গাড়ির একটি নম্বর মাত্র। আর তার দাম কিনা এক কোটি ১৭ লক্ষ টাকা! শুধু তা-ই নয়, সেটি ভারতের সবচেয়ে দামি নম্বর প্লেটও বটে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ভারতের সবচেয়ে দামি সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বর বিক্রি করে নজির গড়েছিল হরিয়ানা। নজির গড়েছিলেন সেই রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ক্রেতাও। তবে পাঁচ দিন যেতে না যেতেই ভারতের সবচেয়ে দামি নম্বর প্লেটের তকমা হারাল ‘এইচআর৮৮বি৮৮৮৮’।
তা হলে কি অন্য নিলামে ‘এইচআর৮৮বি৮৮৮৮’-এর থেকেও বেশি দামে বিক্রি হয়েছে কোনও নম্বর প্লেট? উত্তর হচ্ছে, না। বরং ‘এইচআর৮৮বি৮৮৮৮’ নম্বরটিই আবার নিলামে তুলতে চলেছে হরিয়ানার সরকারি ভিআইপি নম্বর পোর্টাল। কিন্তু কেন?
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিলামে ‘এইচআর৮৮বি৮৮৮৮’ নম্বর প্লেটের জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি দর হেঁকেছিলেন, সেই ব্যবসায়ী সুধীর কুমার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিবহণ দফতরে টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে ওই নম্বর প্লেটের জন্য পরিবহণ দফতরের বিশেষ বিভাগে ১.১৭ কোটি টাকা জমা করার কথা ছিল সুধীরের। কিন্তু সেই টাকা জমা করতে পারেননি তিনি। ফলে কর্তৃপক্ষের তরফে ওই নম্বর পুনঃনিলামের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
অন্য দিকে, রবিবারই সুধীর জানিয়েছিলেন, শনিবার রাতে নিলামের টাকা জমা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে টাকা জমা দিতে পারেননি। তাঁর পরিবারের সদস্যেরা নম্বর প্লেটটি কেনার বিরোধিতা করছেন বলেও জানিয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সি ব্যবসায়ী।
সুধীর রবিবার বলেছিলেন, ‘‘পরিবারের সঙ্গে বর্তমানে আলোচনা চলছে। বড়রা বলছেন যে নম্বর প্লেটের জন্য এত বড় অঙ্কের টাকা খরচ করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যদিও আমার ইচ্ছা নম্বরটি নেওয়ার। সোমবারের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’ তবে সোমবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা করেননি তিনি।
গত সপ্তাহে ভিআইপি গাড়ির জন্য নিলামে উঠেছিল ‘এইচআর৮৮বি৮৮৮৮’ নম্বরটি। বিক্রি হয়েছিল ১.১৭ কোটি টাকায়। এর পরই ভারতে নথিভুক্ত গাড়ির সবচেয়ে দামি নম্বরের তকমা পায় সেটি। কারণ, এর আগে ভারতে এত দামে গাড়ির কোনও নম্বর বিক্রি হয়নি।
হরিয়ানায় প্রতি সপ্তাহে ভিআইপি বা অভিনব নম্বর প্লেটের নিলাম হয়। শুক্রবার বিকেল ৫টায় দরপত্র শুরু হয় এবং সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অফিসিয়াল পোর্টালের মাধ্যমে নিলাম চলে। ফলাফল সাধারণত বুধবার বিকাল ৫টায় ঘোষণা করা হয়।
এইচআর৮৮বি৮৮৮৮’ নম্বরটির জন্যও নিলাম শুরু হয়েছিল হরিয়ানার সরকারি ভিআইপি নম্বর পোর্টালে। ৫০,০০০ টাকা দিয়ে নিলাম শুরু হয়। বুধবার দুপুরের মধ্যে নিলামের দর পৌঁছোয় ৮৮ লক্ষ টাকায়। বিকেল ৫টা নাগাদ দাম ১.১৭ কোটি টাকার রেকর্ড ছুঁয়েছিল।
অনেক দর হাঁকাহাঁকির পর বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ নিলামের ফলাফল ঘোষণা হয়। দেখা যায়, গাড়ির ওই নম্বরটি বিক্রি হয়েছে ১.১৭ কোটি টাকায়। কিনেছেন সুধীর।
কিন্তু কেন এত দাম উঠেছিল নম্বর প্লেটটির? জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ৮৮ সংখ্যাটি অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাচুর্য এবং সমৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত এই সংখ্যা। এটিকে কেবল অর্থের ক্ষেত্রে নয়, আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়।
অনেকের আবার দাবি ছিল, জীবনে ভারসাম্য রক্ষাতেও নাকি গুরুত্বপূর্ণ এই নম্বর। আর সে কারণেই ওই নম্বরের প্লেটটি অত দামে বিক্রি হয়েছে।
নম্বরটি যে অনন্য, তাতে সন্দেহ নেই। তা ছাড়া ইংরেজি বর্ণমালার ‘বি’ বর্ণ অনেকটা ইংরেজি ‘৮’-এর মতো দেখতে। তাই দূর থেকে দেখলে মনে হতেই পারে, এইচআর-এর পর, একাধিক ৮ সংখ্যা দিয়ে নম্বরটি তৈরি হয়েছে। আর সে কারণেও নম্বর প্লেটটি কিনতে অত মানুষ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বলে মনে করেছিলেন অনেকে।
ভারতের ‘সবচেয়ে দামি’ নম্বর প্লেটটি কেনা সুধীর হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা। নম্বরটি কিনে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি টাকার কথা চিন্তা করে ওই গাড়ির নম্বর কিনিনি। নির্দিষ্ট কোনও কারণেও কিনিনি। নম্বরটি পছন্দ হয়ে যায় আর আমি দর হাঁকাতেই থাকি।’’
কোটি টাকা দিয়ে গাড়ির নম্বর প্লেট কেনার ক্ষমতা দেশের বেশির ভাগ মানুষেরই নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছিল, কী করেন সুধীর? হিসারের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সি সুধীর এক জন ব্যবসায়ী।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাধিক ব্যবসা রয়েছে সুধীরের। পরিবহণ ব্যবসা এবং একটি সফ্টঅয়্যার সংস্থা ছাড়াও বাণিজ্যিক পরিবহণের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপেরও মালিক তিনি।
১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা দিয়ে গাড়ির নম্বর প্লেট কিনলেও পরিবহণ দফতরের নির্দিষ্ট বিভাগে পুরো টাকা জমা দেননি সুধীর। মাত্র ১১,০০০ টাকা জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১০০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি এবং বাকি ১০,০০০ টাকা নিরাপত্তা আমানত হিসাবে জমা দেওয়া হয়েছিল।
ঠিক ছিল পুরো টাকা জমা দিলে তার পরেই ওই অনন্য নম্বরের মালিকানা পাবেন সুধীর। পুরো টাকা জমা করার জন্য কর্তৃপক্ষের তরফে সুধীরকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল, যার সর্বোচ্চ সীমা ছিল সোমবার দুপুর ১২টা। কিন্তু সোমবার ১২টার মধ্যে সেই টাকা জমা দেননি সুধীর। আর তার পরেই কর্তৃপক্ষ নম্বরটি আবার নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।