jagannath temple

Anil Gochikar: পুরীর বাহুবলী! জগন্নাথদেবের রথের রশি টানেন স্বয়ং ঈশ্বরের ‘বডিগার্ড’

সঙ্কটের সময়ে যখন পুরীর রথের চাকা গড়ানো নিয়ে সন্দিহান করোনায় ঘরবন্দি ভক্তরা, তখনই রথের দড়িতে টান দিতে আসেন ‘বাহুবলী’।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:১৩
Share:
০১ ১৭

অতিমারিকালে পুরীর রথের চাকা গড়িয়েছিল জগন্নাথের অগুণতি ভক্তদের ছাড়াই। শুনশান রাস্তায় ‘দেবতা’র রথের রশি টেনেছিলেন শুধু তাঁর সেবায়েতরা। পুরীর মন্দিরে ওই সেবায়েতদের সংখ্যা কম নয়। তবে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আর তাঁদের জোড়া জোড়া হাতের শক্তির সঙ্গে হাতে গোণা সেবায়েতদের ক্ষমতার তুলনা চলে না। সঙ্কটের সেই সময়ে যখন পুরীর রথের চাকা গড়ানো নিয়ে সন্দিহান ঘরবন্দি ভক্তরা, তখনই রথের দড়িতে টান দিয়ে দেশের নজরে পড়েন ‘বাহুবলী’।

০২ ১৭

দৃশ্যটি অবিকল সিনেমার মতোই ছিল। দক্ষিণী পরিচালক এস এস রাজমৌলির ছবি ‘বাহুবলী’ প্রথম ভাগের সেই মুহূর্ত। যখন বাহুবলী নিজেই তার মূর্তিকে মাটি থেকে তুলে দাঁড় করাতে বাকিদের সঙ্গে টান দিচ্ছে দড়িতে। পুরীর রথের দড়ি হাতে বাস্তবের ‘বাহুবলী’রও তেমনই একটি ছবি এবং ভিডিয়ো ভাইরাল হয়ে যায়।

Advertisement
০৩ ১৭

দেখা যায়, রথের দড়ি হাতে একটি পেশিবহুল চেহারা। লালমোহনবাবুর মতো ‘এ দিকে চারশো-ও দিকে চারশো’ বললেও বোধহয় কম বলা হয় এমন। সেই চেহারা অবলীলায় টান দিচ্ছে রথের দড়িতে। গড়গড়িয়ে এগোচ্ছে জগন্নাথের রথ নান্দীঘোষের চাকা।

০৪ ১৭

ওই একটি দৃশ্যই বিখ্যাত করে দেয় পুরীর মন্দিরের সেবায়েত অনিল গোচিকারকে। ৪৩-এর যুবক। ছবি দেখে দেশবাসীই নতুন নামকরণ করে অনিলের। জগন্নাথদেবের মন্দিরের সেবায়েত আচমকাই হয়ে যান ‘পুরীর বাহুবলী’।

০৫ ১৭

প্রচার দেরিতে পেয়েছেন। তবে ‘বাহুবলী’ অনিল তাঁর বাহুর উপযুক্ত প্রয়োগ দীর্ঘ দিন ধরেই করে আসছেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে তিনি স্বয়ং জগন্নাথের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী।

০৬ ১৭

অনিলের পরিবার দীর্ঘ দিন ধরেই পুরীর মন্দিরের সেবায়েত। বহু প্রজন্ম ধরে তাঁরা দেবতার দেহরক্ষী এবং ব্যক্তিগত পরিচারক বা অনুচরের ভূমিকা পালন করে আসছেন। এঁরা মন্দিরের ভিতরে থেকে দেবতার সেবা করেন। নাম প্রতিহারী। অনিলের দাদা দামোদর গোচিকরও পুরীর মন্দিরের প্রতিহারী।

০৭ ১৭

‘বডিগার্ড’ বলে কথা! শক্ত সমর্থ তো হতেই হবে। তবে অনিল শুধুই শক্তসমর্থ শরীরের অধিকারী নন। তিনি পেশাদার বডিবিল্ডারও। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বহু প্রতিযোগিতা জিতেছেন।

০৮ ১৭

সাত বার ‘মিস্টার ওড়িশা’-র খেতাব পেয়েছেন। ২০১২ সালে মিস্টার ইন্ডিয়া হন অনিল। তারপর ২০১৪ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ এবং ২০১৬ সালে দুবাইয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছিলেন অনিল।

০৯ ১৭

দেবতার দেহরক্ষীদের পরিবারে জন্ম। তবে তার জন্য যে পেশিবহুল চেহারা থাকতেই হবে এমন নিয়ম নেই। অনিলও জিমে গিয়ে শরীরচর্চায় মন দিয়েছেন সবে ১০ বছর হল।

১০ ১৭

দাদা দামোদরকে দেখেই শরীরচর্চায় আগ্রহী হন অনিল। দামোদর বরাবরই আখড়ায় মুগুর ভাঁজতেন। ছোটবেলায় তাঁর সঙ্গে অনিলও যেতেন আখড়ায়। অতিমারির সময়ে পুরীর রথের দড়ির টানার দৃশ্যে ভাইরাল হয়েছিল দামোদরের ছবিও। অনেকেই ‘বাহুবলী ব্রাদারস’ বলে ডেকেছিলেন তাঁদের। অনিল জানিয়েছেন, দাদাই তাঁর অনুপ্রেরণা।

১১ ১৭

‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এ বিশ্বশ্রী গুণময় বাগচির শরীর-মন্দিরে ছিল পেশির কারুকাজ। দেবতার ‘বডিগার্ড’ বাহুবলী অনিলও তেমন কারুকাজের অধিকারী। নেটমাধ্যমে সেই ছবিও দেন প্রায়শই।

১২ ১৭

তবে দেবতার বডিগার্ড হওয়ার কিছু অসুবিধাও আছে। পুরীর বাহুবলী আমিষ খাবার খেতে পারেন না। তাঁর শরীরচর্চার প্রয়োজনীয় প্রোটিন তিনি পান ডাল, সয়াবিন, ব্রকোলির মতো সব্জি থেকে। আর প্রয়োজনীয় ফ্যাটের যোগান দেয় দেশি ঘি। নিরামিশাষি হওয়ায় শরীরচর্চাও বেশি করতে অনিলকে।

১৩ ১৭

শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপনও করেন অনিল। নেশাগ্রস্ত নন। মদ বা অ্যালকোহল মিশ্রিত পানীয় গ্রহণ করেন না। ধূমপানও করেন না। এমনকি তামাক আছে এমন কিছুই ব্যবহার করেন না অনিল।

১৪ ১৭

ওড়িশার বডি বিল্ডারদের মধ্যে অনিল বেশ জনপ্রিয়। শুধু তাঁর সাফল্যের জন্য নয়। জগন্নাথের মন্দিরে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্যও নয়। অনিল নাকি উঠতি বডি বিল্ডারদের নানা ভাবে সাহায্য করেন। কেউ পরিমিত খাবার না পেলে নিজের উদ্য়োগে তার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও করে দেন অনিল।

১৫ ১৭

অতিমারির আবহে পুরীর রথের দড়িতে টান দিয়েছিলেন অনিল। সাধারণত তাঁর পদে, তাঁর পরিবারের ঐতিহ্য মানলে মন্দিরের বাইরে দেবতাকে সেবা করার কথা নয় তাঁর। তার পরও সেই সুযোগ আসে। কোভিড পরিস্থিতিতে ভক্ত না থাকায় সেবায়েতদের উপরেই দায়িত্ব পড়ে রথ টানার। তখনই মন্দিরের ভিতরের সেবায়েতদেরও পথে নামতে হয়।

১৬ ১৭

অনিল বলেছিলেন, অতিমারি হলেও দেবতা যে তাঁকে এই সুযোগ দিয়েছেন তাতে তিনি ধন্য। অনিলের কথায়, ‘‘দেবতার সেবায় যদি কাজে না-ই লাগাতে পারি, তবে এই দেহসৌষ্ঠব নিয়ে কী করব?’’

১৭ ১৭

কিন্তু লক্ষ লক্ষ ভক্তের অভাবে মাত্র ৩০০ জন সেবায়েত রথ টানলেন কী করে? রাজমৌলির বাহুবলীর মতো তার হাতেও কি জাদু ছিল? অনিলের জবাব, ‘‘সবই ভগবানের ইচ্ছে। ৩০০ লোকের পক্ষে ওই রথ টানা সম্ভবই হত না যদি দেবতা না চাইতেন। আমি তো শুধু গিয়ে দড়ি ধরেছি। রথ আপনিই চলতে শুরু করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement