খেলার সাথী

পুপুল সপ্তাহে চার দিন বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। দু’দিন বিকেলে কম্পিউটার ক্লাস। আর এক দিন যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা। গো অ্যাজ ইউ লাইক। এই রুটিন পুপুলের মা বানিয়ে দিয়েছে। পুপুল খুব খুশি। প্রত্যেকটা বিকেলই ওর কাছে দারুণ আনন্দের।

Advertisement

বিনতা রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share:

পুপুল সপ্তাহে চার দিন বিকেলে মাঠে ফুটবল খেলতে যায়। দু’দিন বিকেলে কম্পিউটার ক্লাস। আর এক দিন যা ইচ্ছে তাই করার স্বাধীনতা। গো অ্যাজ ইউ লাইক। এই রুটিন পুপুলের মা বানিয়ে দিয়েছে। পুপুল খুব খুশি। প্রত্যেকটা বিকেলই ওর কাছে দারুণ আনন্দের।

Advertisement

ফুটবল খেলতে যাওয়ার সময় ওর সঙ্গে দেখা হয় রূপমের। প্রতিটি বিকেলেই। লালবাড়িটার একতলার বারান্দায় রূপম বসে থাকে। বোধ হয় পুপুলের অপেক্ষাতেই থাকে। পুপুল ওকে স্কুলের গল্প বলে, কোথাও বেড়াতে গেলে সেই গল্প বলে। আবার ফেরার সময়ও রূপমের সঙ্গে অন্তত পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে সে দিনের খেলার ধারাবিবরণী শুনিয়ে আসে।

রূপমের খেলাধুলোয় খুব আগ্রহ। খেলার ম্যাগাজিনগুলো ও গোগ্রাসে পড়ে। আর টিভিতেও খুব খেলা দেখে। ও যখন পুপুলকে নানা ধরনের খেলার খবর দেয় বা গল্প বলে তখন শুনতে শুনতে পুপুল মুগ্ধ হয়ে যায়। ও রূপমকে বলে, ‘রূপম, আমার আর কোনও খেলার ম্যাগাজিন পড়ার দরকার হয় না, টিভিতেও খেলা দেখার দরকার পড়ে না। তোমার কাছে গল্প শুনলেই আমার হয়ে যায়। এমনকী স্কুলের কুইজ কম্পিটিশনে তোমার দেওয়া তথ্য থেকে জবাব দিয়ে জিতেও গেছি কত বার। রূপম হাসে, খুশি হয়, কিন্তু চোখ দুটো জলে ভরে যায়, ‘খেলার গল্পই শুধু বলব, খেলতে তো আর পারব না কোনও দিন।’ পুপুলের ভীষণ কষ্ট হয়, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। রূপমের পা দুটো পোলিওতে আক্রান্ত। সাহায্য নিয়ে হাঁটতে পারে আস্তে আস্তে, কিন্তু খেলাধুলো কখনও সম্ভব নয়। রূপম তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘ও কী, তুমি আবার মনখারাপ করছ নাকি এর জন্য? না না, তুমি আমার কত ভাল বন্ধু। তুমি খেলো, খেলার বিবরণী শোনাও, তাতেই আমার আনন্দ কত জানো?’

Advertisement

এমন করে রূপম কথা বলে যে পুপুল হেসে ফেলে। সত্যি, রূপম তার খুব বন্ধু। সপ্তাহের চারটে দিন সে যেমন খেলাটা এনজয় করে, তেমনি রূপমের সঙ্গটাও এনজয় করে।

এক দিন পুপুল মাকে বলল, ‘মা, একটা বিকেল তো আমার যা ইচ্ছে তাই করার দিন, তাই না? করতে পারি আমার যা খুশি?’

‘নিশ্চয়ই। গল্পের বই পড়তে পারিস। টিভি দেখতে পারিস। এমনকী...।’

মায়ের মুখে চাপা হাসি আর আধখানা কথা শুনে পুপুল চেঁচিয়ে উঠল, ‘‘এমনকী’! কী বলতে গেছিলে বলো?’

‘একটু দুষ্টুমিও করতে পারিস।’

মায়ের সঙ্গে সঙ্গে হেসে উঠল পুপুল, বলল, ‘না, সে সব কিছু নয়, আমি কি একটু রূপমের বাড়ি যেতে পারি? তোমাকে তো বলেছি আমি রূপমের কথা।’

‘বেশ তো, যাও। তবে সন্ধে শেষ হওয়ার আগেই চলে এসো।’

পুপুল লাফাতে লাফাতে রূপমের বাড়ি চলল। আজ সে রূপমকে চমকে দেবে। তার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।

রূপম তো আজ পুপুলকে
দেখে অবাক! আজ তো পুপুলদের খেলার দিন নয়।

‘কী গো তুমি আজ? খেলতে যাচ্ছ?’

‘না। আজ আমি তোমার কাছে এসেছি। আজ আমার গো অ্যাজ ইউ লাইক ডে। আমি আজ সারা বিকেল তোমার সঙ্গে থাকব। গল্প করব।’

‘সত্যি!’ আনন্দে রূপম পুপুলকে জড়িয়ে ধরে আর কী!

‘তা ছাড়া তোমাকে নিয়ে আমার একটা প্ল্যান আছে। সেটা শুনলে সত্যিই জড়িয়ে ধরবে আমাকে।’

‘বলো বলো, বলো কী? আমার আর তর সইছে না।’

‘তুমি আমার সঙ্গে বিকেলে মাঠে যাবে খেলতে।’

রূপমের মুখখানা মলিন হয়ে গেল। একটুও আনন্দের ছিটেফোঁটা দেখা গেল না। ধীর গলায় বলল, ‘পুপুল, বন্ধু হয়ে তুমি আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছ? আমি তোমাকে খুব ভালবাসি। আনন্দ না দাও, ব্যথা দিয়ো না।’

‘তোমাকে ব্যথা দেব আমি? তোমাকে আনন্দ দেওয়ার জন্য আমি কত কিছু ভাবি জানো? শোনো তা হলে আমার পরিকল্পনাটা।’

এই বলে পুপুল রূপমের কানে কানে কিছু ক্ষণ কথা বলল। সেই কথা শুনতে শুনতেই রূপমের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। সে বলে উঠল, ‘পুপুল, তুমি যা বলছ, তা কি সম্ভব?’

‘সম্ভব।’

‘তোমার দলের সঙ্গে কথা বলেছ? ওরা মানবে? আমাকে নেবে খেলায়?’

‘মানবেই। তুমি আমাদের দলে খেলছই। সামনের সোমবার বিকেলে রেডি হয়ে থেকো। আমি নিজে তোমাকে সঙ্গে করে মাঠে নিয়ে যাব।’

পরের সোমবার। মাঠে পুপুলদের খেলা জমে উঠেছে। পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে রূপম। তার ঠোঁটে হুইস‌্‌ল আর হাতে খাতাপেন। স্কোর লিখছে সে। এই দলটায় রেফারি ছিল না এত দিন। পুপুল আজ এক জন নতুন খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে, রূপম মিত্র। সে এই দলে রেফারি হয়ে খেলবে, স্কোর লিখবে, আবার সামনের ম্যাচে ধারাবিবরণীও দেবে। তখন মাঠে বেশ ভিড় হয়। এত দিনে রূপমের পরিচালনায় দলটা ডিসিপ্লিন ফিরে পেল। সবাই খুশি। রূপমের ওপরেও, পুপুলের ওপরেও। এত দিন রূপম ছিল পুপুলের খেলার গল্পের সাথী। আজ সে পুপুলের সত্যিকারের খেলার সাথী হল।

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement