Teacher Recruitment Scam Case

৩২ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল: শুক্রবার থেকে শুক্রবার, এক সপ্তাহে কোন পথে এগোল মামলা!

এক ধাক্কায় ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের রায় দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু চাকরিহারাদের একাংশ সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৩ ১৬:৫৬
Share:
০১ ২০

গত শুক্রবার এক ধাক্কায় ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের রায় দিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে সংখ্যা বদলে যায় ৩২ হাজারে। কিন্তু বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন চাকরিহারাদের একাংশ। এক সপ্তাহের মাথাতেই সেই মামলায় নতুন রায় দিল ডিভিশন বেঞ্চ।

০২ ২০

গত শুক্রবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ-ও নির্দেশ দিয়েছিলেন, আগামী চার মাসের মধ্যে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে। পাশাপাশি, জানিয়ে দিয়েছিলেন চাকরিচ্যুতরা আপাতত ৪ মাস তাঁদের স্কুলে যেতে পারবেন। তবে তাঁদের বেতন দেওয়া হবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুযায়ী।

Advertisement
০৩ ২০

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশের পর এই মামলায় নতুন কী নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এক সপ্তাহে কোন পথেই বা এগোল প্রাথমিকের নিয়োগ সংক্রান্ত এই মামলা?

০৪ ২০

২০১৬ সালের প্রাথমিকের নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ ১৪০ জন চাকরিপ্রার্থী কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, এই মামলাকারীদের থেকে কম নম্বর পেয়ে প্রশিক্ষণহীন অনেকেই চাকরিতে ঢুকেছেন।

০৫ ২০

মামলাতে উঠে আসে ইন্টারভিউ বিতর্কও। পর্ষদের নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউয়ের সময় তাঁদের ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, বহু ক্ষেত্রেই সেই ‘অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট’ নেওয়া হয়নি।

০৬ ২০

অভিযোগ ওঠার পর বিভিন্ন জেলায় যাঁরা পরীক্ষার্থীদের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন, তাঁদেরকে তলব করে গোপন জবানবন্দিও নথিবদ্ধ করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তার ভিত্তিতেই চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন তিনি।

০৭ ২০

২০১৬ সালে প্রাথমিকে নিয়োগ হয়েছিল মোট ৪২,৫০০। যার মধ্যে প্রশিক্ষিত (ডিএলএড থাকা) ৬৫০০ জনকে নিয়ে কখনই বিতর্ক ছিল না। গত শুক্রবার বাকি ৩৬ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রাথমিক শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

০৮ ২০

তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এ-ও জানিয়েছিলেন, আগামী চার মাসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। সেই নিয়োগের ইন্টারভিউতে পাশ করলে চাকরিচ্যুতরা চাকরি ফিরে পাবেন। তা করতে না পারলে হারাতে হবে চাকরি।

০৯ ২০

পাশাপাশি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, চাকরি হারানো শিক্ষকরা আপাতত ৪ মাস স্কুলে যেতে পারলেও তাঁদের বেতন দেওয়া হবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতনকাঠামো অনুযায়ী।

১০ ২০

তবে গত সোমবার মামলাকারীদের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের আসল সংখ্যা ৩৬ হাজার নয়, ৩০ হাজার ১৮৫। ছাপার (টাইপোগ্রাফিক্যাল এরর) ভুলের কারণে এই বিভ্রান্তি হয়েছে!

১১ ২০

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রায় সংশোধন করে বলেন, ‘‘সংখ্যাটা ৩২ হাজারের কাছাকাছি হবে।’’ এর পর রায় পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের একাংশ। তবে তাঁদের সঙ্গে দীর্ঘ কথোপকথনের পর বিচারপতি জানিয়ে দেন, বিষয়টি আর তাঁর হাতে নেই।

১২ ২০

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন ওই শিক্ষকদের একাংশ। গত সোমবার বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলা করা হয়। মঙ্গলবার মামলার শুনানির সময় বিচারপতি তালুকদার বলেন, ‘‘একক বেঞ্চ তো আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কাউকে তো নেকড়ের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি। তা হলে সমস্যা কোথায়?’’

১৩ ২০

তবে, ডিভিশন বেঞ্চে চাকরি বাতিলের বিপক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে চাকরিহারাদের তরফে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পুরনো একটি মন্তব্যকেও তুলে ধরা হয়।

১৪ ২০

এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন গত ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি বলেছিলেন, ‘‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব।’’ চাকরিচ্যুতরা ডিভিশন বেঞ্চে দাবি করেন, বিচারপতির সেই মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, চাকরি বাতিল করা আগে থেকেই স্থির ছিল।

১৫ ২০

চাকরিহারাদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা ডিভিশন বেঞ্চে এ-ও জানান, আদালতের নির্দেশেই নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। কিন্তু কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তের রিপোর্টে এখনও পর্যন্ত এমন কোনও তথ্য উঠে আসেনি, যার জন্য ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করতে হবে।

১৬ ২০

যাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, আদালত তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ দেয়নি বলেও দাবি করেন চাকরিহারাদের আইনজীবী। ক্ষতির মুখে পড়া প্রাথমিক শিক্ষকদেক সঙ্গে কথা না বলেই চাকরি বাতিলের এত বড় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

১৭ ২০

চাকরিহারাদের তরফে এই যুক্তিও দেওয়া হয়, পর্ষদের সেই সময়কার বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে, নিয়োগের ২ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিতে হবে প্রার্থীদের। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী অপ্রশিক্ষিত হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তাঁরা। ফলে এ ক্ষেত্রে আইন ভেঙে কোনও নিয়োগ হয়নি বলে তাঁরা দাবি করেছিলেন।

১৮ ২০

শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার রায় ঘোষণা ছিল। বিচারপতি তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের নির্দেশে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিল।

১৯ ২০

বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত অথবা আদালত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে।

২০ ২০

পাশাপাশি ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানিয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদকে যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা মেনে চলতে হবে। ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও জানিয়ে দিয়েছে, ওই ৩২ হাজার প্রাথমিকের শিক্ষককে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও অংশও নিতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement