Cod War History

খাবারের একটি পদ নিয়ে দুই দেশের যুদ্ধ! স্রেফ হুমকি দিয়েই ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করে ‘আগুন আর বরফের দেশ’

‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ নিয়ে যুদ্ধ বাধে ইংল্যান্ড বনাম আইসল্যান্ডের। কেউ কাউকে জায়গা ছাড়তে রাজি ছিল না। শুধু কি খাবারের একটি পদ নিয়ে যুদ্ধ, না কি নেপথ্যে ছিল অন্য কারণ?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৩৪
Share:
০১ ২১

রেস্তরাঁমুখী হলে খাবারের তালিকায় আর কিছু থাক না থাক ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ থাকেই? না পেলেই যেন মনটা ভার লাগে? কিন্তু আপনি কি জানেন এই ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ নিয়েই একসময় যুদ্ধ করেছিল ব্রিটেন এবং আইসল্যান্ড!

০২ ২১

কলকাতা-সহ আরও নানা জায়গায় এখন ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ পদটি তৈরি হয় বিভিন্ন রকম মাছ দিয়ে। এখন সাধারণত ভেটকি অথবা বাসা মাছ দিয়েই ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ পদটি রান্না করা হয়। কিন্তু এই পদ যখন প্রথম তৈরি হয়েছিল তা রান্না হত কড মাছ দিয়ে।

Advertisement
০৩ ২১

১৮৬০ সালে প্রথম ইংল্যান্ডে ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ বিক্রি হতে শুরু করে। কয়েক দশকের মধ্যেই ইংল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ হয়ে যায় এটি। সেখানকার মানুষের এত প্রিয় খাবার হয়ে ওঠে যে ১৯৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ এই পদ বিক্রির দোকান খুলে ফেলেন।

০৪ ২১

মূলত কড মাছ দিয়েই তৈরি হত এই পদটি। ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’-এর ব্যবসা শুরুর দিকে মাছ জোগান দিতে তেমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি ইংল্যান্ডকে। কিন্তু মানুষের মধ্যে যত এই পদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ততই সমস্যা বেড়েছে।

০৫ ২১

একসময় ইংল্যান্ডের জনপ্রিয় ব্যবসা হয়ে ওঠে খাবারের দোকান। আর সেখানে ওই বিশেষ পদটি থাকতই থাকত। কিন্তু এত মাছের জোগান কোথা থেকে আসছিল?

০৬ ২১

এখানেই শুরু হয় মূল সংঘাত। আসলে, এই বিপুল পরিমাণে মাছের জোগান আসত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে। আর উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের খুব কাছাকাছি দু’টি দেশ হল ইংল্যান্ড ও আইসল্যান্ড।

০৭ ২১

আইসল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে জলপথে সরাসরি দূরত্ব ছিল ১২০০ কিলোমিটার। এই দুই দেশই উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় একই জায়গা থেকে মাছ ধরত।

০৮ ২১

এই কারণে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ে আইসল্যান্ড। কারণ, ইংল্যান্ডের প্রধান জীবিকা মাছ-নির্ভর না হলেও আইসল্যান্ডবাসীর কাছে মাছের ব্যবসাই ছিল তাঁদের প্রধান জীবিকা।

০৯ ২১

আইসল্যান্ডে মাছের রফতানি থেকে শুরু করে যা যা ব্যবসা হত, বেশির ভাগই মাছকেন্দ্রিক ছিল। এ বার বছরের পর বছর ইংল্যান্ড থেকে আইসল্যান্ডের কাছাকাছি ট্রলার নিয়ে অত্যধিক মাছ ধরার কারণে আইসল্যান্ডে স্বাভাবিক ভাবেই মাছের সঙ্কট দেখা দেয়।

১০ ২১

আইসল্যান্ডের অর্থনীতির প্রায় ৯০ শতাংশ মাছের উপর নির্ভরশীল। আর কড মাছ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যেত আইসল্যান্ডের উপকূল বরাবরই। তাই আইসল্যান্ড প্রশাসনের কাছে ব্রিটিশদের মাছ ধরা বেশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠছিল।

১১ ২১

আইসল্যান্ড প্রশাসন চিন্তা করে, এ ভাবে মাছের মজুত কমতে থাকলে দেশের অর্থনীতিও ভেঙে পড়বে। কারণ তাঁদের কাছে মাছের ব্যবসা ছাড়া আর অন্য কিছু করার তেমন উপায় ছিল না।

১২ ২১

অন্য দিকে ইংল্যান্ডও ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ ব্যবসাকে বৃদ্ধি করতে মরিয়া হয়ে পড়ে। তখন আইসল্যান্ড প্রশাসন সরাসরি তাঁদের সমস্যার কথা ইংল্যান্ডকে জানায়। কিন্তু ইংল্যান্ডের জবাব ছিল, এই মহাসাগরের জল কোনও দেশের নিজস্ব নয়। এটি আন্তর্জাতিক মহাসাগর, যে কোনও দেশই ব্যবহার করতে পারে।

১৩ ২১

এমন পরিস্থিতিতে প্রথম বার ১৯৫৮ সালে আইসল্যান্ড ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে। জলসীমানার পরিধি আইসল্যান্ডের উপকূল বরাবর সাত কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়।

১৪ ২১

নিয়ম চালু হয়, ওই সাত কিলোমিটারের মধ্যে আইসল্যান্ড ছাড়া অন্য কোনও দেশ মাছ ধরতে পারবে না। নিয়ম যাতে মানা হয় সে কারণে নৌসেনার জাহাজও নামানো হয় আটলান্টিক মহাসাগরে।

১৫ ২১

এই জলসীমানার পরিধি বেঁধে দেওয়ায় যে ইংল্যান্ডের সমস্যা হতে পারে তা প্রথম দিকে বোঝা যায়নি। উপকূলের কাছাকাছি ইংল্যান্ডের মাছ ধরার জাল এলেই আইসল্যান্ডের নৌসেনা সেই জাল কেটে দিত। এমনকি বেশ কয়েক বার ইংল্যান্ডের ট্রলারে সরাসরি ধাক্কা দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়।

১৬ ২১

ইংল্যান্ডকে বাধা দেওয়ার জন্য ফের উপকূলের জলসীমানা বাড়িয়ে দেয় আইসল্যান্ড। ৭ কিলোমিটার থেকে ২২ কিলোমিটার করে দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রে ব্রিটেনের সাময়িক অসুবিধা হলেও পরে তারা আইসল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দিয়েছিল।

১৭ ২১

এত দিন ঠান্ডা ভাবেই চলছি সংঘাত। কোনও সরাসরি আক্রমণ নয়, চুক্তি নয়, মৌখিক ঝগড়াও নয়। শুধু সীমানা বৃদ্ধি করেই নিজেদের ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখছিল আইসল্যান্ড।

১৮ ২১

তবে ১৯৭৬ সালে আইসল্যান্ড সরকারের একটা সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভাবে চটিয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে। আইসল্যান্ড ফের নিজের জলসীমানা বৃদ্ধি করার কথা ঘোষণা করে। এ বার ২২ থেকে ৪০ বা ৫০ নয়, সটান ৮০ কিলোমিটার জায়গা বাড়িয়ে দেয় তারা।

১৯ ২১

আর তাতেই খেপে যায় ইংল্যান্ড প্রশাসন। ব্রিটিশ প্রশাসনও তাঁদের নৌসেনাকে খবর দেয়। আইসল্যান্ডের কাছে তাঁদের যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। সরাসরি সংঘাত লেগে যায় আইসল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের মধ্যে। এই সংঘাতই ইতিহাসের পাতায় ‘কড যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

২০ ২১

যদিও বেশি দিন এই সংঘাত চলেনি। আইসল্যান্ড হুমকি দিয়েছিল তারা নেটো (নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজ়েশন) ত্যাগ করবে। আইসল্যান্ডের এই হুমকি যুক্তরাজ্য এবং নেটোর জন্য একটি বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

২১ ২১

কারণ নেটো এবং ইংল্যান্ডের কাছে আইসল্যান্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটি। সেখানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবমেরিন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে তারা। তাই দুই দেশই মধ্যস্থতায় আসে এবং এই সংঘাতে জিতে যায় আইসল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ‘ফিশ অ্যান্ড চিপস’ ব্যবসায়ীদের সাময়িক সমস্যা হলেও পরে তাঁরা সামাল দিয়ে দিয়েছিলেন।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement