সারা বিশ্বের শিল্পপতিদের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। বাড়ির কোনও অনুষ্ঠানে ভিড় জমে যায় বলি তারকাদের। তবে কোনও বলি নায়িকা যেন বাড়ির পুত্রবধূ হয়ে না আসেন, তা নিয়ে কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন অম্বানী পরিবারের সদস্যেরা। সে কারণে অম্বানী-পুত্রের মন ভাঙতেও দ্বিধাবোধ করেননি তাঁরা।
আশির দশকে বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করে পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন টিনা মুনিম। এক বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে হাজিরা দিতে গুজরাতে যান তিনি। সেই বিয়েবাড়িতেই মনের মানুষের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় টিনার। তিনি অম্বানী পরিবারের পুত্র অনিল অম্বানী।
প্রথম দেখাতেই মনের আদানপ্রদান হয়ে যায় অনিল এবং টিনার। দু’জনের মনের মিল থাকার কারণে তাঁদের মেলামেশা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু অনিলের প্রেম সুনজরে দেখেনি অম্বানী পরিবার।
কানাঘুষো শোনা যায়, বলিউডের কোনও অভিনেত্রী যে অম্বানী পরিবারের গৃহবধূ হতে পারেন না, তা অনিলকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল তাঁর পরিবার। কোনও ভবিষ্যৎ না থাকায় সম্পর্কে ইতি টানেন অনিল এবং টিনা।
বলিউডের গুঞ্জন, অনিলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর টিনা অধিকাংশ সময় নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতেন। কিন্তু মন থেকে অনিলকে ভুলতে পারতেন না তিনি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, হাতে যে কয়েকটি ছবি ছিল সেগুলির কাজ মিটিয়ে বিদেশে পাড়ি দেন টিনা। আমেরিকায় গিয়ে অন্দরসজ্জা (ইন্টেরিয়র ডিজ়াইনিং) নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন তিনি।
অনিল এবং টিনার ভৌগোলিক দূরত্ব বৃদ্ধি পেলেও তাঁদের মানসিক দূরত্ব কোনও অংশে কমে না। বরং টিনার কথা চিন্তা করে বেশির ভাগ সময় মনমরা হয়ে বসে থাকতেন অনিল।
পরিবারের আপত্তির কথা জানার পর চার বছর একে অপরের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি অনিল এবং টিনা। কিন্তু সম্পর্ক ভাঙার কারণে কেউই সুখে ছিলেন না।
অনিলের অবস্থা দেখে অবশেষে মত বদলান অম্বানী পরিবারের সদস্যেরা। টিনাকে বিয়ে করার জন্য সম্মতি জানান তাঁরা। আবার টিনার সঙ্গে যোগাযোগ করেন অনিল।
অনিল চেয়েছিলেন, টিনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে চমকে দেবেন তিনি। ভালবাসার মানুষকে চমক দেওয়ার পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু অনিলের সমস্ত পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেন তাঁর দাদা মুকেশ অম্বানী।
এক সাক্ষাৎকারে অনিল জানিয়েছিলেন, বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা আগে থেকে টিনাকে জানাননি তিনি। অনিল ভেবেছিলেন যে, তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করানোর পর টিনাকে সব জানাবেন তিনি।
অনিলের পরিকল্পনার কথা জানতেন অম্বানী পরিবারের অন্য সদস্যেরা। সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। কিন্তু বাদ সাধলেন মুকেশ। সব কিছু নাকি দায়িত্ব নিয়ে মাটি করে দেন তিনি।
অনিল সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘টিনার সঙ্গে বাবা-মায়ের আলাপ করিয়ে দেব বলে ওকে (টিনা) একটা ঘরে বসিয়ে আমি ভিতরে গিয়েছিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে সেই ঘরে ঢুকে পড়ে দাদা। তখন টিনা ছাড়া ওই ঘরে আর কেউ ছিল না।’’
অনিলের কথায়, ‘‘টিনাকে একা পেয়ে মুকেশ হঠাৎ ওকে প্রশ্ন করে বসে, পরশু তো তোমার আংটিবদল। বাগ্দান হয়ে যাবে। কেমন লাগছে?’’
মুকেশের প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে যান টিনা। তিনি তো কিছুই বুঝতে পারেননি। অনিল জানান, পরে সেই পরিস্থিতি সামাল দেন তাঁর অন্য ভাইবোনেরা। মুকেশ যে নেহাতই মজার ছলে টিনাকে সেই প্রশ্ন করেছেন তা-ও বোঝানো হয় টিনাকে।
১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গাঁটছড়া বাঁধেন অনিল এবং টিনা। তবে বিয়ের পর বলিপাড়া থেকে পুরোপুরি সরে যান তিনি। এখন অম্বানী পরিবারের পুত্রবধূ হিসাবেই টিনার পরিচিতি।