Cash Transaction Penalty

২০ হাজার টাকার বেশি লেনদেন থেকে আত্মীয়-বন্ধুর কাছে ঋণ, নগদের উপর ১০০% জরিমানা নিতে পারে আয়কর দফতর!

নগদ লেনদেন কমানো এবং তার উপর কড়া নজরদারি চালাতে আয়কর আইন কঠোর করেছে কেন্দ্র। কোন কোন ক্ষেত্রে নগদে দেওয়া-নেওয়া হলে চাপবে জরিমানা? আনন্দবাজার ডট কম-এর এই প্রতিবেদনে রইল তার হদিস।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৬
Share:
০১ ২০

নগদে ২০ হাজার টাকার বেশি লেনদেনে লুকিয়ে বিপদ! হতে পারে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা। ইউরোপ-আমেরিকা বা পশ্চিম এশিয়ার কোনও আরব মুলুক নয়। ভারতেই রয়েছে এ-হেন কড়া আইন। নগদ লেনদেনকে নিয়ন্ত্রণে তা চালু করেছে আয়কর দফতর। শুধু তা-ই নয়, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকেও এই ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ দিয়েছে তারা। আনন্দবাজার ডট কম-এর এই প্রতিবেদনে রইল তার হদিস।

০২ ২০

আয়কর আইন অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশির সময় হিসাব-বহির্ভূত নগদ উদ্ধার হলে, প্রাপ্ত অর্থের উপর দিতে হবে ৮৪ শতাংশ কর। এ ব্যাপারে কোথা থেকে এবং কী ভাবে হিসাব-বহির্ভূত অর্থ অভিযুক্ত পেলেন, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের। জবাব সন্তোষজনক না হলে জরিমানার অঙ্ক বাড়াতে পারে আয়কর দফতর।

Advertisement
০৩ ২০

গত কয়েক বছরে পশ্চিমবাংলা-সহ দেশের একাধিক রাজ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, হাই কোর্টের বিচারপতি থেকে শিল্পপতির বাড়িতে এই ধরনের একাধিক তল্লাশি প্রত্যক্ষ করেছে আমজনতা। এতে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা! প্রাপ্ত নগদের পরিমাণ জানতে অনেক সময় স্থানীয় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা গোনার মেশিন পর্যন্ত আনতে হয়েছে আধিকারিকদের। আয়কর দফতর ছাড়াও সিবিআই, ইডি এবং এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে এই ধরনের অভিযান পরিচালনা করতে দেখা গিয়েছে।

০৪ ২০

বর্তমান সময়ে বাড়িতে কতটা নগদ অর্থ রাখা যাবে তা নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। তবে আয়কর আইন অনুযায়ী, এর কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। অর্থাৎ, এক জন ব্যক্তি যত খুশি টাকা নিজের কাছে বা ঘরে রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই সেগুলির আয়ের উৎস বৈধ হতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়কর রিটার্নের তথ্যে এর উল্লেখ থাকা জরুরি। সেটা না হলে ঘরে থাকা নগদ অর্থকে আয়-বহির্ভূত হিসাবে গণ্য করতে পারে আয়কর বা ইডি।

০৫ ২০

নাগরিকদের কাছে থাকা নগদ অর্থের বিষয়টি আয়কর আইনের ৬৮ থেকে ৬৯বি ধারার মধ্যে ব্যাখ্যা করা রয়েছে। কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আয়-বহির্ভূত নগদ অর্থের সন্ধান পেলে সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা করতে পারে সরকার। এত দিন পর্যন্ত আয়কর আধিকারিকেরা ওই ব্যক্তির মোট আয়ের ৭৮ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করছিলেন। সেটাই বাড়িয়ে এ বার ৮৪ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারে সংশ্লিষ্ট দফতর।

০৬ ২০

বিশ্লেষকদের দাবি, আইনগত ভাবে কোনও সর্বোচ্চ সীমা না থাকলেও, কোনও ব্যক্তির কাছে প্রচুর পরিমাণ নগদ অর্থ থাকলে তা সন্দেহের জন্ম দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্থের উৎস প্রমাণ করার জন্য সর্ব ক্ষণ প্রয়োজনীয় নথি সঙ্গে রাখতে হবে তাঁকে। এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন ছাড়াও থাকতে হবে ব্যবসায়িক হিসাব, শেয়ার থেকে আয় বা অন্যান্য আয় সংক্রান্ত নথি।

০৭ ২০

আয়কর দফতর সূত্রে খবর, কোনও ব্যক্তির বাড়িতে উদ্ধার হওয়া নগদের উপর যে ৮৪ শতাংশ জরিমানা নেওয়া হবে, তার মধ্যে মৌলিক কর এবং সেস অন্তর্ভুক্ত থাকবে। পাশাপাশি, হিসাব-বহির্ভূত নগদের পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করতে পারেন তল্লাশিতে নিযুক্ত আধিকারিক। তবে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করে নিম্ন বা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পূর্ণ অধিকার রয়েছে অভিযুক্তের।

০৮ ২০

এ ছাড়া দেশের যাবতীয় সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ককে নগদ উত্তোলনের রিপোর্ট আয়কর দফতরকে পাঠাতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে একটি আর্থিক বছরে ১০ লক্ষ টাকার বেশি নগদ অর্থ তুলে নেন, তা হলে অবশ্যই সেই লেনদেনের সম্পূর্ণ তথ্য আয়কর দফতরকে দিতে হবে।

০৯ ২০

কেন্দ্রের যুক্তি, এতে আয়কর দফতরের পক্ষে নগদের অস্বাভাবিক চলাচলের উপর ক়ড়া নজরদারি রাখা অনেক বেশি সহজ হবে। এখানে উল্লেখ্য, গ্রাহক যদি তাঁর সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ লক্ষ টাকার বেশি উত্তোলন করেন, তা হলে ‘ট্যাক্স ডিডাকটে়ড অ্যাট সোর্স’ বা টিডিএস কেটে নেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক। এ ব্যাপারে সন্দেহজনক কিছু মনে হলে তল্লাশি বা তদন্ত চালাতে পারবে আয়কর দফতর।

১০ ২০

নগদে সম্পত্তি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে আরও কড়া হচ্ছে কেন্দ্র। নতুন নিয়মে, কোনও ব্যক্তি জমি, বাড়ি বা অন্য কোনও সম্পত্তি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ পেলে, প্রাপ্ত অর্থের উপর ১০০ শতাংশ জরিমানা আরোপ করবে আয়কর দফতর। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যেতে পারে।

১১ ২০

ধরা যাক, কোনও ব্যক্তি বাড়ি বা ফ্ল্যাট বিক্রি করে নগদে পেলেন পাঁচ লক্ষ টাকা। বিষয়টি আয়কর দফতরের নজরে পড়লে জরিমানা বাবদ তাঁকে দিতে হবে পাঁচ লক্ষ টাকাই। কেন্দ্রের দাবি, এই আইনের জেরে রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসায় নগদে লেনদেন শূন্যে নেমে আসবে। পাশাপাশি, জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটের বিক্রি দেশের কোথায় কেমন চলছে, তার উপর কড়া নজর রাখতে পারবে সরকার।

১২ ২০

পাশাপাশি, ব্যবসার ক্ষেত্রেও নগদে লেনদেন এড়াতে বলছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা। আয়করের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি যদি গ্রাহকের থেকে দিনে দু’লক্ষ টাকার বেশি নগদ অর্থ গ্রহণ করেন, তা হলে প্রাপ্ত টাকার উপর ১০০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। পণ্য এবং পরিষেবা— দু’টি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে এই নিয়ম।

১৩ ২০

এ দেশের বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত কোনও ব্যক্তির থেকে নগদে টাকা ধার করার প্রবণতা রয়েছে। আয়করের নিয়ম অনুযায়ী, এর কোনও আইনগত স্বীকৃতি নেই। এ ক্ষেত্রে দোষ প্রমাণ হলে ঋণগ্রহণকারীকে ধার নেওয়া নগদের উপর ১০০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে।

১৪ ২০

কেন্দ্র জানিয়েছে, ‘ডিজিটাল ভারত’-এর কথা মাথায় রেখে ‘ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস’ বা ইউপিআইকে আরও বেশি জনপ্রিয় করা হচ্ছে। আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি কমাতে সাহায্য করবে এই ব্যবস্থা। সূত্রের খবর, বর্তমানে ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনবিএফসি (নন-ব্যাঙ্কিং ফিন্যান্সশিয়াল কর্পোরেশন), ফিনটেক সংস্থা-সহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি নিয়মিত ভাবে আয়কর দফতরের সঙ্গে তথ্য ভাগ করে নিচ্ছে। ফলে এই ধরনের নজরদারি সহজ হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

১৫ ২০

বাড়িতে সোনা রাখার নিয়মকানুন কিন্তু নগদের মতো নয়। ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস’-এর (সিবিডিটি) নিয়ম অনুযায়ী, একজন বিবাহিত মহিলা নিজের কাছে সর্বোচ্চ ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ‘হলুদ ধাতু’ রাখতে পারেন। অবিবাহিতাদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২৫০ গ্রাম। পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত হলুদ ধাতু রাখার অধিকারী।

১৬ ২০

সরকারি নিয়মে এটাও বলা রয়েছে যে, নাগরিকদের কাছে সোনা সংক্রান্ত বৈধ নথি থাকতে হবে। তবে বাড়িতে নির্দিষ্ট পরিমাণে হলুদ ধাতু থাকলে তল্লাশির সময় সরকারি আধিকারিক ইচ্ছা করলেই তা বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন না।

১৭ ২০

সোনার উপর আয়করের নিয়মটি বেশ সহজ। যদি কোনও ব্যক্তি ঘোষিত আয় বা করমুক্ত আয়ের (যেমন কৃষি) অর্থে হলুদ ধাতু কিনে থাকেন, তবে তাঁকে কোনও কর দিতে হবে না। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সোনার ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য।

১৮ ২০

সোনা রাখার ক্ষেত্রে আয়কর না থাকলেও বিক্রির ক্ষেত্রে অবশ্যই কর দিতে হবে। যদি কোনও ব্যক্তি হলুদ ধাতু মজুত থাকার তিন বছর পর বিক্রি করেন, তা হলে সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ ‘দীর্ঘমেয়াদি মূলধন লাভ’ (লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস্) হিসাবে গণ্য হবে। এর পরিমাণ ২০ শতাংশ।

১৯ ২০

কিন্তু গ্রাহক সোনা কেনার তিন বছরের মধ্যে তা বিক্রি করলে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। সে ক্ষেত্রে লভ্যাংশ ব্যক্তিগত আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এর পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য করের স্ল্যাবের উপর ভিত্তি করে কর নেবে সরকার।

২০ ২০

২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর বাড়িতে সোনা রাখার ব্যাপারে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিবিডিটি। সেখানে বলা হয়, স্বর্ণালঙ্কার রাখার পরিমাণের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে থাকা হলুদ ধাতুর উৎস পরিষ্কার হতে হবে। পাশাপাশি, এটি আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন হলে চলবে না।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement