পরকীয়ায় আসক্তি বাড়ছে ভারতীয়দের। জনপ্রিয় একটি ডেটিং অ্যাপের তথ্য অন্তত সেটাই বলছে। ‘অ্যাশলে ম্যাডিসন’ নামের ডেটিং অ্যাপের ২০২৫ সালের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে বড় শহর নয়, ছোট শহরে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের চাহিদা বাড়ছে।
অ্যাপটি তাঁদের নতুন গ্রাহক সম্পর্কে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকাশিত সেই তথ্যে জানা গিয়েছে, ছোট শহরগুলিতে এই ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে ছোট ছোট শহরে অ্যাপের গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভারতের বাজারে অ্যাশলে ম্যাডিসনের জায়গা পোক্ত হয়ে উঠছে।
পরিসংখ্যানগত তথ্য দেখে নেওয়ার আগে জেনে নেওয়া দরকার অ্যাশলে ম্যাডিসন অ্যাপটি কিসের প্ল্যাটফর্ম। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে যাঁরা আগ্রহী, তাঁরা এই অ্যাপটি ব্যবহার করে পছন্দমতো সঙ্গী বেছে নিতে পারেন। বিশ্ব জুড়ে এর সদস্য রয়েছে।
ডেটিং প্ল্যাটফর্মটির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, পরকীয়ায় জড়িত থাকার ক্ষেত্রে তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরম শহরটি ‘ফার্স্ট বয়’। এই শহরের বাসিন্দারাই অ্যাপে যোগ গিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। দিল্লি ও মুম্বইকে পিছনে ফেলে আপে যোগদানের ক্ষেত্রে রেকর্ড করেছে তামিলনাড়ুর বহু পুরনো জনপদ কাঞ্চিপুরম।
জনসংখ্যা মাত্র ২ লক্ষ, ভারতের পরকীয়ার হটস্পট হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠছে এই মন্দির শহরটি। পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে দিল্লি এবং মুম্বইকেও ছাপিয়ে গিয়েছে এই শহরটি।
২০২৪ সালে ভারতের এই শহরের বাসিন্দাদের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্ল্যাটফর্মটিকে বেছে নেওয়ার প্রবণতা নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে ডেটিং অ্যাপের সমীক্ষা। অথচ, ২০২৪ সালে করা সমীক্ষায় এই শহরটি ১৭তম স্থান অধিকার করেছিল বলে জানিয়েছে অ্যাশলে ম্যাডিসন।
হঠাৎ করে দেশের প্রধান শহরগুলিকে পিছনে ফেলে কেন তর তর করে দাক্ষিণাত্যের শহরটির বাসিন্দাদের মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের জড়িয়ে পড়ার ইচ্ছা বাড়ছে তার কোনও সুষ্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করেনি সংস্থাটি। এ ছাড়াও সমীক্ষার সূচক বলছে কোনও বড় শহরে নয়, প্রধানত ছোট ছোট শহরে এই ধরনের প্রবণতা বেশি লক্ষ করা গিয়েছে।
পরকীয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ২০টি জেলার মধ্যে দিল্লি ও এনসিআরের ৯টি জায়গা স্থান করে নিয়েছে। কাঞ্চিপুরমকে বাদ দিলে এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মধ্য দিল্লি। পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম, দক্ষিণ, পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম দিল্লির নামও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই তালিকায়। পাশাপাশি, দিল্লির প্রতিবেশী শহর গুরুগ্রাম, গাজ়িয়াবাদ এবং নয়ডার বাসিন্দাদের মধ্যে অ্যাপ ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।
অন্য দিকে, সমীক্ষার ফলে উঠে এসেছে আরও একটি বিশেষ তথ্য। বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ের বাসিন্দাদের পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোয় তেমন আগ্রহ নেই বলেই জানা গিয়েছে। জয়পুর, রায়গড়, কামরূপ এবং চণ্ডীগড়ের মতো শহরগুলিও ‘নিষিদ্ধ প্রেমের’ হাতছানির দিক থেকে সামনের সারিতে জায়গা দখল করে নিয়েছে।
মুম্বইয়ের মতো কলকাতার নামও এই তালিকায় যুক্ত হয়নি। অর্থাৎ, পরকীয়া সম্পর্কে জড়ানোর জন্য ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহী নন তিলোত্তমার বাসিন্দারা।
অ্যাপে যোগ দেওয়া ও অন্যান্য ফিচার ব্যবহারের দিক থেকে টায়ার-২ শহরগুলি বড় শহরগুলির তুলনায় অনেকটাই ‘সাবালক’। প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছে এই তালিকা কেবল নতুন ব্যবহারকারীর যোগ দেওয়ার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়নি। ব্যবহারকারীরা কী কী ফিচার ব্যবহার করেছেন সেই তথ্যের উপরও ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
সমীক্ষার ফলে জানা গিয়েছে ভারত এবং ব্রাজ়িলের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সঙ্গীর সঙ্গে প্রতারণা করার হার সবচেয়ে বেশি। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৫৩ শতাংশ ভারতীয়ই স্বীকার করেছেন যে তাঁরা কোনও না কোনও সময় সঙ্গীকে ফাঁকি দিয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছিলেন।
ভারতে পরকীয়া অপরাধ নয়। অপরাধ না হলেও বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে পরকীয়া। প়ৃথিবীর বহু দেশেই এখন পরকীয়া আর অপরাধ নয়। চিন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রাজ়িলের মতো দেশের সঙ্গে ভারতেরও নাম জুড়েছে।
তা সত্ত্বেও পরকীয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের অন্ত নেই। কিন্তু তাই বলে থেমেও নেই পরকীয়ার প্রবণতা। চিরকালই নিষিদ্ধ প্রেমের হাতছানিতে সাড়া দিয়েছেন বহু পুরুষ এবং মহিলা। পরকীয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য চালানো হয়েছে নানা সমীক্ষাও। সেখানে উঠে এসেছে একাধিক কারণ। মানসিক দূরত্বের পাশাপাশি, শারীরিক অপূর্ণতা থেকেও পরকীয়া সম্পর্কের দিকে ঝোঁকেন মানুষ।
অন্য একটি খ্যাতনামা ডেটিং ওয়েবসাইটের সমীক্ষা বলছে, ১২টি পেশার মানুষের মধ্যে পরকীয়ার প্রবণতা সর্বাধিক। আর এই পেশার মানুষদের মধ্যে পরকীয়ার প্রবণতায় শীর্ষে রয়েছেন চিকিৎসকেরা।
অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা অনলাইনে বন্ধু পাতাতে ভালবাসেন। বিয়ের পরেও অনেকে লুকিয়ে ফেসবুকের বন্ধুর সঙ্গে প্রেমালাপ করেন। এমন সম্পর্কে অনেক সময়েই যৌনবার্তারও আদানপ্রদান চলে। সামনাসামনি নয়, পুরো বিষয়টিই হয় ডেটিং অ্যাপ কিংবা অন্য কোনও সমাজমাধ্যমের পাতায়। অনেকেই আছেন, যাঁরা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
অ্যাশলে ম্যাডিসনের কর্মকর্তা পল কেবলের মতে, ভারতীয়েরা সম্পর্ক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহসী হয়ে উঠছে। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক খোঁজার ক্ষেত্রে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারের নিরিখে বিশ্ববাজারে ভারত ইতিমধ্যেই ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বলে জানান পল।
সমাজের চোখরাঙানির তোয়াক্কা না করেই একক সম্পর্কে আটকে না থেকে পরকীয়া বা একাধিক সম্পর্কের আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। নিষিদ্ধ প্রেমের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে ডেটিং অ্যাপ ব্যবহারে এগিয়ে এসেছেন বহু পুরুষ এবং মহিলা। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে ছুতমার্গ কমছে ও এর গ্রহণযোগ্যতা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।