Nvidia’s Downfall

৫৪ ঘণ্টার টানটান নাটক, ৪৫ হাজার কোটি পকেটে এসে গায়েব ৬০ হাজার কোটি ডলার! ফেটে যাবে এনভিডিয়ার বুদবুদ? ধাক্কা খাবে আমেরিকাও?

মার্কিন টেক জায়ান্ট সংস্থা এনভিডিয়ার স্টকে নজিরবিহীন উত্থান-পতন। ৪৫ হাজার কোটি ডলার বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পরের মুহূর্তেই মুছে গিয়েছে ৬০ হাজার কোটি ডলার। ফাটতে চলেছে সংস্থার শেয়ারের বুদবুদ?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:০৮
Share:
০১ ১৬

সাপ-লুডোর খেলায় মার্কিন শেয়ার বাজারে চরম অস্থিরতা। মাত্র ৫৪ ঘণ্টায় উড়ে গেল কোটি কোটি ডলার! ফলে কখনও যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক টেক জায়ান্টের ‘আঙুল ফুলে হয়ে উঠল কলাগাছ’। পরের মুহূর্তেই কয়েক হাজার কোটি লোকসান হল তাদের। এ-হেন চড়াই-উতরাই সামলে আগামী দিনে আদৌ কি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে তারা? না কি জায়গা দখল করবে কৃত্রিম মেধা বা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স)? ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্নে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

০২ ১৬

আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ার বাজারে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়া টেক জায়ান্ট সংস্থাটি হল এনভিডিয়া। চলতি বছরের নভেম্বরের গোড়াতেই রকেট গতিতে ছুটতে থাকে তাদের স্টক। ফলে সংশ্লিষ্ট টেক জায়ান্টটির বাজারমূল্যে যুক্ত হয় ৪৫ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু নজিরবিহীন ভাবে তার পরেই ভেঙে পড়ে এনভিডিয়ারের স্টকের দাম। ফলে ৬০ হাজার কোটি ডলার লোকসান হয় তাদের।

Advertisement
০৩ ১৬

এনভিডিয়ার শেয়ারের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির নেপথ্যে সুনির্দিষ্ট একটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, এআইভিত্তিক প্রযুক্তিকে তাদের তৈরি চিপ বা সেমিকন্ডাক্টরে জুড়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখেছে সংশ্লিষ্ট টেক জায়ান্ট। তবে যে গতিতে তাদের স্টকের সূচক নিম্নমুখী হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১,৯০০ কোটি ডলার খুইয়েছে এনভিডিয়া।

০৪ ১৬

আর্থিক বিশ্লেষকদের একাংশের দাবি, এই ঘটনা এনভিডিয়ার ব্যবসায় সে ভাবে প্রভাব ফেলবে না। কারণ, শেয়ার দরের এই মেগা পতনের সঙ্গে সংস্থার রাজস্বের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া এআই প্রযুক্তির দিকে যথেষ্ট নজর রয়েছে সংশ্লিষ্ট মার্কিন টেক জায়ান্টটির। আগামী দিনের কথা ভেবে আরও উন্নত চিপ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ লগ্নিকারীদের একাংশ।

০৫ ১৬

এনভিডিয়ার বিনিয়োগকারীদের তালিকায় তিনটি বড় নাম রয়েছে। তাঁরা হলেন, জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন উদ্যোগপতি পিটার থিয়েল, সফ্‌ট ব্যাঙ্কের চিফ এক্‌জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) মাসায়োশি সন এবং আমেরিকান লগ্নিকারী মাইকেল বারি। এঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের হাতে থাকা এনভিডিয়ার বিপুল শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।

০৬ ১৬

পিটার, মাসায়োশি এবং মাইকেলের যুক্তি, কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তির জন্য সফট্অয়্যারের দিকে না গিয়ে হার্ডঅয়্যারের দিকে ঝুঁকেছে সংশ্লিষ্ট মার্কিন টেক জায়ান্ট। কিন্তু এতে কোম্পানির তেমন লাভ হবে না। কারণ, বাজারে নতুন খেলোয়াড় চলে এলে আর আগের মতো কদর থাকবে না এনভিডিয়ারের চিপের। আর তখনই ডুববে তারা। সেই বিপদ আঁচ করেই স্টক বিক্রি করেছেন তাঁরা।

০৭ ১৬

তা ছাড়া আরও একটি বিপদের জায়গা রয়েছে। বর্তমানে এনভিডিয়ার মূল লাভ হচ্ছে দু’টি বা তিনটি ক্ষেত্র থেকে। অর্থাৎ, ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈচিত্র হারিয়ে ফেলেছে সংশ্লিষ্ট মার্কিন টেক জায়ান্ট, বর্তমানের প্রতিযোগিতার বাজারে যা একেবারেই কাম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন মাইকেল বারি।

০৮ ১৬

আমেরিকান বিনিয়োগকারী বলেছেন, ‘‘এক বছর আগে ২,৩০৬ কোটি ডলার থেকে বেড়ে এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ৩,৩৩৯ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। ওই সময়ে সংস্থার চারটি প্রধান গ্রাহক অর্ধেকের বেশি আয় করেছিল। এই অবস্থায় কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তির জন্য চুক্তির মতো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন টেক জায়ান্ট। তাদের তৈরি চিপ বা সেমিকন্ডাক্টরের প্রকৃত চাহিদা অনেকটাই কম। আর এই সহজ সত্যিটা বুঝতে পারছে না এনভিডিয়া।’’

০৯ ১৬

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রোকারেজ ফার্মগুলি জানিয়েছে, ফেসবুকের মূল সংস্থা মেটা এবং ধনকুবের মার্কিন শিল্পপতি ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিন গাড়ি সংস্থা টেসলার সম্মিলিত ভাবে যে পরিমাণ মূলধন রয়েছে, এক দিনে সেটা হারিয়েছে এনভিডিয়া। টেক ইটিএফেও (এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) প্রচুর পরিমাণে অর্থ বেরিয়ে গিয়েছে। তবে তার ব্যাখ্যা হিসাবে অন্য কথা বলেছেন বিশ্লেষকেরা।

১০ ১৬

বিশেষজ্ঞদের দাবি, এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকায় এতে একটা বুদবুদ তৈরি হয়েছিল। সেটাই ফেটে যাওয়ায় স্টকের দাম অনেকটা পড়ে গিয়েছে। তা ছাড়া চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সংঘাত এবং বাণিজ্যযুদ্ধকেও এর জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা। এত দিন বেজিঙের সঙ্গে মোট ব্যবসার ১৩ শতাংশ আদান-প্রদান করছিল এই টেক জায়ান্ট।

১১ ১৬

গত এপ্রিলে চিনা পণ্যে বিপুল পরিমাণে শুল্ক চাপিয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাল্টা আমেরিকার সামগ্রীতেও করের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বেজিং। ফলে ড্রাগনের বাজারে অনেক বেশি টাকায় চিপ বিক্রি করতে হচ্ছে এনভিডিয়াকে। এটা টেক জায়ান্টটির ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

১২ ১৬

তবে আমেরিকার শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞদের বড় অংশই মনে করেন, চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি প্রস্তুতকারী ওপেনএআইয়ের মতো সংস্থা এনভিডিয়ার চিপের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করেছে। ফলে ঘরোয়া বাজারে এর সেমিকন্ডাক্টরের বিক্রি বৃদ্ধি পায়। স্টকের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সেটাই মূল কারণ। তাদের শেয়ার বুদবুদ খুব দ্রুত ফাটতে চলেছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

১৩ ১৬

এনভিডিয়ার প্রেসিডেন্ট তথা সিইও জেনসেন হুয়াং অবশ্য ট্রাম্পের শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, কৃত্রিম মেধাভিত্তিক প্রযুক্তির নিরিখে আমেরিকার থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই বেজিং। এ ব্যাপারে দ্রুত সরকারকে নজর দিতে হবে। নইলে অচিরেই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যাবে ড্রাগন। ট্রাম্প অবশ্য তাঁর এই সতর্কবার্তা গায়ে মাখছেন এমনটা নয়।

১৪ ১৬

১৯৯৩ সালে পথচলা শুরু হয় এনভিডিয়ার। ২১ শতকের গোড়াতেই গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও গেমিংয়ের জন্য চিপ তৈরি করে বাজারে সাড়া ফেলে দেয় ক্যালিফোর্নিয়ার এই টেক জায়ান্ট। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির কম্পিউটার গ্রাফিক্স, ডেটা সায়েন্স, এবং স্বয়ংক্রিয় যানের প্রযুক্তি তৈরির মতো একাধিক ব্যবসা রয়েছে।

১৫ ১৬

গত বছর মুম্বইয়ে হওয়া এআই শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে ভারতের ধনকুবের শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর সংস্থা রিলায়্যান্সের সঙ্গে অংশীদারির কথা ঘোষণা করেন জেনসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ভারতের মাটিতে কৃত্রিম মেধার পরিকাঠামো নির্মাণে এনভিডিয়া ও রিলায়্যান্স কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে। আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এ দেশের বিপুল জনসংখ্যা, যা আমাদের এই প্রযুক্তিকে আকাশচুম্বী করে তুলতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।’’

১৬ ১৬

অন্য দিকে এই ইস্যুতে বিবৃতি দেন রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের চেয়ারম্যানও। তিনি বলেন, ‘‘এআইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ অন্যতম বড় বাজার হতে যাচ্ছে। এটা শুধু আমাদের আকাঙ্ক্ষা নয়। ভারতের যুবশক্তিই কৃত্রিম মেধাকে চালিত করবে। নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।’’ ফলে শেয়ারের বুদবুদ ফাটলেও এনভিডিয়া তা সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement