Nambi Narayanan

পাকিস্তানের চর ছিলেন ইসরোর প্রাক্তনী? মলদ্বীপের রমণীদের নিয়ে ডুবেছিলেন ষড়যন্ত্রে?

‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’ মাধবনের পরিচালিত প্রথম ছবি। সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ‘সেরা ছবি’ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছে এটি। এই ছবির নেপথ্যে রয়েছেন ইসরোর এক প্রাক্তন বিজ্ঞানী।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৯
Share:
০১ ২২

২৪ অগস্ট, ২০২৩। অভিনেতা রঙ্গনাথন মাধবন (আর মাধবন)-এর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবিটি জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে ‘সেরা ছবি’র তকমা পেয়েছে।

০২ ২২

ছবির নাম ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’। তামিল ছাড়াও এই ছবি হিন্দি, মালয়ালম-সহ অন্য বেশ কিছু ভাষায় মুক্তি পায়। ছবিটির কাহিনি গড়ে উঠেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর এক প্রাক্তন বিজ্ঞানীকে নিয়ে।

Advertisement
০৩ ২২

নাম্বি নারায়ণন ইসরোয় যোগ দিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে। কেরলে ইসরোর একটি রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে প্রযুক্তিবিদ হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁরই জীবনকাহিনি অবলম্বনে তৈরি মাধবনের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি।

০৪ ২২

ইসরোয় নাম্বির দীর্ঘ ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে এক দিকে যেমন সাফল্যের স্রোত বয়ে গিয়েছে, অন্য দিকে তেমনই লেগেছে দুর্নীতি, অপরাধ এবং বিশ্বাসঘাতকতার কালি। সেই অন্ধকারে আলো এনেই রুপোলি পর্দায় সফল মাধবন।

০৫ ২২

ইসরোয় রকেট প্রযুক্তিতে বিপ্লব এনেছিলেন নাম্বি। তাঁর নেতৃত্বে ইসরোর বিজ্ঞানীরা ‘বিকাশ ইঞ্জিন’ তৈরি করেন। ইসরোর বেশির ভাগ রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রেই এই ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।

০৬ ২২

রকেটে তরল প্রোপালশন ব্যবহারের কৃতিত্বও নাম্বির। ইসরোয় কর্মরত অবস্থায় ভারত সরকার তাঁকে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে পাঠিয়েছিল। সেখান থেকে রকেট প্রোপালশনের বিষয়ে হাত পাকিয়ে এসেছিলেন নাম্বি।

০৭ ২২

নাম্বি বিদেশে গিয়ে ইটালীয় বিজ্ঞানী লুইগি ক্রোকোর কাছ থেকে রকেটের প্রোপালশনে রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়ে কাজ শেখেন। ফিরে আসেন রকেটে তরল প্রোপালশন ব্যবহারের বিশেষজ্ঞ হয়ে।

০৮ ২২

তার আগে পর্যন্ত ভারতের রকেট প্রযুক্তি কঠিন প্রোপালশনের উপরেই নির্ভরশীল ছিল। দেশের প্রথম তরল প্রোপালশনের উৎক্ষেপণ যন্ত্র পিএসএলভি (পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্‌ল)-তেও নাম্বির বিকাশ ইঞ্জিন ব্যবহৃত হয়।

০৯ ২২

নাম্বি তাঁর বইতে দাবি করেন, বিখ্যাত পদার্থবিদ বিক্রম সারাভাইকে রকেটের তরল প্রোপালশনের পাঠ পড়িয়েছিলেন তিনিই। তাঁর বিকাশ ইঞ্জিনের প্রথম সফল পরীক্ষা হয় ১৯৮৫ সালে।

১০ ২২

রকেট প্রযুক্তিতে পারদর্শিতা নাম্বিকে ইসরো তথা ভারতের মহাকাশ গবেষণা মহলে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল সহজেই। কিন্তু তাঁর সফল কেরিয়ার কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে কয়েক বছর পরেই।

১১ ২২

১৯৯৪ সালের ৩০ নভেম্বর নাম্বিকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল অত্যন্ত গুরুতর। তিনি নাকি ইসরোর অন্দরের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপনে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছিলেন।

১২ ২২

গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে কেরল পুলিশ নাম্বিকে গ্রেফতার করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে দেখানো হয়েছিল একটি ভিডিয়ো, যেখানে তাঁকে দুই রমণীর কাছ থেকে টাকা নিতে দেখা যায়।

১৩ ২২

নাম্বিরই এক সহকর্মী ওই ভিডিয়োটি পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। জানা যায়, যাঁদের কাছ থেকে নাম্বিকে টাকা নিতে দেখা যায়, তাঁরা মলদ্বীপের নাগরিক।

১৪ ২২

মলদ্বীপের ওই দুই তরুণীর নাম মারিয়ম রশিদা এবং ফৌজিয়া হাসান। অভিযোগ, তাঁরা দু’জনেই গুপ্তচর। নাম্বির কাছ থেকে ইসরোর রকেট প্রযুক্তির গোপন তথ্য নিয়ে তাঁরা পাকিস্তানে পাচার করছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে।

১৫ ২২

অভিযোগ, রকেট প্রযুক্তির অনেক গুরুত্বপূর্ণ চিত্র এবং তথ্য টাকার জন্য জেনেশুনে নাম্বি পড়শি দেশ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেরল পুলিশের পাশাপাশি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) আধিকারিকেরাও তদন্ত শুরু করেন।

১৬ ২২

তবে নাম্বির বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি। বরং অভিযোগগুলি অসত্য বলে প্রমাণিত হয়। সব মিলিয়ে ৫০ দিন জেল খেটেছিলেন নাম্বি। তার পর মুক্তি পান।

১৭ ২২

জেল থেকে বেরিয়ে নাম্বি দাবি করেছিলেন, ইসরোর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলার জন্য তদন্তকারী আধিকারিকেরা তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন। এই মামলায় তাঁর বস তথা লিকুইড প্রোপালশন সিস্টেম সেন্টারের তৎকালীন ডিরেক্টর এ.ই.মুথুনায়গমের নাম জড়াতেও বলা হয়েছিল নাম্বিকে।

১৮ ২২

তদন্তকারীদের জেরা চলাকালীন তাঁর উপর অত্যাচার, শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগও করেন নাম্বি। অত্যাচারের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল।

১৯ ২২

নাম্বির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মামলাটি ১৯৯৪-এর ডিসেম্বরে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় কেরল সরকার। সিবিআই কেন্দ্রীয় সরকারের ‘হাতের পুতুল’ বলে সে সময় সরব হয়েছিলেন কেরলের বিরোধী দলগুলি। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

২০ ২২

১৯৯৬ সালে এই মামলার রিপোর্ট প্রকাশ করে সিবিআই। সেখানে নাম্বিকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টও এই মামলায় নাম্বিতে নির্দোষ বলে চিহ্নিত করে। উল্টে কেরল সরকারকে মামলার অভিযুক্তদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।

২১ ২২

নাম্বির বিরুদ্ধে বড়সড় ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। চক্রান্ত করে তাঁর কেরিয়ারে কালি লেপে দেওয়া এবং সম্মান ভুলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। ২০২১ সালের এপ্রিলে এই চক্রান্তে কেরলের পুলিশ আধিকারিকদের যুক্তি থাকার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত করে দেখতে বলে সিবিআইকে।

২২ ২২

নাম্বির জীবনের এই ওঠাপড়া, ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানে তাঁর অবদান তৃতীয় চন্দ্রযানের সাফল্যের আবহে নতুন করে চর্চায় উঠে এসেছে। ইসরোর সাফল্যে কেন্দ্রীয় সরকার, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইসরোর আধিকারিকদের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন ৮১ বছরের এই বিজ্ঞানী।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement