Death Becomes Growing Business

বাড়ছে নিঃসঙ্গ একাকী মৃত্যু, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ‘মৃতের ব্যবসা’! আমেরিকার বন্ধু দেশের ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহের বিষয় এখন অন্ত্যেষ্টি

তরুণ প্রজন্মের অনেকেই মৃতের ব্যবসাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কোরীয় সমাজে যে হারে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে এই ধরনের কাজের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে বই কমবে না বলে ধারণা অনেকের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৬
Share:
০১ ১৬

দক্ষিণ কোরিয়ার (রিপাবলিক অফ কোরিয়া বা আরওকে) বন্দর শহর বুসানের একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই সার দিয়ে রাখা কফিন। তাতে শোয়ানো ম্যানিকুইন। ভবিষ্যতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালকদের প্রশিক্ষণের জন্য আনা হয়েছে সেগুলিকে।

০২ ১৬

কিম জং উনের পড়শি দেশে নবজাতকের হার কমেছে। মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠছে দেশের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী। এখানে জন্মহার বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সি। ফলে একটা গোটা দেশ বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মৃত্যুহার।

Advertisement
০৩ ১৬

দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক জনসংখ্যায় পরিবর্তন দেখা দেওয়ার তরুণ প্রজন্মের অনেকেই মৃত্যুর ব্যবসাকে পেশা হিসাবে বেছে নেওয়ায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সে কারণে মৃতদেহের সংরক্ষণ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কী ভাবে পরিচালনা করতে হয় তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোর্সও করানো হচ্ছে!

০৪ ১৬

বুসান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী কোরীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পদ্ধতি শেখার জন্য কফিনে শোয়ানো ম্যানিকুইনগুলি ব্যবহার করেন। কী ভাবে চামড়ার উপর আলতো করে কাপড় জড়িয়ে তা কফিনবন্দি করতে হবে, ক্লাসে তা শেখানো হচ্ছে তরুণ শিক্ষার্থীদের।

০৫ ১৬

২৭ বছর বয়সি কোরীয় তরুণ জাং জিন-ইয়ং। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবস্থাপনা বিষয়টি নিয়ে পড়তে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, কোরীয় সমাজে যে হারে বৃদ্ধের সংখ্যা বাড়ছে তাতে এই ধরনের কাজের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে বই কমবে না। তাই তিনি এই পেশায় যুক্ত হতে চাইছেন।

০৬ ১৬

দক্ষিণ কোরিয়ায় বেড়েছে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। দেশটিতে ৬০ বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা এখন মোট জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ। গড় আয়ুর উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির কারণে প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান গড় আয়ু এবং ক্রমহ্রাসমান জন্মহারের দৌলতে দক্ষিণ কোরিয়ায় জনসংখ্যায় বার্ধক্যের গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে।

০৭ ১৬

দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪ শতাংশ এখন ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি। ২১০০ সালের মধ্যে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা জনসংখ্যাগণকদের। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হল বৃদ্ধ দক্ষিণ কোরীয়রা বেশির ভাগই একা বেঁচে আছেন। এবং স্বজন-পরিবারের সান্নিধ্য ছাড়াই মারা যাচ্ছেন।

০৮ ১৬

এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশে এখন একক পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪২ শতাংশ। এই নিঃসঙ্গতা এতটাই বেড়েছে যে, বাড়িতে প্রবীণ মানুষেরা মারা যাচ্ছেন, অথচ জানতেই পারছেন না পরিবার বা আশপাশের লোকেরা। একাকিত্বের মধ্যে বেঁচে আছেন দেশটির প্রবীণ নাগরিকেরা। জীবনের শেষ মুহূর্তেও এঁদের পাশে থাকছেন না কোনও প্রিয়জন।

০৯ ১৬

আর এখানেই প্রয়োজন পড়ছে পরিচ্ছন্নতা কর্মী বা অন্ত্যেষ্টিকর্মীদের। এই পেশায় যাঁরা আছেন তাঁদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে নিঃসঙ্গ মৃত্যুর ঘটনাগুলিতে, যেখানে মৃত ব্যক্তি বেশির ভাগই একা থাকতেন। মারা যাওয়ার পর তাঁদের মৃতদেহ সৎকার করা ও ঘর পরিষ্কার করার জন্য ডাকা হয় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।

১০ ১৬

এমনই এক জন প্রাক্তন ধ্রুপদী সঙ্গীতশিল্পী চো ইউন-সিওক। সাবেক পেশা ছেড়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পেশা বেছে নিয়েছেন। তাঁর কথায়, তিনি এমন অনেক বাড়ি পরিষ্কার করেছেন যেখানে তাঁকে দেহ উদ্ধার করতে যেতে হত। কখনও কখনও তাঁদের মৃত্যুর বেশ কয়েক দিন পরেও।

১১ ১৬

শিউরে ওঠার মতো একাধিক তথ্য উঠে এসেছে তাঁদের অভিজ্ঞতায়। কখনও এমন হয়েছে মৃত্যু হওয়ার পর এক মাস ধরে মানুষের মৃতদেহ বাড়িতে পড়ে ছিল। এই সব হতভাগ্য মানুষের মৃত্যুর খবরও বাইরে কারও কাছে এসে পৌঁছোয়নি। একাকী, নিঃসঙ্গ অবস্থায় নিজের বাড়িতে মারা গিয়েছেন কোরীয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা।

১২ ১৬

উন্নত দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। এই ‘একাকী মৃত্যুর’ মধ্যে সেই সব ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত যাঁরা নিজের হাতে জীবন শেষ করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি দেশটিতে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

১৩ ১৬

৪৭ বছর বয়সি কোরীয় নাগরিক চো জানিয়েছেন, তিনি মাঝেমধ্যেই যানবাহন পরিষ্কার করার জন্য ফোন পেতে শুরু করেন। কিন্তু অকুস্থলে গিয়ে দেখতে পান যে গ্রাহকেরা তাঁকে ফোন করার পর তাঁদের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।

১৪ ১৬

আশির কোঠায় এসে মারা যাওয়ার পর এক মহিলার বাড়ি থেকে পরিষ্কারের জন্য ফোন করা হয় একটি সংস্থার কর্মীকে। তিনি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সেখানে পৌঁছে দেখেন তখনও ওই বৃদ্ধার বাড়ি জীবনের চিহ্নে ভরা ছিল। একটি পুরনো এয়ার কন্ডিশনার চলছিল। সাজানো ছিল প্রসাধনীর বোতল। একটি দরজার পাশে বেশ কয়েকটি হাঁটার লাঠি দাঁড় করানো ছিল।

১৫ ১৬

শুধু বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী নয়, তরুণদের মধ্যেও একা থাকার প্রবণতা বেড়েছে। গার্হস্থ্য হিংসার পর বিবাহবিচ্ছিন্না এক তরুণী একা একটি সঙ্কীর্ণ ঘরে থাকতেন। সেটি পাঁচ বর্গ মিটারেরও কম ছিল। মাসে এক বার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য ডাকতেন চো-কে। বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন তিনি।

১৬ ১৬

এক বছর পর সেই ছোট্ট ঘরেই আত্মহত্যা করেন তরুণী। জিনিসপত্রের স্তূপ আর পচা খাবারে বিছানা ঢেকে গিয়েছিল। মৃতদেহের পাশে ছিল একটি ছোট্ট বাক্স। তাতে জীবিত ছিল তরুণীর পোষ্য হ্যামস্টারটি। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবসার এক অভিজ্ঞ ব্যক্তি জানিয়েছেন, এই জীবিকায় তরুণদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement