জন্মগত নাম পল মাইকেল লেভেস্ক। ডব্লিউডব্লিউই-এর রিংয়ে নাম নিয়েছিলেন হান্টার হার্স্ট হেমসলে। যে নামে হয়তো অনেকেই চিনতে পারবেন না তাঁকে। কিন্তু দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এই নামকেই ছোট করে। তিনি ট্রিপল এইচ।
সেই ট্রিপল এইচ-ই গত কয়েক দিন ধরে সমাজমাধ্যমে সা়ড়া ফেলেছেন। তবে রিংয়ে গুঁতোগুঁতি করার জন্য নয়। সম্পূর্ণ অন্য এক কারণে।
সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসভবন হোয়াইট হাউসে দেখা গিয়েছিল প্রাক্তন কুস্তিগিরকে। ট্রাম্প আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ট্রিপল এইচ। সেখানে থেকে বেরোনোর সময় মুখ থেকে জল ছোড়ার বিশেষ ভঙ্গিমাও করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
ট্রিপল এইচ ডব্লিউডব্লিউই-এর জনপ্রিয় তারকা। এক নম্বরও ছিলেন অনেক দিন। রিং থেকে অবসর নেওয়ার পর বর্তমানে ডব্লিউডব্লিউই-এর অন্যতম কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন। তবে রিং ছাড়ার পরেও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।
কিন্তু ডব্লিউডব্লিউই-এর মঞ্চ ছেড়ে হোয়াইট হাউসে কী করছিলেন ট্রিপল এইচ? তা হলে কি এ বার রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন প্রাক্তন কুস্তিগির? এমন অনেক প্রশ্নই ভিড় করেছিল তাঁর অনুরাগীদের মনে।
১ অগস্ট, বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের রুজ়ভেল্ট রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট’ পুনরায় চালু করার ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। খেলাধুলো, শরীরচর্চা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি আদেশনামায় স্বাক্ষরও করেন তিনি।
আমেরিকার স্কুলগুলিতে কাঠামোগত শারীরিক শিক্ষা ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে যুবসমাজের ‘ফিটনেস’ বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
এক সময় আমেরিকার শারীরিক শিক্ষার প্রতীক ছিল ‘প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট’, দেশব্যাপী স্কুলপড়ুয়াদের জন্য একটি শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা। স্কুলপড়ুয়াদের মাইল-রান, পুশ-আপ, সিট-আপের মতো ব্যায়াম করিয়ে তাঁদের শারীরিক সুস্থতা দেখা হয় ওই পরীক্ষার মাধ্যমে। আমেরিকার স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যেও জনপ্রিয় ছিল পরীক্ষাটি। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘আমেরিকাকে আবার সুস্থ করে তোলার’ জন্যই ‘প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট’ পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। স্থূলতার হার বৃদ্ধি এবং তরুণদের ফিটনেসের অভাবের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তি দিয়েছে, এই পরীক্ষা আমেরিকার জন্য একটি শক্তিশালী এবং স্বাস্থ্যকর প্রজন্ম গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ট্রাম্প যখন হোয়াইট হাউসে এই ঘোষণা করছেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দু’বারের মেজর গল্ফ চ্যাম্পিয়ন ব্রাইসন ডিচাম্বেউ, ফুটবলার লরেন্স টেলর, ফুটবলার হ্যারিসন বাটকার এবং গল্ফ তারকা অ্যানিকা সোরেনস্টাম-সহ শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়াবিদেরা।
তবে এঁদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিলেন, তিনি ট্রিপল এইচ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
ট্রাম্প-ঘোষিত ‘স্পোর্টস, ফিটনেস এবং নিউট্রিশন কাউন্সিল’-এ যোগ দিয়েছেন ট্রিপল এইচ। আমেরিকার স্কুলে স্কুলে শারীরিক সুস্থতার উপর প্রশাসনিক জোর বৃদ্ধির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রাক্তন কুস্তিগিরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে। প্রাক্তন কুস্তিগিরকে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘ইনি (ট্রিপল এইচ) এমন এক জন মানুষ যাঁর সঙ্গে আপনি কখনও ঝামেলায় জড়াতে যাবেন না।’’ রিংয়ের ভেতরে এবং বাইরে ট্রিপল এইচের প্রভাব উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘‘ওঁকে আমাদের মধ্যে পাওয়া সত্যিই সম্মানের।’’
ডব্লিউডব্লিউই-এর ১৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ট্রিপল এইচ, ছোটদের খেলাধুলার পরামর্শদাতা হিসাবেও জনপ্রিয়। তাই তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট’-এর দলে টেনে ট্রাম্প কাজের কাজ করেছেন বলেই মনে করছেন ট্রাম্প অনুরাগীদের অনেকে।
তবে অনেকে আবার ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন। ডব্লিউডব্লিউই নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিতর্ক রয়েছে। মনে করা হয়, জনপ্রিয় ওই কুস্তি অনুষ্ঠানের সবটাই সাজানো।
ডব্লিউডব্লিউই-এর কুস্তিগিরদের চেহারা বিশাল বিশাল হলেও নাকি তাঁরা আদৌ একে অপরের সঙ্গে মারপিট করেন না। হাত-পা ছোড়েন মাত্র। বাকিটা ক্যামেরার কাজ এবং সম্পাদনার খেলা। টিভিতে দেখে মনে হয়, যেন সত্যিই মারপিট করছেন কুস্তিগিরেরা।
ট্রাম্প-সমালোচকদের দাবি, ডব্লিউডব্লিউই এমন একটি অনুষ্ঠান যা খেলাধুলোর জন্য না, বিনোদনের জন্য বেশি জনপ্রিয়। তা হলে সত্যিকারের কুস্তিগিরদের বদলে এক জন ডব্লিউডব্লিউই তারকার হাতে ‘প্রেসিডেনশিয়াল ফিটনেস টেস্ট’-এর অন্যতম দায়িত্ব তুলে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
ডব্লিউডব্লিউই তারকাদের অনেকেরই মাদক এবং স্টেরয়েড সেবনের ইতিহাস রয়েছে, যা সত্যিকারের শারীরিক সুস্থতার পরিপন্থী বলে মনে করেন অনেক স্বাস্থ্যবিদ। ফলে ট্রিপল এইচের মতো এক জন ডব্লিউডব্লিউই তারকাকে আমেরিকার যুবসমাজের সুস্বাস্থ্য নিয়ে গুরুদায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
আবার সমালোচকদের অনেকের দাবি, ডব্লিউডব্লিউই-এর গুণমুগ্ধ ভক্ত ট্রাম্প। একাধিক বার সেই কুস্তি অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হিসাবে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তিনি নিজেও ডব্লিউডব্লিউই তারকাদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে অবগত। আর সেই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতেই ট্রিপল এইচকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।
তবে এত ডব্লিউডব্লিউই তারকা থাকতে ট্রিপল এইচ-ই কেন? তা নিয়েও তত্ত্ব খাড়া করেছেন অনেকে। ট্রাম্পের রাজনৈতিক সঙ্গী লিন্ডা ম্যাকমাহনের জামাই ট্রিপল এইচ। প্রথম ট্রাম্প জমানায় ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের প্রধান ছিলেন লিন্ডা। বর্তমানে শিক্ষা সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন।
তাই প্রাক্তন কুস্তিগির ম্যাকমাহন পরিবারের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত। তেমনটাই দাবি তুলেছেন অনেকে। আর সে কারণেই অন্য তারকাদের তুলনায় তিনিই প্রাধান্য পেয়েছেন বেশি।