IAF 5th Generation Fighter Jets

বন্ধু পুতিনের ‘ফেলন’ না কি পাগলাটে ট্রাম্পের ‘বিদ্যুৎ ঝলক’! ৬০ লড়াকু জেট হাতে পেতে অস্ত্র বাছাইয়ে মগ্ন ভারত

লড়াকু জেটের সঙ্কট মেটাতে এ বার পঞ্চম প্রজন্মের অন্তত ৬০টি যুদ্ধবিমান কেনার জন্য কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, রাশিয়া ও আমেরিকা— দু’টি দেশের যে কোনও একটি প়ঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান বেছে নিতে বলা হয়েছে তাঁদের। সেই মতো প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য সরকার অগ্রসর হবে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫ ১১:৫৮
Share:
০১ ২০

দ্বিমুখী জোট গড়ে ভারতকে প্যাঁচে ফেলার ছক কষছে চিন ও পাকিস্তান। সেই সাঁড়াশি আক্রমণ ঠেকাতে তৎপর এ দেশের বিমানবাহিনী। যুদ্ধের সময়ে দ্রুত শত্রুর আকাশ দখল করতে এ বার পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ শ্রেণির অন্তত তিন স্কোয়াড্রন লড়াকু জেট বহরে সামিল করতে চাইছেন নয়াদিল্লির বায়ুবীরেরা। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রকে সুপারিশও করেছেন তাঁরা।

০২ ২০

সম্প্রতি, বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় বায়ুসেনার এক পদস্থ আধিকারিক। তাঁর দাবি, এক লপ্তে ৬০টা যুদ্ধবিমান বাহিনীর বহরে সামিল করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঘরের মাটিতে যে হেতু পঞ্চম প্রজন্মের ‘স্টেলথ’ শ্রেণির লড়াকু জেট তৈরি হয় না, তাই এ ব্যাপারে বিদেশের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয়াদিল্লি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভারতকে লড়াকু জেট বিক্রি করার ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে আমেরিকা এবং রাশিয়ার।

Advertisement
০৩ ২০

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রকাশ্যে মার্কিন সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায়। অন্য দিকে মস্কো আবার তাদের ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’কে নয়াদিল্লির কাছে বিক্রি করতে ইচ্ছুক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, দু’টি লড়াকু জেটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার করে পছন্দের যুদ্ধবিমান বায়ুসেনাকে বেছে নিতে বলা হয়েছে। তার পরই এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে শুরু হবে কথাবার্তা এবং দামদস্তুর।

০৪ ২০

এখন প্রশ্ন হল, দু’টির মধ্যে কোন যুদ্ধবিমান হতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম পছন্দ? বিশেষজ্ঞদের কথায়, সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিজেদের সর্বশেষ মতামত জানাবেন বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা। দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত সমস্যার দিকটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তাভাবনা করতে হবে তাঁদের।

০৫ ২০

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ঘরের মাটিতে উন্নত হাতিয়ার তৈরির উপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত রাখছে কেন্দ্র। আর সেই নিরিখে রুশ ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’-এর পাল্লা সামান্য ভারী বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০৬ ২০

‘এসইউ-৫৭’র মূল নির্মাণকারী সংস্থা হল ‘ইউনাইটেড এয়ারক্র্যাফ্‌ট কর্পোরেশন’। তবে স্টেলথ ক্যাটেগরির দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানের নকশা তৈরি করেছে বিখ্যাত রুশ লড়াকু বিমান সংস্থা সুখোই। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে রুশ বায়ুসেনা।

০৭ ২০

স্টেলথ ক্যাটেগরির হওয়ায় ‘এসইউ-৫৭’কে রাডারে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন। মাঝ-আকাশে অন্য লড়াকু বিমানের সঙ্গে ‘ডগফাইট’ হোক বা আকাশপথে আক্রমণ শানিয়ে মাটির উপরে থাকা শত্রুঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া, সবতেই এই যুদ্ধবিমানের জুড়ি মেলা ভার। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক যুদ্ধের সুবিধাও পাবেন ‘এসইউ ৫৭’-এর যোদ্ধা পাইলট।

০৮ ২০

ভারতীয় বায়ুসেনা দীর্ঘ দিন ধরেই এই সংস্থার তৈরি ‘এসইউ-৩০এমকেআই’ নামের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে আসছে। এককথায়, সুখোইয়ের সঙ্গে এ দেশের ফাইটার পাইলটদের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘এসইউ-৫৭’ থেকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নানা মারণাস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ থাকছে। এর মধ্যে অন্যতম হল মস্কো ও দিল্লির যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ব্রহ্মস’ সুপারসনিক ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র তৈরি ‘অস্ত্র’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র।

০৯ ২০

সূত্রে খবর, ভারতের মাটিতে ‘এসইউ-৫৭’ তৈরি করার ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই মস্কোর। দিল্লিকে সংশ্লিষ্ট পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানটির সম্পূর্ণ প্রযুক্তি এবং সোর্স কোড হস্তান্তর করার ব্যাপারেও ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে ক্রেমলিন। তবে লড়াকু জেটটির বেশ কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। গত তিন বছর ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে থাকার কারণে সংশ্লিষ্ট ‘এসইউ-৫৭’র সরবরাহ সময়মতো পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

১০ ২০

দ্বিতীয়ত, ভারতের মাটিতে লড়াকু জেটটি তৈরির ক্ষেত্রে বেশ কিছু শর্ত রেখেছে মস্কো। যৌথ উদ্যোগে ‘এসইউ-৫৭’ তৈরির জন্য এ দেশে একটি পৃথক সংস্থা তৈরি করতে চায় ক্রেমলিন। অন্য দিকে, দিল্লি চাইছে রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যালকে সঙ্গে নিয়ে এই কাজ করুক রাশিয়া। দু’পক্ষের অংশীদারিত্ব থাকুক ৫০-৫০। এতে মস্কো শেষ পর্যন্ত রাজি হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

১১ ২০

আর সেই কারণেই আমেরিকার তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ লড়াকু বিমানের কথা ভেবে রেখেছেন বায়ুসেনার পদস্থ কর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সংস্থা লকহিড মার্টিনের তৈরি এই যুদ্ধবিমান ইতিমধ্যেই তার ক্ষমতা দেখিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে। ইরান, লেবানন হোক বা সিরিয়া, গত কয়েক মাসে শত্রু সংহারে বার বার ‘এফ-৩৫ লাইটনিং’ নিয়ে উড়তে দেখা গিয়েছে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) লড়াকু পাইলটদের।

১২ ২০

পঞ্চম প্রজন্মের হলেও ‘এফ-৩৫’ আবার এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। আক্রমণের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ থেকে শুরু করে নজরদারি— একাধিক কাজে একে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। ছোট রানওয়ে দিয়েও দিব্যি একে আকাশে ওড়ানো যায়। এতে রয়েছে ভার্টিক্যাল ল্যান্ডিং বা উল্লম্ব ভাবে নীচে নেমে আসার সুবিধা। অর্থাৎ, রানওয়ে ছাড়াই লড়াকু বিমানটিকে মাটিতে নামাতে পারবেন পাইলট।

১৩ ২০

তবে ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’র প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রথম বাধা হল প্রযুক্তি হস্তান্তর। এ ব্যাপারে এখনও কোনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি আমেরিকা। দ্বিতীয়ত, এই যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যথেষ্ট বেশি। ফলে নিজেদের পছন্দের কথা জানানোর ক্ষেত্রে এ সব দিক মাথায় রাখতে হচ্ছে ভারতীয় বায়ুসেনাকে।

১৪ ২০

দু’টি লড়াকু বিমানের ক্ষেত্রেই দাম নিয়ে কোনও চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়নি। সূত্রের খবর, রাশিয়ার তরফে ‘এসইউ ৫৭’-এর দাম কমানোর প্রস্তাব পেয়েছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে সরসারি না-হলেও ঘুরপথে একই রকমের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ওয়াশিংটনও। পশ্চিমি গণমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, মস্কোর লড়াকু জেটটির তুলনায় মার্কিন যুদ্ধবিমানটি কেনার খরচ অনেকটাই বেশি।

১৫ ২০

পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধে নিজের জাত চেনালেও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুদ্ধবিমানটির পারফরম্যান্স যে সব সময়ে একরকম ছিল, এমনটা নয়। গত জুনে ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়া দেওয়ার সময় ব্রিটিশ বিমানবাহী রণতরী ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’ থেকে ওড়া একটি ‘এফ-৩৫বি’ লড়াকু জেটকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কেরলের তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণে বাধ্য হন ইংরেজ ফাইটার পাইলট। তার পর শত চেষ্টা করেও সংশ্লিষ্ট যুদ্ধবিমানটিকে আর আকাশে ওড়ানো যায়নি।

১৬ ২০

এ বছরের গোড়ার দিকে ‘এফ-৩৫’ যুদ্ধবিমানে ‘কিল সুইচ’ রয়েছে বলে দাবি করেন বেশ কয়েক জন জার্মান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ। তাঁদের দাবি, সংশ্লিষ্ট লড়াকু জেটটিকে বিক্রি করলেও মূল চাবিকাঠি থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই। ফলে ‘কিল সুইচ’ ব্যবহার করে যখন-তখন সাগরপারে বসেও ‘এফ-৩৫’ বিমানকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে পারবে আমেরিকা। তাঁদের ওই মন্তব্যের পর দুনিয়া জুড়ে শুরু হয় হইচই। বাধ্য হয়ে গোটা বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয় নির্মাণকারী সংস্থা লকহিড মার্টিন।

১৭ ২০

বিদেশ থেকে যুদ্ধবিমান আমদানির পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তিতে লড়াকু বিমান তৈরির উপর জোর দিয়েছে নয়াদিল্লি। আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যে ‘তেজস মার্ক টু’ এবং ‘অ্যাডভান্স মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট’ বা অ্যামকার নির্মাণকাজ শেষ করতে চাইছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। এই দুই যুদ্ধবিমানের জন্য বিদেশ থেকে জেট ইঞ্জিন আমদানি করা হচ্ছে।

১৮ ২০

বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ২০২৯-’৩০ সালের মধ্যে সাড়ে চার প্রজন্মের ‘তেজস মার্ক টু’ ফাইটার জেট হাতে পাবে তারা। এই যুদ্ধবিমানকে আরও শক্তিশালী করতে সম্প্রতি এর নকশায় সামান্য কিছু বদল করা হয়েছে। অন্য দিকে ৫.৫ প্রজন্মের স্টেলথ ক্যাটেগরির লড়াকু বিমান অ্যামকার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। দু’টি যুদ্ধবিমানেরই নির্মাণকারী সংস্থা ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’ বা হ্যাল।

১৯ ২০

বর্তমানে পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমানের অভাবে ভুগছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ফলে বুড়ো হয়ে যাওয়া জাগুয়ার বা মিগ-২১ বাইসনের মতো লড়াকু জেট ওড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন যোদ্ধা পাইলটেরা। হচ্ছে মৃত্যুও। আর তাই দ্রুত এ ব্যাপারে বিমানবাহিনী সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, ২০০-র বেশি পঞ্চম প্রজন্মে ‘জে-২০’ যুদ্ধবিমান প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বা এলএসির (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল) ওপারে মোতায়েন রেখেছে চিন। লড়াকু জেটগুলিতে রয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার ‘পিএল-১৫’ ক্ষেপণাস্ত্র।

২০ ২০

বেজিঙের এ-হেন পদক্ষেপে চিন্তা বেড়েছে নয়াদিল্লির। এ বছরে ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। সেপ্টেম্বরে আবার নয়াদিল্লিতে চতুঃশক্তি জোট ‘কোয়াড’-এর বৈঠকে যোগ দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফলে এ বছরই ‘এফ-৩৫ লাইটনিং টু’ বা ‘এসইউ-৫৭ ফেলন’কে নিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করার সুযোগ রয়েছে কেন্দ্রের মোদী সরকারের কাছে। শেষ পর্যন্ত কোনটিকে বায়ুসেনা বেছে নেয়, সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement