New cigarette and pan masala cess

শুল্ক বাড়ল ‘পাপ পণ্যে’, সিগারেট ও পানমশলায় চড়া কর বসাল কেন্দ্র! কতটা দামি হবে সুখটান?

সিগারেট, তামাক, পানমশলা, গুটখার দাম যেন না কমে, তার ব্যবস্থা করতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিল আনল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক আইনে সংশোধন করে যে বাড়তি কর চাপানো হবে তা খরচ করা হবে জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় সুরক্ষায়, জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:২৮
Share:
০১ ১৭

চা-এর সঙ্গে সিগারেটে সুখটান। সেই নেশার জন্য এ বার বাড়তি মূল্য চোকাতে হবে ধূমপায়ীদের। কেন্দ্রের নয়া বিল পাশ হওয়ার ফলে নতুন শুল্ক চাপতে চলেছে তামাক ও পানমশলার পণ্যের উপর। ফলে অগ্নিমূল্য হতে চলেছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে আনুমানিক ১০ কোটি ধূমপায়ীর নেশার খরচ হতে পারে দ্বিগুণ।

০২ ১৭

পণ্য পরিষেবা কর বা জিএসটির হার কমলেও যাতে সিগারেট, তামাক, পানমশলা, গুটখার দাম না কমে, তার ব্যবস্থা করতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে জাতীয় সুরক্ষা সেস বিল’ আনল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক আইনে সংশোধন করে যে বাড়তি কর চাপানো হবে তা খরচ করা হবে জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় সুরক্ষায়, জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

Advertisement
০৩ ১৭

বুধবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক (সংশোধনী) বিল পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। অধিবেশন শুরু হওয়ার পর আলোচনাপর্ব শেষ হতেই ধ্বনি ভোটে পাশ হয় বিলটি। সেপ্টেম্বরে পাশ হওয়া জিএসটি সংশোধনীতে করের হার হ্রাস করার পরে বর্তমানে ২৮ শতাংশ বা ততোধিক সেস বসানোর ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছে। এই সেস মূলত চাপানো হত বিলাসবহুল পণ্য-সহ সিগারেট, পানমশলা ও নানা নেশার দ্রব্যে।

০৪ ১৭

সিগারেটের উপর বর্তমান করের মধ্যে ২৮ শতাংশ পণ্য ও পরিষেবা কর এবং অতিরিক্ত শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে পণ্য পরিষেবা করের (জিএসটি) নতুন কাঠামোয় ‘পাপের পণ্যে’ (সিগারেট, পানমশলা, জর্দা, গুটখার মতো তামাকজাত সামগ্রী এবং ‘শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক নরম পানীয়’ রয়েছে এই তালিকায়) ৪০ শতাংশ কর বসানোর কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র।

০৫ ১৭

বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তামাকজাত পণ্যের উপর ২৮ শতাংশ ‘ক্ষতিপূরণ সেস’ বসিয়ে অতিমারি পর্বে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করত। শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিন লোকসভায় বিলটি পেশ করার পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই উৎপাদন শুল্ককে সেস বলে ভাবা হলে তা ভুল হবে। এই শুল্ক থেকে যা আয় হবে তা রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হবে। বিরোধীদের অভিযোগ, সেস-এর টাকা রাজ্যকে দিতে হয় না বলেই এই সিদ্ধান্ত।

০৬ ১৭

এই বিতর্ক উড়িয়ে দিয়ে সংসদে নির্মলা জানান, করোনার সময় রাজ্যগুলির আর্থিক ঘাটতি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারগুলির তরফে যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল তা দু’সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব। লোকসভায় বিল পেশের পর আশাবাদী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেই ক্ষতিপূরণ সেসের মেয়াদ ২০২২-এ শেষ হলেও, তা বাড়িয়ে ২০২৬-এর ৩১ মার্চ করা হয়েছে।

০৭ ১৭

জিএসটির করকাঠামোয় রদবদলের পরে রাজ্যগুলির আয় কমবে বলে দাবি করে বিরোধী রাজ্যগুলি ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছিল। তবে বিরোধীদের মত, আগে যে সব পণ্যে সেস বসানো হত, তার সব ক’টিই উৎপাদন শুল্ক সংশোধনী বিলের আওতায় আনা হবে না। নতুন শুল্ক চাপানো হলেও আখেরে রাজ্যের পাওনা কমবেই।

০৮ ১৭

নয়া বিল পাশের পর কত শতাংশ উৎপাদন শুল্ক বসতে চলেছে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যের উপরে? কতটা বাড়তি চাপ পড়তে পারে ধূমপায়ীদের পকেটে?

০৯ ১৭

নতুন বিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি হাজারটি সিগারেটের উপর ২,৭০০ থেকে ১১,০০০ টাকা (২৯ এবং ১২২ ডলার) অতিরিক্ত দাম চাপানো হতে পারে। এই দাম ধার্য হবে সিগারেটের দৈর্ঘ্যের উপর। যত লম্বা সিগারেট, তত বেশি দাম। সিগারেট বা চুরুট, সিগারের মতো ‘পাপ পণ্যের’ উপর ৪০ শতাংশ জিএসটি চাপানোর পর এই উৎপাদন শুল্ক আরোপিত হবে বলে জানা গিয়েছে।

১০ ১৭

সিগারেটের দামের উপর কর পরিবর্তনের প্রভাব ঠিক কতটা ও কী ভাবে পড়বে তা সরাসরি উল্লেখ করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তবে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নয়া আইন চালু হলে স্বাভাবিক ভাবেই কর বৃদ্ধি পাবে। তাই সংস্থাগুলি সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করতে বাধ্য হবে।

১১ ১৭

ভারতের শীর্ষস্থানীয় সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে নতুন শুল্ক বা দামের পরিবর্তন সম্পর্কে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এখনও পর্যন্ত। ওয়াকিবহাল মহলের মতে উৎপাদন শুল্ক চালু হলে প্রতি সিগারেটের উপর ২.৭ টাকা থেকে ১১ টাকা হারে অতিরিক্ত শুল্ক চাপবে। ফলে ১০টি সিগারেটের প্যাকেটের দাম ৩০ টাকা থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

১২ ১৭

পানমশলাতেও নতুন নিয়ম চালুর কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। বলেছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছোট প্যাকেটেও খুচরো দাম লিখতে হবে। এখন ১০ গ্রাম বা তার কম ওজনের প্যাকেটে এ ক্ষেত্রে ছাড় পেত সংস্থাগুলি। কেন্দ্রের বক্তব্য, এতে ক্রেতা উপকৃত হবেন। জিএসটির হিসাবেও সুবিধা হবে।

১৩ ১৭

শুল্ক বৃদ্ধি করলে যে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে, তা প্রমাণিত সত্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) একটি সমীক্ষা বলছে, দাম যদি ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে বিড়ি-সিগারেট সেবন ৪ থেকে ৮ শতাংশ কমে। হু-র সুপারিশ, সকল তামাকজাত পণ্যের উপর অন্তত ৭৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা দরকার। তবেই তার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। এই সুপারিশের সঙ্গে চলতি জিএসটি কাঠামোয় ভারতের ফারাক ৫৭ শতাংশ।

১৪ ১৭

জিএসটি চালু হওয়ার পরে তামাকের উপর সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি আদায় করা হয়। তার উপরে তামাক শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক বলে জিএসটির পরেও অতিরিক্ত সেস চাপানো হয়। যেমন কোনও নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের তামাকে জিএসটি-অতিরিক্ত ৬৫ শতাংশ সেস কর চাপানো হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দেশে সিগারেট, বিড়ি, তামাকে করের পরিমাণ আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় যথেষ্ট কম বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা।

১৫ ১৭

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বাড়তি সেস না থাকলে সিগারেট, পানমশলা, গুটখা, তামাকে জিএসটির হার ৪০ শতাংশে নেমে আসত। ফলে দাম কমত। কারণ এখন এ সব পণ্যে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কর আদায় হচ্ছে। ভারত এমনিতেই তামাক সেবনকারীর সংখ্যার নিরিখে গোটা বিশ্বে দ্বিতীয়। প্রায় ২৭ শতাংশ ক্যানসারের কারণ তামাক সেবন। সে দিক থেকেও কেন্দ্রের তামাকের উপর বেশি কর চাপানোটা যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে যু্ক্ত বিশেষজ্ঞেরা।

১৬ ১৭

নতুন উৎপাদন শুল্ক চালু হলে তা বিড়ি শিল্পের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে কিছু সাংসদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, নতুন করের ফলে বিড়ির দাম বাড়বে এবং দেশের লক্ষ লক্ষ বিড়িশ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই বিষয়টি নিয়ে সমস্ত ধোঁয়াশা স্পষ্ট করে নির্মলা জানিয়েছেন, বিড়ির উপর করের ক্ষেত্রে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। বিড়িশ্রমিকদের সহায়তার জন্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার উল্লেখ করেছেন তিনি। বিড়িশ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুবিধা, আবাসন ভর্তুকি এবং পড়াশোনার জন্য বৃত্তি প্রদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন নির্মলা এ দিন।

১৭ ১৭

অর্থনীতির নিয়ম মেনে অর্থমন্ত্রীরা বরাবরই বাজেটে কর আদায় বাড়াতে সিগারেট, তামাকে কর চাপানোর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ সিগারেট, তামাকে কর বসিয়ে দাম বাড়ালেও তার বিক্রি কমে যায় না। কিছু মানুষ ধূমপান ছাড়লে বা কমালেও তার থেকে অনেক বেশি নতুন ধূমপায়ী বাজারে চলে আসেন। তাই সরকারের পরিকল্পনা থাকে এই ধরনের পণ্যে আরও চড়া হারে কর বসানো, যাতে সিগারেটের মতো ক্ষতিকারক পণ্যের দাম কোনও ভাবেই না কমে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement