Earthquake in Turkey and Syria

কখনও ১০ হাজার মৃত্যু, তো কখনও আড়াই লক্ষ! কেন বার বার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক?

সাধারণত, টেকটনিক প্লেটের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য ভূমিকম্প হয়। চারটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে তুরস্ক অবস্থিত। তাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির তালিকায় রয়েছে এই দেশের নাম।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
আলেপ্পো শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:০৪
Share:
০১ ২৬

সোমবার ভোর ৪টে ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮।গাজিয়ানতেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ১৮ কিলোমিটার গভীরে উৎসস্থল।মাটি কেঁপে উঠেছিল প্রতিবেশী দেশ সিরিয়াতেও। প্রথম কম্পনের ১১ থেকে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে আবার ভূমিকম্প হয় তুরস্ক এবং সিরিয়ার সীমান্তে। তার পর তৃতীয় বারও কম্পন অনুভূত হয়।

০২ ২৬

ভূকম্পের ফলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে একাধিক বহুতল। ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে পড়েন বহু মানুষ। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার পার করেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার মানুষ।

Advertisement
০৩ ২৬

তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও বহু বার প্রবল ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছে তুরস্ক। কিন্তু বার বার তুরস্কে এমন ভূকম্পের কারণ কী?

০৪ ২৬

সাধারণত, টেকটনিক প্লেটের অবস্থান পরিবর্তনের ফলে ভূমিকম্প হয়। চারটি টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে তুরস্ক অবস্থিত। তাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির তালিকায় রয়েছে সে দেশের নামও।

০৫ ২৬

তুরস্কের বেশির ভাগ অংশ অ্যানাটোলিয়ান টেকটনিক প্লেটের উপর অবস্থিত। অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের অবস্থান আবার ইউরেশীয়, আফ্রিকান এবং আরবীয় টেকটনিক প্লেটের মধ্যস্থলে।

০৬ ২৬

অ্যানাটোলিয়ান প্লেট ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে। অপর দিকে, আরবীয় প্লেট অনবরত ধাক্কা মারতে থাকে অ্যানাটোলিয়ান প্লেটকে।

০৭ ২৬

বার বার আরবীয় প্লেটের সঙ্গে অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের ধাক্কা লাগার ফলে তা গিয়ে ধাক্কা মারে ইউরেশীয় প্লেটে। বার বার প্লেটগুলির সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

০৮ ২৬

বিশেষ করে অ্যানাটোলিয়ান প্লেট যে জায়গায় ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, সেখানে একটি চ্যুতিরেখা তৈরি হয়েছে। তার নাম উত্তর অ্যানাটোলিয়ান চ্যুতিরেখা বা নর্থ অ্যানাটোলিয়ান ফল্ট লাইন (এনএএফ)।

০৯ ২৬

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, এই এনএএফ-ই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূকম্পের উৎসস্থল। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৬০ সালে।

১০ ২৬

চিলির ভালদিভিয়া শহরের সমান্তরালে উপকূল বরাবর ১৬০ কিলোমিটার দূরে এই ভূকম্প হয়েছিল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৯.৫। টানা দশ মিনিট ধরে ভূমিকম্প হয়েছিল যা পরে সুনামির আকার নেয়।

১১ ২৬

তুরস্কের ৯৫ শতাংশ এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ হলেও দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এই অংশের মধ্যে রয়েছে ইস্তানবুল এবং ইজমিরের বেশির ভাগ এলাকা এবং অ্যানাটোলিয়ার পূর্বাংশ।

১২ ২৬

তুরস্কের বিপর্যয় এবং আপৎকালীন মোকাবিলা বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে যে, ২০২০ সাল থেকে তুরস্কে তেত্রিশ হাজার বারেরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। তার মধ্যে ৩৩২ বার তুরস্কের এমন ভূকম্প হয়েছে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৪ বা তার বেশি।

১৩ ২৬

সোমবার তুরস্কের এই বিধ্বস্ত রূপ দেশবাসীকে পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে দিয়েছে। ১৯৩৯ সালে তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৮। এই ভূকম্পে ৩২ হাজার ৭০০ জন মারা গিয়েছিলেন।

১৪ ২৬

১৯৯৯ সালের ১৭ অগস্ট। তুরস্কের ইজমিটে ভূমিকম্পের ফলে মারা যান ১৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৬।

১৫ ২৬

একই তীব্রতার কম্পন অনুভূত হয়েছিল ১৭৮৪ সালের ২৩ জুলাই। তুরস্কের এরজিনকানে ভূমিকম্পের ফলে মারা গিয়েছিলেন ৫ হাজার জন। কারও মতে, এই সরকারি পরিসংখ্যান সঠিক নয়। ভূকম্পের ফলে এরজিনকানে দশ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে অধিকাংশের দাবি।

১৬ ২৬

১১৫ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক ভূমিকম্পের মুখে পড়ে। রিখটার স্কেলে যার কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫। একাংশের দাবি, এই ভূকম্পের ফলে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

১৭ ২৬

১৬৫৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ‌ভূমিকম্প হয় তুরস্কে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫। এর ফলে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

১৮ ২৬

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৩০ সালের ৭ মে। সে বারের ভূমিকম্পে তুরস্কে মারা গিয়েছিলেন আড়াই হাজার মানুষ। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫।

১৯ ২৬

১৯৪৩ সালের ২৬ নভেম্বর ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫ হাজার মানুষ। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫।

২০ ২৬

১৯৪৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক আবার ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫। এই বিপর্যয়ে ৪ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

২১ ২৬

১৯৭৬ সালের ২৪ নভেম্বর তুরস্কে ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলেন ৪ হাজার জন। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৫।

২২ ২৬

১৮৪০ সালের ২ জুলাই তুরস্কে ভূমিকম্পের ফলে নিহত হয়েছিলেন প্রায় দশ হাজার মানুষ। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৪।

২৩ ২৬

১৮৮১ সালের ৩ এপ্রিল ভূমিকম্প হয়েছিল তুরস্কে। এর ফলে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৭,৮৬৬ জন। ঠিক তার দু’বছর পর ১৮৮৩ সালের ১০ অক্টোবর তুরস্কে ভূকম্পের ফলে মারা গিয়েছিলেন ১২০ জন। ১৯৫৩ সালের ৯ অগস্ট ২১৬ জন তুরস্কবাসী ভূমিকম্পে প্রাণ হারান। তিন ক্ষেত্রেই রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৩।

২৪ ২৬

১৫০৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ সেপ্টেম্বর ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কে প্রাণ হারিয়েছিলেন দশ হাজার জন। ১৮৭২ সালের ৩ এপ্রিল ১৮০০ তুরস্কবাসী ভূকম্পের ফলে মারা গিয়েছিলেন।১৯৫৩ সালের ১৮ মার্চ প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৬৫ জন। ১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিলেন ১,০৮৬ জন তুরস্কবাসী। ১৯৯৯ সালের ১২ নভেম্বর ভূমিকম্পে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ৮৯৪ জন। ২০১১ সালে ২৩ অক্টোবর ৬০৪ জন তুরস্কবাসী ভূকম্পে মারা গিয়েছিলেন। সব ক্ষেত্রেই রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.২।

২৫ ২৬

১৭৬৬ সালের ২২ মে তুরস্কে ৪ হাজার জন ভূমিকম্পে মারা যান। ১৮৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভূকম্পে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪৭০ জন তুরস্কবাসী।১৯৫৭ সালের ২৭ এপ্রিল ৬৭ জন প্রাণ হারান ভূকম্পে। এই ঘটনার প্রায় ১ মাস পর ২৬ মে তুরস্কে ভূমিকম্পের ফলে ৫২ জন মারা যান। রিখটার স্কেলে এই কম্পনগুলির মাত্রা ছিল ৭.১।

২৬ ২৬

১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ জুলাই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক। এর ফলে প্রায় ১০ হাজার তুরস্কবাসী প্রাণ হারিয়েছিলেন। ১৮৯৪ সালের ১০ জুলাই তুরস্কে ভূমিকম্পের ফলে মারা যান ১,৩০০ জন। ১৯৪২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভূমিকম্পে ৩ হাজার জন মারা গিয়েছিলেন তুরস্কে। ১৯৬৪ সালের ৬ অক্টোবর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারান ২৩ জন। ২০২০ সালে ৩০ অক্টোবর তুরস্কে ভূকম্পে ১১৭ জন নিহত হন। রিখটার স্কেলে এই কম্পনগুলির মাত্রা ছিল ৭।

ছবি: রয়টার্স।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement