Fighter Jet Tejas MK A1

বিদেশি ‘বুড়ো ঘোড়া’র জায়গা নিতে তৈরি দেশি পক্ষীরাজ! চিন-পাকিস্তানকে টক্কর দিতে আসছে ২২০টি লড়াকু বিমান

তেজস একটি এক ইঞ্জিনের ফাইটার জেট। বহু কার্যক্ষমতাসম্পন্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান। হালকা অথচ লড়াকু এই যুদ্ধবিমানটিরই আধুনিকতম সংস্করণ হল ‘তেজস মার্ক-১এ’। চিনের জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের থেকেও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যে কয়েক ধাপ এগিয়ে তেজসের নয়া সংস্করণ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২০
Share:
০১ ১৬

৬০ বছর একটানা কাজ করে অবসরের গ্রহে ভারতীয় বায়ুসেনার লড়াকু ‘পুরনো ভৃত্য’ মিগ ২১। ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে আপাতত যে যুদ্ধবিমান বহর রয়েছে, তার মধ্যে তেজস, রাফাল এবং সুখোই অন্যতম। ২০৩১ সালের মধ্যে যুদ্ধবিমান বহর সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ছ’দশকের পুরনো রুশ যুদ্ধবিমান মিগ-২১-এর পরিবর্ত হিসাবে ভারতীয় যুদ্ধবিমান তেজসের নতুন সংস্করণকে বেছে নিতে চলেছে বায়ুসেনা।

০২ ১৬

ঘরের মাটিতে তৈরি লড়াকু তেজসকে আরও হালকা এবং শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড’(হ্যাল)। আগামী কয়েক বছরে ২২০টিরও বেশি তেজস যুদ্ধবিমান শামিল হবে বায়ুসেনার ফাইটার স্কোয়াড্রনগুলিতে। হালকা ওজনের যুদ্ধবিমান বা এলসিএ-তে (লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফ্‌ট) যুক্ত হবে ইজ়রায়েলি প্রযুক্তি। আর তাতেই পশ্চিমি জেটগুলির সমান ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবে তেজস ‘এমকে-১’ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement
০৩ ১৬

সাড়ে চার প্রজন্মের ফাইটার জেটটিকে বায়ুসেনায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২০২১ সালে ছাড়পত্র দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি। ২২০টি তেজসের মধ্যে ১৭৩টি তেজস ‘এমকে-১এ’ বিমান এক আসনের এবং ৪৭টি দুই আসনবিশিষ্ট প্রশিক্ষক বিমানের বরাত হ্যালকে দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০৪ ১৬

চুক্তির মূল্য ৬৬ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে হ্যালকে ৪০টি তেজস ‘এমকে-১’ বরাত দিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। অক্টোবরে নতুন করে আরও ৯৭টি উন্নত সংস্করণ তেজস ‘এমকে-১এ’ যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে হ্যাল।

০৫ ১৬

২০২৩ সালে, হ্যাল ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছ থেকে ১৮টি দুই আসনবিশিষ্ট তেজস তৈরির বরাত পায়। ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ১৮টি তেজস বিমান সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেঙ্গালুরুস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। দীর্ঘ টালবাহানা চলার পর সময়মতো বিমান সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় হ্যাল। ২০২৩ সালের শেষ থেকেই বায়ুসেনার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল ‘লাইট কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্‌ট’ গোত্রের তেজস বিমানগুলিকে।

০৬ ১৬

৬৫ শতাংশ দেশীয় সরঞ্জামে তৈরি হলেও বিমানে ইঞ্জিন ও রা়ডারের প্রযুক্তির জন্য হ্যালকে দ্বারস্থ হতে হয়েছে যথাক্রমে আমেরিকা ও ইজ়রায়েলের কাছে। মার্কিন সংস্থা জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই) অ্যারোস্পেসের থেকে তেজসের জন্য ৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় মোট ১১৩টি এফ৪০৪ ইঞ্জিন কেনার চুক্তিতেও স্বাক্ষর করছে হ্যাল। সেই ইঞ্জিন দেশের মাটিতে এসে পৌঁছে দিতে দেরি করছে মার্কিন সংস্থাটি। এমনটাই অভিযোগ হ্যালের।

০৭ ১৬

সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়ে ১৬ মাস বিলম্বের পরে চলতি মাসের শেষেই বায়ুসেনার হাতে বহুপ্রত্যাশিত প্রথম পর্যায়ের ৮৩টি বিমানের মধ্যে ২টি তেজস এমকে-১ তুলে দিতে পারে হ্যাল। হ্যালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ১০টি যুদ্ধবিমান নির্মাণের কাজ পুরোপুরি শেষ। শীঘ্রই ধাপে ধাপে সেগুলি সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হবে।

০৮ ১৬

তেজস একটি এক ইঞ্জিনের ফাইটার জেট। বহু কার্যক্ষমতাসম্পন্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান। হালকা অথচ লড়াকু এই যুদ্ধবিমানটিরই আধুনিকতম সংস্করণ হল ‘তেজস মার্ক-১এ’। একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিষয়ক রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে চিনের ‘জেএফ-১৭’ যুদ্ধবিমানের থেকেও প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যে কয়েক ধাপ এগিয়ে তেজসের নয়া সংস্করণ।

০৯ ১৬

হালকা যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির মাপকাঠিতে তেজসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলনায় আসে চিনা ‘জেএফ-১৭’ বিমানটি। চিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে সাড়ে চার প্রজন্মের তেজস যাতে পিছিয়ে না পড়ে, তার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করছে না হ্যাল। এই প্রতিযোগিতায় ভারতীয় সংস্থাকে প্রযুক্তিগত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘এলটা’ নামের ইজ়রায়েলি সংস্থা।

১০ ১৬

তেজস ‘এমকে-১এ’-তে তার পূর্বসূরি ‘এমকে-১’-এর তুলনায় ৪০টিরও বেশি উন্নত প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ যুক্ত করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিমান আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমি— দু’টি ক্ষেত্রেই হামলা চালাতে দক্ষ। ফলে মিগ ২১-এর মতো পুরনো যুদ্ধবিমানের জায়গায় এই বিমানকে কাজে লাগানো যেতে পারে অনায়াসেই।

১১ ১৬

শত্রুব্যূহে ঢুকে হামলা চালাতে পারবে এই যুদ্ধবিমান। মাঝ-আকাশে লড়াইয়ে শত্রু বিমানকে ঘোল খাইয়ে দেওয়ার জন্য ‘অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক স্ক্যানড অ্যারে’ বা এইএসএ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে হ্যাল সূত্রে খবর। এটি একটি উন্নততর রেডার ব্যবস্থা। তেজসের আগের সংস্করণগুলিতেও এই রেডার ব্যবহার করেছিল হ্যাল।

১২ ১৬

যু্দ্ধবিমানটিতে আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে চালকের সচেতনতার জন্য ককপিটে আছে একটি আধুনিক কম্পিউটার এবং স্মার্ট মাল্টি-ফাংশন ডিসপ্লে। প্রতিকূল পরিবেশে সুরক্ষিত রাখার জন্য বিমানটিতে একটি উন্নত ইলেকট্রনিক যুদ্ধ বর্ম রয়েছে। তার মধ্যে একটি জ্যামারও রয়েছে, যাতে বিমানটি নিজেকে শত্রু হামলা থেকে সুরক্ষিত করতে পারে। শত্রুর র‌্যাডারে বিমানটির অস্তিত্ব ধরা পড়ার আগেই রেডিয়ো ওয়েভকে অকেজো করে দেবে এই জ্যামারটি।

১৩ ১৬

আকাশযুদ্ধে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই লড়াকু জেটের। উড়ানের মাঝপথে জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে তা ভরে নেওয়া সম্ভব। আধুনিক সমরকৌশলে পাল্লা দিতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত বিমানে সফ্‌টঅয়্যার নির্দেশিত রেডিয়ো সিস্টেম বসানো হয়েছে এতে। এর ফলে যুদ্ধ চলাকালীন চালকের সঙ্গে বেস ক্যাম্প বা সহযোদ্ধাদের কথোপকথন ও যোগাযোগ সুরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়াও এতে বসানো রয়েছে ‘কোয়াড্রাপ্লেক্স ডিজিটাল এফবিডব্লিউ সিস্টেম’, যা বিমানকে স্থিতিশীল রাখে।

১৪ ১৬

২০২৩ সালের অক্টোবরে তেজসের ‘মার্ক-১’ ফাইটার জেটের দ্বিআসনযুক্ত নয়া প্রশিক্ষণ সংস্করণটি আনুষ্ঠানিক ভাবে তুলে দেওয়া হয়েছিল বায়ুসেনার হাতে। ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্যে সফল উড়ান এবং অবতরণ পরীক্ষা হয়েছে তেজসের।

১৫ ১৬

এই যুদ্ধবিমান আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমি দু’টি ক্ষেত্রেই হামলা চালাতে দক্ষ। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২২০০ কিলোমিটার (১.৮ ম্যাক) গতিতে উড়তে সক্ষম। ১৮৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এই বিমান। এই বিমান ৯ হার্ডপয়েন্ট, ২৩ মিলিমিটার জিএসএইচ-২৩, অস্ত্র বিভিআর ক্ষেপণাস্ত্র, ব্রহ্মস-এনজি এবং গাইডেড বোমা বহনে সক্ষম।

১৬ ১৬

দীর্ঘ দিন ধরেই যুদ্ধবিমানের সঙ্কটে ভুগছে ভারতীয় বায়ুসেনা। চিন ও পাকিস্তানের মতো জোড়া শত্রুর মোকাবিলায় লড়াকু জেটের বহরকে অন্তত ৪২ স্কোয়াড্রন রাখতে চাইছে তারা। কিন্তু বর্তমানে সেটা নেমে এসেছে ৩২ স্কোয়াড্রনে। অন্তত তিন স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান বহরে শামিল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন নয়াদিল্লির বায়ুবীরেরা। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রকে সুপারিশও করেছেন তাঁরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement