UN on Pakistan

‘প্রেশার কুকার’ পাকিস্তানে ‘আসন্ন অন্ধকার দিন’ নিয়ে সাবধানবাণী, মুনিরের ক্ষমতাবৃদ্ধিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে রাষ্ট্রপুঞ্জও!

পাক সংবিধানের সংশোধনী বিলে মুনিরের জন্য বিশেষ আইনি রক্ষাকবচের বন্দোবস্ত করেছে শরিফের সরকার। পাক সেনা সর্বাধিনায়কের বিরুদ্ধে এখন আর আদালতে কোনও মামলাও করা যাবে না।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৫১
Share:
০১ ১৭

সাংবিধানিক সংশোধনীর ‘সুদূরপ্রসারী পরিণতি’ নিয়ে পাকিস্তানকে সতর্ক করল রাষ্ট্রপুঞ্জ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুয়র্ক শুক্রবার বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানের তাড়াহুড়ো করে গৃহীত সাংবিধানিক সংশোধনী বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতাকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’’

০২ ১৭

পাকিস্তানের সর্বশেষ সাংবিধানিক সংশোধনীটি আইন বিশেষজ্ঞ এবং পাকিস্তানি জনগণের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই গৃহীত হয়েছে। ফলে সেই বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছে না রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন।

Advertisement
০৩ ১৭

কিন্তু পাকিস্তানের এই ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী কী? কেন তা নিয়ে এত হইচই? ‘চিফ অফ আর্মি স্টাফ’ (স্থলসেনা প্রধান) ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে ‘চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সেস’ (সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বা সেনা সর্বাধিনায়ক) পদে উন্নীত করার জন্য গত মাসে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকার পাক সংবিধানের ২৪৩ নম্বর ধারা সংশোধনের বিল পাশ করিয়েছিল পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে।

০৪ ১৭

কারণ, পাক সংবিধানে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখার (স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা) প্রধানের মাথার উপর কোনও পদের অস্তিত্ব এত দিন ছিল না। মুনিরের জন্য বিশেষ ভাবে পদটি তৈরি করা হল।

০৫ ১৭

পাক সংবিধানের ওই সংশোধনী বিলে মুনিরের জন্য বিশেষ আইনি রক্ষাকবচেরও বন্দোবস্ত করেছে শরিফের সরকার। পাক সেনা সর্বাধিনায়কের বিরুদ্ধে আদালতে কোনও মামলা পর্যন্ত করা যাবে না।

০৬ ১৭

মুনিরের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাক সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যেও একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করে পাক পার্লামেন্ট। সাংবিধানিক বিধি মেনে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে পাশ করানো ওই বিলে সংবিধান সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার ভার সুপ্রিম কোর্টের হাত থেকে কেড়ে নতুন সাংবিধানিক আদালতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

০৭ ১৭

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জ়ারদারি সংসদের উভয় কক্ষের অনুমোদনের পর ১৩ নভেম্বর ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। তাঁর সম্মতিক্রমে বিলটি এখন পাকিস্তানের সংবিধানের পাকাপাকি অংশ।

০৮ ১৭

অন্য দিকে বিরোধীদের অভিযোগ, এই জোড়া বিল পাশ হওয়ায় পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আরও দুর্বল হবে। শক্তিশালী হবে সেনাবাহিনী। এমনকি দ্বিতীয় বিলটিকে ‘পাক সুপ্রিম কোর্টের জন্য মৃত্যুঘণ্টা’ বলেও দাবি করেছে বিরোধীরা।

০৯ ১৭

গত সপ্তাহে পাকিস্তানের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য ফারওয়া আসকার এবং পাকিস্তানি সাংবাদিক আলিফিয়া সোহেল এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ করার সময় তাঁদের গ্রেফতারও করে শরিফ সরকারের পুলিশ।

১০ ১৭

সেই সাংবিধানিক সংশোধনী নিয়েই এ বার পাকিস্তানকে সাবধান করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনার। টুয়র্কের কথায়, ‘‘পাকিস্তানের তাড়াহুড়ো করে গৃহীত সাংবিধানিক সংশোধনী বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতাকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সামরিক দায়বদ্ধতা এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নিয়েও গুরুতর উদ্বেগ তৈরি করেছে এই সিদ্ধান্ত। এর ফলে বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নিয়ন্ত্রণের অধীনে রাখার ঝুঁকিও তৈরি হবে।’’

১১ ১৭

টুয়র্ক আরও মন্তব্য করেছেন, ‘‘আইনি বিশেষজ্ঞ এবং বৃহত্তর নাগরিক সমাজের সঙ্গে ব্যাপক পরামর্শ এবং বিতর্ক ছাড়াই এই সংশোধনীগুলি আনা হয়েছে। ফলে গণতন্ত্র এবং আইন সংক্রান্ত নীতিগুলির জন্য সুদূরপ্রসারী পরিণতির ঝুঁকি তৈরি করবে এই সংশোধনী।’’

১২ ১৭

যদিও পুরো বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে পর্যবেক্ষণ এবং মন্তব্যকে ‘অযৌক্তিক এবং অপ্রয়োজনীয় আশঙ্কা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইসলামাবাদ। পাক বিদেশ মন্ত্রককে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘সকল সংসদীয় গণতন্ত্রের মতো পাকিস্তানেও আইন প্রণয়ন এবং সংবিধানের যে কোনও সংশোধনী জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একচেটিয়া অধিকার।’’

১৩ ১৭

পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদনে আবার উঠে এসেছে, চলতি বছরের মে মাসে ভারতের সঙ্গে চার দিনের সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের শিক্ষা এবং আধুনিক যুদ্ধের জন্য আরও দৃঢ় ভাবে সমন্বিত কমান্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে এই সংশোধনী এনেছে ইসলামাবাদ।

১৪ ১৭

বিশেষজ্ঞদের একাংশ আবার বিষয়টি প্রসঙ্গে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতির কথাও উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থার কথা আন্তর্জাতিক মহলে অবিসংবাদিত। ইসলামাবাদের তহবিল ফুরিয়ে আসছে। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও তলানিতে। আর্থিক সঙ্কটের মুখে বহু টাকা ঋণ করেছে পাকিস্তান। এ নিয়ে সে দেশের জনগণের মধ্যেও ক্ষোভের অন্ত নেই।

১৫ ১৭

ফলে বিশেষজ্ঞদের ওই একাংশ মনে করছেন, পাকিস্তানের অর্থনীতির যা দশা, তাতে সংবিধানের ওই সংশোধনী নতুন করে রোষ তৈরি করতে পারে জনগণের মনে। সেনার বাড়াবাড়ি দেখে রাস্তায় নামতে পারেন সাধারণ মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

১৬ ১৭

পাক সেনার রক্তচক্ষুর কাছে আমজনতার প্রতিবাদ যদি না-ও টেকে, তবুও তা ইসলামাবাদের বড় ক্ষতি করতে পারে বলে মনে করছেন ওই বিশেষজ্ঞেরা। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার মনে করছেন, পাক সংবিধানের সংশোধনী ইসলামাবাদকে এমন একটি প্রেশার কুকারে পরিণত করেছে, যা যে কোনও সময় ফেটে যেতে পারে।

১৭ ১৭

এ-ও উল্লেখ্য, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তান তৈরি হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় পরোক্ষ ভাবে সামরিক শাসনের অধীনে থেকেছে। ফলে সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে আরও ক্ষমতা তুলে দেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement