হঠাৎ করে দেখলে হেমা মালিনী বলে ভ্রম হতে পারে। মুম্বইয়ের মাহিম এলাকার দরিদ্র পরিবার থেকে বলিউডের রুপোলি দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন রুকসানা। যদিও এই নাম বললে হয়তো তাঁকে কেউ চিনতে পারবেন না। হেমার সঙ্গে চেহারার সাদৃশ্যের পাশাপাশি মিল বজায় রেখে নিজের নাম নির্বাচন করেছিলেন রুকসানা।
বলিউডে কেরিয়ার গড়তে রুকসানা নাম বদলে হয়ে ওঠেন মধু মালিনী। ১৯৫০ সালে অতি সাধারণ এক পরিবারে জন্ম হওয়া সত্ত্বেও স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেননি। অচিরেই গ্ল্যামারের জগতে পা রাখেন তিনি। ধীরে ধীরে বলিউডে জমি শক্ত করার লক্ষ্যে সফল হতে শুরু করেন মধু। তারকাখ্যাতি কপালে না জুটলেও সহ-অভিনেত্রী হিসাবে দর্শকের হৃদয় ছুঁতে সফল হয়েছিলেন মধু।
ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় করে মুম্বইয়ে নিজের জমি শক্ত করার চেষ্টা করেন মধু। তাঁর কেরিয়ারের প্রথম দিকের ছবি ছিল ‘ড্রিম গার্ল’ (১৯৭৭ সাল) এবং ‘প্রতিজ্ঞা’ (১৯৭৫ সাল)। দু’টি ছবিতে একই রকম চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। যদিও এই ধরনের চরিত্রগুলি তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ অভিনেত্রীর পরিচিতি এনে দিয়েছিল। তবুও তিনি যে ধরনের খ্যাতির অন্বেষণে বলিউডে পা দিয়েছিলেন তা দিতে সমর্থ হয়নি।
মধুর কেরিয়ারের মোড় ঘুরে যায় ১৯৭৮ সালে। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ হয় তাঁর। তবে নায়িকার চরিত্রের শিকে ছেঁড়েনি মধুর ভাগ্যে। বিগ বি-র বোনের চরিত্রে অভিনয় করেই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল তাঁকে। ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’ ছবিতে অমিতাভের সহোদরার ভূমিকায় অভিনয়ে নজর কেড়ে নেন ফিল্ম সমালোচক ও দর্শকেরও।
নির্ভরযোগ্য সহায়ক অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন মধু। তার পর থেকেই বলিউডের ‘ড্রিম গার্ল’ হেমা মালিনীর সঙ্গে তাঁর মিলের বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয় ইন্ডাস্ট্রিতে। বলিউডের অভ্যন্তর ও দর্শকমহল— উভয় স্থানেই তাঁদের মধ্যে বহু সাদৃশ্য খুঁজে বার করা হয়। এই মিলই তাঁর মধু মালিনী নামটি গ্রহণের অন্যতম কারণ।
মধু মালিনী নামের মাধ্যমেই তিনি বলিপাড়ায় পরিচিতি খুঁজে পান। হারিয়ে যায় পিতৃদত্ত রুকসানা নামটি।
এর পর তিনি ‘লাওয়ারিস’ (১৯৮১), ‘এক দুজে কে লিয়ে’ (১৯৮১), ‘খুদ্দর’ (১৯৮২) এবং ‘রাজিয়া সুলতান’ (১৯৮৩) এর মতো বড় বড় প্রযোজনায় কাজ করেন। ‘রাজিয়া সুলতান’ নামের ছবিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন স্বয়ং হেমা মালিনী। ‘ড্রিম গার্ল’-এও হেমার সঙ্গে পর্দায় দেখা গিয়েছিল মধুকে।
তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় চরিত্রগুলির মধ্যে একটি ছিল ‘অবতার’ (১৯৮৩)। অবতার ছবিতে রাজেশ খন্নার ধূর্ত পুত্রবধূর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মধু। চক্রান্তকারী পুত্রবধূর চরিত্রে অভিনয়ের দৃঢ়তার জন্য দর্শকের প্রভূত প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন মধু।
হিন্দি সিনেমায় বেশির ভাগ চরিত্রে তাকে সহযোগী হিসাবে অভিনয় করতে দেখা গেলেও মধু আঞ্চলিক ছবিতে বেশি সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি পঞ্জাবি, মালয়ালম, তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং গুজরাতি ছবিতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন। ১৯৮৩ সালে, তিনি পঞ্জাবি ছবি ‘আম্ব্রিতে’ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ করেন।
বড় বড় তারকাদের সঙ্গে অভিনয়জীবন শুরু করলেও খ্যাতির চূ়ড়ায় পৌঁছোতে পারেননি হেমার ‘বডি-ডাবল’। তিনি কখনও বলিউডের শীর্ষস্থানীয় নায়িকাদের মতো তারকাখ্যাতি অর্জন করতে পারেননি। পর্দার বিভিন্ন চরিত্রের জন্য তাঁকে বাছা হলেও নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি বলিউডে। তিনি সমস্ত চরিত্রগুলি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যা কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে না থাকলেও গল্পের গভীরতা বৃদ্ধি করার জন্য অপরিহার্য ছিল।
‘অবতার’-এ খল চরিত্রে তাঁর অভিনয় ব্যাপক ভাবে আলোচিত হয়েছিল সেই সময়। বহুমুখী সহ-অভিনেত্রী হিসাবে মধুর স্থান বলিউডে পোক্ত হয়েছিল। সিনেপ্রেমীদের ভালবাসা ও সমালোচকদের প্রশংসা সত্ত্বেও কোনও নায়িকার চরিত্র তাঁর ঝুলিতে এসে পড়েনি।
মাত্র ৩৩ বছর বয়সে মুম্বইয়ের অ্যাপার্টমেন্টে মধুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আকস্মিক ও মর্মান্তিক পরিণতির ফলে তাঁর অভিনয়জীবনেরও সমাপ্তি ঘটে। মৃত্যুর সঠিক কারণ আজও নির্ধারণ করা যায়নি।
সেই সময়ের প্রতিবেদনে ব্রেন ফ্লু হওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ কখনও নিশ্চিত করা যায়নি। মৃত্যু পরবর্তী তদন্তে চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যায়নি। তার ফলে এই অভিনেত্রীর মৃত্যুরহস্য আড়ালে রয়ে গিয়েছে। তদন্তে কোনও রকম সমাধান না পেয়ে তদন্ত শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।