রোম্যান্টিক ছবিতে জুটি বেঁধে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দুই দক্ষিণী তারকা। বড় পর্দায় তাঁদের মাখো-মাখো প্রেম দেখে প্রশংসার ঝড় তুলেছিলেন দর্শক। কিন্তু আড়ালে-আবডালে যে সহ-অভিনেতা বিজয় দেবরকোন্ডার সঙ্গে দক্ষিণী অভিনেত্রী রশ্মিকা মন্দানা সত্যিই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তা টেরই পাননি অনেকে।
আট বছর ধরে নাকি সম্পর্কে রয়েছেন রশ্মিকা এবং বিজয়। প্রকাশ্যে কখনওই সেই সম্পর্কে সিলমোহর দিতে দেখা যায়নি তাঁদের। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, যে পটুতার সঙ্গে তাঁরা সম্পর্কের কথা গোপনে রেখেছিলেন, সেই পটুতার সঙ্গেই গোপনে সেরে ফেলেছেন বাগ্দান পর্ব। দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের সাক্ষী রেখে নাকি আংটিবদল করে ফেলেছেন রশ্মিকা এবং বিজয়। তবে দুই তারকার মধ্যে কেউই সে কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেননি।
২০১৫ সালে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার পর রশ্মিকাকে বড় পর্দায় অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন দক্ষিণী ফিল্মজগতের জনপ্রিয় অভিনেতা ঋষভ শেট্টি। ঋষভের পরিচালনায় রোম্যান্টিক কমেডি ঘরানার কন্নড় ভাষার ছবি ‘কিরিক পার্টি’তে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন রশ্মিকা।
‘কিরিক পার্টি’ ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন ঋষভের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রক্ষিত শেট্টি। ছবিতে প্রযোজনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতে দেখা গিয়েছিল রক্ষিতকে। এই ছবিতে রক্ষিতের সঙ্গেই জুটি বাঁধতে দেখা গিয়েছিল রশ্মিকাকে।
২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কিরিক পার্টি’তে রশ্মিকার অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল। কেরিয়ারের প্রথম ছবি সফল হওয়ার পাশাপাশি রশ্মিকার ব্যক্তিগত জীবনেও উঠেছিল প্রেমের ঢেউ। কানাঘুষো শোনা যেতে থাকে যে, রক্ষিতের সঙ্গে পর্দার আড়ালে সম্পর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছিল রশ্মিকার।
গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল যে, শুটিং চলাকালীন রক্ষিতের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রশ্মিকা। এমনকি, সেই সম্পর্ককে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দু’জনে।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে রক্ষিতের সঙ্গে আংটিবদল হয়েছিল রশ্মিকার। সেই সময় রশ্মিকার বয়স ছিল ২১ বছর এবং রক্ষিতের ৩৪ বছর। দু’জনের বয়সের ১৩ বছরের পার্থক্য থাকলেও সেই ব্যবধানকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি তাঁরা।
আংটিবদলের অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রশ্মিকা এবং রক্ষিত। আংটিবদলের পাশাপাশি সেই শুভ মুহূর্তকে উদ্যাপন করতে কেকও কেটেছিলেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আড়াই হাজারের বেশি অতিথি।
২০১৭ সালে ‘অঞ্জনি পুত্র’ এবং ‘চমক’ নামের দু’টি কন্নড় ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রশ্মিকা। এক বছর পর তেলুগু ফিল্মজগতে পা রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু রশ্মিকার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছিল বিজয়ের হাত ধরার পর।
২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গীত গোবিন্দম’ ছবিতে বিজয়ের বিপরীতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন রশ্মিকা। ছবি মুক্তি পাওয়ার পর বিজয় এবং রশ্মিকার সম্পর্কের রসায়ন মনে ধরে গিয়েছিল দর্শকের। শোনা যায়, ‘গীত গোবিন্দম’ মুক্তি পাওয়ার পরই রশ্মিকা একাধিক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলেন।
কেরিয়ারের সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ক্রমশ উপরে উঠতে শুরু করেছিলেন রশ্মিকা। কিন্তু পেশাগত জীবনে সাফল্যের স্বাদ পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে ভাঙন ধরে গিয়েছিল নায়িকার। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রক্ষিতের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল তাঁর।
শোনা গিয়েছিল যে, রশ্মিকা এবং রক্ষিতের সম্পর্কের ভাঙন দুই পরিবারের তরফেও মেনে নেওয়া হয়েছিল। দুই তারকা তাঁদের বাগ্দানের আংটিও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তার পর থেকেই নানা ভাবে কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন নায়িকা।
ফিল্মজগতের একাংশের দাবি, ‘গীত গোবিন্দম’ মুক্তি পাওয়ার পর রাতারাতি সাফল্য পাওয়ায় শুধুমাত্র কেরিয়ারকেই গুরুত্ব দিতে চাইছিলেন রশ্মিকা। তা নিয়ে মতের অমিল হওয়ায় নাকি রক্ষিতের সঙ্গে বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল নায়িকার।
অধিকাংশের দাবি, বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হওয়ার কারণেই নাকি বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলেন রশ্মিকা। নায়িকার বিয়ে ভাঙার নেপথ্যে নাকি ‘তৃতীয় ব্যক্তি’র ভূমিকা পালন করেছিলেন বিজয়। তবে সম্পর্ক নিয়ে রশ্মিকা এবং রক্ষিতকে প্রকাশ্যে কিছুই বলতে শোনা যায়নি।
রক্ষিতের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘ দিন সমালোচনার শিকার হতে হচ্ছিল রশ্মিকাকে। তা সহ্য করতে না পারায় সমাজমাধ্যমের পাতায় এই প্রসঙ্গে পোস্ট করে রশ্মিকা লিখেছিলেন, ‘‘বহু দিন ধরে আমি চুপ করে ছিলাম। তবে আমায় নিয়ে এত গুজব রটছে যে আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। আপনারা যা বিশ্বাস করছেন তা নিয়েই আলোচনা করছেন। আমি ঠিক-ভুল কিছুই বলব না। শুধু এতটুকুই বলার যে, আমাদের শান্ত মনে কাজ করতে দিন। রক্ষিত, আমি বা অন্য কেউ এই ধরনের আচরণ প্রত্যাশা করি না। আমি এটুকুই জানাতে চাই যে, আমি এখনও বহু দিন অভিনয় করব।’’
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে রক্ষিত জানিয়েছিলেন যে, বিয়ে ভাঙার পরেও রশ্মিকার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তাঁর। এমনকি, রশ্মিকার কোনও ছবি সফল হলে রক্ষিত তাঁকে শুভেচ্ছাও জানাতেন। রক্ষিত বলেছিলেন, ‘‘রশ্মিকা অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখে। ওর স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। তা দেখে আমার ভালই লাগে।’’
বিয়ে ভাঙার পর বিজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমে গভীর হতে শুরু করেছিল রশ্মিকার। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তাঁদের দু’জনকে নানা রেস্তরাঁয় একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এমনকি, একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ থেকে শুরু করে নায়কের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করতে দেখা গিয়েছিল রশ্মিকাকে।
২০২৩ সালে একসঙ্গে মলদ্বীপেও নাকি ঘুরতে গিয়েছিলেন রশ্মিকা এবং বিজয়। কিন্তু সম্পর্ক নিয়ে কখনওই মুখ খোলেননি তাঁরা। ২০২৪ সালে এক ছবির প্রচারানুষ্ঠানে নায়িকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তিনি কেমন মনের মানুষ চান? তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘আপনি কি এই ইন্ডাস্ট্রির কাউকে বিয়ে করতে চান না কি আপনি চান আপনার স্বামী এই ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কেউ হোক? আমাদের এখনই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিন। তা হলে সেই বুঝে খবর নেব।’’
জীবনসঙ্গী সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনে আসল কথা এড়িয়ে গিয়েছিলেন রশ্মিকা। বরং মজার ছলে বলেছিলেন, ‘‘সকলে সব কিছুই জানেন। আমি খুব ভাল করে বুঝতে পারছি যে, আপনারা আমার কাছ থেকে কী ধরনের উত্তর শুনতে চান। পরে ব্যক্তিগত ভাবে এই নিয়ে কথা বলব আমি। এখন নয়।’’ এই উত্তর দিয়ে আসল প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছিলেন নায়িকা।
২০২২ সালের অগস্ট মাসে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল স্পোর্টস ড্রামা ঘরানার ছবি ‘লাইগার’। এই ছবিতে বিজয়ের বিপরীতে জু়টি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বলি অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডেকে। সেই সময় বলিপাড়ার অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যেত যে, অনন্যার সঙ্গে নাকি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। একসঙ্গে বহু জায়গায় দেখা যেত দুই তারকাকে।
বলিউডের ছবিনির্মাতা কর্ণ জোহর তাঁর টক শোয়ে বিজয় এবং অনন্যাকে অতিথি হিসাবে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে বিজয় এবং অনন্যাকে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন কর্ণ। তাঁরা একে অপরকে ডেট করছেন কি না, তা-ও জিজ্ঞাসা করেছিলেন কর্ণ।
কর্ণের প্রশ্ন শুনে বিজয় বলেছিলেন, ‘‘ডেট বলাই যায়। আমিও সেজেগুজে যেতাম। ওকেও (অনন্যা) দেখতে সুন্দর লাগত।’’ বিজয়ের কথার ভাঁজে অনন্যাও নিজের বক্তব্য রেখেছিলেন। নায়িকার মতে, তাঁরা দুই বন্ধুর মতো ডে়টে গিয়েছিলেন। এমনকি, রশ্মিকার সঙ্গে যে বিজয়ের সম্পর্ক রয়েছে তা নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অনন্যা।
শোনা যাচ্ছে, শুক্রবার হায়দরাবাদে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে বাগ্দান পর্ব সেরে ফেলেছেন বিজয় এবং রশ্মিকা। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও ঘোষণা করেননি দুই তারকা।
অনেকের অনুমান, বিজয় এবং রশ্মিকা চান তাঁদের সম্পর্ক গোপনেই রাখতে। বিয়ের আগে আরও কয়েক মাস তাঁদের সম্পর্ককে সময় দিতে চান তারকাযুগল।
একাংশের দাবি, এক বার বাগ্দান পর্ব সারার পরেও বিয়ে ভেঙে গিয়েছিল রশ্মিকার। তাই হয়তো সম্পর্ক নিয়ে সাবধানি হয়ে পড়েছেন নায়িকা। সে কারণেই আট বছর ধরে আড়ালে-আবডালেই বিজয়ের সঙ্গে প্রেম করেছেন তিনি। আংটিবদল পর্বও সেরে ফেললেন আড়ালে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সাত পাকে বাঁধা পড়তে পারেন রশ্মিকা এবং বিজয়। তবে তা নিয়েও পাকাপাকি ভাবে কিছু খোলসা করেননি দুই তারকা।