India’s AI Based Satellite

বুদ্ধি খাটিয়ে বিপদকালে বাতলে দেবে বাঁচার উপায়! মহাকাশে বিপ্লব ঘটিয়ে ‘চিন্তাশীল’ উপগ্রহ পাঠাচ্ছে ভারত

মহাকাশে এ বার কৃত্রিম মেধাভিত্তিক ‘চিন্তাশীল’ কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে চলেছে হায়দরাবাদের স্টার্টআপ। এই প্রযুক্তিতে সামরিক নভোযান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। চিন-পাকিস্তানের মতো শত্রুর উপর নজরদারির জন্য কয়েকশো কৃত্রিম উপগ্রহ প্রয়োজন, বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সংস্থা ইসরোর সাবেক চেয়ারম্যান এস সোমনাথ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৫ ১৪:৫৪
Share:
০১ ১৮

মহাকাশ গবেষণায় ফের নতুন মাইলফলক পার। ‘চিন্তাশীল’ কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করে সারা দুনিয়াকে চমকে দিল ভারত! সংশ্লিষ্ট নভোযানটি মানুষের থেকে ঢের বেশি ‘বুদ্ধিমান’ বলে জানিয়েছেন এর নির্মাণকারী হায়দরাবাদের স্টার্টআপ সংস্থা। সব ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পৌঁছে কাজে লেগে পড়বে ‘কৃত্রিম মেধা’ বা এআই-ভিত্তিক (আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স) ওই কৃত্রিম উপগ্রহ।

০২ ১৮

হায়দরাবাদের স্টার্টআপ ‘টেকমিটুস্পেস’-এর তৈরি ‘চিন্তাশীল’ ওই নভোযানের পোশাকি নাম ‘ডেটা কম্পিউট’। এআই-ভিত্তিক এই কৃত্রিম উপগ্রহটিকে মহাকাশ গবেষণার যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এ বার থেকে আর শুধুমাত্র তথ্য আদান-প্রদানের কাজ করবে না পৃথিবীর নিম্নকক্ষে থাকা নভোযান। প্রয়োজনমতো তার থেকে মিলবে আশু কর্তব্যের নির্দেশ। ফলে জটিল পরিস্থিতিতে সহজেই নেওয়া যাবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত।

Advertisement
০৩ ১৮

কী এই ‘চিন্তাশীল’ কৃত্রিম উপগ্রহ? গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ‘টেকমিটুস্পেস’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা পেশায় সফ্‌টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রণক সামন্ত্রে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মহাকাশে একটা মস্তিষ্ক স্থাপন করতে যাচ্ছি, যা তথ্য সরবরাহের পাশাপাশি সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে কী কী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সেটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেবে।’’ প্রাথমিক ভাবে সংশ্লিষ্ট নভোযানটি পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, কৃষি ও শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন রণক।

০৪ ১৮

‘ডেটা কম্পিউট’-এর কার্যকারিতা উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন হায়দরাবাদ স্টার্টআপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেছেন, ‘‘ধরা যাক কোনও কলেজপড়ুয়া দাবানল পর্যবেক্ষণ এবং মহাকাশ থেকে প্রশাসন বা আমজনতাকে সতর্ক করার জন্য একটি মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম তৈরি করছেন। আমাদের কৃত্রিম উপগ্রহ এর সবটাই তাঁকে বলে দিতে পারবে।’’ অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি মাথা খাটিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট ‘চিন্তাশীল’ নভোযানের।

০৫ ১৮

২০২২ সালে শুরু হয় হায়দরাবাদের ‘টেকমিটুস্পেস’-এর পথচলা। প্রথম দিকে স্টার্টআপটির প্রতিষ্ঠাতা রণক নিজের কাজের জন্য একটি কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, পরবর্তী কালে সেই সিদ্ধান্ত বদল করেন তিনি। মন দেন কৃত্রিম মেধাভিত্তিক নভোযান তৈরির দিকে। এই কাজে তাঁকে যাঁরা সাহায্য করেছেন তাঁদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ‘ডেটা কম্পিউট’ নির্মাণে স্টার্টআপটির তরুণ বাহিনীর ২১ জন জড়িত রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।

০৬ ১৮

আগামী সেপ্টেম্বরে ‘চিন্তাশীল’ কৃত্রিম উপগ্রহটিকে পৃথিবীর নিম্নকক্ষে স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে ইসরো (ইন্ডিয়া স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন)। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা সূত্রে খবর, এর জন্য আকারে ছোট উপগ্রহকে অন্তরীক্ষে নিয়ে যাওয়ার যান তৈরি রাখা হয়েছে যার নাম ‘সর্ট স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ বা এসএসএলভি। তবে এর উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

০৭ ১৮

কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণকারী বেসরকারি সংস্থাগুলি সাধারণত তাদের নভোযান কতটা এলাকার উপরে নজরদারি চালাতে পারবে, তার উপর ভিত্তি করে টাকা নিয়ে থাকে। আর তাই প্রতি বর্গ কিলোমিটারের জন্য গ্রাহকদের ১৫ থেকে ৩০ ডলার পর্যন্ত খরচ করতে হয়। হায়দরাবাদের স্টার্টআপ কিন্তু সেই রাস্তায় হাঁটেনি। খরচ কমানোর জন্য সময়ের উপর ভিত্তি করে চার্জ বসানো হবে বলে ঘোষণা করেছে তারা। সে ক্ষেত্রে মিনিটে মাত্র দু’ডলার করে দিতে হবে গ্রাহকদের।

০৮ ১৮

‘টেকমিটুস্পেস’-এর প্রতিষ্ঠাতা রণক জানিয়েছেন, ‘চিন্তাশীল’ কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তথ্য পেতে ইতিমধ্যেই ৪০ জন যোগাযোগ করেছেন। এঁরা প্রত্যেকে কৃষির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গিয়েছে। তবে মজার বিষয় হল, ‘ডেটা কম্পিউট’ তৈরির সময়ে হার্ডঅয়্যার সংক্রান্ত কোনও ধারণাই ছিল না রণক এবং তাঁর দলের। ইসরোর ব্যাপারেও অজ্ঞ ছিলেন তাঁরা। টানা ১০ বছরের পরিশ্রমের ফলে মহাকাশে একটা ছোটখাটো ডেটা সেন্টার খোলার মুখে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

০৯ ১৮

‘টেকমিটুস্পেস’-এর হেড অফ প্রোডাক্ট শরৎ রেড্ডি বলেছেন, ‘‘বেশির ভাগ ছোট উপগ্রহে সৌর প্যানেলের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনের জন্য সূর্য নির্দেশক একটি মোড থাকে। আর ছবি তোলার জন্য থাকে পৃথিবী নির্দেশক মোড। ডেটা কম্পিউটের ক্ষেত্রে এই নিয়মের বড় বদল করা হয়েছে। খরচ কমানোর জন্য এতে অপ্রচলিত শক্তির বহুল ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।’’

১০ ১৮

রেড্ডি জানিয়েছেন, মহাকাশে থাকাকালীন সংশ্লিষ্ট কৃত্রিম উপগ্রহটি এক পেটাবাইট বা ১০ লক্ষ গিগাবাইট ছবিকে প্রসেসরে ফেলে ঝাড়াই-বাছাই করে ফেলতে পারবে। এর পর প্রয়োজনমতো ছবিকে ছোট-বড় করে পৃথিবীতে ফেরত পাঠাবে ওই নভোযান। এতে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। আগামী দিনে শত্রু দেশগুলির উপরে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য এই ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরি করা যেতে পারে বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন রণক।

১১ ১৮

গত মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’কে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সঙ্গে চার দিনের ‘যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়ে ভারত। ওই সময়ে এ দেশের বাহিনীর উপর কড়া নজর রেখেছিল চিনের ‘গুপ্তচর’ উপগ্রহ। সেই গোয়েন্দা তথ্য ইসলামাবাদকে সরবরাহও করে বেজিং। যদিও তার পরেও নয়াদিল্লির সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেননি রাওয়ালপিন্ডির ফৌজি জেনারেলরা।

১২ ১৮

সংঘাত পরবর্তী সময়ে আধুনিক যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে ভারতের কয়েকশো সামরিক কৃত্রিম উপগ্রহের প্রয়োজন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইসরোর অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এস সোমনাথ। ‘ফ্রম কোড টু কালচার’ শীর্ষক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আগামী দিনে লড়াইয়ের রং বদলে দেবে মহাকাশের কৃত্রিম উপগ্রহ। সেখানে যারা এগিয়ে থাকবে, জয় তাদের অবশ্যম্ভাবী। কারণ, আমরা ধীরে ধীরে হাইপারসনিক (শব্দের পাঁচ গুণের চেয়ে বেশি গতিশীল) ক্ষেপণাস্ত্রের যুগে ঢুকে পড়েছি।’’

১৩ ১৮

ইসরোর সাবেক চেয়ারম্যান সোমনাথ জানিয়েছেন, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করা খুবই কঠিন। দুরন্ত গতির কারণে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বা এয়ার ডিফেন্স এগুলিকে ধ্বংস করতে পারে না। আর তাই একমাত্র কৃত্রিম উপগ্রহই ভরসা। পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা ওই নভোযানগুলিই তথ্য দেবে কোথায় আঘাত হানবে শত্রুর ছোড়া হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র।

১৪ ১৮

বর্তমানে আমেরিকা, চিন এবং রাশিয়ার নিরিখে সংখ্যায় অনেক কম গুপ্তচর উপগ্রহ মহাকাশে মোতায়েন রেখেছে ভারত। অবিলম্বে এই অবস্থার বদল প্রয়োজন বলে পডকাস্ট-সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেছেন সোমনাথ। তাঁর কথায়, ‘‘অন্তরীক্ষে একগুচ্ছ সামরিক কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠালেই হবে না। তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকা খুবই জরুরি। এর জন্য কৃত্রিম মেধাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। আবার দিন ও রাতে সমান দৃশ্যমানতা রয়েছে এবং তাপীয়-সহ অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি তুলতে সক্ষম, এই ধরনের গুপ্তচর নভোযান আমাদের তৈরি করতে হবে।’’

১৫ ১৮

মহাকাশ থেকে শত্রুর উপরে নজরদারির জন্য এ বছরে পৃথিবীর নিম্নকক্ষপথে মোট ৫২টি সামরিক কৃত্রিম উপগ্রহ মোতায়েন করবে ভারত। এর জন্য ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ ব্যাপারে বিদেশি নির্ভরশীলতাকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে চাইছে নয়াদিল্লি।

১৬ ১৮

সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট কৃত্রিম উপগ্রহগুলিকে মহাশূন্যে পাঠাতে ইসরোর সঙ্গে মিলে কাজ করবে ভারতীয় সেনার ‘ডিফেন্স স্পেস এজেন্সি’ বা ডিএসএ। আগামী দিনে একে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের। সেই রাস্তায় কিছুটা যেতে পারলে ডিএসএ বদলে যাবে ফৌজের ‘স্পেস কমান্ড’-এ। তখন আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের মতো মহাকাশ-যোদ্ধাদের বাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হবে কেন্দ্র।

১৭ ১৮

২০১৯ সালে পথচলা শুরু করে ডিএসএ। বর্তমানে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন) এবং মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনীর এই বিভাগ। একে পুরোপুরি কমান্ড হিসাবে কাজ করাতে ১০০টির বেশি ‘গুপ্তচর’ কৃত্রিম উপগ্রহকে নজরজারির জন্য পৃথিবীর নিম্নকক্ষে পাঠাতে হবে। এর জন্য সাত থেকে আট বছর সময় লেগে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৮ ১৮

পডকাস্ট-সাক্ষাৎকারে সোমনাথ জানিয়েছেন, ‘স্পেস কমান্ড’ তৈরি হয়ে গেলে মহাকাশে দেশের যাবতীয় সম্পত্তি রক্ষার ভার চলে যাবে বাহিনীর ওই বিভাগটির হাতে। এতে কাজ করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে। কারণ আর পাঁচটা সাধারণ সৈনিকের মতো যুদ্ধ লড়তে হবে না তাদের। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে বলে স্পষ্ট করেছেন সাবেক ইসরো চেয়ারম্যান।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement