cult

Cult: অবাধ যৌনতা থেকে মাদকসেবন, ভয় ধরায় এই সব গোষ্ঠীর বিশ্বাস আর ‘ধর্মাচরণ’

সিনানন-প্রধান চার্লস অনুগামীদের বুঝিয়েছিলেন শিশুদের জন্ম দেওয়া অনুচিত। আর তাই তিনি তাঁর পুরুষ অনুরাগীদের বন্ধ্যত্বকরণের জন্য চাপ দিতেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ১০:৪৫
Share:
০১ ৩০

বিভিন্ন বিশ্বাস মতে চলা এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ ওই গোষ্ঠীর সদস্য হয়ে গোষ্ঠী-নেতার সব কথা অন্ধের মতো অনুসরণ করেছে। এমনকি, নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে গিয়ে স্বাধীনতা এবং সম্পদ, দুই-ই খোয়াতে হয়েছে তাঁদের।

০২ ৩০

এই সব বিশেষ কিছু বিশ্বাস মেনে চলা গোষ্ঠীর নেতারা অনেক সময়ই বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে অনুগামীদের নিয়ন্ত্রণ করেন, তাঁদের বিপথে চালিত করেন।

Advertisement
০৩ ৩০

জেনে নিন, পৃথিবীর এমনই সব বিপজ্জনক এবং কুখ্যাত বিশ্বাস মতে চলা কিছু গোষ্ঠী এবং সেই সব গোষ্ঠীর নেতাদের কথা।

০৪ ৩০

সিনানন: চার্লস ডেডেরিচ নামে এক ব্যক্তি ১৯৫৮ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকাতে সিনানন নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী শুরু করেন। বিশেষ বিশ্বাস মেনে চলা গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত হলেও সিনানন প্রথমে মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসাবে শুরু হয়েছিল।

০৫ ৩০

সিনানন গোষ্ঠীর সভায় এক জন সদস্যকে মন খুলে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হত। তবে যখনই এক জন সদস্য কথা বলতে শুরু করতেন, ঠিক তখনই সভায় উপস্থিত বাকিরা তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করতেন।

০৬ ৩০

এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বহু অর্থ অনুদান দিয়ে এই বিশেষ গোষ্ঠীতে নিজেদের জায়গা পাকা করতেন। পাশাপাশি এই গোষ্ঠীতে যোগ দিলে কায়িক শ্রম করা বাধ্যতামূলক ছিল।

০৭ ৩০

সিনানন-প্রধান চার্লস অনুগামীদের বুঝিয়েছিলেন শিশুদের জন্ম দেওয়া উচিত কাজ নয়। আর সেই কারণেই তিনি তাঁর পুরুষ অনুরাগীদের বন্ধ্যত্বকরণের জন্য চাপ দিতেন। চার্লস বহু মহিলা অনুগামীকে গর্ভপাতেও বাধ্য করেছিলেন।

০৮ ৩০

১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর পুলিশ সিনাননের প্রধান ডেরায় অভিযান চালিয়ে চার্লসকে তাঁর লেক হাভাসুর বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখে। তাঁকে পাঁচ বছরের জন্য নজরবন্দি করে রাখার সাজা শোনানো হয় এবং প্রায় তিন লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ-ও নির্দেশ দেওয়া হয়, চার্লস আর সিনানন চালাতে পারবেন না।

০৯ ৩০

কর ফাঁকি, প্রমাণ নষ্ট করা এবং সন্ত্রাসমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৯১ সালে সিনানন বন্ধ হয়ে যায়। এর ছয় বছর পরে ১৯৯৭ সালে চার্লস মারা যান।

১০ ৩০

নেক্সিয়াম: ১৯৯৮ সালে কিথ রেনিয়ের নেক্সিয়াম নামে এক বিশেষ গোষ্ঠীর প্রবর্তন করেন। নেক্সিয়াম বিশেষ ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম চর্চিত গোষ্ঠী হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে প্রকাশ্যে আসে যে নেক্সিয়াম আসলে যৌন ধর্মাচরণ করত। নেক্সিয়ামের মোট ১৮ হাজার সদস্য ছিল। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অভিনেত্রী অ্যালিসন ম্যাক।

১১ ৩০

এই গোষ্ঠীর গুরু কিথ ধর্মাচরণ করার জন্য একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করছিলেন। এই বিশেষ জায়গায় মহিলা অনুগামীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই জায়গায় কিথ নিজের মহিলা অনুরাগীদের সঙ্গে অবাধ যৌন মিলন করতেন এবং এই মহিলা অনুরাগীরা যাতে কখনও কারও কাছে মুখ না খোলেন তার জন্য তাঁদের নগ্ন ছবি তুলে রাখতেন।

১২ ৩০

তবে একটা সময় পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে কিথের বহু অনুরাগী প্রকাশ্যে কিথের সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ আনেন। ২০২০ সালে বহু মহিলা কিথের বিরুদ্ধে মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। মহিলা পাচার এবং শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরি-সহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কিথকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বন্ধ হয় নেক্সিয়াম।

১৩ ৩০

চিলড্রেন অব গড: ১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে ধর্মদ্রোহী প্রচারক ডেভিড বার্জ ‘টিনস ফর ক্রাইস্ট’ নামে বিশেষ বিশ্বাস মতে চলা গোষ্ঠী শুরু করেন।

১৪ ৩০

ডেভিড যিশু খ্রিস্টের আদর্শের সঙ্গে ১৯৬০-এর দশকের অবাধ প্রেমের তত্ত্বকে এক করে এমন এক মতাদর্শের প্রবর্তন করেন যা তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করেছিল।

১৫ ৩০

সারা বিশ্ব জুড়ে এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার। ১৯৭০-এর দশকে ধর্মাচরণের আড়ালে অবাধে যৌনচর্চার জন্য এই গোষ্ঠী কুখ্যাত হয়ে ওঠে। এমনকি, এই গোষ্ঠীর মহিলা অনুগামীরা ‘ধর্মীয় পতিতা’-র তকমা পান।

১৬ ৩০

গোষ্ঠীপ্রধান বার্জ শিশুদেরও যৌনমিলনের জন্য উৎসাহিত করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগও ওঠে, গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ায় প্ররোচনা দিতে তিনি মহিলা অনুরাগীদের অন্য পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গম করতে চাপ দিতেন।

১৭ ৩০

বলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স এবং রোজ ম্যাকগোয়ানের পরিবারও এই গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তবে পরে তাঁরা এই দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।

১৮ ৩০

এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালীন ১৯৯৪ সালে বার্জ মারা যান। ‘টিনস ফর ক্রাইস্ট’-এর নাম বদলে রাখা হয় ‘চিলড্রেন অব গড কাল্ট ফ্যামিলি ইন্টারন্যাশনাল’। এখনও এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে বর্তমানে সদস্যেরা আর যৌনাচার করেন না বলেও এই গোষ্ঠীর দাবি।

১৯ ৩০

দ্য ম্যানসন ফ্যামিলি: কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, দীর্ঘ দিন জেল খাটা অপরাধী চার্লস ম্যানসন লস এঞ্জেলসে ‘ম্যানসন ফ্যামিলি’ নামে এক বিশেষ গোষ্ঠী শুরু করেন।

২০ ৩০

মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলা মাদকসেবন, অবাধ যৌনাচার এবং মন নিয়ন্ত্রণ করা এই গোষ্ঠীর প্রধান আদর্শ হয়ে ওঠে। দলের সদস্যদের এই আদর্শ মেনে চলা ছিল বাধ্যতামূলক।

২১ ৩০

ম্যানসন নিজেকে দেবদূত হিসাবে জাহির করেছিলেন। তাঁর সদস্যদের মানুষ খুন করার প্ররোচনা দিতেও শুরু করেন ম্যানসন। ১৯৬৯ সালের ৮ অগস্ট, এই গোষ্ঠীর সদস্যেরা আমেরিকার অভিনেত্রী শ্যারন টেট-সহ পাঁচ জনকে নির্মম ভাবে খুন করেন। ঘটনাচক্রে শ্যারন ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক রোমান পোলানস্কির স্ত্রী। এর ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ৯ অগস্ট রাতে ম্যানসনের নির্দেশে ‘ম্যানসন ফ্যামিলি’-র সদস্যেরা রোজমেরি এবং লেনো লাবিয়ানকাকে খুন করেন।

২২ ৩০

১৯৭১ সালে, ম্যানসনকে খুনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর ৮৩ বছর বয়সে ম্যানসন মারা যান।

২৩ ৩০

দ্য ফ্যামিলি: ‘দ্য ফ্যামিলি’ ছিল এক বিশেষ ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী, যা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলিয়ায় সক্রিয় ছিল। এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন যোগগুরু অ্যান হ্যামিল্টন বাইর্ন। অ্যান নিজেকে জিশু খ্রিস্টের রূপ হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করেন। তাঁর দাবি ছিল যে, তাঁর শরীরের মাধ্যমে জিশু খ্রিস্ট পুনর্জন্ম নিয়েছেন।

২৪ ৩০

অ্যান এই গোষ্ঠীর সদস্যদের ২৮ জন সন্তানকে দত্তক নেন এবং অন্য সদস্যদেরও তাঁদের সন্তানদের দত্তক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

২৫ ৩০

অ্যানের লক্ষ্য ছিল এমন একটি গোষ্ঠী তৈরি করা, যা পৃথিবীর ধ্বংসের পর বিশ্বকে নতুন করে শাসন করবে। আর সেই লক্ষ্য পূরণ করতে তিনি এই শিশুদের উপর অত্যাচার করা শুরু করেন। শিশুদের মারধর করা থেকে শুরু করে তাদের অনাহারে রাখা, এমনকি এই শিশুদের উপর মাদকেরও প্রয়োগ করতেন বলে অ্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।

২৬ ৩০

১৯৮৭ সালে পুলিশ অ্যানের লেক ইলডনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বহু শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে অ্যান নিজের সব দোষ অস্বীকার করেন। ২০১৯ সালে ৯৮ বছর বয়সে তিনি ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

২৭ ৩০

পিপলস টেম্পল: ১৯৫০-এর দশকে জিম জোনস নামে এক ব্যক্তি ‘পিপলস টেম্পল’ নামে এই গির্জা তৈরি করেন। তিনি দাবি করেন, খ্রিস্টান ধর্মের মূল তত্ত্বের সঙ্গে সমাজতন্ত্র এবং সমতা প্রচার করাই এই গির্জার প্রধান লক্ষ্য।

২৮ ৩০

তবে জিম বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে পারমাণবিক যুদ্ধ আসন্ন। আর সেই কারণেই গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকাতে চলে যান। ভেবেছিলেন এর থেকে নিরাপদ জায়গা আর হতে পারে না। তবে এর পরেও ভয় জিমের পিছু ছাড়েনি। ১৯৭৭ সালে জিম আবার ‘দ্য পিপলস টেম্পল’-কে দক্ষিণ আমেরিকার গুয়ানার একটি প্রত্যন্ত জায়গায় স্থানান্তরিত করেন। নাম দেন জোনসটাউন।

২৯ ৩০

খুব শীঘ্রই জোনসটাউন একটি বন্দি শিবিরে পরিণত হয়। সদস্যদের প্রকাশ্যে মারধর থেকে শুরু করে কারাগারে বন্দি করে রাখা, কী হত না জোনসটাউনে? এমনকি, সদস্যদের জোর করে মাদক নিতে বাধ্য করা হত। ১৯৭৮ সালে রাজনীতিবিদ লিও রায়ান এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলির তদন্ত করার জন্য জোনসটাউনে পৌঁছন। কিন্তু লিও সেখানে পৌঁছতেই পিপলস টেম্পলের নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁর উপর গুলি চালান।

৩০ ৩০

বিপদ আসন্ন বুঝে সেই দিনই গোষ্ঠীর সদস্যদের জিম সায়ানাইড বিষ এবং মাদক মেশানো শরবত পান করতে বাধ্য করেন। যাঁরা এটি পান করতে রাজি হননি, তাঁদের শরীরে জোর করে এই বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এই ঘটনায় মোট ৯১৮ জন মারা গিয়েছিলেন। আমেরিকার ইতিহাসে একসঙ্গে এত জন সাধারণ নাগরিক মারা যাওয়ার নিরিখে ৯/১১-এর পরেই স্থান পায় এই ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement