বাবা, জেঠু দু’জনেই থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত। মঞ্চে অভিনয় শুরু করলেও বড় পর্দায় কেরিয়ার শুরু করেন নায়ক। বলিপাড়ার জনপ্রিয় খলনায়কের কন্যাকে বিয়ে করেন তিনি। তবে দুই দশকের বেশি সময় ধরে বলিউডে থাকলেও কেরিয়ারের ঝুলিতে কোনও একক হিট ছবি জুড়তে পারেননি শরমন জোশী।
১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসে নাগপুরের এক গুজরাতি পরিবারে জন্ম শরমনের। তাঁর বাড়ির একাধিক সদস্য থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায় তাঁর।
নাগপুরে জন্ম হলেও শরমনের পরিবার চলে যায় মুম্বই । সেখানেই স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করেন তিনি। ফারহান আখতার এবং রীতেশ সিধওয়ানির মতো বলি তারকারা সহপাঠী ছিলেন শরমনের।
১৯৯৯ সালে ‘গডমাদার’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন শরমন। ‘গডমাদার’ ছবিতে শাবানা আজ়মির মতো তারকার সঙ্গে পর্দা ভাগ করে নিয়েছিলেন তিনি।
প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার এক বছর পর প্রেম চোপড়ার কন্যা প্রেরণার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন শরমন। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লজ্জা’ ছবিতে বলি অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতের পুত্রের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
বিয়ের পর ‘স্টাইল’, ‘এক্সকিউজ় মি’, ‘শাদি নম্বর ১’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে শরমনকে। বিয়ের ছ’বছর পর তাঁর কেরিয়ারে নতুন মোড় আসে। একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি।
২০০৬ সালে ‘রং দে বসন্তি’ এবং ‘গোলমাল’ ছবি দু’টি মুক্তি পায়। এই দু’টি ছবিতে শরমনের অভিনয় দর্শকের মনে ধরে। তার পর ‘লাইফ ইন আ… মেট্রো’ এবং ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে কাজ করেছিলেন তিনি।
রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন শরমন। ২০০৯ সালে ধারাবাহিকে একটি খেলার অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শরমন। ‘তরক মেহতা কা উল্টা চশমা’ ধারাবাহিকে অতিথিশিল্পী হিসাবেও কাজ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
‘গোলমাল’ ছবিতে কাজ করে প্রশংসা পাওয়ার পর আবার শরমনের কেরিয়ারে ছন্দপতন ঘটে। কখনও কম বাজেটের কমেডি ছবিতে, কখনও বা বি গ্রেড ছবিতে কাজ করেছেন তিনি।
‘গোলমাল’ ছবির পরবর্তী পর্বগুলিতে আর দেখা যায়নি শরমনকে। এক সাক্ষাৎকারে শরমন বলেছিলেন, ‘‘আমি সত্যিই ‘গোলমাল’ ছবিতে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। আমার ম্যানেজার কথা বলার সময় আমার জন্য যে পারিশ্রমিক দাবি করেছিলেন, তা প্রযোজক দিতে রাজি হননি। তাই পরের ছবিগুলিতে আমাকে অভিনয়ের প্রস্তাবও দেওয়া হয়নি।’’
পরে একাধিক বি গ্রেড ছবিতে কাজ করেন শরমন। ‘হেট স্টোরি ৩’, ‘ওয়াজা তুম হো’, ‘১৯২০ লন্ডন’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু সব ক’টি ছবিই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
‘বারিশ’ এবং ‘পবন অ্যান্ড পূজা’ নামে দু’টি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে শরমনকে। কিন্তু দু’টি সিরিজ়ের মধ্যে একটিও জনপ্রিয় হয়নি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘১০ বছরের উপর হয়ে গেল আমি বলিপাড়ার মূল ধারা থেকে দূরে সরে গিয়েছি। জানি না কেন আমি সকলের সঙ্গে মিশতে পারি না। এখনও আমার নিজেকে বহিরাগত মনে হয়।’’
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, বেশি কাজ করার তাগিদে একাধিক বি গ্রেড ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে কেরিয়ার নষ্ট করে ফেলেন শরমন। ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি।
থিয়েটারে অভিনয়, প্রযোজনা এবং পরিচালনার কাজ সামলান শরমন। হিন্দি, মরাঠি এবং গুজরাতি থিয়েটারে অভিনয় করেন শরমন। গুজরাতি নাটকে বধিরের চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা কুড়োন শরমন। সেই নাটক তিন বছর ধরে চলে বলে জানা যায়। সাড়ে পাঁচশোর বেশি শো করেন তিনি। বিভিন্ন নাটকে কমেডি চরিত্রে কাজ করেন শরমন।
চলতি বছরে সলমন খান অভিনীত ‘সিকন্দর’ নামের হিন্দি ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে শরমনকে। তবে এখনও পর্যন্ত কেরিয়ারে একক হিট ছবি জুড়তে পারেননি তিনি। বর্তমানে স্ত্রী এবং তিন সন্তান নিয়ে মুম্বইয়ে থাকেন ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর রাজু রস্তোগি।