পরিচালকের প্রথম ছবি বলে কথা! হাতে বেশি টাকা না থাকলেও চোখে ছিল অফুরান স্বপ্ন। তাই চিত্রনাট্যের খসড়া নিয়ে প্রযোজকদের দোরে দোরে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। প্রত্যুত্তরে পেতেন তাচ্ছিল্য। মুক্তির পর পরিচালকের সেই ছবিই শত গুণ বেশি ব্যবসা করেছিল।
বক্স অফিসে কোনও ছবি সফল হয়েছে মানেই তার নাম কোটি টাকার ক্লাবে লেখা হয়ে যায়। কিন্তু এই কোটি কোটি টাকার কাহিনির আড়ালে থাকে বিরাট আখ্যান।
দক্ষিণী ফিল্মজগতের স্বনামধন্য ছবিনির্মাতা যোগরাজ ভট্ট। কন্নড় ভাষায় একাধিক ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয় করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে তাঁর কেরিয়ারের গোড়ার দিক খুব একটা সুখকর ছিল না।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কেরিয়ারের শুরুতে বিজ্ঞাপনের জন্য স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি নির্মাণ করতেন যোগরাজ। এমনকি, নানা বেসরকারি সংস্থার জন্য প্রচারমূলক ছবিও তৈরি করতেন তিনি। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় পর্দায় কাজ করার।
মনে মনে বোনা স্বপ্নকেই বাস্তব রূপ দিতে শুরু করেন যোগরাজ। একটি রোম্যান্টিক ছবির জন্য চিত্রনাট্য লিখে ফেলেছিলেন তিনি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই ছবিটির মাধ্যমেই বড় পর্দায় পরিচালনার ক্ষেত্রে হাতেখড়ি করবেন। কিন্তু পদে পদে বাধার সম্মুখীন হচ্ছিলেন।
যোগরাজ ভেবেছিলেন, কন্নড় ভাষায় তাঁর প্রথম ছবিটি মুক্তি পাবে। ছবির নাম রাখবেন ‘মুঙ্গারু মালে’। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ছবির নামে সিলমোহর দিয়ে ফেলেন তিনি। তার পর শুরু হয় নায়ক-নায়িকার সন্ধান।
কন্নড় অভিনেতা গণেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল যোগরাজের। ‘মুঙ্গারু মালে’ ছবিতে অভিনয় করতে একবাক্যে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তখনও অবশ্য নায়িকার সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিলেন পরিচালক। তবে বাদ সাধল অন্য জায়গায়।
কানাঘুষো শোনা যায় যে, ‘মুঙ্গারু মালে’ ছবিটির পরিচালনার দায়িত্ব নিলেও সেই ছবি প্রযোজনা করার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিল না যোগরাজের। টাকা জোগাড়ের জন্য দক্ষিণী ফিল্মপাড়ার প্রযোজকদের দোরে দোরে ঘুরতে শুরু করলেন তিনি।
ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম কাজ শুরু করছেন দেখে যোগরাজের প্রতি বিশেষ ভরসা দেখাননি দক্ষিণী ফিল্মজগতের একাধিক প্রযোজক। কেউ কেউ আবার যোগরাজের কাছে চিত্রনাট্যের সম্পূর্ণ খসড়া শুনে তাঁকে দরজা দেখিয়ে দেন।
পরিচালক যোগরাজের অবস্থা দেখে কষ্ট পেয়েছিলেন অভিনেতা গণেশ। তাই নিজেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। দক্ষিণী পরিচালক ই কৃষ্ণাপ্পার সঙ্গে যোগরাজের আলাপ করিয়ে দেন গণেশ। কৃষ্ণাপ্পাও প্রযোজনার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়ে যান।
নায়িকা হিসাবে এক নবাগতাকে পছন্দ করেছিলেন যোগরাজ। ‘মুঙ্গারু মালে’ ছবিতে গণেশের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় কন্নড় অভিনেত্রী পূজা গান্ধীকে। এই ছবি তৈরি করতে মোট ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।
বড় পর্দায় প্রথম ছবি দর্শক কী ভাবে গ্রহণ করবেন তা ঠাহর করতে পারছিলেন না যোগরাজ। কিন্তু ২০১৬ সালে ‘মুঙ্গারু মালে’ ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর দর্শকের কাছে বিপুল ভালবাসা পায়।
‘মুঙ্গারু মালে’ ছবিটির ৮০ শতাংশ দৃশ্য বৃষ্টির মধ্যে শুট করা হয়েছিল। এই ছবিতে সোনু নিগম, উদিত নারায়ণ, সুনিধি চৌহান, শ্রেয়া ঘোষাল এবং কুণাল গাঞ্জাওয়ালার মতো বলিপাড়ার জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীরা গান গেয়েছিলেন।
৭০ লক্ষ টাকা বাজেটে তৈরি ‘মুঙ্গারু মালে’ ছবিটি মুক্তির পর শুধুমাত্র কর্নাটক থেকেই ৫৭ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। বক্স অফিসে এই ছবি বিশ্ব জুড়ে মোট ৭৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে।
একাধিক প্রযোজকের ফিরিয়ে দেওয়া ছবি মুক্তির পর বাজেটের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ব্যবসা করে। ছবিটি টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়।
যোগরাজের কেরিয়ারের প্রথম ছবি চলচ্চিত্রজগতের ইতিহাসে নজির গড়ে তোলে। ‘মুঙ্গারু মালে’ প্রথম ভারতীয় সিনেমা, যা প্রেক্ষাগৃহে টানা ৪৬০ দিন ধরে চলেছিল।