polyandry tradition

পরিবারের ভাইদের ভাগ করে নেন এক স্ত্রী, একাধিক এশীয় দেশে নারীর বহুগামিতায় সিলমোহর দেয় সমাজই!

এক ধরনের বহুবিবাহ প্রথা রয়েছে যেখানে এক নারীর দুই বা ততোধিক স্বামী থাকেন। পুরুষের বহুগামিতার চল রয়েছে যুগ যুগ ধরে। তাকে পলিগ্যামি নামে আখ্যা দেওয়া হয়। পলিঅ্যান্ড্রি বলতে এক নারীর একাধিক জীবনসঙ্গী থাকা বোঝায়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৪১
Share:
০১ ১৭

জমি বা সম্পদ যাতে পরিবারের হাতেই বাঁধা থাকে, মূলত এই কারণে এক বিশেষ বহুবিবাহ প্রথা চালু হয় এশিয়া ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। মূলত দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ও অনুর্বর এলাকায় থাকা পরিবারগুলির দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারণেই এই প্রথার উদ্ভব। প্রতিটা পরিবারেরই সম্বল নামমাত্র জমি। পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে তা বহু ভাগে ভাগ হওয়া আটকাতে পরিবারের একাধিক পুরুষকে পতিত্বে বরণ করতেন এক জন মহিলা।

০২ ১৭

কালে কালে এই ঐতিহ্যবাহী প্রথা বিলোপ হতে থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কিছু কিছু অংশে এখনও টিকে রয়েছে ‘সামাজিক বহুবিবাহ’। তার মধ্যে রয়েছে কয়েকটি এশীয় দেশও। সেখানে এখনও ‘দ্রৌপদী’ হওয়ার প্রথা চালু রয়েছে। অনেক জায়গাতেই পুরুষদের একাধিক স্ত্রী থাকা অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করা হয়। বিশ্ব জুড়ে অনেক সাংস্কৃতিক রীতিনীতি এবং ধর্ম এই অনুশীলনকে সমর্থন করে।

Advertisement
০৩ ১৭

পোশাকি নাম পলিঅ্যান্ড্রি। এটি এক ধরনের বহুবিবাহ প্রথা যেখানে এক নারীর দুই বা ততোধিক স্বামী থাকেন। বিশ্বের বেশ কিছু জায়গায় যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে। সেটাকে সামাজিক স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে। পুরুষের বহুগামিতার চল রয়েছে বহু কাল ধরে। তাকে পলিগ্যামি আখ্যা দেওয়া হয়। পলিঅ্যান্ড্রি বলতে এক নারীর একাধিক জীবনসঙ্গী থাকা বোঝায়।

০৪ ১৭

পুরাণে, মহাকাব্যে, এক পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকার উদাহরণের ছড়াছড়ি। মহাভারতে অবশ্য দ্রৌপদী ছাড়া একাধিক স্বামী থাকার নজির তেমন নেই। এশিয়ার কয়েকটি দেশের অঞ্চলে এখনও বজায় রয়েছে এই প্রথা। যেখানে আজও রয়েছেন ‘দ্রৌপদী’রা!

০৫ ১৭

এশিয়ারই একটি ছোট্ট দেশ রয়েছে যেখানে মহিলাদের বহু বিবাহের রীতি আজও সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। বহুবিবাহের এই প্রথায় এক জন নারীর একসঙ্গে দুই বা ততোধিক স্বামী থাকেন। পরিবারের একাধিক ভাইকে বিয়ে করেন এক জন মহিলা। দেশটির নাম নেপাল। হিমালয়ের কোলঘেঁষা রাষ্ট্রটির প্রত্যন্ত কয়েকটি অঞ্চলে একাধিক স্বামী থাকার চল রয়েছে।

০৬ ১৭

১৯৬৩ সাল থেকে নেপালে বহুবিবাহ আনুষ্ঠানিক ভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু হুমলা, দোলপা এবং কোসি অঞ্চলের মানুষ আইনের চেয়ে তাঁদের ঐতিহ্যকে বেশি গুরুত্ব দেন। ঐতিহ্য বা প্রথা ছাড়াও আর্থ-সামাজিক কারণগুলিও প্রভাবিত করেছে প্রথাটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।

০৭ ১৭

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলগুলির চাষের জমি ভাগ-বাঁটোয়ারা হওয়া আটকাতে এই পন্থা নিয়েছিলেন সমাজপতিরা। ইতিহাসবিদদের মতে, ছেলেদের বিয়ের পর জমি যাতে ভাগ না হয় সেই চিন্তাভাবনা থেকেই ‘দ্রৌপদী’ প্রথার প্রচলন হয় এই অঞ্চলে।

০৮ ১৭

নেপালের প্রত্যন্ত দোলপা অঞ্চলের অধিবাসী তাশি সাংমো। জানিয়েছেন, ১৭ বছর বয়সে ১৪ বছর বয়সি এক প্রতিবেশীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি তাঁর স্বামীর ছোট ভাইকেও বিয়ে করছিলেন। তাঁর স্বামীর ভাই পাসাং, কোনও দ্বিমত ছাড়াই দাদার স্ত্রীকে পত্নীরূপে গ্রহণ করেছিলেন।

০৯ ১৭

দোলপা সম্প্রদায়ভুক্তেরা নেপালের ৪ হাজার মিটার উঁচু একটি গ্রামে বাস করেন। সেখানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কঠোর। জমি ও সম্পত্তির বিভাজন এড়াতেই মূলত নারীদের বহু পতি থাকার প্রথাটিকে মান্যতা দেওয়া হয়। এই গোষ্ঠীতে পরিবারের সন্তানেরা তাঁদের মায়ের সমস্ত স্বামীকে বাবা বলে ডাকে। নেপালের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এলাকায় ভোটে, শেরপা, নিউবি এবং অন্য উপজাতিদের মধ্যেও এই ধরনের বিবাহ প্রচলিত।

১০ ১৭

হিমালয়ের অপর প্রান্তে, আরও একটি দেশে মহিলাদের বহু বিবাহের রীতি প্রচলিত রয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে এই রীতি প্রচলিত রয়েছে তাঁদের মধ্যে। পুরনো এক রীতিকে মেনে নিয়ে তিব্বতের একাধিক সম্প্রদায়ের নারীদের মধ্যে বহু পতি থাকার ঘটনাকে সামাজিক ভাবে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়।

১১ ১৭

সমস্ত তিব্বতি অঞ্চলে বহুবিবাহ প্রথা বিদ্যমান। তবে বিশেষ করে সাং এবং খামের কিছু গ্রামীণ অঞ্চলে এটি একেবারে সাধারণ ঘটনা। বেশ কিছু বছর আগে কয়েকটি গ্রামের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ২০-৫০ শতাংশ পরিবারের মধ্যে দুই বা তার বেশি ভাইদের ঘরনি হয়েছেন তিব্বতি রমণীরা।

১২ ১৭

গবেষণায় প্রকাশিত, তিব্বতে শিশুকন্যা হত্যার প্রথা প্রচলিত ছিল। বিয়ের উপযুক্ত পাত্রীর অভাবের কারণে বহুপতিত্বের ধারণার উদ্ভব হয়। অত্যন্ত উচ্চভূমিতে অবস্থানের ফলে অনুর্বর দেশটিতে সংসারের সদস্য বৃদ্ধি করা না খেয়ে আত্মহত্যা করার নামান্তর। তাই তিব্বতিদের মধ্যে নারীদের বহুবিবাহ স্বীকৃতি লাভ করে।

১৩ ১৭

চিনের ইউনানের মওসু গোষ্ঠীর মধ্যে এক রাতের বিবাহ প্রচলিত রয়েছে। সেখানে নারীরা একাধিক স্বামী বা যৌনসঙ্গী বেছে নিতে পারেন। বাবার পরিচয়ে সন্তানদের পরিচিত হতে হয় না। বুদ্ধের উপাসক এই উপজাতির মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। পুরুষদের ভূমিকা মূলত সন্তান জন্মদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

১৪ ১৭

মওসুদের সমাজে অবাধ যৌনতাকে কলঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত করা হয় না। পুরুষদের উপর নির্ভরতা ছাড়াই স্বাধীন ভাবে সম্পর্ক বেছে নেওয়ার এবং শেষ করার ক্ষমতা নারীদের হাতেই রয়েছে। মওসু রমণীদের সঙ্গী বা স্বামী বেছে নেওয়ার হলে রাতে পুরুষদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ভোর হওয়ার আগেই তাঁরা চলে যান। কোনও বিবাহ অনুষ্ঠান, একত্রবাস বা অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা নেই।

১৫ ১৭

স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাস করে, ১৩ বছরের জন্য রাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়ে পাণ্ডবেরা কিন্নৌরে লুকিয়ে ছিলেন। সেই থেকেই নাকি এই অঞ্চলে মহিলাদের বহুবিবাহের প্রচলন। ইন্দো-তিব্বত সীমানার কাছে একটি জেলা হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌর। এখানকার পুরুষেরা নিজেদের পাণ্ডবদের বংশধর মনে করেন। পঞ্চপাণ্ডবের মতো তাঁরাও এক স্ত্রীকে নিয়ে সংসার গড়ে তোলেন।

১৬ ১৭

আধুনিক যুগেও দ্রৌপদীর মতো একাধিক স্বামী নিয়ে সংসার করাকে মান্যতা দেওয়া হয় সেখানে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রীতি আত্মস্থ করার পিছনে প্রাচীন কিন্নৌরদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি একটা বড় কারণ। জমির ভাগ পরিবারের মধ্যেই যাতে থাকে তাই এই সামাজিক প্রথার প্রচলন হয়।

১৭ ১৭

এই প্রথার ফলে ভাইয়ে ভাইয়ে, এমনকি সৎভাইদের মধ্যেও ঐক্য বজায় থাকে। খুব বড় পরিবার হলে তাতে পুরুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কোনও মহিলা যাতে বিধবা না থাকেন তা নিশ্চিত করার জন্য পরিবারে সমস্ত ভাইদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় এক জন তরুণীকেই।

সব ছবি: সংগৃহীত ও এআই সহায়তায় প্রণীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement