Uttarkashi Tunnel Rescue Operation

শুধু উত্তরকাশী নয়, বার বার কঠিন পরীক্ষায় পাশ করেছেন উদ্ধারকারীরা, ছিল ৬৯ দিনের অভিযানও!

উত্তরকাশীর আগেও দেশে-বিদেশে একই রকম পরিস্থতির মুখে পড়তে হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। সুড়ঙ্গ বা খনিতে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা হয়েছে দীর্ঘ অভিযান এবং দিনরাত পরিশ্রমের পর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
উত্তরকাশী শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৭
Share:
০১ ২৪

অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে সু়ড়ঙ্গ। ভরসা বলতে ছিল সুড়ঙ্গে কাজ করার জন্য লাগানো বৈদ্যুতিক বাতি। দিন-রাতের হিসাব বুঝতে বুঝতে সেই সুড়ঙ্গেই ১৭ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। বেরিয়ে আসবেন, এই আশা নিয়ে চালিয়ে গিয়েছিলেন বেঁচে থাকার লড়াই। সেই যুদ্ধে তাঁরা জিতেওছেন। আটকে পড়ার ৪০০ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার উত্তরকাশীর ভাঙা সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসেছেন ওই ৪১ জন।

০২ ২৪

গত ১২ নভেম্বর উত্তরকাশী জেলার ব্রহ্মতাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সুড়ঙ্গটি সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ।

Advertisement
০৩ ২৪

ভাঙা সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রায় ৬০০ মিটার ধ্বংসস্তূপের পিছনে আটকে পড়েন কর্মরত ৪১ জন শ্রমিক। সেই ঘটনার ১৭ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে ওই ৪১ জনকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা। এর পরে ওই কর্মীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাঁদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন।

০৪ ২৪

তবে এর আগেও দেশে-বিদেশে একই রকম পরিস্থতির মুখে পড়তে হয়েছে উদ্ধারকারীদের। সুড়ঙ্গ বা খনিতে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করার জন্য চালাতে হয়েছে দীর্ঘ অভিযান এবং দিনরাত পরিশ্রম।

০৫ ২৪

এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ২০০৬ সালে হরিয়ানার বালক প্রিন্সকে উদ্ধারের ঘটনা। ৫০ ঘণ্টার চেষ্টায় অন্ধকার কুয়ো থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল ছোট্ট প্রিন্সকে। উদ্ধারের পর হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার সেই বালকের ছবি দেখেছিল সারা দেশ।

০৬ ২৪

২০০৬ সালের জুলাই মাসে যুবরাজ হলধেরি গ্রামের ৬০ ফুট গভীর পরিত্যক্ত একটি নলকূপে পড়ে যায় পাঁচ বছর বয়সি প্রিন্সকুমার কশ্যপ। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তাকে উদ্ধার করতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেনা এবং স্থানীয় প্রশাসন।

০৭ ২৪

নলকূপে টানা দু’দিন বন্দি থাকার পরে প্রিন্সকে উদ্ধার করা হয়েছিল। অন্ধকূপ থেকে জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসার পরে সবার কাছে ‘দেবশিশু’ পরিচয় পেয়েছিল কুরুক্ষেত্রের হলধেরি গ্রামের পাঁচ বছরের বালক। প্রিন্সের উদ্ধারকে নিয়ে সেই সময় দেশ জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। উত্তাল হয়েছিল দেশের সংবাদমাধ্যম।

০৮ ২৪

২০২২ সালের ২৪ জুলাই। আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার সমারসেট কাউন্টির একটি খনিতে আটকে পড়েন ‘কুইক্রিক মাইনিং ইনকর্পোরেটেড’ সংস্থার ন’জন খনি শ্রমিক। মাটির ২৪০ ফুট নীচে আটকে পড়েন তাঁরা। অক্সিজেনের সমস্যায় পড়েন। তাঁদের চারপাশে জলস্তরও বাড়তে থাকে।

০৯ ২৪

৭৭ ঘণ্টার কঠিন সংগ্রামের পর ২৮ জুলাই আটকে পড়া খনি শ্রমিকদের সফল ভাবে মাটির উপরে তুলে আনেন উদ্ধারকারী দল। ২২ ইঞ্চি প্রশস্ত একটি খাঁচা করে তাঁদের তুলে আনা হয়।

১০ ২৪

১৯৮৯ সালের ১১ নভেম্বর। রানিগঞ্জের মহাবীর কয়লাখনিতে ঘটা ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনও অনেকের মনে জ্বলজ্বল করছে। রানিগঞ্জের মানুষ ভোলেননি সেই সময় খনির ইঞ্জিনিয়ার যশবন্ত সিংহ গিলের সাহসিকতা এবং বীরত্বের কাহিনি। একা হাতে বহু খনি শ্রমিকের প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন তিনি।

১১ ২৪

১১ নভেম্বর গভীর রাতে মহাবীর খনির ২১ এবং ৪২ নম্বর সেকশনে কয়লা কাটার কাজ চলছিল। বেশ কয়েক জন শ্রমিক খনি থেকে উঠে এলেও ২১ নম্বরে ৬১ জন এবং ৪১ নম্বরে ১০ জন শ্রমিক তখনও কাজ করছিলেন। সবাই উঠে এসেছে মনে করে কয়লা উত্তোলনের জন্য খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানো শুরু হয়। আর তার ফলেই ঘটে বিপত্তি। বিস্ফোরণে খনির দেওয়ালে ফাটল ধরে যায়। ব্রিটিশ আমলের সেই দেওয়ালের পাশেই ছিল পুরনো খনির জমা জল।

১২ ২৪

খনির পুরনো দেওয়াল ফেটে প্রায় ১১ লক্ষ গ্যালন জল মহাবীর খনিতে ঢুকে পড়ে। প্রায় ২০০ জন উপরে উঠে এলেও, খনির ভিতর আটকে পড়েন ৭১ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে ৬ জন জলের তোড়ে ভেসে যান। পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

১৩ ২৪

বাকি ৬৫ জন প্রাণ বাঁচাতে খনির ভিতরে একটি উঁচু জায়গায় কোনও রকমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার মধ্যেই খনির ভিতরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এমন অবস্থা হয়েছিল যে পাশে কে দাঁড়িয়ে আছেন, তা-ও বুঝতে পাচ্ছিলেন না খনির শ্রমিকরা। অন্ধকারের মধ্যে একে অপরকে জাপটে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন।

১৪ ২৪

খাবার, পানীয় জল ছাড়া খনির ভিতরে আটকে পড়েছিলেন শ্রমিকেরা। মৃত্যুর চিন্তাও গ্রাস করে অনেককে। তবে কয়েক জন সাহস হারাননি। অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে খনির ভিতরের টেলিফোন পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছিলেন তাঁরা। সেই ফোনের সাহায্যেই কোনও রকমে জানিয়েছিলেন নিজেদের আটকে থাকার কথা।

১৫ ২৪

উদ্ধারকারীরা দেখেন, বোর হোলের মাধ্যমে ক্যাপসুল জাতীয় কোনও জিনিস ঢুকিয়ে শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব। সেই মতো ইসিএলের কুলটির নিয়ামতপুরের ওয়ার্কশপে ১৪ নভেম্বর তড়িঘড়ি লোহার চাদর দিয়ে মানুষের শরীরে সমান ক্যাপসুল তৈরি হয়ে যায়। এর পর ১৯৮৯ সালে ১৫ নভেম্বর আটকে থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করতে রাতভর লড়াই শুরু করেন যশবন্ত এবং তাঁর সহকর্মীরা।

১৬ ২৪

যশবন্তের চেষ্টায় একে একে ৬৫ জন শ্রমিকই উপরে উঠে আসতে সক্ষম হন। সবাইকে উদ্ধার করে ১৬ নভেম্বর ভোরে নিজে উঠে আসেন যশবন্ত। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর সারা দেশে তোলপাড় পড়ে যায়।

১৭ ২৪

রানিগঞ্জে ১৯৮৯ সালের সেই ঘটনার ৩৪ বছর পেরিয়েছে। বাস্তবের সেই ঘটনা পর্দায় ফিরছে অক্ষয় কুমারের হাত ধরে। ‘মিশন রানিগঞ্জ’ নামের সেই ছবি অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। ছবিতে যশবন্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয়।

১৮ ২৪

২০১৮ সালের ২৩ জুন। ১২ জন খুদে ফুটবলার নিয়ে উত্তর তাইল্যান্ডের থাম লুয়াং গুহায় গিয়েছিলেন ‘ওয়াইল্ড বোয়ার্স সকার’ দলের কোচ। কিন্তু গুহাটি বন্যার জলে ভেসে যাওয়ায় সেখানেই আটকে পড়েন তাঁরা। গুহার অভ্যন্তরে জলের স্তর বাড়তে থাকলে তাঁদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

১৯ ২৪

আট দিন পর তাঁদের খোঁজ পায় অনুসন্ধানকারী দল। আটকে থাকা ১২ খুদে ফুটবলার এবং তাদের কোচকে উদ্ধার করে আনতে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিভিন্ন দেশের ৯০ জন ডুবুরি-সহ ১০ হাজার উদ্ধারকর্মী।

২০ ২৪

গুহায় প্রায় তিন সপ্তাহ আটকে ছিলেন ওই ১৩ জন। এর পর ১০ জুলাই কেটামাইন ড্রাগ দিয়ে জলের ভিতর দিয়ে এক এক করে ১৩ জনকে গুহা থেকে উদ্ধার করা হয়।

২১ ২৪

প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ১৩ জনকে উদ্ধার করে এনে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয় তাইল্যান্ডের উদ্ধারকারী সংস্থা। তবে উদ্ধারকাজ চালানোর সময় সামান কুনান নামে তাইল্যান্ড নৌসেনার এক প্রাক্তন আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছিল।

২২ ২৪

২০১০ সালের ৫ অগস্ট। চিলির সান হোসের সোনা এবং তামার খনিতে ধস নামায় মাটির নীচে আটকে পড়েন ৩৩ জন শ্রমিক। তাঁদের কাছে খুব সীমিত পরিমাণ খাবার এবং জল ছিল। খনি আধিকারিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা।

২৩ ২৪

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর তাঁদের উদ্ধারে নামে প্রশাসন। ডাক দেওয়া হয় আর্ন্তজাতিক উদ্ধারকারী সংস্থাকেও। ২২ অগস্ট উদ্ধারকারীরা মাটি থেকে দু’হাজার ফুট নীচে আটকে থাকা খনি শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন একটি ছোট গর্তের সাহায্যে।

২৪ ২৪

প্রশাসনের তরফে খাবার, জল এবং ওষুধ পাঠানো হয়েছিল আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে। চলতে থাকে উদ্ধারকাজও। এর পর ১৩ অক্টোবর অর্থাৎ, খনির নীচে আটকে যাওয়ার ৬৯ দিন পর ওই শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়। চিলির জাতীয় পতাকা আঁকা একটি ধাতব ক্যাপসুলের সাহায্যে তাঁদের মাটির উপরে তুলে আনা হয়।

সব ছবি: এএফপি এবং ফাইল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement