History of Pakistan Economy

অর্থনীতির ঘোড়া ছুটছিল টগবগিয়ে, ভারতকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান! হঠাৎ কেন ছন্দপতন?

অর্থনীতিতে এক সময় পাকিস্তান এগিয়ে ছিল ভারতের চেয়ে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে ভারতকে ছাপিয়ে গিয়েছিল তারা। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভারতের চেয়ে পাক অর্থনীতি হয়ে উঠেছিল অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ১৫:২১
Share:
০১ ২২

অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে পাকিস্তান। দেশটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। মন্ত্রীও স্বীকার করে নিয়েছেন, সরকারি ভান্ডার অর্থশূন্য। টাকার অভাবে ধসে পড়েছে পাক অর্থনীতি।

০২ ২২

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে ভারত। বর্তমানে ভারতীয় মুদ্রায় ১ টাকা, পাকিস্তানি মুদ্রায় ৩.২১ টাকার সমান। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের মুদ্রার দাম আরও কমে গিয়েছে।

Advertisement
০৩ ২২

অথচ, এই পাকিস্তানই অর্থনীতিতে এক সময় এগিয়ে ছিল ভারতের চেয়ে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে ভারতকে নিমেষে ছাপিয়ে গিয়েছিল পড়শি দেশটি। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও ভারতের চেয়ে পাক অর্থনীতি হয়ে উঠেছিল অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।

০৪ ২২

১৯৬০ থেকে ১৯৮০— এই সময়টিকে মূলত পাক অর্থনীতির ‘স্বর্ণযুগ’ বলা হয়। এই সময়ে পাকিস্তানের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ। উল্টো দিকে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে ছিল মাত্র ৪ শতাংশ।

০৫ ২২

কী ভাবে অর্থনীতিতে এতখানি এগিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান? আর কী এমন ঘটল, যাতে গোটা দেশের অর্থনীতি নিমেষে ধসে পড়ল? রইল পাকিস্তানের অর্থনীতির ইতিহাস।

০৬ ২২

১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে কৃষি এবং শিল্প ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিকাশ ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশে বেকারত্বের হারও কমে এসেছিল। ভারতকে অর্থনীতিতে টেক্কা দিচ্ছিল পড়শি রাষ্ট্র।

০৭ ২২

পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর প্রথম ১১ বছরে ৭ বার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তিত হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে আয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে কিছু সময়ের জন্য রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা পায় পাকিস্তান। যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এই সময় পাকিস্তানে ভারী শিল্প, প্রযুক্তিতেও বিনিয়োগ শুরু হয়।

০৮ ২২

তৈল পরিশোধনাগার, অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি, নতুন নতুন সিমেন্ট কারখানার হাত ধরে পাকিস্তানের উৎপাদনগত বৃদ্ধি পৌঁছে গিয়েছিল ৮.৫ শতাংশে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

০৯ ২২

কৃষি ক্ষেত্রেও বিপ্লব হয়েছিল পাকিস্তানে। পাক সরকার কৃষির উন্নয়নে হাত খুলে বিনিয়োগ করেছিল। কৃষির বৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশের বেশি।

১০ ২২

আয়ুব খানের শাসনকালে বস্ত্রবয়ন শিল্পে প্রভূত উন্নতি করেছিল পাকিস্তান। উৎপাদিত পণ্য রফতানিও করা হচ্ছিল। আর্থিক বৃদ্ধির অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বস্ত্রবয়ন।

১১ ২২

আমেরিকা এবং সোভিয়েত রাশিয়াকে কেন্দ্র করে সেই সময় বিশ্ব জুড়ে যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছিল, তাতে আমেরিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল পাক সরকার। ফলে আমেরিকা থেকে বিপুল অর্থ পেয়েছিল তারা।

১২ ২২

পাকিস্তানের অগ্রগতির পাশাপাশি ভারতের অর্থনীতির সীমাবদ্ধতাও এই সময়ে ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারতে জওহরলাল নেহরু সরকার অর্থনীতিতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে রাখতে চেয়েছিল। পাকিস্তান যখন দেশ, বিদেশে বাণিজ্যের দ্বার খুলে দিয়েছিল, তখন ভারতের অর্থনীতি যেন ক্রমশ বদ্ধ হয়ে আসছিল। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যকে প্রাধান্য দিতে চেয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। যা উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে মনে করেন অনেকে।

১৩ ২২

কিন্তু পাকিস্তানের যাবতীয় অগ্রগতি ছিল তার অবিভক্ত অবস্থায়। সবচেয়ে লাভজনক বস্ত্রবয়ন শিল্পের মূল ভিত্তি ছিল পূর্ব পাকিস্তান। অভিযোগ, পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত সামগ্রী থেকে লাভের অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। পূর্ব এবং পশ্চিমে এই অসম বণ্টন দেশটির কাল হয়ে দাঁড়ায়।

১৪ ২২

আয়ুব খানের শাসনে পূর্ব পাকিস্তান ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। পশ্চিমে তাদের পণ্যের উপর কর বসানো হয়েছিল। অথচ, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসা পণ্য সহজেই বিনা শুল্কে বিক্রি হত পূর্বে। ভাষাগত বৈষম্য এই পরিস্থিতিতে ঘৃতাহুতি দেয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষীর উপর গায়ের জোরে উর্দু চাপিয়ে দেওয়া হলে বিপ্লবের আগুন জ্বলে ওঠে পদ্মাপাড়ে।

১৫ ২২

পূর্ব পাকিস্তানের বিপ্লব দমন করতে কঠোর দমননীতি গ্রহণ করে পাক সরকার। শুরু হয় গণহত্যা। বহু মানুষ প্রাণের দায়ে কাঁটাতার পেরিয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন। এ ভাবে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে ভারত সরকার।

১৬ ২২

অবশেষে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। পাকিস্তানের পরাজয়। পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন। পাকিস্তানের যাবতীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধির নেপথ্যে ছিল সুজলা সুফলা বাংলাদেশ। যুদ্ধের পর তা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ‘ইঞ্জিন’ হারিয়ে ফেলে পাক সরকার।

১৭ ২২

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এর পর দেশটির অর্থনীতি ধসে পড়ে। এ ছাড়া, আয়ুব খানের পর জুলফিকর আলি ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তানের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এবং বড় বড় শিল্প সরকারের দখলে আনা হয়। বাণিজ্যে বন্ধ হয় ব্যক্তিগত বিনিয়োগ। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দেশ ছেড়ে চলে যান।

১৮ ২২

মুদ্রাস্ফীতিতে ধুঁকতে থাকা পাকিস্তানে ১৯৭৭ সালে আবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। শাসক ভুট্টোকে গ্রেফতার করে ফাঁসিতে চড়ান মহম্মদ জিয়া উল হক। তিনি দেশ জুড়ে ইসলামের প্রসারে মনোনিবেশ করেন।

১৯ ২২

দেশের অন্দরে ইসলামের প্রসারের ফলে ছোট ছোট ইসলামভিত্তিক গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এরা ছিল একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে হিংসা, হানাহানিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি অশান্ত হতে থাকে বার বার।

২০ ২২

১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত পাকিস্তানে ৯ বার সরকার বদল হয়। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার জেরে অর্থনীতির দিকে সে ভাবে আর নজরই দিতে পারেনি পাক সরকার। দেশটিতে সামরিক খাতে ব্যয় ক্রমে বৃদ্ধি পায়।

২১ ২২

পাক সরকার এবং সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলছিলেন গুটি কয়েক শিল্পপতি। তাঁরাই দেশের বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন। অন্য ব্যক্তিগত বিনিয়োগ, ব্যবসায়িক উদ্যোগ মাথা তুলতে পারেনি।

২২ ২২

১৯৮৮ সাল থেকে পাকিস্তান আইএমএফের কাছ থেকে ১২ বার ঋণ নিয়েছে। ভারতকে ঋণ নিতে হয়েছে মাত্র এক বার। সম্প্রতি, আইএমএফ ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দিলে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে পড়শি দেশটি। যাঁর ফল ভুগতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement