সুসজ্জিত ঘর। রয়েছে রাত কাটানোর সমস্ত উপকরণ। অথচ ভাড়া নামমাত্র। ভারতীয় টাকায় ৬০ টাকারও কম। এই হোটেলে রাত কাটানোর মূল্য এক কাপ কফির খরচের চেয়েও কম। যাঁরা সস্তায় হোটেল খোঁজেন, তাঁদের কাছে এ যেন হাতে চাঁদ পাওয়া!
কিন্তু এই টাকায় হোটেলে থাকতে হলে মানতে হবে একটি বিশেষ শর্ত। ভারতের কোনও শহরে নয়, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রে রয়েছে এই হোটেল। জাপানি মুদ্রায় ১০০ ইয়েন দিলেই থাকার সমস্ত বন্দোবস্ত হয়ে যাবে সেখানে।
সাজানো-গোছানো ঝাঁ-চকচকে শহর। ঘড়ির কাঁটা মেপে চলতে-ফিরতে অভ্যস্ত সকলেই। জাপান বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চেরিফুলের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য, সবুজ গন্ধওয়ালা মাচা চা, রঙিন উজ্জ্বল কিমোনো। আর খাদ্যরসিক হলে সুশি, টেম্পুরা, স্টিকি রাইস, কিমবাপের মতো খাবারের খনি। জাপানের অধিকাংশ শহরের চেহারা বড় নিখুঁত, নিটোল।
এই জাপানেরই এক শহর ফুকুয়োকায় রয়েছে আশি রোওকান হোটেল। সেখানেই মিলছে এত সস্তায় ঘর। তবে সস্তায় ঘর দিচ্ছে বলে ঘরের অবস্থা খারাপ, তা কিন্তু নয়। জাপানি কায়দায় সুসজ্জিত সেই ঘরে রয়েছে বিছানা, টিভি, ছোট কফি টেবিল পর্যন্ত!
এই হোটেলে থাকতে হলে যে শর্তটি মানতে হবে তা কিন্তু বেশ খাপছাড়া। হোটেলের ঘরে সস্তায় থাকতে হলে ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরাবন্দি হয়ে থাকতে হবে অতিথিদের। হোটেলে আগত অতিথিরা যত ক্ষণ ঘরে থাকবেন তাঁদের সমস্ত কার্যকলাপের লাইভ স্ট্রিমিং চলতে থাকবে।
হোটেলের নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। তাতেই সারা দিন ধরে অতিথিদের ঘরের দৃশ্য সরাসরি দেখতে পাবেন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। হোটেলটির ইউটিউব চ্যানেলের নাম ‘ওয়ান ডলার হোটেল’। হোটেলটির ভাড়া নামমাত্র রাখার কারণ হল, ইউটিউব লাইভস্ট্রিম থেকে আসা অর্থ দিয়ে নিজেদের আয় পুষিয়ে নেন হোটেল কর্তৃপক্ষ।
২৭ বছরের তরুণ ইউটিউবার টেটসুয়া ইনয়ু এই হোটেলটি দেখাশোনা করেন। যদিও এই হোটেলের মালিক তাঁর দিদা। ইউটিউব চ্যানেলটিরও মালিক টেটসুয়া। আশি রোওকান পরিচালনার ভার যখন তৃতীয় প্রজন্মের হাতে আসে তখন নতুন কিছু উপায়ে ব্যবসার উন্নতি করতে চান টেটসুয়া।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে নতুন দর্শক এবং নতুন আয়ের উৎস তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। এক ব্রিটিশ পর্যটক এই হোটেলে থাকার সময় লাইভস্ট্রিম করার পর জাপানি যুবকের মাথায় আসে এই বিষয়টি। আশি রোওকানে আসা অতিথিদের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাঁরা যদি লাইভস্ট্রিম করতে সম্মত হন তা হলে মাত্র ১০০ ইয়েন ভাড়া দিতে হবে।
ঘরে লাগানো রয়েছে একটি ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায় ওঠা দৃশ্য সরাসরি লাইভস্ট্রিম করা হয়। যদিও ঘরের বাথরুমের অংশ ক্যামেরার বাইরে আছে বলে জানানো হয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষের তরফে। অতিথিদের কথোপকথন ও ফোনালাপ রেকর্ড করা হয় না। শুধুমাত্র ভিডিয়োগুলি সম্প্রচার করা হয়। অন্তত তেমনটাই দাবি হোটেল কর্তৃপক্ষের।
তবে অতিথিদের আলো নেবানোর অনুমতি রয়েছে। অতিথিদের ব্যক্তিগত নথি যেমন পাসপোর্ট ও ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ক্যামেরার সামনে আনা বারণ। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের সময় নগ্নতা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া কোনও ভাবেই লাইভের ক্যামেরাটি বন্ধ করা যাবে না।
হোটেলের একটি মাত্র কক্ষেই এই ধরনের লাইভ স্ট্রিমিংয়ের জন্য ক্যামেরা বসানো রয়েছে। হোটেলের আট নম্বর ঘরটিতে যাঁরা থাকবেন তাঁরা এই কম ভাড়ার সুবিধা পাবেন।
টেটসুয়া জানিয়েছেন, কম ভাড়ার জন্য হোটেলের অতিথিরা তাঁদের গোপনীয়তা ত্যাগ করতেও পছন্দ করেন। হোটেলের ইউটিউব চ্যানেলে ২৪ ঘণ্টা লাইভস্ট্রিমে থাকতে সম্মত হন। চ্যানেলটির কয়েক হাজারেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন। প্রথম বার চার জন অতিথি এই পরিষেবা নিতে সম্মত হয়েছিলেন।
আরও এক ধরনের হোটেলের অস্তিত্ব রয়েছে জাপানের বড় বড় শহরগুলিতে। সেখানে কোনও বাধা ছাড়াই সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে নিয়ে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটানোর অফুরন্ত সুযোগ মেলে। সেই সমস্ত হোটেলে নেই কোনও নিয়মের চোখরাঙানি, কোনও ক্যামেরা।
রাজধানী টোকিয়ো এবং ওসাকার বুকেই রমরম করে চলে জাপানের বিখ্যাত ‘লভ হোটেল’। নিয়ন আলোয় সাজানো হোটেলগুলিতে যতটা নিষিদ্ধ হাতছানি, ঠিক ততটাই রংচঙে এর অন্দরসজ্জা। হোটেলের কামরাগুলি থিমনির্ভর। আর সেই সমস্ত ঘরের অন্দরসজ্জা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। প্রেমের উদ্দামতার সঙ্গে রয়েছে নিষিদ্ধ হাতছানি।
প্রেমের হোটেলগুলিতে খুঁজে পাওয়া যায় নাটকীয়তা। কক্ষগুলিতে প্রায়শই নিয়ন আলো, শরীর ডুবে যাওয়া গদির বিছানা, বিলাসবহুল শৌচালয় থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উপযুক্ত টিভি, ‘কারাওকে রুম’ ইত্যাদি থাকে। এর বিশেষ ভাবে নকশা করা ঘরগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের কামনা-বাসনা তৃপ্ত করার সেরা উপায় বললে অত্যুক্তি হয় না।
কোনও কোনও হোটেলে সাধারণ ঘরের সঙ্গেই বিশেষ কিছু ঘর আলাদা করা থাকে, যেখানে ঘণ্টার হিসাবে ভাড়া নেওয়া হয়। নিভৃত সময় যাপনের সমস্ত উপকরণ কামরাতেই মজুত থাকে। অনেক সময় ক্লান্ত মানুষ একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্যও পা দেন হোটেলগুলিতে। আবার কেউ কেউ যান শুধু সেই অদ্ভুত থিমড ঘরগুলো দেখতে। আপনিও চাইলে যেতে পারেন শুধুমাত্র দেখার জন্য। এক ঘণ্টার জন্যও ভাড়া পাওয়া যায় হোটেলের ঘর।