হিন্দি চলচ্চিত্রজগতের ‘রোম্যান্সের রাজা’ বলে কথা! সেই ‘কিং অফ বলিউড’-এর অভিনয়দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বলিপাড়ার এক প্রযোজক। শুধু তা-ই নয়। শাহরুখ খানের পরিবর্তে বলিউডের অন্য এক খানকে দিয়েও যে অভিনয় করিয়ে নেওয়া যেতে পারে, সেই পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি। ছবিনির্মাতার এই কথা শুনেই রেগে আগুন হয়ে গিয়েছিলেন শাহরুখ।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ১৯৯৩ সালে ‘বাজ়িগর’ মুক্তি পাওয়ার পর শাহরুখের জনপ্রিয়তা রাতারাতি বেড়ে গিয়েছিল। একের পর এক হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পাচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় বলিউডের নামকরা প্রযোজক রতন জৈনের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন শাহরুখ।
‘বাদশা’ ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন শাহরুখ। এই ছবিতে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন টুইঙ্কল খন্না। ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন রতন।
শাহরুখের সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও একটি ছবি তৈরির পরিকল্পনা করছিলেন রতন। তা নিয়েই ঘনিষ্ঠমহলে আলোচনা করছিলেন তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘ইয়েস বস্’ ছবিটি প্রযোজনা করবেন বলে স্থির করেছিলেন রতন। সেই ছবির নায়িকা হিসাবে জুহি চাওলাকে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠমহলের সকলের সমর্থনও ছিল। কিন্তু নায়কের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছিলেন রতন।
রতন নাকি জানিয়েছিলেন, ‘ইয়েস বস্’ ছবিতে শাহরুখ অভিনয় করতে না চাইলেও কোনও ক্ষতি হবে না। শাহরুখ অপরিহার্য নন। শাহরুখ অভিনয় করতে না চাইলে তিনি সইফ আলি খানকে দিয়ে সেই ছবি তৈরি করে দিতে পারবেন। রতনের এই মন্তব্য পৌঁছে গিয়েছিল শাহরুখের কানেও।
শাহরুখের পরিবর্তে সইফের সঙ্গে রতন কাজ করতে চাইছেন শুনে ‘বাদশা’ ভেবেছিলেন, তাঁর অভিনয়দক্ষতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আত্মসম্মানেও আঘাত লেগেছিল তাঁর। তাই রতনের সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন অভিনেতা।
রতনের কথা শুনে শাহরুখ নাকি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘সইফ কে?’’ সেই সময় শাহরুখের সমস্ত কাজকর্মের দেখাশোনা করতেন হরি সিংহ। শাহরুখ তখন হরির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়েছিলেন, তিনি ‘বাদশা’ ছবির পর রতনের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনও কাজ করতে আগ্রহী নন। সে কথা রতনকেও জানিয়ে দিতে বলেছিলেন শাহরুখ।
শাহরুখের সিদ্ধান্ত শুনে বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন রতন। তাঁর সঙ্গে সেটে কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন অভিনেতা। শাহরুখের রাগ ভাঙানোর কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না রতন। শেষমেশ সত্যের শরণাপন্ন হয়েছিলেন প্রযোজক।
শাহরুখের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন রতন। তিনি যে মন থেকে এ কথা বলতে চাননি, তা-ও শাহরুখকে জানিয়েছিলেন তিনি। রতনের কথায়, ‘‘হঠকারিতায় কোনও ভাবে সইফের নাম আমার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমি সত্যিই দুঃখিত।’’
প্রযোজকের কথা শুনে রাগ গলেছিল শাহরুখের। ‘বাদশা’র শুটিং শেষ হওয়ার পর তিনি ‘ইয়েস বস্’ ছবিটি নিয়ে রতনের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যে সেই ছবির শুটিংও শুরু হয়ে গিয়েছিল।
‘বাদশা’র শুটিং আগে শেষ হলেও সেই ছবি ‘ইয়েস বস্’ মুক্তি পাওয়ার দু’বছর পর মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৯৭ সালে ‘ইয়েস বস্’ মুক্তি পেয়েছিল। তার দু’বছর পর ১৯৯৯ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘বাদশা’।
‘ইয়েস বস্’ ছবিটির পরেও রতনের সঙ্গে কাজ করতে দেখা গিয়েছিল শাহরুখকে। ২০০০ সালে প্রেক্ষাগৃহে শাহরুখ অভিনীত ‘জোশ’ ছবিটি মুক্তি পায়। সেই ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন রতন।
রতনের প্রযোজনায় ছবিতে শুধুমাত্র অভিনয়ই করেননি। তাঁর সঙ্গে সহ-প্রযোজনা করেছিলেন শাহরুখ-পত্নী গৌরী খান। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ম্যায় হুঁ না’ ছবিতে গৌরীর সঙ্গে সহ-প্রযোজনা করেছিলেন রতন।