India-Maldives Row

ভারতীয় সেনা সরছেই! মুইজ্জুর দাবি শুনে মলদ্বীপকে সামরিক সহায়তার আশ্বাস চিনের, নেপথ্যে গোপন অঙ্ক?

ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছোট দেশগুলির উপর ভারত ‘গুন্ডামি’ চালাচ্ছে বলে কয়েক দিন আগে মন্তব্য করেন মুইজ্জু। এর পর দু’দেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৯
Share:
০১ ২৭

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মহম্মদ মুইজ্জু মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই সে দেশে ভারত বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বীপরাষ্ট্রের ‘আনুগত্য’ এখন কোথায়, তা-ও স্পষ্ট নয়াদিল্লির কাছে।

০২ ২৭

মঙ্গলবার একটি জনসভায় বক্তৃতা করার সময় মুইজ্জু বলেন, ‘‘১০ মে-র পর দেশে কোনও ভারতীয় বাহিনী থাকবে না। উর্দিতেও না, উর্দি ছাড়া অসামরিক পোশাকেও নয়। ভারতীয় বাহিনী এ দেশে কোনও ভাবেই থাকবে না। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছি।’’

Advertisement
০৩ ২৭

এর কয়েক দিন আগে, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ছোট দেশগুলির উপর ভারত ‘গুন্ডামি’ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মুইজ্জু। এর পর দু’দেশের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল। মুইজ্জুর মন্তব্যের পাল্টা হিসাবে ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর বলেছিলেন যে, ‘‘বড় গুন্ডারা ৪৫০ কোটি ডলারের সহায়তা প্রদান করে না।’’

০৪ ২৭

স্পষ্টতই মলদ্বীপ ভারতের কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য পায়, তা নিয়েই মুইজ্জু সরকারকে বিঁধেছেন জয়শঙ্কর।

০৫ ২৭

ভারত এবং মলদ্বীপের মধ্যে যখন ‘বৈরিতা’র ছাপ স্পষ্ট, তখন এই সপ্তাহে চিনের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ার কথা ঘোষণা করেছে মুইজ্জু সরকার। মলদ্বীপের সরকার জানিয়েছে ‘বিনামূল্যে এবং নিঃশর্তে’ সামরিক সহায়তা পেতে চিনের সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা।

০৬ ২৭

চিনের শি জিনপিং সরকার মলদ্বীপকে ১২টি অ্যাম্বুল্যান্সও দিয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি চিনের সঙ্গে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চুক্তি করেছে মলদ্বীপ। এ বার সরকারি ভাবে এই প্রথম দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরি হতে চলেছে।

০৭ ২৭

রবিবার চিনের আন্তর্জাতিক সামরিক বোঝাপড়া সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক তথা মেজর জেনারেল জিয়াং বাওকুনের সঙ্গে বৈঠক করেন মলদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মহম্মদ ঘাসান মামুন।

০৮ ২৭

বৈঠকের পর সামরিক বোঝাপড়া নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী স্থির হয়, নিঃশর্তে মলদ্বীপকে সামরিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে চিন। পরে এই চুক্তির বিষয়ে নিজেদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

০৯ ২৭

যদিও এই বিষয়ে দুই তরফেই সবিস্তারে কিছু জানানো হয়নি। অন্য দিকে, সোমবার মলদ্বীপের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মলদ্বীপকে ১২টি ‘পরিবেশবান্ধব’ অ্যাম্বুল্যান্স উপহার দিয়েছে চিন। সব মিলিয়ে চিন-মলদ্বীপ ঘনিষ্ঠতা যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন অনেকেই।

১০ ২৭

কিন্তু মলদ্বীপে চিনের ‘নিঃশর্ত’ সামরিক সহায়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। অনেকে নেপথ্যে খুঁজে পাচ্ছেন ‘গোপন অভিসন্ধি’ও।

১১ ২৭

সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মলদ্বীপ সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা এবং ‘ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ইউনিভার্সিটি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আজিম জহির এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মুইজ্জু খুব তাড়াতাড়ি চিনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এগিয়েছে। এটা আশ্চর্যজনক। স্পষ্ট যে, বিষয়টি নয়াদিল্লি ভাল চোখে দেখবে না।’’ তিনি যোগ করেছেন, ‘‘এটি একটি নতুন দিক যা অবশ্যই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।’’

১২ ২৭

জহিরের দাবি, ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের খারাপ সম্পর্ক এবং সে দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিরক্ষা চুক্তিকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে চিন।

১৩ ২৭

মুইজ্জু সরকারের প্রতি ভারতের ‘অদূরদর্শী’ এবং ‘বিপরীতমুখী’ প্রতিক্রিয়ার কারণেও মলদ্বীপ চিনের দিকে আরও ঝুঁকেছে বলে মত জহিরের।

১৪ ২৭

মলদ্বীপের জনসংখ্যা সর্বসাকুল্যে পাঁচ লক্ষের কিছু বেশি। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকের কাছেই এটি স্বপ্নের পর্যটন কেন্দ্র। তবে দ্বীপরাষ্ট্রের কৌশলগত গুরুত্ব এর আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি।

১৫ ২৭

দীর্ঘ দিন ধরে ভারত ও চিনের মধ্যে দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মলদ্বীপ। কারণ ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে উভয় দেশই।

১৬ ২৭

ভারত মহাসাগরে পণ্যবাহী জাহাজ পরিবহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথের মাঝে পড়ে মলদ্বীপ। সেই পথেই চিনে তেল সরবরাহ হয়। আশপাশে আমেরিকার নৌঘাঁটি রয়েছে। আর সেই কারণেই মলদ্বীপকে ‘সামরিক সহায়তা’ প্রদান করা চিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, কোনও ভাবেই তা ‘নিঃশর্ত’ না ।

১৭ ২৭

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত মহাসাগরে প্রভাব বিস্তার করে আমেরিকার নৌঘাঁটিতে নজরদারি চালাতে এবং দেশে পরিবহণের পথ সুগম করতে মলদ্বীপকে ব্যবহার করছে চিন। একেই চিনের ‘গোপন অভিসন্ধি’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

১৮ ২৭

মলদ্বীপ তথা ভারত মহাসাগরে চিনের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেলে তা ভারতের জন্য সুখবর নয় বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

১৯ ২৭

মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ সোলির আমলে মলদ্বীপ সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছিল। চিনকে ছাপিয়ে সে দেশের কাছাকাছি এসেছিল ভারত।

২০ ২৭

ভারতের কাছ থেকে অনেক সাহায্যও পেয়েছিল মলদ্বীপ। সে দেশে হাসপাতাল, স্কুল, বিমানবন্দর এবং অন্যান্য পরিকাঠামোর জন্যও তহবিল সরবরাহ করে ভারত। তবে সেই পরিস্থিতি বর্তমানে বদলেছে।

২১ ২৭

গত বছরের নির্বাচনে মুইজ্জু ‘ভারত আউট’ স্লোগানের উপর ভিত্তি করে প্রচারাভিযান চালিয়েছিল। মলদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাকে সরানোর ডাকও দিয়েছিলেন মুইজ্জু। এর পর ক্ষমতায় এসে ভারত নিয়ে তাঁর ‘অনীহা’র কথা বার বার প্রকাশ্যে এসেছে।

২২ ২৭

আন্তর্জাতিক মহলে মুইজ্জু পরিচিত ‘চিনপন্থী’ হিসাবে। ২০১৩ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে রাজধানী মালের মেয়র থাকার সময় চিনের সঙ্গে একটি সেতু নির্মাণের চুক্তি তিনি করেছিলেন। এর পর প্রেসিডেন্ট হিসাবে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর চিনের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ আরও প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

২৩ ২৭

মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের আসনে বসার পর তড়িঘড়ি চিন সফরেও গিয়েছিলেন মুইজ্জু। সেখানে গিয়ে দু’দেশের মধ্যে প্রায় ১৫টি চুক্তি স্বাক্ষর করেন তিনি। ঘটনাচক্রে, চিন থেকে ফিরে মলদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা অপসারণের প্রতিশ্রুতিতে অটল ছিলেন মুইজ্জু।

২৪ ২৭

২ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ভারত এবং মলদ্বীপের মধ্যে একটি শীর্ষস্তরীয় বৈঠক হয়। তার পরেই মলদ্বীপের বিদেশ মন্ত্রক দাবি করে, ১০ মে-র মধ্যে মলদ্বীপের তিনটি বিমানবন্দর থেকে বাহিনী সরাবে ভারত। প্রথম ধাপে ১০ মার্চের মধ্যে একটি বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে বাহিনী। ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদেও মুইজ্জু একই দাবি করেছিলেন।

২৫ ২৭

গত মাসে, ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও মলদ্বীপ সরকার একটি বিতর্কিত চিনা ‘গবেষণা জাহাজ’কে তার জলসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারতের দাবি ছিল, ওই জাহাজটি আসলে ‘গুপ্তচর জাহাজ’।

২৬ ২৭

মলদ্বীপের তিনটি বিমানবন্দরে এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৮৮ জন সদস্য রয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা জরুরিকালীন পরিষেবা দিচ্ছেন মলদ্বীপবাসীকে। অসুস্থদের আকাশপথে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানোর মতো কাজ তাঁরা করে থাকেন।

২৭ ২৭

এই সপ্তাহে ভারতীয় অসামরিক দল মলদ্বীপে ৮৮ জন সেনার দায়িত্ব বুঝে নিতে গিয়েছিল। তবে ভারতের সেই পদক্ষেপও প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। মুইজ্জু জানিয়ে দেন, ১০ মে-র পর মলদ্বীপে উর্দিতে বা অসামরিক পোশাকেও কোনও ভারতীয় বাহিনী থাকবে না।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement