Union Budget 2023

বাৎসরিক আয় ৭ লক্ষ হলে কোন আয়কর কাঠামো বাছবেন? ৯ বা ১০ লক্ষ হলেই বা কোনটি?

কত আয়ে কোন কর কাঠামোয় লাভ, তার হিসাব মেলাতে মাথার চুল ছিঁড়তে হচ্ছে সাধারণ বেতনভোগী মানুষদের। যাঁদের বার্ষিক আয় লক্ষ পেরিয়ে কোটি ছুঁয়েছে, তারাও জটিল হিসাবের ফাঁপরে পড়েছেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৪৫
Share:
০১ ১৮

বুধবার চলতি অর্থবর্ষের বাজেট পেশ করল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সেই বাজেটে বেতনভোগীদের আয়কর ছাড় নিয়ে নয়া ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এখন থেকে বেতনভোগীরা নয়া কর কাঠামো মেনে জমা দিতে পারবেন আয়কর। তবে চাইলে পুরনো কর কাঠামো অনুযায়ীও আয়কর জমা দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু কত আয়ে কোন কাঠামোয় লাভ, তার হিসাব মেলাতে মাথার চুল ছিঁড়তে হচ্ছে সাধারণ বেতনভোগীদের।

০২ ১৮

যাঁদের বার্ষিক আয় লক্ষ পেরিয়ে কোটি ছুঁয়েছে তারাও জটিল হিসাবের গোলকধাঁধায় পড়েছেন। মধ্যবিত্তের পাশাপাশি করকাঠামোর ‘চক্রব্যূহে’ আটকে গিয়েছেন উচ্চবিত্তরাও।

Advertisement
০৩ ১৮

নয়া পাঁচ স্তরের আয়কর কাঠামো বলছে বছরে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে মকুব করা হবে কর। যদিও তাঁরা এর মধ্যেই জীবনবিমা এবং দীর্ঘমেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের উপলব্ধ ছাড় পাবেন। তবে আয় ৭ লক্ষ থেকে এক টাকাও বাড়লে দিতে হবে দ্বিস্তরীয় কর।

০৪ ১৮

পুরনো আয়কর কাঠামো অনুযায়ী, ৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কোনও আয়কর দিতে হত না। তার থেকে আয় বাড়লে হিসাব মিলিয়ে আয়কর দিতে হত। তবে তার পাশাপাশি ছিল, গৃহঋণের সুদ এবং স্বাস্থ্য বিমা প্রিমিয়ামের ছাড়ের সুবিধা।

০৫ ১৮

হিসাব বলছে, পুরনো বিকল্পেও ৭ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কোনও কর দিতে হবে না। কারণ সেই করকাঠামো অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন, কর সঞ্চয়ী প্রকল্প, গৃহঋণের সুদ (২৪বি), স্বাস্থ্য বিমা প্রিমিয়াম (৮০ ডি)-সহ অন্যান্য ছাড়ের পর করযোগ্য আয়ে কর গিতে হত শূন্য।

০৬ ১৮

বরং একই হিসাবে ৯ লক্ষ পর্যন্ত আয়েও দেয় কর শূন্যই ছিল। তবে নতুন কাঠামোয় সেই সব ছাড় দেওয়ার কোনও বালাই নেয়। ফলে নতুন কাঠামোয় বার্ষিক ৯ লক্ষ আয়ের জন্য এক জন করদাতাকে ৪১ হাজার ৬০০ টাকা কর দিতে হবে।

০৭ ১৮

একই ভাবে ছাড় না থাকার কারণে ১৫ লক্ষ টাকা আয়ে আগে যেখানে সব ছাড়ের পর ১ লক্ষ ৪০ হাজার কর দিতে হত, এখন সেখানে কর দিতে হবে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা।

০৮ ১৮

বার্ষিক আয় ২০ লক্ষ হলে পুরনো এবং নতুন করকাঠামোয় একই কর দিতে হবে। যা প্রায় তিন লক্ষ টাকা।

০৯ ১৮

আবার কারও বার্ষিক আয় ৯ লক্ষ হলে কেউ যদি ৮০সি ধারায় ১.৫ লক্ষ সঞ্চয় করেন, এনপিএসে ৫০ হাজার জমান এবং পরিবারের স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম হিসাবে ৫০ হাজার দেন, তা হলে পুরনো কাঠামো অনুযায়ী তাঁর দেয় কর হয় সাড়ে ৩০ হাজার টাকা। নতুন কাঠামোতে সেই আয়কর ৪০ হাজার। অর্থাৎ, প্রায় ১০ হাজার বেশি।

১০ ১৮

কর সঞ্চয়ী প্রকল্প এবং গৃহঋণ না থাকলে অবশ্য পুরনো আয়কর কাঠামোর করের বোঝা বেশি। তাই কর সঞ্চয়ী প্রকল্প এবং গৃহঋণ না থাকলে কর দেওয়ার জন্য নতুন কাঠামো বেছে নেওয়াই শ্রেয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

১১ ১৮

এ বার দেখা যাক যাঁদের আয় একটু বেশির দিকে নতুন কর কাঠামো কী বলছে তাঁদের করের হিসাব? পুরনো আয়কর কাঠামোতেই বা তাঁদের কত টাকা করবাবদ দিতে হত?

১২ ১৮

কারও বার্ষিক আয় ২৫ লক্ষ টাকা হলে, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাবদ ৫০ হাজার, সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের উপর সর্বাধিক সাড়ে চার লক্ষ টাকা ছাড় দিয়ে ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৬০০ টাকা কর দিতে হত। নতুন কর কাঠামোয় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ৪০০ টাকা।

১৩ ১৮

বার্ষিক আয় আরও বেড়ে ৬০ লক্ষের গণ্ডি ছুঁলে আগের কাঠামো অনুযায়ী সব ছাড় দিয়ে এক জন ব্যক্তিকে ১৫ লক্ষ ২১ হাজার টাকা আয়কর দিতে হত। নতুন হিসাবে তা বেড়ে হয়েছে ১৫ লক্ষ ৪৪ হাজার। ৬০ লক্ষ টাকা আয় করা কোনও মানুষ আগের কাঠামো অনুযায়ী ৫০ হাজারের স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন বাদে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয়ের জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা ছাড় পেতেন।

১৪ ১৮

আবার যাঁদের আয় ৬ কোটির মাত্রা ছুঁয়েছে তাঁদের জন্য নতুন আয়কর কাঠামোতেই সুবিধা বেশি। নতুন আয়কর কাঠামো অনুযায়ী, বার্ষিক ৬ কোটি টাকা আয়ের জন্য ২ কোটি ২৯ লক্ষ ৯০ হাজার ৫০০ টাকা কর দিতে হবে। কিন্তু আগের কাঠামো অনুযায়ী, সব ছাড় দিয়েও কর বাবদ ২ কোটি ৪৩ লক্ষ ১০ হাজার ৬৫০ টাকা দিতে হবে।

১৫ ১৮

কিন্তু কাদের কোন কর কাঠামোয় আয়কর জমা দেওয়া সুবিধাজনক হবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? আয়কর বিশেষজ্ঞদের মত, যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন বা যাঁদের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেশি, কেবল তাঁদের জন্যই এই নতুন আয়কর কাঠামো আকর্ষণীয় এবং লাভজনক। যাঁদের বিভিন্ন জায়গায় সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ রয়েছে তাঁদের জন্য পুরনো কর কাঠামোই বেশি লাভের।

১৬ ১৮

এ বার ধরা যাক, কারও বর্তমান বেতন ৭ লক্ষের কম এবং আয়কর জমা দেওয়ার জন্য তিনি নতুন কর কাঠামো বেছে নিলেন। কিন্তু এমন হতেই পারে যে, কয়েক বছরের মধ্যে সেই বেতনভোগীর আয় ৭ লক্ষের বেশি হয়ে গেল। তখন তিনি আবার পুরনো কর কাঠামোয় ফিরবেন কী ভাবে? সেই সুবিধাও দিয়েছে কেন্দ্র। কোনও আয়করদাতা চাইলেই কর কাঠামোয় পছন্দের পরিবর্তন করতেন পারেন। নিজেদের আর্থিক সুবিধামতো বেছে নিতে পারেন নতুন বা পুরনো কর কাঠামো।

১৭ ১৮

একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন কর কাঠামোয় বেতনভোগীদের সঞ্চয়ের প্রবণতা কমতে পারে। কমতে পারে পিপিএফ এবং স্বাস্থ্যবিমাতে বিনিয়োগের পরিমাণও। সে ক্ষেত্রে অনেকেই শেয়ার বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারেন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

১৮ ১৮

কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে নতুন কর কাঠামো সরল। এই কাঠামোর ভিত্তি, যা আয় তার উপর কর। কোনও বিনিয়োগ বা সঞ্চয় দেখিয়ে ছাড় পাওয়ার অবকাশ নেই। কিন্তু সেই হিসাব কি সত্যিই সরল লাগছে?

ছবি: পিটিআই, রয়টার্স এবং প্রতীকী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement