US Canada Row

বিজ্ঞাপনের ‘রেগ্যান-কথা’য় রেগে আগুন ট্রাম্প, ‘জালিয়াত’ কানাডাকে শাস্তি দিতে চাপালেন শুল্ক, ‘৫১তম’ লক্ষ্যে অটল আমেরিকা?

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের ভাষণের কিছু অংশ ব্যবহার করে শুল্ক সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞাপন তৈরি করে কানাডার প্রাদেশিক প্রদেশ অন্টারিয়ো। বিষয়টি নজরে পড়তেই অটোয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক আলোচনা বন্ধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু কেন?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৪৭
Share:
০১ ১৮

শুল্ক সংক্রান্ত একটা বিজ্ঞাপন। সেটা সম্প্রচারিত হতেই চটে লাল ‘সুপার পাওয়ার’ দেশের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্ট! ফলস্বরূপ উত্তরের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় পড়ল দাঁড়ি। শুধু তা-ই নয়, ‘প্রতারক’ আখ্যা দিয়ে বিষোদ্গার করতেও পিছপা হননি তিনি। ফলে দু’তরফে সম্পর্কের চরম অবনতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, এই ইস্যুতে ফের জটিল হতে পারে ভূ-রাজনৈতিক অঙ্ক, বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের একাংশ।

০২ ১৮

‘সুপার পাওয়ার’ দেশের এ-হেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্টটি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২৩ অক্টোবর হঠাৎ করেই কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনা বাতিল করেন তিনি। ওই দিন নিজের সমাজমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘‘অটোয়া প্রতারণা করেছে এবং সেই জালিয়াতি ধরা পড়ে গিয়েছে।’’ এর পরই পূর্বসূরি রোনাল্ড রেগ্যানের প্রসঙ্গ টেনে উত্তরের প্রতিবেশী দেশটিকে নিশানা করতে দেখা যায় তাঁকে।

Advertisement
০৩ ১৮

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পরেও অবশ্য হাল ছাড়তে নারাজ কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের করা পোস্টের এক দিনের মাথাতেই (পড়ুন ২৪ অক্টোবর) বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন তিনি। বলেন, ‘‘আমরা ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।’’ দু’তরফে কথা বলে যাবতীয় সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়া যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে।

০৪ ১৮

সম্প্রতি অন্টারিয়োর প্রাদেশিক সরকারের অর্থানুকূল্যে কানাডা জুড়ে সম্প্রচারিত হয় একটি বিজ্ঞাপন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট রেগ্যানকে শুল্কের জন্য আর্থিক বিপর্যয়ের সতর্কবার্তা দিতে শোনা গিয়েছে। বিষয়টি নজরে আসতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, ওই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছে অটোয়া। এর পাশাপাশি দেশ এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে রেগ্যান শুল্ক পছন্দ করতেন বলেও ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ ঘোষণা করেন তিনি।

০৫ ১৮

ট্রাম্পের এ-হেন দাবিতে অবশ্য ইতিমধ্যেই সিলমোহর দিয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্টের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান ‘রোনাল্ড রেগ্যান প্রেসিডেন্সিয়াল ফাউন্ডেশন অ্যান্ড ইনস্টিটিউট’। এই ইস্যুতে এক্স হ্যান্ডলে (আগে নাম ছিল টুইটার) একটি পোস্ট করে তারা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘কানাডার অন্টারিয়ো প্রাদেশিক সরকারের অর্থানুকূল্যে তৈরি বিজ্ঞাপনটিতে ১৯৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল জাতির উদ্দেশে দেওয়া রেগ্যানের ভাষণের অবাধ এবং সুষ্ঠু বাণিজ্যের বিষয়টিকে ভুল ভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে।’’

০৬ ১৮

‘রেগ্যান প্রেসিডেন্সিয়াল ফাউন্ডেশন’-এর এই পোস্টের পর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তাদের ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি ট্রাম্প। সেখানে তিনি আরও লেখেন, ‘‘আমাদের দেশের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছে কানাডা। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে প্রভাবিত করতে এই বিজ্ঞাপন তৈরি করা হয়েছে। অটোয়া দীর্ঘ দিন ধরেই শুল্কের ক্ষেত্রে প্রতারণা করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত কর আদায় করে থাকে তারা। আমেরিকার থেকে সেই সুবিধা আর নিতে পারবে না কানাডা।’’

০৭ ১৮

ট্রাম্পের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনটি তৈরি করে ‘জঘন্য আচরণ’ করেছে কানাডা। যদিও বিশ্লেষকদের দাবি, এ ব্যাপারে অটোয়া ‘মারাত্মক’ কোনও অপরাধ করেছে এমনটা নয়। কারণ, তাদের তৈরি বিজ্ঞাপনটিকে পুরোপুরি ভুয়ো বলা যাবে না। তবে এটা ঠিক যে সাবেক প্রেসিডেন্ট রেগ্যানের ভাষণের সম্পাদিত অংশ সেখানে ব্যবহার করেছে কানাডা। ক্যাম্প ডেভিড থেকে জাতির উদ্দেশে ওই বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি।

০৮ ১৮

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন রেগ্যান। ১৯৮১-’৮৯ সাল পর্যন্ত দু’দফায় দেশের দায়িত্বভার সামলান তিনি। আমেরিকার ইতিহাসে এই সময়কাল ‘রেগ্যান যুগ’ হিসাবে পরিচিত। ট্রাম্পের মতো তাঁরও রাজনৈতিক দল ছিল রিপাবলিকান পার্টি। ১৯৮০-র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তথা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারকে হারিয়ে দেন রেগ্যান। পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার আগে অবশ্য হলিউড অভিনেতা হিসাবে জনপ্রিয়তা ছিল তাঁর।

০৯ ১৮

রেগ্যান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ওয়াশিংটন এবং টোকিয়োর মধ্যে দেখা দেয় বাণিজ্যিক জটিলতা। সেটা মেটাতে ১৯৮৭ সালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন তিনি। বলেন, ‘‘জাপানি সংস্থাগুলি অন্যায্য সুবিধা পাচ্ছে। এতে আর্থিক ভাবে লোকসান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। তবে শুল্ক আরোপ করে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কারণ, তাতে দু’তরফে মিলবে বাণিজ্যিক যুদ্ধের উস্কানি। ফলে মার খাবে পণ্য উৎপাদন এবং বাড়বে বেকারত্ব।’’

১০ ১৮

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, কানাডার অন্টারিয়ো প্রাদেশিক সরকারের অর্থানুকূল্যে তৈরি বিজ্ঞাপনটিতে রেগ্যানের বক্তব্যের প্রথম অংশটি ব্যবহার করা হয়নি। শুধুমাত্র শুল্ক নিয়ে তিনি কী বলেছেন, সেটাই দর্শককে শুনিয়েছে তারা। আর সেই বিষয়টিকে সামনে এনে প্রতিবেশী দেশটির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প, যাকে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।

১১ ১৮

‘বিতর্কিত’ বিজ্ঞাপনটিকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুদ্রমূর্তি ধারণ করায় তড়িঘড়ি ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামেন অন্টারিয়োর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড। ২৭ অক্টোবর থেকে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞাপনটির প্রচার বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, তার পরেও ট্রাম্পের রোষানল থেকে অটোয়া যে বাঁচতে পেরেছে এমনটা মনে করছেন না কেউই। ‘প্রতারণা’র শাস্তি হিসাবে কানাডার রফতানি পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন তিনি।

১২ ১৮

যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করা অটোয়ার অধিকাংশ পণ্যই আমেরিকা-মেক্সিকো-কানাডা বাণিজ্যচুক্তির আওতাধীন। ফলে এত দিন একরকম বিনা শুল্কে সেগুলিকে মার্কিন বাজারে বিক্রির সুযোগ পাচ্ছিল তারা। গত অগস্টে সংশ্লিষ্ট চুক্তিটির বাইরে থাকা সামগ্রীগুলির উপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক চাপান ট্রাম্প। এ ছাড়া স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক নিচ্ছে ওয়াশিংটন।

১৩ ১৮

প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দু’বার হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন মার্ক কার্নি। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি কানাডার বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রভাব ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে গাড়ি ও তার যন্ত্রাংশ, অ্যালুমিনিয়াম এবং ইস্পাতের উপরে শুল্ক কমানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছিল অটোয়া। ‘বিতর্কিত’ বিজ্ঞাপনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে তাতে পুরোপুরি জল ঢেলেছেন, তা বলাই বাহুল্য।

১৪ ১৮

বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য মনে করেন ফোর্ডের একটি সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের রাগকে সপ্তমে চড়িয়েছে। বর্তমানে কানাডার টরেন্টোয় বেসবল ওয়ার্ল্ড সিরিজ়ের খেলা চলছে। অন্টারিয়োর প্রিমিয়ার সেখানে ওই ‘বিতর্কিত’ বিজ্ঞাপনটি চালানোর নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কট্টর সমর্থকদের দাবি, এর মাধ্যমে সর্বাধিক আমেরিকাবাসীর মনে শুল্ক নিয়ে একটা খারাপ ধারণা গেঁথে দিতে চেয়েছিলেন তিনি।

১৫ ১৮

গত বছরের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে কানাডা নিয়ে একের পর এক আক্রমণাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার আগেই উত্তরের প্রতিবেশী দেশটির আমেরিকার সঙ্গে মিশে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করে বসেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজ অটোয়া আক্রমণ করতে পারে বলে জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় তড়িঘড়ি ওয়াশিংটনে এসে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

১৬ ১৮

সেই বৈঠকে অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি ট্রাম্প। উল্টে কানাডার যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম প্রদেশ হতে রাজি হলে ট্রুডো সেখানকার গভর্নর হতে পারবেন বলে প্রকাশ্যেই প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরার কিছু দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন জাস্টিন। তাঁর জায়গায় শপথ নেন কার্নি।সেই বৈঠকে অবশ্য নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরেননি ট্রাম্প। উল্টে কানাডার যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম প্রদেশ হতে রাজি হলে ট্রুডো সেখানকার গভর্নর হতে পারবেন বলে প্রকাশ্যেই প্রস্তাব দেন ট্রাম্প। ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরার কিছু দিনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন জাস্টিন। তাঁর জায়গায় শপথ নেন কার্নি।

১৭ ১৮

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর কোনও অবস্থাতেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে স্বীকার করা হবে না বলে হুঙ্কার ছাড়েন মার্ক। এর পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মার-সহ একাধিক ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ট্রুডোর সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী খলিস্তানপন্থীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কানাডার সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরে দিল্লির। সেই ফাটলও অনেকটাই মেরামত করতে সক্ষম হয়েছেন কার্নি।

১৮ ১৮

এই পরিস্থিতিতে একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে যে ভাবে মার্কিন-কানাডা সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তাতে প্রমাদ গুনেছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁদের দাবি, এই ইস্যুকে সামনে রেখে ফের অটোয়াকে কব্জা করার ব্যাপারে সুর চড়াতে পারেন ট্রাম্প। দ্বিতীয়ত, প্রবল জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে সামনে রেখে কিছুটা ‘ফিকে’ হয়ে আসা জনপ্রিয়তায় শান দেওয়ার সুযোগও থাকছে তাঁর সামনে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেটাই এখন দেখার।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement