা দেয়। জলের মতো অর্থব্যয় হয়। টাকাপয়সা গুছিয়ে উঠতে পারেন না গ্রহপীড়িত জাতক। বার বার ব্যর্থ ভালবাসা জটিলতা নিয়ে আসে জীবনে। এমন ধরনের অনুভূতি হলে তা শুক্র গ্রহের দুর্বলতার লক্ষণ।
শুক্রের সুপ্রভাবে জীবন সুখের হয়। শুক্রের সঙ্গ থাকলে বিলাসবহুল জীবনের আনন্দ লাভ করা যায়, সম্পর্কক্ষেত্র সুখের হয়। জন্মছকে দুর্বল শুক্র থাকলে সম্পদহানি ঘটে ও আর্থিক দিকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আর্থিক অবস্থায় ধীরে ধীরে অবনতি ঘটে। পরকীয়ার প্রতি ঝোঁক বাড়ে।
বৃহস্পতি: এই গ্রহটি ভাগ্য, শিক্ষা, আইন এবং দর্শনের উপর কর্তৃত্ব করে। দুর্বল বৃহস্পতি যোগ্যতা, উচ্চশিক্ষায় ব্যর্থতা, আইনি সমস্যা ডেকে আনতে পারে। সঙ্কীর্ণ চিন্তাভাবনা মগজকে গ্রাস করতে পারে।। আধ্যাত্মিক বোধের অভাবও এর অন্যতম লক্ষণ। দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আর্থিক প্রতিকূলতা বৃহস্পতি দুর্বল থাকার ইঙ্গিত করে।
বিশেষ কিছু লক্ষণ রয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে বৃহস্পতির স্থান দুর্বল। যেমন অর্থ সংক্রান্ত সমস্যা, কাজে মন না বসা। বৈবাহিক জীবনে সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে বৃহস্পতি কুপিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় আর্থিক সঙ্কট। টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা হঠাৎ করেই শুরু হবে। কর্মেক্ষেত্রে নানা ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট শুরু হবে এবং নানা বিপদের মুখে পড়তে হবে। এ ছাড়া বিবাহিত জীবনেও এর প্রভাব পড়বে।
রাহু ও কেতু: রাহু এবং কেতু হল ছায়া গ্রহ। এই দু’টি গ্রহ বিপরীতমুখী আচরণ করে। জন্মছকে রাহু যখন সমস্যায় থাকে তখন মানুষের এমন কিছু আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়, যা আদতে ক্ষতিকর। প্রতারণার ফাঁদে পড়তে পারে। হঠাৎ সামাজিক অবস্থানে বা পেশায় উত্থান-পতনের সম্মুখীন হতে পারে। সমস্যাগ্রস্ত কেতু মানে অদৃশ্য ক্ষতি। জাগতিক জীবনে কোনও আগ্রহ না থাকা।
রাহু যদি দুর্বল থাকে তাহলে সেই ব্যক্তিকে প্রতিটি কাজেই কষ্ট ভোগ করতে হয়। জাতকদের নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। দুর্বল স্মৃতিশক্তি, জিনিস হারিয়ে ফেলা, রাগ, কথার রূঢ়তা, ভয় ও শত্রুর বৃদ্ধি, মৃত সাপ বা টিকটিকি দেখা, মরা পাখি দেখা, নিজের নখ ভেঙে যাওয়া, নিজের ক্ষতি বা মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় জীবনে।