Gujarat Crime Story

এক জন স্বামী, অন্য জন স্ত্রীকে খুন করে জেলে! সেখানেই প্রেম, জেল পালিয়ে বিয়েও করেন, শেষরক্ষা হল না খুনে দম্পতির

ভালসাদ পুলিশ জানিয়েছে, কিন্নরিকে ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি আর ফেরেননি। মনসুরি প্যারোলে মুক্তি পান ২০১৮ সালের ২৮ মে। তিনিও আর জেলে ফিরে আসেননি।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১১
Share:
০১ ২১

১৫ বছরেরও আগে এক জন স্ত্রীকে খুন করে জেলে যান। অন্য জন জেলে যান স্বামীকে খুন করে। জেলেই আলাপ হয় তাঁদের। আলাপ গড়িয়ে প্রেম হয়। প্যারোলে মুক্তি পান। তবে দু’জনেই আর জেলে ফিরে আসেননি। গোপনে বিয়ে করেন তাঁরা।

০২ ২১

ছ’বছর পর সেই অপরাধী দম্পতিকে বুধবার ফের পাকড়াও করল গুজরাত পুলিশ। মঙ্গলবার গুজরাত পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি) হরিয়ানার পানিপত থেকে গ্রেফতার করে দম্পতিকে। খবর, তাঁদের পাঁচ বছরের পুত্রসন্তানকেও সুরত কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়েছে। কারাগারের একটি পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে তাকে।

Advertisement
০৩ ২১

দুই অপরাধীর এই প্রেমের সূত্রপাত সুরত জেলেই। ১৫ বছরেরও বেশি সময় আগে সুরত জেলে সাজা ভোগ করতে আসেন বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ রিয়াজ় মনসুরি এবং গুজরাতের ভালসাদের বাসিন্দা কিন্নরি পটেল।

০৪ ২১

২০০৯ সালে সুরতের লিম্বায়াত এলাকায় স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল মনসুরির বিরুদ্ধে। পরে গ্রেফতার হন তিনি।

০৫ ২১

বিহারের বক্সার থেকে কর্মসূত্রে গুজরাতে এসেছিলেন মনসুরি। থাকতেন সুরতের লিম্বায়াত এলাকায়। সেখানেই স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর মায়ের বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ ওঠে।

০৬ ২১

২০১২ সালের জুন মাসে সুরত দায়রা আদালত দু’জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাঁদের ঠাঁই হয় সুরত জেলে। বয়স এবং অসুস্থতার কারণে মনসুরির মাকে ২০১৪ সালে ছেড়ে দেওয়া হয়।

০৭ ২১

অন্য দিকে, ২০১০ সালে প্রেমিক মনোজ পটেলের সঙ্গে যোগসাজশ করে স্বামী হিতেশ পটেলকে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন কিন্নরি। গাড়ি করে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময়ই হিতেশকে কোপানো হয়।

০৮ ২১

অপরাধ সংঘটনের পর কিন্নরিদের গাড়ি একটি দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা খায়। সে সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় কিন্নরির তৎকালীন প্রেমিক মনোজের। কিন্নরি এবং তাঁর অপর এক সঙ্গী বাসু গা ঢাকা দেন। পরে কিন্নরি ধরা পড়েন।

০৯ ২১

কিন্নরির বিরুদ্ধে জোড়া খুনের মামলা দায়ের হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন), ২০১ (প্রমাণ লোপাট), ৫১১ (যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা), ১২০ (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ভালসাদ জেলা ও দায়রা আদালত ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর কিন্নরি এবং বাসুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায়। সুরত কারাগারে মহিলাদের ব্যারিকেডে পাঠানো হয় কিন্নরিকে।

১০ ২১

এর পরে শুরু হয় মনসুরি এবং কিন্নরির প্রেমকাহিনি। সুরত জেলে বন্দিদের তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ থাকত। সেই জায়গাতেই প্রথম আলাপ হয় দু’জনের। আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে। পরে একে অপরের প্রেমেও পড়েন তাঁরা। কিন্তু নিজেদের সম্পর্কের কথা ঘুণাক্ষরেও কাউকে টের পেতে দেননি মনসুরি এবং কিন্নরি।

১১ ২১

ভালসাদ পুলিশ জানিয়েছে, কিন্নরিকে ২০১৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি আর ফেরেননি। মনসুরি প্যারোলে মুক্তি পান ২০১৮ সালের ২৮ মে। তিনিও আর জেলে ফিরে আসেননি। পুলিশ পরে খোঁজ নিয়ে দেখে মনসুরি এবং কিন্নরি— দু’জনেই নিজের নিজের বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।

১২ ২১

দুই অপরাধীকে খুঁজে বার করতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বক্সার জেলার বেলহারি গ্রামে মনসুরির পৈতৃক বাড়িতে এবং ভালসাদের চিখলা গ্রামে কিন্নরির বাড়িতে খোঁজ চালানো হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।

১৩ ২১

এর পর যথাক্রমে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে কিন্নরি এবং মনসুরির বিরুদ্ধে ভালসাদ গ্রামীণ এবং লিম্বায়ত থানায় কারা আইনের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে সুরাট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।

১৪ ২১

তদন্ত চলাকালীন পুলিশের তদন্তকারী দল জানতে পারে, সুরত জেলের ‘ভিজ়িটর্স রুম’-এ প্রায়ই একসঙ্গে দেখা যেত মনসুরি এবং কিন্নরিকে। জেলে থাকাকালীন তাঁরা সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এবং একসঙ্গেই পালিয়েছেন বলে অনুমান করেন তদন্তকারীরা। এর পরে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়।

১৫ ২১

পুলিশের সন্দেহ হয়, মনসুরির দিদি নুরুন্নিশা পুরো বিষয়টি জানেন। কিন্তু তাঁকে জেরা করা হলেও তিনি মুখ খোলেননি।

১৬ ২১

ভালসাদের পুলিশ আধিকারিক এইউ রোজ় বলেন, ‘‘আমরা নুরুন্নিশার ফোন সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। ১২টি সন্দেহভাজন ফোন নম্বরও খুঁজে বার করি। দেখি, নম্বরগুলি মহম্মদ রিয়াজ় মনসুরির নামে নেওয়া। আরও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হরিয়ানার পানিপতের একটি ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন মনসুরি।’’

১৭ ২১

এর পরে ওই ব্যাঙ্কে খোঁজ করে মনসুরির ঠিকানা জোগা়ড় করে পুলিশ। রোজ় বলেন, ‘‘মহম্মদ রিয়াজ়ের ফোনের রেকর্ড পরীক্ষা করে আমরা জানতে পারি যে তাঁর নম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে গুজরাতের একটি নম্বরে প্রায় ৩০ সেকেন্ডে ধরে ফোন করা হয়েছিল। আমরা নম্বরটি পরীক্ষা করে দেখতে পাই যে সেটি কিন্নরির দিদি নিরালি পটেলের নম্বর। আমরা নিশ্চিত হয়ে যায় যে, মনসুরি এবং কিন্নরি উভয়েই পানিপতে একসঙ্গে রয়েছেন।”

১৮ ২১

সেই খবর পেয়ে ভালসাদ পুলিশের একটি দল হরিয়ানার উদ্দেশে রওনা দেয়। মঙ্গলবার পানিপতে পৌঁছোয় তারা। মঙ্গলবারই পানিপতের বাজার এলাকায় ‘আয়ান এন্টারপ্রাইজ়’ নামে একটি দোকানে অভিযান চালিয়ে কিন্নরি এবং মনসুরিকে গ্রেফতার করা হয়। দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না বলে তাঁদের ৫ বছরের ছেলেকেও সঙ্গে নেন তদন্তকারীরা।

১৯ ২১

পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় মনসুরি এবং কিন্নরি দু’জনেই স্বীকার করেছেন যে, ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর সুরত জেলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার ঘরে আলাপ হয় তাঁদের। এর পর তাঁরা নিয়মিত দেখা করতে থাকেন। একে অপরকে অপরাধের কথাও জানান। ধীরে ধীরে তাঁদের বন্ধুত্ব গাঢ় হয়। সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েন।

২০ ২১

এর পর পরিকল্পনা করে প্যারোলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মনসুরি এবং কিন্নরি। আলাদা আলাদা সময়ে জেল থেকে বেরোন। এর পর একসঙ্গে মনসুরির বক্সারের বাড়িতে চলে যান। সেখানেই বিয়ে করেন।

২১ ২১

২০১৯ সালে হরিয়ানার পানিপতে চলে যান দম্পতি। শীতের পোশাকের দোকানে কাজ শুরু করেন। এক পুত্রসন্তানেরও জন্ম দেন কিন্নরি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পানিপতের বাজার এলাকায় নিজস্ব দোকান শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। আবার সেই সুরত জেলেই ফিরতে হল তাঁদের।

সব ছবি: প্রতীকী এবং সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement