Pakistan Army Power

আয়ুব, মুশারফদের সময়ে যা হয়নি, তা-ই করে দেখাচ্ছেন ইমরান! সেনা কি দুর্বল হচ্ছে পাকিস্তানে?

পাকিস্তানের রাজনীতিতে বরাবরই সেনাবাহিনীর প্রাধান্য। গত কয়েক দশক ধরে একাধিক সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী থেকেছে এই দেশ। তবে সম্প্রতি যেন বদলে যাচ্ছে সমীকরণ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৮:৩৫
Share:
০১ ২০

পাকিস্তানের রাজনীতির চেনা ধারায় যেন বদল আসছে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পাক রাজনীতির আঙিনায় যা যা ঘটেছে, তার বিপরীতধর্মী ঘটনা এ বার ঘটতে দেখা যাচ্ছে কাঁটাতারের ও পারে। নেপথ্যে ইমরান খান।

০২ ২০

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানের হাত ধরে সে দেশের রাজনীতিতে নতুন এক সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। দেশের চেনা রাজনৈতিক প্রবণতা যেন বদলে যাচ্ছে একটু একটু করে।

Advertisement
০৩ ২০

পাকিস্তানের রাজনীতিতে বরাবরই সেনাবাহিনীর প্রাধান্য। গত কয়েক দশক ধরে একাধিক সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী থেকেছে এই দেশ। প্রধানমন্ত্রীর পদটি পাকিস্তানে নামমাত্র। সেনার অঙ্গুলিহেলনেই নিয়ন্ত্রিত হয় ক্ষমতার কুর্সি।

০৪ ২০

সেনার এই প্রাধান্যের কারণেই পাকিস্তানে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রধানমন্ত্রী পাঁচ বছরের ক্ষমতার মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। মেয়াদ শেষের আগেই কেউ মারা গিয়েছেন। কাউকে বলপ্রয়োগ করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

০৫ ২০

তাৎপর্যপূর্ণ হল, এখনও পর্যন্ত সেনা অভ্যুত্থান এবং সেনার বাড়বাড়ন্তের যত নিদর্শন প্রকাশ্যে এসেছে, পাকিস্তানের বাসিন্দাদের মাঝে তার এমন প্রভাব আগে কখনও দেখা যায়নি। যেমনটা দেখা যাচ্ছে ইমরানের গ্রেফতারির পর।

০৬ ২০

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান গত মঙ্গলবার সেনার হাতে গ্রেফতার হন। জমি হস্তান্তর দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরেই ইসলামাবাদ-সহ পাকিস্তানের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদের আগুন জ্বলে ওঠে।

০৭ ২০

সেনা এবং সরকারের বিরুদ্ধে এই তীব্র প্রতিবাদ দেশের ইতিহাসে শুধু বিরলই নয়, তা নজিরও গড়ছে প্রতিনিয়ত। ইমরান সরাসরি সেনার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন।

০৮ ২০

পাকিস্তানের সেনা আধিপত্যের ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে দেখা যায়, সে দেশে প্রথম সেনা অভ্যুত্থান ঘটে ১৯৫৮ সালে। প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ় খান নুনকে সরিয়ে সরাসরি শাসনকার্যে হস্তক্ষেপ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল আয়ুব খান।

০৯ ২০

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে দেওয়া হয়নি। এতেও প্রত্যক্ষ মদত ছিল পাক সেনাবাহিনীর। পূর্ব পাকিস্তানের কোনও প্রতিনিধিকে দেশের প্রধান হিসাবে মানতে পারেনি সেনা। এর পরের ঘটনাপ্রবাহেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জন্ম।

১০ ২০

১৯৭৭ সালে আবার সেনাশাসনের সাক্ষী হয় পাকিস্তান। সেনাপ্রধান জেনারেল মহম্মদ জিয়া উল হক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টোকে সরিয়ে দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। ভুট্টোকে গ্রেফতার করে পাক সেনা।

১১ ২০

১৯৭৯ সালে জেলেই ভুট্টোর ফাঁসি হয়। এই ঘটনায় পাক সেনার বিরুদ্ধে পরিকল্পনামাফিক হত্যার অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ। ভুট্টোকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্তও বিতর্কিত।

১২ ২০

পাকিস্তানে পরবর্তী সেনা অভ্যুত্থান হয় ১৯৯৯ সালে। সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মুশারফ প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর মন্ত্রীদের গ্রেফতার করান। আবার সেনার দখলে চলে যায় পাকিস্তান।

১৩ ২০

সেনা অভ্যুত্থান ছাড়াও ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে যত জন বসেছেন, তাঁদের অপসারণে হাত ছিল সেনবাহিনীর। সেনা শাসনে দেশের সংবিধানের কোনও গুরুত্ব ছিল না।

১৪ ২০

পাকিস্তানের সংবিধানে সেনাবাহিনীকে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাই সে দেশে প্রধানমন্ত্রীদের উত্থান এবং পতনে সেনার আধিপত্য এড়ানো যায় না। সেনার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহসও দেখান না কেউ।

১৫ ২০

২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইমরানের অপসারণের পর থেকে তাঁকে একাধিক বার উল্টো সুরে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। একাধিক বার সরাসরি সেনার প্রতিপত্তির দিকে আঙুল তুলেছেন ইমরান।

১৬ ২০

ইমরানের গ্রেফতারির পর থেকে পাকিস্তান যেন উত্তাল হয়ে উঠেছে। বহু সরকারি ভবন এবং পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন পিটিআই সমর্থকেরা। পুলিশ এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। বহু মানুষ আহতও হয়েছেন।

১৭ ২০

পরিস্থিতি সামাল দিতে ইসলামাবাদ-সহ দেশের নানা প্রান্তে ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়েছে। সহস্রাধিক ইমরান সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইমরান নিজে হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ তুললে প্রতিবাদ আরও জোরদার হয়।

১৮ ২০

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, ইমরানকে ঘিরে তৈরি হওয়া পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের ইতিহাসে বিরল। সেনার বিরুদ্ধে এমন সরাসরি বিক্ষোভ মুশারফ বা আয়ুব খানের অভ্যুত্থানের সময়েও দেখা যায়নি।

১৯ ২০

ইতিমধ্যে ইমরানের গ্রেফতারিকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে তাঁকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। তোষাখানা মামলায় অভিযুক্ত ইমরানের বিরুদ্ধে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছে ইসলামাবাদ হাই কোর্টও।

২০ ২০

ইমরান পর্বের ঘটনাপ্রবাহের দিকে চোখ রেখে অনেকেই বলছেন, পাকিস্তানে সেনার আধিপত্য দুর্বল হচ্ছে। তা না হলে ঘরের মাটিতে সেনার বিরুদ্ধে এমন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ দেখা যেত না।

ছবি:পিটিআই এবং সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement