কথায় আছে শখের দাম লাখ টাকা। সেই প্রবাদকেই সত্যি বলে প্রমাণ করে দিয়েছেন এক ভারতীয় উদ্যোগপতি। বিলাসবহুল গাড়ি কেনার শখ অনেকেরই থাকে। প্রতিটি গাড়ির জন্য থাকে আলাদা আলাদা নম্বরপ্লেটও। চড়া কাঞ্চনমূল্য দিয়ে গাড়ি কেনার পর সেই গাড়ির নম্বর কী হবে তা নিয়ে বেশ খুঁতখুতে মনোভাব থাকে কারও কারও।
মনমতো নম্বরপ্লেটের জন্য লক্ষ লক্ষ গ্যাঁটের কড়ি থুড়ি টাকা খরচ করতে কসুর করেন না অনেক গাড়িবিলাসীই। গাড়ির দামকেও যেন টেক্কা দেয় তার নম্বরপ্লেট। বিশেষ একটি সংখ্যার উপর পক্ষপাতিত্ব বা দুর্বলতা থেকে তাঁরা নিলামে কিনে নেন সেই বিশেষ সংখ্যার নম্বরপ্লেট।
কেরলের কোচির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘লিটমাস৭’। সেই সংস্থার সিইও বেণু গোপালকৃষ্ণন। তাঁর গ্যারাজে শোভা পায় বিশ্বের একাধিক দামি ও বিলাসবহুল গাড়ি। তার একটি রোলস-রয়েসের ঘোস্ট, অন্যটি ল্যাম্বরঘিনির উরুস। ২০২৫ সালে তিনি কেনেন মার্সেডিজ় বেঞ্জের জি৬৩ এএমজি মডেলটি।
রোলস-রয়েস ঘোস্ট সিরিজ়ের দ্বিতীয় সংস্করণ ‘ব্ল্যাক ব্যাজ’ গা়ড়িটি ১৮ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছিলেন বেণু। ধূসর রঙের সেই গাড়িটি আকারে বিশাল। নজরকাড়া সেডানটির দৈর্ঘ্য ৫.৫ মিটারের কিছু বেশি। রোলস-রয়েস ঘোস্টের প্রথম সংস্করণ ২০০৯ সালে বাজারে আসে, দ্বিতীয় সংস্করণের মডেলটি ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়।
বিলাসবহুল গাড়ির মালিক হওয়া ছাড়াও ভারতের সবচেয়ে দামি নম্বরপ্লেট কেনার জন্য শিরোনামে আসেন বেণু। যে গাড়ির নম্বরপ্লেটের জন্য তিনি কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন সেটি ছিল ল্যাম্বরঘিনির উরুস। কেরলের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি এই গাড়িটি কেনেন। ফ্লুরোসেন্ট সবুজ রঙের ‘উরুস পারফরম্যান্টের’ নম্বরপ্লেটের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সিইও ৪৬ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন
বেণুর সংস্থার নাম ‘লিটমাস৭’। সংস্থার নামের শেষে যেমন ৭ সংখ্যাটি যুক্ত রয়েছে, তেমনই ল্যাম্বরঘিনির নম্বরপ্লেটটিও সাত সংখ্যা সংবলিত। নম্বরটি হল কেএল ০৭ ডিজি ০০০৭। এই বিশেষ নম্বরটি পাওয়ার জন্য তিনি নিলামে যোগ দিয়েছিলেন।
৭ এপ্রিল কেরলের মোটর ভেহিকল দফতর থেকে আয়োজিত একটি অনলাইন নিলামের মাধ্যমে বিশেষ নম্বরের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা দর হেঁকেছিলেন বেণু। সেই নম্বরপ্লেটের দামে কেনা সম্ভব ছিল আরও একটি বিলাসবহুল গাড়ি।
নিলামে মোট পাঁচ জন যোগ দিয়েছিলেন। প্রাথমিক দরপত্র শুরু হয়েছিল মাত্র ২৫ হাজার টাকায়। কিন্তু দ্রুতই সেই নিলাম দরযুদ্ধে পরিণত হয়। বেণু ও আর এক ব্যক্তির মধ্যে চলে নিলামযুদ্ধ। বেণুর প্রতিপক্ষ হাঁকেন প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। ৪৫.৯৯ লক্ষ টাকা দর হেঁকে সেই নম্বরটি ছিনিয়ে নেন প্রযুক্তি সংস্থার এই কর্তা।
কাঙ্ক্ষিত নম্বরটি পাওয়ার পর বেণু সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান, তাঁর কাছে রয়েছে কেরলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অভিনব গাড়ির নম্বরটি। পরিবহণ দফতর সাধারণত অভিনব নম্বরগুলিকে ছ’টি স্তরে শ্রেণিবদ্ধ করে। প্রাথমিক ভাবে সেই দর শুরু হয় তিন হাজার টাকা থেকে। ‘১’ বা ‘০০০১’-এর মতো লোভনীয় নম্বরগুলির দাম ১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু হয়। এগুলি পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতাও হয় বিস্তর।
জেমস বন্ডের চরিত্র কমবেশি সকলেরই প্রিয়। এই চরিত্রের সঙ্গে জড়িত ০০৭ নম্বরটিও কারও অপরিচিত নয়। নিজের গাড়ির নম্বরপ্লেটে এই সংখ্যাটিকেও রাখতে চান অনেকে। বেণুর আগের গাড়ির নম্বরপ্লেটটির সংখ্যা ছিল ০০৭। এই ধরনের নম্বরপ্লেটের জন্য খরচ পড়তে পারে আনুমানিক ৩৫ লক্ষ টাকা।
গাড়ি ও গাড়ির নম্বরের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানীরও। প্রায় ১৩ কোটি টাকা খরচ করে রোলস-রয়েস কালিনান মডেলের একটি গাড়ি কেনেন ভারতের শিল্পপতি। আরটিও সূত্রে খবর, এই গাড়ির নম্বরপ্লেট কিনতে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন তিনি।
২০২৩ সালে ‘পাঠান’-এর সাফল্যের পর রোলস-রয়েস কালিনান ব্ল্যাক ব্যাজ মডেলের গাড়ি কেনেন বলি অভিনেতা শাহরুখ খান। ৫৫৫ নম্বরযুক্ত নম্বরপ্লেট কিনতে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেন বলিউডের ‘বাদশা’।