ছোট পর্দার অভিনেতা হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। কয়েক বছর পর বড় পর্দায়ও অভিনয় করতে শুরু করেন। কিন্তু ছোট পর্দার জনপ্রিয় নায়ক থেকে গেলেন ক্যামিয়ো চরিত্র এবং পার্শ্বচরিত্র হিসাবেই। ‘সিআইডি’ ধারাবাহিকে অভিনয় করে রাতারাতি পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন শরদ কেলকর। অভিনেতার দাবি, তাঁর সহ-অভিনেত্রীই নাকি শরদের কেরিয়ারের মাইলফলক গড়ে তোলার জন্য দায়ী।
১৯৭৬ সালের অক্টোবর মাসে মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে জন্ম শরদের। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে সেখানকার এক কলেজ থেকে এমবিএ করেন। অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু কেরিয়ারের গোড়ায় বার বার মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছিল তাঁকে।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, একটানা কথা বলার সময় সমস্যা হত শরদের। মাঝেমধ্যে কথা আটকে যেত তাঁর। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই নাকি সেই কারণে অভিনেতাকে কাজের প্রস্তাব দিতে চাইতেন না।
২০০১ সাল থেকে ছোট পর্দায় কেরিয়ার শুরু শরদের। তার মাঝে বড় পর্দায় অভিনয়েরও সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অক্ষয় খন্না এবং করিনা কপূর খান অভিনীত ‘হলচল’। সেই ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন শরদ। কেরিয়ারের প্রথম হিন্দি ছবিকে ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল শরদের জীবনে।
শরদের দাবি, ‘হলচল’ ছবির এক সহকারী পরিচালক নাকি তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার। করিনার বিপরীতে বহু ক্ষণ অভিনয়ের সুযোগও নাকি পাওয়ার কথা ছিল শরদের। তা শুনে প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন শরদ। কিন্তু শুটিং ফ্লোরে গিয়ে দেখলেন অন্য রূপ।
শরদ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে করিনার হাতেগোনা কয়েকটি দৃশ্য ছিল। এমনকি, তাঁর চরিত্রটি তেমন গুরুত্বপূর্ণও ছিল না। শরদ চিত্রনাট্য অনুযায়ী অভিনয় করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন।
শরদ জানিয়েছিলেন, তিনি ‘হলচল’ ছবির শুটিং শেষ করলেও ডাবিংয়ের সময় আর যাননি। শরদের চরিত্রের জন্য অন্য ব্যক্তি কণ্ঠ দিয়েছিলেন বলে দাবি অভিনেতার। তাঁকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বলেই এই পদক্ষেপ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন শরদ।
২০০৪ সালে ‘আক্রোশ’ নামের এক হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন শরদ। সেই ধারাবাহিকে তাঁর সহ-অভিনেত্রী ছিলেন কীর্তি গায়েকড় কেলকর। প্রথম দেখায় প্রেম না হলেও দুই তারকার বন্ধুত্ব ক্রমশ গভীর হতে থাকে।
শুটিংয়ের পর নাকি মাঝেমধ্যেই ঘুরতে বেরিয়ে যেতেন শরদ এবং কীর্তি। কখনও কোনও দোকানে কেনাকাটি করতে যেতেন। কখনও আবার ডেটেও যেতেন তাঁরা।
শরদের দাবি, কীর্তি জীবনে আসার পর অভিনেতার কেরিয়ার অন্য দিকে মোড় নিয়েছিল। একসঙ্গে নাকি দু’টি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন শরদ। কয়েক মাসের মধ্যেই রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
কীর্তির সঙ্গে জুটি বেঁধে একাধিক ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন শরদ। তাঁদের সম্পর্কের রসায়ন দর্শকের মনেও ধরেছিল। সেটে কীর্তির জন্য মাঝেমধ্যেই প্রিয় খাবার রান্না করে নিয়ে যেতেন অভিনেতা। এমনকি, কীর্তি যখন তাঁর কেরিয়ারে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন শরদই ছিলেন তাঁর সর্ব ক্ষণের সঙ্গী।
২০০৫ সালের জুন মাসে সাত পাকে বাঁধা পড়েন শরদ এবং কীর্তি। ২০০৬ সালে সম্প্রচারিত টেলিভিশনের নামকরা নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারকা-জুটি। কিন্তু প্রতিযোগিতার অন্তিম পর্ব পর্যন্ত পৌঁছোতে পারেননি তাঁরা।
শরদের দাবি, তাঁর নাকি খুব তাড়াতাড়ি মাথা গরম হয়ে যেত। সে কারণে নিজের ক্ষতিও করে ফেলতেন তিনি। এক বার নাকি রাগের চোটে কাচে ঘুষি মেরেছিলেন শরদ। ১৫০ খানা সেলাই পড়েছিল তাঁর হাতে। অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছিল। এই ঘটনায় কীর্তিকে এতটাই ভেঙে পড়তে দেখেছিলেন যে, তার পর থেকে আর সহজে রাগ করতেন না শরদ।
টেলিভিশনের বহুল পরিচিত মুখ শরদ। বহু জনপ্রিয় হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্যামিয়ো চরিত্র অথবা পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
আগে যে কারণে অভিনয়ের সুযোগ পেতেন না, বর্তমানে তাঁর জন্য আলাদা কাজের ডাক পান শরদ। কথা বলার সমস্যা ছিল বলে আগে কাজ পেতে সমস্য হত তাঁর। পরে তিনি এই সমস্যার সমাধান করেন। বর্তমানে কণ্ঠের জন্যও জনপ্রিয় তিনি।
‘ডন অফ দ্য প্ল্যানেট অফ দ্য এপ্স’, ‘গার্ডিয়ান্স অফ দ্য গ্যালাক্সি’, ‘ক্যাপ্টেন মার্ভেল’, ‘ফিউরিয়াস ৭’-এর মতো বহু ইংরেজি ভাষার ছবিতে হিন্দি ডাবিংয়ের জন্য কণ্ঠ দিয়েছেন শরদ। এমনকি, ‘বাহুবলী’, ‘আদিপুরুষ’, ‘সালার’-এর মতো একাধিক দক্ষিণী ছবিতেও কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি।