Cash for Query

মহুয়া বিতর্কের ২৫ দিন, কী থেকে কী হল, এক নজরে

১৫ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর, টানা ২৫ দিন ধরে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতি তপ্ত থেকেছে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে। অবশেষে মহুয়াকে বহিষ্কারের সুপারিশ করল এথিক্স কমিটি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ২১:০৩
Share:
০১ ৩৯

বিতর্কের শুরুটা হয়েছিল ১৫ অক্টোবর। পুজোর ঠিক আগে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সংসদে ‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ তোলার অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার এবং নগদ টাকা নিয়ে সংসদে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ জানিয়ে পৃথক ভাবে সিবিআই প্রধানকে চিঠি লেখেন মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। তার পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত ২৯ দিন ধরে এই বিতর্ক আন্দোলিত করেছে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিকে।

০২ ৩৯

১৫ অক্টোবর: অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া, এই অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে চিঠি পাঠান বিজেপি সাংসদ দুবে। সেই চিঠিতে অবিলম্বে কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করা হয়। তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ারও আবেদন করেন দুবে। বিজেপি সাংসদের বক্তব্য ছিল, হীরানন্দানির কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নিয়ে সংসদে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জুড়ে দিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। একই সঙ্গে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দেন আইনজীবী দেহাদ্রাই।

Advertisement
০৩ ৩৯

অভিযোগ উঠতেই ফোঁস করে ওঠেন মহুয়া। এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে সে দিনই তিনি লেখেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠী যদি আমাকে চুপ করানোর জন্য বা আমাকে টেনে নীচে নামানোর জন্য সঙ্ঘবাদী আর ভুয়ো ডিগ্রিওয়ালাদের মিথ্যা নথিতে বিশ্বাস করবে বলে ঠিক করে থাকে, তবে আমি বলব, আপনাদের সময় নষ্ট করবেন না। বরং আইনজীবীদের ভাল কাজে ব্যবহার করুন।’’

০৪ ৩৯

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালেও মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের দাবি তুলেছিলেন দুবে। এনেছিলেন স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগও। নেপথ্যে ছিল দুবের ‘হলফনামা’। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা আসনের সাংসদ দুবের তরফে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে জমা দেওয়া হলফনামায় যে শিক্ষাগত যোগ্যতার উল্লেখ রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া।

০৫ ৩৯

১৬ অক্টোবর: বিতর্ক দানা বাঁধছে দেখেই বিবৃতি দেয় আদানি গোষ্ঠী। বলা হয়, তাদের ‘নাম, সুখ্যাতি এবং বাজারের অবস্থান’ নষ্ট করার জন্য ‘অনেকে বাড়তি কাজ করছেন’।

০৬ ৩৯

১৭ অক্টোবর: তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে এথিক্স কমিটিকে দায়িত্ব দেন লোকসভার স্পিকার। এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে এথিক্স কমিটিই তদন্ত করে। অনেক সময়ে আবার বিশেষ কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়।

০৭ ৩৯

১৮ অক্টোবর: নতুন অভিযোগ তোলেন বিজেপি সাংসদ দুবে। প্রত্যেক সাংসদের একটি করে লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড রয়েছে। লোকসভার সচিবালয়ে কিছু জানাতে গেলে এই মাধ্যমে করতে হয়। দুবের অভিযোগ ছিল, মহুয়া তাঁর লগ ইন আইডি ও পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছিলেন। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে প্রশ্ন লিখে দিতেন। যা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।

০৮ ৩৯

১৯ অক্টোবর: প্রথম সামনে আসে দুবাইয়ের ব্যবসায়ী হীরানন্দানির ‘হলফনামা’। যেখানে স্বীকার করে নেওয়া হয়, তিনি মহুয়াকে ব্যবহার করে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলিয়েছিলেন। মহুয়া ওই শিল্পপতিকে সংসদের লগ ইন আইডি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন দুবে। তা-ও স্বীকার করেন হীরানন্দানি। মহুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপহার নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তাতেও মান্যতা দেওয়া হয় হীরানন্দানির ‘হলফনামা’য়। যা দেখে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে এই হলফনামা লেখায়নি তো?’’ গোপন নথি কী ভাবে প্রকাশ্যে এল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মহুয়া।

০৯ ৩৯

২০ অক্টোবর: দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন মহুয়া এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘সিবিআই বা সংসদের এথিক্স কমিটি (যেখানে বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা রয়েছে) যদি ডাকে, তাদের জবাব দেব। তার আগে আদানি-নির্দেশিত সংবাদমাধ্যম কী বলল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় বা আগ্রহ কোনওটাই নেই।’’

১০ ৩৯

প্রসঙ্গত, এই পাঁচ দিনে বিতর্ক যখন বেশ ভাল রকম সরগরম, তখনও তৃণমূল দলীয় ভাবে মহুয়ার পাশে দাঁড়ায়নি। কুণাল ঘোষ প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘মহুয়ার বিষয়ে তৃণমূলের কোনও বক্তব্য নেই। দল এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবে না।’’

১১ ৩৯

কুণাল যে দিন মহুয়ার বিষয়টিকে দলের থেকে পৃথক করে দেখাতে চেয়েছিলেন, সে দিনই আবার তৃণমূল সাংসদের পাশে দাঁড়ান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরী। বহরমপুরের সাংসদ কৃষ্ণনগর সাংসদের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি মনে করি না মহুয়া কোনও ভুল করেছেন। কেউ প্রশ্ন করলেই তাঁকে চুপ করিয়ে দেওয়া হবে, এটা কোনও সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ হতে পারে না।’’

১২ ৩৯

সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রথমে মুখ খোলেন এথিক্স কমিটির প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকর। তিনি বলেন, ‘‘সংদের লগ ইন আইডি সাংসদ বাদ দিয়ে অন্য কারও ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ। যে অভিযোগ উঠেছে, তা সংসদের ইতিহাসে নজিরবিহীন।’’ এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যানের সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলা নিয়ে সরব হন মহুয়া।

১৩ ৩৯

২১ অক্টোবর: দুবে অভিযোগ করেন, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র যখন ভারতে, তখন দুবাই থেকে তাঁর সংসদ আইডিতে লগ ইন করা হয়েছে। এতে বিঘ্নিত হয়েছে গোটা দেশের নিরাপত্তা। তাঁকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মহুয়া বলেন, ‘‘সাংসদদের বিষয়ে সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আনুক এনআইসি (ন্যাশনাল ইনফরমেটিকস সেন্টার)। দেখাক, ব্যক্তিগত সচিব এবং গবেষক বা ইন্টার্ন বা কর্মীরা আইডি দিয়ে যখন সংসদে লগ ইন করেন, তখন সেখানে সাংসদেরাও উপস্থিত থাকেন।’’

১৪ ৩৯

মহুয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে লোকপালকে চিঠি দেন বিজেপি সাংসদ দুবে। তাঁর দাবি, কবে এবং কোথায় কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ ‘ঘুষ’ নিয়েছিলেন, সে সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাঁর কাছে আছে। এমনকি, সেই ঘুষের অঙ্কও তিনি পেয়েছেন বলে দাবি করেন বিজেপি সাংসদ।

১৫ ৩৯

২২ অক্টোবর: মহুয়া বিতর্কে তৃণমূলের তরফে বিবৃতি দেন রাজ্যসভার সাংসদ তথা দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে সংসদের এথিক্স কমিটি। তদন্ত শেষ হলে এ বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে তৃণমূল।’’

১৬ ৩৯

ডেরেকের উল্টো পথে হেঁটে সরাসরি মহুয়ার পাশে দাঁড়ান রাজ্যের মন্ত্রী ববি হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, মহুয়ার কণ্ঠরোধ করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মহুয়া যে হেতু ভোকাল (সরব) বেশি, তাই এ রকম করা হচ্ছে।’’ তিনি দাবি করেন, মহুয়া বিজেপির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন বলেই তাঁকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। ফিরহাদের প্রশ্ন ছিল, ‘‘প্রথম বার নরেন্দ্র মোদীর ভোটপ্রচারের জন্য প্লেন, হেলিকপ্টার কারা দিয়েছিল? আদানিকে বাঁচানোর ব্যাপারে বিজেপি সাংসদের এত উৎসাহ কেন? নিশ্চিত ভাবে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’’

১৭ ৩৯

২৪ অক্টোবর: সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন ব্যহসায়ী হীরানন্দানি। তিনি বলেন, ‘‘দুবাইয়ে বসে মহুয়া মৈত্রের সাংসদ আইডি ব্যবহার করে সংসদের ওয়েবসাইটে প্রশ্ন পোস্ট করেছিলাম। আমি গুরুতর ভুল করেছি। বিষয়টি দুঃখজনক।’’ তাঁর এ-ও বক্তব্য ছিল, ‘‘কেউ আমাকে হলফনামা দিতে চাপ দেননি।’’

১৮ ৩৯

২৫ অক্টোবর: বিজেপি সাংসদ দুবেকে চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। চিঠিতে বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন, দুবে আইডি, পাসওয়ার্ড নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা অত্যন্ত গুরুতর এবং সংসদের এথিক্স কমিটিকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে সাহায্য করবে ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স সেন্টার (এনআইসি)।

১৯ ৩৯

সরাসরি না-বললেও মহুয়ার পাশে দাঁড়ান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘এখন এত হইচই কেন? কারণ, আদানির নাম এসেছে, তাই। আদানি, মোদী (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী), গুজরাত সব এক জায়গায় এনে দাঁড় করানো হচ্ছে। আদানির নামে প্রশ্ন উঠলেই তড়িঘড়ি সব হয়। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। আর যে এথিক্স কমিটি নারদকাণ্ডের পর ১০ বছর ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে, রাতারাতি তারাই তদন্ত শুরু করে দিল! বেছে বেছে করা হচ্ছে।’’

২০ ৩৯

২৬ অক্টোবর: এথিক্স কমিটি প্রথম ডেকে পাঠায় বিজেপি সাংসদ দুবে এবং মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব দেহাদ্রাইকে। কেন অভিযুক্তকে না ডেকে আগে অভিযোগকারীদের ডাকা হয়েছে তা নিয়ে তপ্ত হয় এথিক্স কমিটির বৈঠক। ওই বৈঠক বাতিলের দাবিতে সরব হন বিরোধী সাংসদেরা। এমনকি, ভোটাভুটিও হয়। তাতে ফল হয় ৫-৫। শেষে চেয়ারম্যান সোনকর ভোটাধিকার প্রয়োগ করে বৈঠক চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। সে দিনই এথিক্স কমিটি মহুয়াকে জানায়, ৩১ অক্টোবর হাজিরা দিতে হবে মহুয়াকে। বেলা ১১টায় তাঁকে হাজির হতে বলা হয়।

২১ ৩৯

২৭ অক্টোবর: এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখে মহুয়া জানান, ৩১ অক্টোবর তিনি যেতে পারবেন না। কারণ হিসাবে তিনি লেখেন, ৩০ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় বিজয়া সম্মিলনী পূর্বনির্ধারিত। ৫ নভেম্বরের পর তাঁকে কমিটির সুবিধা অনুযায়ী যে কোনও দিন, যে কোনও সময় ডাকা হলে তিনি হাজির হবেন।

২২ ৩৯

মহুয়ার ওই চিঠিতে আরও প্রশ্ন ছিল। সেখানে দুবে শব্দটি ইংরেজিতে ভুল টাইপ হয়ে দুবাই হয়েছিল। তা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে মহুয়াকে তীব্র ‘বিদ্রুপ’ করেন বিজেপি সাংসদ দুবে। তিনি লেখেন, ‘‘অভিযুক্ত সাংসদ দুবাইয়ের প্রতি এতটাই আসক্ত যে, এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যানকে লেখা চিঠিতে আমার নাম বদলে ‘দুবাই’ করে দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁর মানসিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। হায় রে কপাল!’’

২৩ ৩৯

ওই সন্ধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে মহুয়া স্বীকার করে নেন, তিনি ব্যবসায়ী হীরানন্দানির কাছ থেকে কয়েক বছর আগে আইশ্যাডো আর লিপস্টিক উপহার পেয়েছিলেন জন্মদিনে। তবে দু’কোটি টাকা নগদ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ‘ভিত্তিহীন’ বলেই ওই সাক্ষাৎকারে দাবি করেন মহুয়া। তিনি এ-ও দাবি করেন, একটি বিদেশি প্রসাধনী প্রস্তুতকারক সংস্থার ওই সামগ্রী তাঁকে হীরানন্দানি কিনে দিয়েছিলেন জন্মদিনের উপহার হিসাবে। দুবাই বিমানবন্দর থেকে কেনা ওই সামগ্রী ছিল নিঃশুল্ক (ডিউটি ফ্রি)। মহুয়া আরও জানান, মুম্বই গেলে বন্ধু হিসাবে হীরানন্দানি বিমানবন্দরে তাঁর জন্য গাড়ি পাঠাতেন। ভবিষ্যতে মুম্বই গেলেও তিনি বন্ধু হীরানন্দানিকে বলবেন।

২৪ ৩৯

২৮ অক্টোবর: এথিক্স কমিটি ফের চিঠি দেয় মহুয়াকে। সেখানে বলা হয়, ২ নভেম্বর সকাল ১১টায় সাংসদকে হাজিরা দিতে হবে।

২৫ ৩৯

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল এথিক্স কমিটির তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘মহুয়ার ব্যাপারে দলের অবস্থান একই রয়েছে। ডেরেক ও’ব্রায়েন তা আগেই বলেছেন। কিন্তু এথিক্স কমিটির এত তাড়া কেন? মহুয়া তো বলেননি যে, তিনি যাবেন না!’’ কুণালের এ-ও বক্তব্য ছিল, ‘‘মহুয়া এক জন সাংসদ। সবে পুজো মিটেছে। তাঁর কেন্দ্রে ১০ খানা কর্মসূচি থাকতে পারে। এক বার চিঠি দিয়ে জানানোর পর ফের তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘এথিক্স কমিটির যদি এতই তাড়া, তা হলে শুভেন্দুর ঘুষকাণ্ডের পর তাঁকে ডাকেননি কেন? মহুয়ার বেলায় ছ’দিন তর সইছে না। আর শুভেন্দুর বেলায় কেন ছ’বছর ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন? শুভেন্দুর নাম তো সিবিআইয়ের এফআইআরে রয়েছে।’’

২৬ ৩৯

৩০ অক্টোবর: অধীর, সেলিমের পর মহুয়ার পাশে দাঁড়ালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, ‘‘কে কাকে কী উপহার দিয়েছেন, এই সংক্রান্ত বহু অভিযোগ এথিক্স কমিটির কাছে আছে। হঠাৎ করে একটি মামলার তদন্তে কেন তৎপর হল এথিক্স কমিটি? কারণ, আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বাকিরা কি উপহার নেন না?’’

২৭ ৩৯

৩১ অক্টোবর: মহুয়া চিঠি দিয়ে এথিক্স কমিটিকে জানান, তিনি ২ নভেম্বর হাজিরা দেবেন। কিন্তু অনুরোধ সত্ত্বেও কমিটি তাঁর উপর চাপিয়ে দিয়েছে। ওই চিঠিতেই এথিক্স কমিটির উদ্দেশে এক ডজন প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া। দাবি করেছিলেন, তিনি হীরানন্দানি ও দেহাদ্রাইকে মুখোমুখি প্রশ্ন করতে চান।

২৮ ৩৯

১ নভেম্বর: এথিক্স কমিটির সামনে দেহাদ্রাইকে জেরা করতে চেয়েছিলেন মহুয়া। সেই প্রসঙ্গে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেহাদ্রাই বলেন, “আমি কাউকে ভয় পাই না। আমি কারও ভয়ে চুপ করেও থাকব না। আমাকে এ ভাবে দমানোও যাবে না। যা সত্য সেটাই প্রতিষ্ঠিত হবে। সারা দেশ দেখছে, কে কী করেছেন! এবং এখন কে কী করছেন!”

২৯ ৩৯

২ নভেম্বর: কমিটির সামনে হাজিরা দেন মহুয়া। পরনে ছিল লাল শাড়ি, হাতে ছিল তিনটি ব্যাগ। যার মধ্যে একটি নামী বিদেশি সংস্থার। নির্ধারিত সময়েই বৈঠকে পৌঁছন তৃণমূল সাংসদ। কিন্তু বৈঠকের দ্বিতীয়ার্ধেই তুলকালাম কাণ্ড বাধে। বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন মহুয়া। তাঁর সঙ্গে বৈঠক ছাড়েন বেশ কয়েক জন বিরোধী সাংসদও। মহুয়ার অভিযোগ ছিল তাঁকে ব্যক্তিগত ও কুৎসিত প্রশ্ন করা হচ্ছিল।

৩০ ৩৯

ওই রাতেই লোকসভার স্পিকারকে চিঠি লিখে মহুয়া জানান, এথিক্স কমিটির বৈঠকে মৌখিক ভাবে তাঁর ‘বস্ত্রহরণ’ করা হয়েছে। চিঠিতে মহুয়া লেখেন, আগের রাতে কার সঙ্গে, কত বার ফোনে কথা বলেছেন, তার কল রেকর্ডের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান কমিটির চেয়ারম্যান।

৩১ ৩৯

৩ নভেম্বর: মহুয়ার পাশে দাঁড়ান বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। তিনি বলেন, ‘‘মহুয়া খুব স্ট্রং মহিলা এবং স্ট্রং পার্লামেন্টারিয়ান (দৃঢ় চরিত্রের মহিলা এবং কড়া সাংসদ)। খুব জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি। মহুয়ার জনপ্রিয়তাও এত ভাবে আক্রমণ করার একটা কারণ বলে আমার মনে হয়। এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে বলে অনেক বেশি আক্রমণ ওকে লক্ষ্য করে চলছে। এথিক্স কমিটি যে প্রশ্ন করেছে তাতে আপত্তি তো বিরোধীরা সবাই করেছেন, একা মহুয়া তো নয়!’’

৩২ ৩৯

একই দিনে মহুয়ার পক্ষে মুখ খোলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এটাকে (টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ) বড় ভাবে নিয়েছে। কারণ আদানি এবং মোদীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছে মহুয়া।’’ তাঁর আরও বক্তব্য ছিল, ‘‘দলের রাস্তা মেনে উচ্চতর পর্যায়ে সুর চড়া করে ও। সাংসদ হিসেবে ও (মহুয়া) সুনাম অর্জন করেছে। দলতন্ত্র মেনেই কাজ করেছে।’’

৩৩ ৩৯

৫ নভেম্বর: প্রথমে জানা যায় ৭ নভেম্বর বৈঠকে বসবে এথিক্স কমিটি। সেই বৈঠকেই মহুয়ার বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে সে বিষয়ে কমিটি তাদের রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে বলে ঠিক ছিল।

৩৪ ৩৯

৬ নভেম্বর: বৈঠক পিছিয়ে দেওয়া হয়। ৭ তারিখের বদলে ৯ তারিখ বৈঠকে বসবে বলে জানায় লোকসভার এথিক্স কমিটি। যা নিয়ে খোঁচা দিতে গিয়ে মহুয়া বলেছিলেন, ‘‘মোদী এবং আদানি এতটা ভীত!’’

৩৫ ৩৯

৮ নভেম্বর: মহুয়ার প্রাক্তন বান্ধব দেহাদ্রাই দিল্লির থানায় সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। দায়ের করা অভিযোগপত্রে তিনি লেখেন, ‘‘গত ৫ নভেম্বর সকাল ১১টা নাগাদ এবং ৬ নভেম্বর সকাল ৯টা নাগাদ সাংসদ মহুয়া মৈত্র কাউকে না জানিয়েই আমার বাড়িতে আসেন। এ ভাবে (মহুয়া) মৈত্রের আমার বাড়িতে আসার কারণ হিসাবে মনে হচ্ছে, তিনি আমার বিরুদ্ধে আবার কোনও ভুয়ো প্রতারণামূলক অভিযোগ দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’’

৩৬ ৩৯

সন্ধ্যায় এথিক্স কমিটির খসড়া রিপোর্ট ‘ফাঁস’ হয়ে যায় একটি টিভি চ্যানেলে। সেখানে দাবি করা হয়, এথিক্স কমিটি মহুয়ার সাংসদ পদ খারিজের ব্যাপারে সুপারিশ করবে লোকসভার স্পিকারের কাছে।

৩৭ ৩৯

৯ নভেম্বর: ইডি দফতর থেকে বেরিয়ে মহুয়া প্রসঙ্গে প্রথম বার মুখ খোলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মহুয়া নিজের লড়াই নিজেই লড়তে পারেন।” সেই সঙ্গে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির এমন অনেক সাংসদ রয়েছেন, যাঁদের বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনা হয়েছে, কিন্তু সে সবের এখনও কোনও শুনানিই হয়নি।’’

৩৮ ৩৯

বৃহস্পতিবার সকালে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লেখেন মহুয়া। তাতে তিনি প্রশ্ন তোলেন, এথিক্স কমিটির গোপন রিপোর্ট কী ভাবে একটি নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমের হাতে পৌঁছে গেল তা খতিয়ে দেখা হোক।

৩৯ ৩৯

বৃহস্পতিবার বিকেলে জানা যায়, এথিক্স কমিটি মহুয়াকে সংসদ থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে। পক্ষে ভোট পড়ে ছ’টি, বিপক্ষে চারটি। মহুয়া তার প্রতিক্রিয়ায় আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘জানাই ছিল।’’ তবে এথিক্স কমিটি বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও তা ‘সিদ্ধান্ত’ নয়। স্পিকার এই প্রস্তাব পেশ করবেন সংসদের আগামী অধিবেশনে। বিরোধীরা আলোচনা চাইলে তা আদৌ স্পিকার গ্রহণ করবেন কি না সেটি তাঁর এক্তিয়ারের বিষয়। তবে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, নিয়ম এমনটাই।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement