দেশ জুড়ে চালু হয়ে গেল নতুন জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) ব্যবস্থা। সোমবার থেকে প্রায় সমস্ত পণ্যের উপর জিএসটি চাপবে ৫ শতাংশ বা ১৮ শতাংশ হারে। নয়া ব্যবস্থায় ১২ এবং ২৮ শতাংশের দু’টি স্তর বাতিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জিসএটি ব্যবস্থায় এই নয়া সংস্কারের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম কমছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের নেতৃত্বে কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে কর ব্যবস্থা সংস্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঠিক হয়, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন জিএসটি ব্যবস্থা কার্যকর হবে। সেইমতো সোমবার থেকে তা কার্যকর হচ্ছে।
দুগ্ধজাত পণ্য থেকে শুরু করে গাড়ি, ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স— নতুন জিএসটি ব্যবস্থায় সোমবার থেকে সস্তা হচ্ছে ৩৭৫টি পণ্য। জিএসটি সংস্কারের ফলে উৎসবের মরসুমের মুখে সাধারণ মানুষের হেঁশেলে স্বস্তি তো বটেই, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এমনকি সাজসজ্জার সরঞ্জামেও বেশ খানিকটা ছাড় পাওয়া যাবে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নয়া জিএসটি ২.০ কার্যকর হওয়ার সুবিধা কী হচ্ছে। মধ্যবিত্তের জীবনেই বা এর প্রভাব কী।
নতুন জিএসটি হার কার্যকর হওয়ার পর অব্যাহতি পাচ্ছে জীবন বিমা পলিসিগুলি। সমস্ত ব্যক্তিগত জীবন বীমা পলিসি এখন থেকে জিএসটি মুক্ত। এর ফলে সরাসরি উপকৃত হবেন বহু সাধারণ মানুষ।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিমা পলিসিগুলির উপর থেকেও জিএসটি সরছে সোমবার থেকে। ফলে, জনগণের করের টাকা তাঁদের পকেটেই থাকবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বিষয়।
নতুন জিএসটি ব্যবস্থায় একাধিক জীবনদায়ী ওষুধের উপর জিএসটি পুরোপুরি তুলে না নেওয়া হলেও অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, এখন থেকে সেগুলির উপর ৫ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া হবে। অর্থাৎ, দাম আগের থেকে কমবে। উপকৃত হবেন সাধারণ মানুষ।
ডায়াগনস্টিক কিট এবং গ্লুকোমিটারের মতো চিকিৎসা সরঞ্জামের উপরও জিএসটি চাপবে ৫ শতাংশ হারে। সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার ইতিমধ্যেই ওষুধ সংস্থাগুলিকে তাদের দামে সংশোধন করার বা নতুন জিএসটি ব্যবস্থা অনুযায়ী কম দামে ওষুধ বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রকের যুক্তি, যদি ওষুধগুলিকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি দেওয়া হয়, তা হলে উৎপাদকেরা কাঁচামাল এবং প্যাকেজিংয়ের মতো উপকরণের উপর ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (আইটিসি) দাবি করার ক্ষমতা হারাবেন।
দুধ, ছানা, পনির, পাউরুটির উপর ৫ শতাংশ জিএসটি ছিল। নতুন জিএসটি ব্যবস্থায় তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ফলে এই সমস্ত পণ্যে আর কোনও কর দিতে হবে না। তবে, এই ছাড় উদ্ভিজ্জ দুধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। জিএসটি ২.০-এর আওতায়, সয়া দুধ-সহ সমস্ত উদ্ভিজ্জ দুধের উপর ৫ শতাংশ কর রয়েছে।
কনডেন্সড মিল্ক, মাখন, ঘি, তেল, পশুচর্বি, সসেজ, সংরক্ষিত বা রান্না করা মাংস, মাছ, চিনি, পাস্তা, নুডল্স, স্প্যাগেটি, চিজ় এবং দুগ্ধজাত যাবতীয় পণ্যের উপর ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে জিএসটি করা হয়েছে ৫ শতাংশ।
জ্যাম, জেলি, মাশরুম, ইস্ট, সর্ষে, সয়াবিন, ভুজিয়া এবং পানীয় জলের ২০ লিটারের বোতলের উপর থেকে জিএসটি ১২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ হয়েছে। দাম কমছে মধু, মিছরি, চকোলেট, কর্নফ্লেক্স, কেক, পেস্ট্রি, স্যুপ, আইসক্রিম, জিলেটিনের। এগুলির উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি ছিল। তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
নতুন জিএসটি সংস্কারের ফলে ফেস পাউডার এবং শ্যাম্পুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমবে। অর্থ মন্ত্রকের দাবি, জিএসটি কাঠামোকে সরল করার জন্যই এই ধরনের পণ্যের উপর জিএসটি কমছে।
বিড়ির দামও কমছে। বিড়ির পাতার উপর ১৮ শতাংশ থেকে জিএসটি কমে হচ্ছে ৫ শতাংশ। বিড়ির উপর ২৮ শতাংশ থেকে জিএসটি কমে হচ্ছে ১৮ শতাংশ। স্পা, জিম, যোগব্যায়াম কেন্দ্র এবং বিভিন্ন হেল্থ ক্লাবের খরচ আগের চেয়ে কমবে। এগুলি থেকে নেওয়া হবে ৫ শতাংশ জিএসটি। দাম কমছে সিমেন্ট, কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, সার, ট্র্যাক্টরের সরঞ্জাম এবং সেলাই মেশিনের।
ছোট গাড়ি (১২০০ সিসি-র নীচে পেট্রল, ১৫০০ সিসি পর্যন্ত ডিজ়েল এবং এলপিজি বা সিএনজি), ৩৫০ সিসি-র নীচে বাইকের দাম কমছে। এখন থেকে এই পণ্যগুলিতে ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হবে। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক গাড়িতে জিএসটি নেওয়া হবে ৫ শতাংশ।
জিএসটি ২.০-এর অধীনে সংশোধিত হার আমদানির উপরও প্রযোজ্য হবে। সোমবার থেকে নতুন হারে ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি (আইজিএসটি) আরোপ করা হবে। নির্দিষ্ট ছাড় না দেওয়া পর্যন্ত এটি প্রযোজ্য থাকবে।
ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট ছাড়াই সড়কপথে যাত্রী পরিবহণের উপর ৫ শতাংশ কর ধার্য থাকবে। বিমান ভ্রমণের জন্য ইকোনমি ক্লাস টিকিটের উপর ৫ শতাংশ কর ধার্য থাকবে, যেখানে ব্যবসায়িক এবং অন্যান্য প্রিমিয়াম ক্লাসের টিকিটের উপর ১৮ শতাংশ কর ধার্য থাকবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনও ই-কমার্স বিপণি কোনও পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে অনথিভুক্ত কোনও স্থানীয় ডেলিভারি পরিষেবার সাহায্য নেয়, তা হলে ওই ই-কমার্স বিপণির উপর জিএসটির দায়ভার বর্তাবে।
উল্লেখ্য, জিএসটি সংস্কারের পর কিছু পণ্যের দাম বাড়ছেও। বিলাসবহুল গাড়ি এবং মোটরসাইকেল, প্রাইভেট জেট, রেসিং কারের উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি আরোপ করা হয়েছে।
পানমশলা, বাড়তি চিনি মিশ্রিত পানীয়, কার্বনযুক্ত পানীয়ের দাম বাড়ছে। ২৮ শতাংশ থেকে জিএসটি করা হচ্ছে ৪০ শতাংশ। সিগারেট, চুরুট এবং তামাকজাত যাবতীয় পণ্যের উপর ৪০ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া হবে। তবে এই পণ্যগুলির দামবৃদ্ধির কারণে মধ্যবিত্তের খুব একটা অসুবিধা হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।