Puzzle Mystery

ডার্ক ওয়েবে জটিল ধাঁধা! কে দিল, কেনই বা দিল, নেই উত্তর, সমাধান করতেই বাড়ল রহস্য

এর নেপথ্যে কোনও সংস্থা রয়েছে, না কি মুখোশের আড়ালে কোনও ব্যক্তি নিছক মজা করছেন, তা নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় নেটদুনিয়া। আর বিখ্যাত হয়ে পড়ে ‘সিকাডা ৩৩০১’ নামটি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৯
Share:
০১ ১৬

২০১২। নেটমাধ্যমে ‘৪চ্যান’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। ছবির সঙ্গে একটি লেখাও পোস্ট করা হয়। তাতে লেখা ‘‘আমরা একটি পরীক্ষা চালাচ্ছি। এই ছবির মধ্যে কিছু বার্তা লুকিয়ে রয়েছে। আমরা সে রকম কয়েক জন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সন্ধান করছি, যাঁরা ছবির ভিতর লুকিয়ে থাকা বার্তা খুঁজে বার করতে পারবেন।’’ লেখাটির শেষে ৩৩০১ নম্বরটিও লেখা থাকতে দেখা যায়। এই ছবিটি কম সময়ের মধ্যেই নেটমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ডার্ক ওয়েবের এই জটিল ধাঁধার পিছনে কোনও সংস্থা রয়েছে, না কি মুখোশের আ়ড়ালে কোনও ব্যক্তি নিছক মজা করছেন, তা নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় নেটদুনিয়া। আর বিখ্যাত হয়ে পড়ে ‘সিকাডা ৩৩০১’ নামটি।

০২ ১৬

খালি চোখে ছবিটি থেকে কোনও বার্তা ধরা না পড়ায় অনেকেই বুঝতে পারেন যে, এই ধাঁধা সমাধান করতে হলে কোডিং, ক্রিপ্টোগ্রাফি থেকে শুরু করে শব্দ নিয়ে খেলার নিয়মকানুনেও পটু হতে হবে।

Advertisement
০৩ ১৬

কারও কারও মতে, এই কাজ জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাজেন্সি বা এনএসএ) অথবা মিলিটারি ইনটেলিজেন্স সেক্টর ৬ (এমআই ৬) সংস্থার তরফে নিয়োগ করা হচ্ছে। যাঁরা এই ধাঁধাগুলি সমাধান করে অন্তিম পর্বে জিতবেন, তাঁদের ওই সংস্থায় চাকরি দেওয়া হবে। চাকরি দেওয়া না হলেও কোনও বহুমূল্য পুরস্কার পেতে পারেন বিজয়ীরা।

০৪ ১৬

অনায়াসে কোডিং করতে পারেন, এমন বহু ব্যক্তি ধাঁধার রহস্য সমাধানের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। তবে প্রথম ধাঁধার জবাব খুঁজতে গিয়েই হার স্বীকার করে নেন অনেকেই। ‘স্টেনোগ্রাফি প্রোগ্রাম’-এর সাহায্যে একটি সূত্র পান কোডাররা। কিং আর্থারের বই থেকে সূত্র অনুসরণ করেই একটি ফোন নম্বর বার করেন কোডাররা।

০৫ ১৬

ওই নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করলে ও পার থেকে ভেসে আসে এক অদ্ভুত কণ্ঠস্বর। কথা বলার ধরন শুনে মনে হয়, তিনি উত্তর আমেরিকার বাসিন্দা। ফোনের ও পারে থাকা ব্যক্তিটি সবার প্রথমে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়ে কথা বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ধাঁধা সমাধান করে এত দূর আসার জন্য অভিনন্দন। আগেই ৩৩০১ নম্বরটি আপনাদের গোচরে এসেছে। পরবর্তী ধাঁধা সমাধান করে আরও দু’টি নম্বর খুঁজে বার করতে হবে। তার পর ৩টি নম্বর গুণ করে যা আসে, তার পর ডট.কম বসাতে হবে। সেখানেই লুকিয়ে রয়েছে পরবর্তী ধাঁধা।’’

০৬ ১৬

অজানা কণ্ঠস্বরের নির্দেশ অনুসরণ করে কোডারদের সামনে একটি মানচিত্র প্রকাশ্যে আসে। বিশ্বের মানচিত্রে পোল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকার পশ্চিম উপকূল ফুটে ওঠে। মানচিত্রে উঠে আসা সেই নির্দিষ্ট জায়গাগুলিতে গিয়ে কোডাররা দেখেন, সেখানে একটি পোস্টার লাগানো। প্রতিটি পোস্টারে আছে এক একটি ‘কিউআর কোড’। কোডটি স্ক্যান করলে প্রজাপতির মতো একটি চিত্র ভেসে আসে।

০৭ ১৬

তার সঙ্গে ভেসে আসে ‘অ্যাগরিপা’ নামে একটি বইয়ের সূত্র। এই বইটি ছাপানোর সময় ‘ফোটোসেন্সিটিভ’ রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নাকি এই বইয়ের কালি উধাও হয়ে যাবে বলেও অনেকে মনে করেন।

০৮ ১৬

কোডাররা একটি ফ্লপি ডিস্কও খুঁজে পান। সেখানে একটি কবিতা রয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হল যে, এই কবিতাটি এক বার পড়া যাবে। এর পরে কেউ তা পড়তে চাইলে তাঁকে অতি অবশ্যই ‘ডেটা এনক্রিপশন’, ‘মিউজ়িক্যাল ক্রিপ্টোগ্রাম’ জানতে হবে।

০৯ ১৬

কোডাররা এই সূত্রগুলির সমাধান করে একটি ওয়েবপেজের লিঙ্ক খুঁজে বার করেন। সেই লিঙ্কে যাওয়ার পর প্রথম দফার বিজয়ীরা শুভেচ্ছাবার্তা পেলেও যাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের পরে পেজে গিয়েছিলেন, তাঁদের জন্য অন্য বার্তা অপেক্ষা করছিল। সেখানে লেখা ছিল, ‘‘আমরা নেতা খুঁজছি, অনুসরণকারীদের নয়। আপনাদের খেলা এখানেই শেষ।’’

১০ ১৬

কয়েক দিন পর আবার একই ধরনের ধাঁধা পোস্ট করেন ‘৪চ্যান’। তবে প্রথমটির থেকে এই ধাঁধাটি যেন আরও বেশি জটিল। এই ধাঁধা সমাধান করতে সফল হয়েছিলেন হাতেগোনা কয়েক জন। ২০১৭ সালে তৃতীয় ধাঁধা প্রকাশ্যে আসে। তিন ধাপে ধাঁধাগুলি সমাধান করার পর বিজয়ী হয়েছিলেন মাত্র ১ জন।

১১ ১৬

জোয়েল এরিকসন। সুইডেনের বাসিন্দা তিনি। তিনটি ধাঁধা সমাধান করতে পেরেছিলেন বলে দাবি করেন জোয়েল। একটি ইমেলের ছবি নেটমাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তিনি। জোয়েলের বক্তব্য, তিনি জেতার পর ‘৪চ্যান’-এর সদস্যদের তরফ থেকে তাঁকে এই মেল পাঠানো হয়।

১২ ১৬

মেলে লেখা ছিল, ‘‘আমরা একটি আন্তর্জাতিক দল। কিন্তু আমাদের কোনও নির্দিষ্ট নাম নেই। আমরা নিজেদের পরিচয় দিতে কোনও বিশেষ প্রতীকের ব্যবহারও করি না। আমাদের কোনও ওয়েবসাইট নেই। নিজেদের বিজ্ঞাপন করতেও বিশ্বাসী নই আমরা। আমাদের দলের সদস্যরা আলাদা ভাবে কাজ করেন। এই দলে থাকতে হলে একটি মাত্র নিয়ম মেনে চলতে হবে— তা হল এই দলের ব্যাপারে কাউকে কিছু জানানো যাবে না।’’

১৩ ১৬

‘ফাস্টকোম্পানি’কে দেওয়া একটি সাক্ষাকার দিয়েছিলেন জোয়েল। জোয়েলের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে বলে জানান তিনি। ইন্টারনেটের নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি প্রায় সব কিছু জানেন বলে দাবি করেন জোয়েল।

১৪ ১৬

সাক্ষাৎকারে জোয়েল বলেন, ‘‘জয়ী হওয়ার পর আমি কোনও চাকরি পাইনি। আমাকে কোনও পুরস্কারও দেওয়া হয়নি। এই পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে ধোঁয়াশা ছা়ড়া আর কিছুই নয়। শুরুর দিকে আমি মজার ছলেই ধাঁধাগুলি সমাধান করছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, এই জল অনেক গভীর। খরগোশের গর্ত খুব গভীর হয়, এক বার ঢুকে পড়লে মনে হয় আর শেষ হচ্ছে না। এই ধাঁধাগুলিও তাই। আমি শুধু এতটুকু জানি যে, আমি কোনও একটি দলের সদস্য।’’

১৫ ১৬

এর পর আরও এক বার নেটমাধ্যমে এমন ধাঁধা ছড়িয়ে পড়েছিল। এর নেপথ্যে আসলে কাদের হাত রয়েছে, তা জানার লোভেই অনেকে ধাঁধা সমাধান করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তবে ধাঁধাগুলি এতই জটিল ছিল যে, কেউ তার সমাধান করতে পারেননি।

১৬ ১৬

অধিকাংশের দাবি, বিদেশের কোনও নিরাপত্তা সংস্থা এই পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়োগ করছে। কিন্তু কেউ কেউ আবার এই দাবি অস্বীকার করেছেন। তাঁদের মতে, কয়েক জন হ্যাকার মিলে এই কাজ করেছেন। লক্ষ করা গিয়েছে যে, ধাঁধার সমাধান করার ধাপে যে সূত্রগুলি ব্যবহার করা হয়েছে তা অনেকটাই ব্রিটেন-ঘেঁষা। তাই হ্যাকাররা ব্রিটেনের বাসিন্দা বলে অনুমান একাংশের। কেউ আবার বলেন, আমেরিকা থেকে তাঁরা এই কার্যকলাপের সঙ্গে অনবরত যুক্ত রয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘সিকাডা ৩৩০১’-এর নেপথ্যে কী রহস্য রয়েছে, তা রয়েছে অন্ধকারেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement