আরবসাগরের অতলে নাকি লুকিয়ে আছে ‘তরল সোনা’র বিপুল ভান্ডার! সেই কুবেরের ধন উদ্ধারে কোমর বেঁধে লেগে পড়েছে পাকিস্তান। এর জন্য সমুদ্রের বুকে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করবে ইসলামাবাদ। সেখান থেকে চলবে অপরিশোধিত খনিজ তেলের খোঁজ। সম্প্রতি পশ্চিমি গণমাধ্যম সূত্রে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে পড়ে গিয়েছে শোরগোল। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর। অন্য দিকে এই ইস্যুতে নিরাপত্তার প্রশ্নে উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের।
সংবাদসংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিন্ধু নদীর মোহানা সংলগ্ন সুজ়াওয়ালের কাছে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করবে পাক সরকার। ইসলামাবাদের মূল বাণিজ্যিক কেন্দ্র তথা বন্দরশহর করাচি থেকে যার দূরত্ব মেরেকেটে ১৩০ কিলোমিটার। সিন্ধুর উপকূল থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আরব সাগরের বুকে ওই কৃত্রিম দ্বীপ মাথা তুলে দাঁড়াবে বলে জানা গিয়েছে।
এ-হেন মেগা প্রকল্পের ব্যাপারে ‘ব্লুমবার্গ’-এর কাছে মুখ খুলেছেন ‘পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড’ বা পিপিএলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আরশাদ পালেকার। তাঁর কথায়, ‘‘জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে সমুদ্রের জলস্তরের থেকে ছ’ফুট উঁচুতে তৈরি হবে ওই কৃত্রিম দ্বীপ। আগামী বছরের (পড়ুন ২০২৬ সালের) ফেব্রুয়ারির মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আর তাই অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ জারি করবে প্রশাসন।’’
পিপিএলের জিএম পালেকার জানিয়েছেন, কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির পর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে আরব সাগরে চলবে অপরিশোধিত তেলের খনন। ওই এলাকাকে ঘিরে মোট ২৫টি তেলের কুয়ো খোঁড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। সমুদ্রের জমি উদ্ধার করে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের পরিকল্পনা পাকিস্তানের জন্য প্রথম হলেও বিশ্বে নতুন নয়। অতীতে এ ব্যাপারে সাফল্য পেয়েছে চিন, জাপান ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি-সহ একাধিক দেশ। তবে এই কাজে ঝুঁকিও রয়েছে যথেষ্ট।
ইতিহাসবিদদের একাংশ নেদারল্যান্ডসকে কৃত্রিম দ্বীপের জনক হিসাবে চিহ্নিত করে থাকেন। ১৯ শতকের প্রথম দশকে সমুদ্রের বুক থেকে বিশাল এলাকা উদ্ধার করে ডাচ ইঞ্জিনিয়ারেরা গড়ে তোলেন নাগরিক পরিকাঠামো। পরবর্তী সময়ে খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের খোঁজ পেতে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির কাজে হাত লাগায় চিন। ১৯৮৮-’৯২ সালের মধ্যে প্রথম দ্বীপটির নির্মাণকাজ শেষ করতে সক্ষম হয় মান্দারিনভাষীরা।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০ শতকের গোড়া থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত ৫০টির বেশি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করেছে চিন ও জাপান। ২০০১-’১১ সালের মধ্যে তিনটি কৃত্রিম দ্বীপের নির্মাণকাজ শেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলি পশ্চিম এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এবং বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কৃত্রিম দ্বীপকে ভর করে ‘তরল সোনা’ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন করে থাকে ওই আরব মুলুক। এ ছাড়া আমেরিকা এবং ব্রিটেনেরও কৃত্রিম দ্বীপ রয়েছে।
কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণকে অন্যতম সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং বললে অত্যুক্তি হবে না। এটা বানাতে পাহাড়প্রমাণ বালি ও মাটি প্রয়োজন। সমুদ্রের বুকে সেগুলিকে ফেলতে ব্যবহৃত হয় হোসপাইপ-যুক্ত বিশেষ পণ্যবাহী জাহাজ। যেখানে কৃত্রিম দ্বীপটি তৈরি হবে, ঠিক সেখানে দমকলের জল ছেটানোর মতো করে বালি এবং মাটি ফেলতে থাকে তারা। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং পশ্চিম এশিয়ার উপসাগরীয় দেশগুলির কঠিন বর্জ্য ব্যবহারের উদাহরণও রয়েছে।
উন্নত কৃত্রিম দ্বীপে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরির সুযোগ রয়েছে। সেখানে গভীর সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, এমনকি আস্ত শহর গড়ে তোলা যেতে পারে। বর্তমানে বহু কৃত্রিম দ্বীপকে সামরিক ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করছে আমেরিকা ও চিন। আবার এগুলির মধ্যে কয়েকটা পর্যটন এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছে। সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন বহু মানুষ। উদাহরণ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও সিঙ্গাপুরের কৃত্রিম দ্বীপগুলির কথা বলা যেতে পারে।
চলতি বছরের মে মাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং তাকে কেন্দ্র করে ‘যুদ্ধে’ ভারতের হাতে মার খাওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন পাক সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারেন তিনি। এর পরই ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায় ওয়াশিংটন। অগস্টে নয়াদিল্লির পশ্চিমের প্রতিবেশীর সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সেরে ফেলার কথা ঘোষণা করে আমেরিকা। এই নিয়ে নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি বিস্ফোরক পোস্ট দেন ট্রাম্প।
‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘‘পাকিস্তানে থাকা বিশাল তৈলভান্ডারের উন্নতির জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবে আমেরিকা। এই অংশীদারির জন্য পছন্দমাফিক তেল সংস্থাগুলিকে বেছে নেবে দুই দেশ।’’ এর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পোস্টে নয়াদিল্লিকে খোঁচা দেন ট্রাম্প। বলেন, ‘‘কে বলতে পারে তারা হয়তো একদিন ভারতকেই তেল বিক্রি করবে।’’ এর পরেই ইসলামাবাদের মাটি বা সমুদ্রের গভীরে ‘তরল সোনা’র মজুত নিয়ে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।
অতীতে বহু বার খনিজ তেলের ভান্ডার নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনেছেন একাধিক পাক রাজনৈতিক নেতৃত্ব। ২০১৮ সালে এর জিগির তোলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আরবসাগরের গভীরে ‘তরল সোনা’ প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত রয়েছে বলে প্রকাশ্যে দাবি করেন তিনি। ফলে অচিরেই জ্বালানি সঙ্কট কাটবে বলে মনে করছিল সেখানকার আমজনতা। যদিও বাস্তবে তা হয়নি। ইমরানের আমলে করাচি উপকূলের অদূরে খনিজ তেলের সন্ধান চালায় ইসলামাবাদের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। কিন্তু, কোনও ‘জ্যাকপট’ হাতে না আসায় একসময় সেটা বন্ধ করে দেয় তারা।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ‘তরল সোনা’র ভান্ডার নিয়ে একই রকমের প্রচার শুরু করেন বর্তমান পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। ওই সময় এই ইস্যুতে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় করাচির জনপ্রিয় গণমাধ্যম ‘দ্য ডন’-এ। সেখানে ইসলামাবাদের কর্তাব্যক্তিরা বলেন, ‘‘বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অপরিশোধিত তেলের মজুত রয়েছে দেশের সমুদ্রসীমার ‘এক্সক্লিউসিভ ইকোনমিক জ়োনে’, যার বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হলেই বিপুল উপার্জন করবে সরকার।’’ এর গালভরা নামও দিয়েছিল শরিফ প্রশাসন, সেটা হল ‘ব্লু ওয়াটার ইকোনমি’।
যদিও ২০২৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বলেন পাক সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্তা। তৈলভান্ডার সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রশাসন আশাবাদী হলেও ‘তরল সোনা’ মিলবেই এ ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চয়তা নেই। হয়েছিলও তাই। প্রথমে আরব সাগরের একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় সাড়ে পাঁচ হাজার মিটারের বেশি খনন করে ফেলে এক্সনমোবিল, ইএনআই, পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এবং অয়েল অ্যান্ড গ্যাস ডেভলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
কিন্তু, সমুদ্রের গভীরে কোনও রকমের প্রাকৃতিক গ্যাস বা খনিজ তেলের সন্ধান না মেটায় শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেয় ওই সমস্ত সংস্থা। ওই সময় বেশ কয়েকটি মার্কিন খনি কোম্পানিকেও পাকিস্তান ছাড়তে দেখা গিয়েছিল। বিশ্বের পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ দেশগুলির তালিকায় ৫২ নম্বর স্থানে রয়েছে ইসলামাবাদ। ২০১৬ সালের নথি অনুযায়ী, সেখানে মজুত থাকা ‘তরল সোনা’র আনুমানিক পরিমাণ ৩৫.৩৫ কোটি ব্যারেল, যা দুনিয়াব্যাপী তেলভান্ডারের মাত্র ০.০২১ শতাংশ।
বর্তমানে অপরিশোধিত খনিজ তেলের ৮০ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের দৈনিক তেল উৎপাদন ভারতের এক দশমাংশ। বিশেষজ্ঞদের দাবি, তার পরও বিপুল পরিমাণে ‘তরল সোনা’ উত্তোলনের স্বপ্ন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ষীয়ান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দেখাতে পেরেছেন ফিল্ড মার্শাল মুনির। তবে আমেরিকার আর্থিক সহায়তা ছাড়া আরবসাগরে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ তাঁর পক্ষে অসম্ভব। কারণ দীর্ঘ দিন ধরেই দেউলিয়া হওয়ার দরজায় দাঁড়িয়ে আছে নয়াদিল্লির পশ্চিমের প্রতিবেশী।
উন্নত কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের খরচ কয়েক হাজার কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র অর্থ পাঠালেই যে ইসলামাবাদ সেটা তৈরি করে ফেলতে পারবে এমনটা নয়। এর জন্য যে প্রকৌশলগত পারদর্শিতার প্রয়োজন, তার সিকিভাগও নেই পাকিস্তানের কাছে। তবে এ ব্যাপারে চিন, সৌদি আরব বা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সাহায্য পেতে পারে তারা। চলতি বছরেই সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে জাপানের একটি কৃত্রিম দ্বীপ। প্রস্তাবিত প্রকল্পে জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।
করাচি উপকূল সংলগ্ন প্রস্তাবিত কৃত্রিম দ্বীপ নিয়ে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, খনিজ তেলের সন্ধানের কথা বলে আগামী দিনে ওই এলাকায় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে পারে ইসলামাবাদ। সে ক্ষেত্রে গুজরাতকে নিশানা করা পাক ফৌজের পক্ষে অনেক বেশি সহজ হবে। পশ্চিম ভারতের রাজ্যটিতে রয়েছে একাধিক সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, তৈলশোধনাগার এবং আর্থিক দিক থেকে সমৃদ্ধ শহর।
দ্বিতীয়ত, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ প্রকল্পের নামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে থোক থোক ডলার এলে তার কিছুটা অংশ সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কারণ বর্তমানে ‘বকলমে’ পাকিস্তানের সরকার চালাচ্ছেন ফিল্ড মার্শাল মুনির। অতীতে ইসলামাবাদের গুপ্তচরবাহিনী ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স’ বা আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল পদে ছিলেন তিনি। ফলে লশকর-এ-ত্যায়বা, জইশ-ই-মহম্মদ বা হিজ়বুল মুজ়াহিদিনের মতো কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তাঁর।
পাকিস্তান বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, খনিজ তেলের ভান্ডারের মতোই কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের প্রকল্পটিও পুরোপুরি ভাঁওতা। এই স্বপ্ন বিক্রি করে মোটা টাকা আত্মসাৎ করার ছক রয়েছে ফিল্ড মার্শাল মুনিরের মাথায়। সম্প্রতি সংবিধানের ২৭তম সংশোধনে তাঁর ক্ষমতা বহু গুণে বৃদ্ধি করেছে শরিফ নেতৃত্বাধীন ‘পুতুল’ সরকার। ফলে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ এলেও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না প্রশাসন বা আদালত। সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতাও খর্ব করেছেন তিনি।
মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা লুটের সর্বশেষ উদাহরণ হিসাবে ইসলামাবাদের সাবেক প্রধান বিচারপতি সাকিব নিশারের নাম বলা যেতে পারে। বাঁধ নির্মাণের জন্য গণতহবিল তৈরি করেন তিনি। পরে জানা যায়, সেখানে জমা পড়েছে চার কোটি ডলার। অন্য দিকে গণ তহবিলের বিজ্ঞাপন বাবদ ৬.৩০ কোটি ডলার খরচ করেন তিনি। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কৃত্রিম দ্বীপের নামে আরও বড় কেলেঙ্কারিতে নাম জড়াবে ফিল্ড মার্শাল মুনিরের? উত্তর দেবে সময়।