বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল-সহ দেশের মোট ৪২টি সংগঠনকে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসাবে ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। পাশাপাশি বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) অনুযায়ী মোট ৩১ জন ব্যক্তিকেও জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করল কেন্দ্র।
বেআইনি কার্যকলাপে সহযোগিতা করার জন্যও ১৩টি সংগঠনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ বলেও ঘোষণা করা হয়। বুধবার রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে এই ঘোষণাটি করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে কেন্দ্র এবং রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে এই নিষিদ্ধ সংগঠন এবং ব্যক্তিদের উপর কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যে সংগঠনগুলিকে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল, যা একটি খালিস্তানপন্থী জঙ্গি সংস্থা। এই সংস্থার প্রধান লক্ষ হল শিখ ধর্মালম্বীদের জন্য স্বতন্ত্র খালিস্তান তৈরি করা। এই তালিকায় রয়েছে খালিস্তান কমান্ডো ফোর্স, খালিস্তান জিন্দাবাদ ফোর্স এবং ইন্টারন্যাশনাল শিখ ইয়ুথ ফেডারেশন, খালিস্তান লিবারেশন ফোর্স-এর নামও।
তালিকায় রয়েছে, লস্কর-ই-তৈবা ওরফে পাসবান-ই-আহলে হাদিস, জঈশ-ই-মহম্মদ ওরফে তেহরিক-ই-ফুরকান, হিজবুল মুজাহিদিন ওরফে হিজবুল মুজাহিদিন পীর পাঞ্জাল রেজিমেন্ট, হরকত-উল-মুজাহিদিন ওরফে হরকত-উল-আনসার ওরফে হরকত-উল-জেহাদ-ই-ইসলামি ওরফে আনসার-উল-উম্মাহ, আল-উমর-মুজাহিদিন সংগঠন এবং জম্মুও কাশ্মীর ইসলামিক ফ্রন্টের নাম।
এই প্রতিটি সংগঠনই ইসলামি জঙ্গি সংগঠন। এদের মধ্যে কয়েকটি সংগঠন কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত। জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে কাশ্মীরে থাকা জঙ্গিদের অর্থ সাহায্যও করে এই সংগঠনগুলি।
এ ছাড়াও সরকারের তরফে নিষিদ্ধ করা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে, জামাত-উল-মুজাহিদিন প্রধান সংগঠনের জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ, জামাত-উল-মুজাহিদিন ভারত, জামাত-উল-মুজাহিদিন হিন্দুস্তান-সহ অন্যান্য শাখাগুলি।
পাশাপাশি, তেহরিক-উল-মুজাহিদিন (টিউএম), ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া, দীনদার অঞ্জুমনের মতো ভারত বিরোধী সংগঠনগুলিকেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জঙ্গি কার্যকলাপে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নাম বার বার উঠে এসেছে।
আলবদর, জমিয়ত-উল-মুজাহিদিন, আল-কায়েদা এবং এর ভারতীয় শাখার মতো বড় জঙ্গি সংগঠনগুলির নামও তালিকায় রয়েছে। তালিকায় রয়েছে দুখতারান-ই-মিল্লাত (ডিইএম) সংগঠনের নামও।
অতি বাম সংগঠনগুলির মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার (এমসিসি)-এর সমস্ত সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তামিলদের জন্য পৃথক দেশ গড়ার দাবিতে লড়াই করা সংগঠনগুলি, যেমন লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম, তামিলনাড়ু লিবারেশন আর্মি এবং তামিল ন্যাশনাল রিট্রিভাল ট্রুপস-এর মতো সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (আলফা), মণিপুর পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (এমপিএলএফ), ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (খাপলাং), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোড়োল্যান্ড, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ), ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (ইউএনএলএফ), পিপলস্ লিবারেশন পার্টি অব কাংলেইপাক, কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (কেসিপি), কাংলেই ইয়াওল কানবা লুপ (কেওয়াইকেএল) এবং এদের সমস্ত সহযোগীদের।
ত্রিপুরার চরমপন্থী সংগঠন অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স এবং ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরাকেও নিষিদ্ধ করা হল। ত্রিপুরায় দীর্ঘ দিন ধরে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর অভিযোগ রয়েছে এই দু’টি সংগঠনের বিরুদ্ধে। ভারতের পার্বত্য এলাকার সক্রিয় সংগঠনগুলির মধ্যে নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছে অখিল ভারত নেপালি একতা সমাজ, গারো ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন-এর সমস্ত সংগঠনগুলি।
এ ছাড়াও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জ দ্বারা চিহ্নিত এবং তালিকাভুক্ত সংগঠনগুলিকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ ইসলামিক স্টেটের সমস্ত জঙ্গিগোষ্ঠীও।