কলম কাহিনি

কলমের ইতিহাস অনেক দিনের। ইংরেজিতে ‘পেন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ পেন্না থেকে, যার অর্থ পাখির পালক। এক সময় লেখার জন্য পালক ব্যবহার করা হত। ভারতেও এক সময় ব্যবহার করা হত খাগের কলম, পাখির পালক ইত্যাদি। মিশরীয়রা সম্ভবত কাঠির ডগায় তামার নিবের মতো কিছু একটা পরিয়ে লেখা আরম্ভ করেছিল।

Advertisement

কালীপদ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share:

কলমের ইতিহাস অনেক দিনের। ইংরেজিতে ‘পেন’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ পেন্না থেকে, যার অর্থ পাখির পালক। এক সময় লেখার জন্য পালক ব্যবহার করা হত। ভারতেও এক সময় ব্যবহার করা হত খাগের কলম, পাখির পালক ইত্যাদি। মিশরীয়রা সম্ভবত কাঠির ডগায় তামার নিবের মতো কিছু একটা পরিয়ে লেখা আরম্ভ করেছিল। গ্রিস দেশের লেখনী তৈরি হত হাতির দাঁত বা ওই জাতীয় কিছু দিয়ে। এর নাম ছিল ‘স্টাইলাস’। সে জন্যই কিন্তু এখন লেখার আঙ্গিককে বলা হয় স্টাইল। মধ্যযুগে কাগজ আবিষ্কারের পর পালকের কলমের প্রচলন শুরু হয়। ১৮৮৩ সালে আমেরিকান লুইস ওয়াটারম্যান আবিষ্কার করলেন ফাউন্টেন পেন। এর পর অন্যান্য দেশেও ফাউন্টেন পেন তৈরি শুরু হয়ে যায়। আর এখন আমরা যে বল পয়েন্ট পেন দিয়ে লিখি, সেই বল পয়েন্ট পেন তৈরি হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে। ১৮৯৯ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে জাত ল্যাজলো জোসেফ বিরো পেশায় ছিলেন এক জন সাংবাদিক। সাংবাদিকতার কাজ করতে গিয়েই তিনি ফাউন্টেন পেন ও নানা রকম কালির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করেন এবং শেষ পর্যন্ত বল পয়েন্ট পেন উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। ১৯৩১ সালে সর্বপ্রথম তিনি আন্তর্জাতিক এক মেলায় বল পয়েন্ট কলম-এর প্রদর্শন করেন এবং ১৯৩৮ সালে তিনি তার পেটেন্ট লাভ করেন।

Advertisement

বর্তমান বিশ্বে নানা রং, নানা আঙ্গিকের অনেক সুন্দর দামি দামি কলম ব্যবহার শুরু হয়েছে। এ রকম কয়েকটির কথা জানাব। কেনার কথা হচ্ছে না, জেনেই আনন্দ।

Advertisement

ক্রু সিক্সটিথ হোয়াইট গোল্ড

এই পেনগুলোতে ১৮ ক্যারাট সোনার নিবে রেডিয়াম এবং রুথেনিউম-এর আস্তরণ দেওয়া আছে। পেনগুলো দিয়ে লিখতে গেলে যাতে আঙুলে ব্যথা না হয় সে দিকে লক্ষ রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কলমের কালি কতটা পরিমাণ অবশিষ্ট আছে, তা বাইরে থেকেই দেখা যায়। হাতে তৈরি নেকটাই-এর মতো আকারে দেখতে ক্লিপটিও কলমটিকে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। দাম ৪৩,০০০ ডলার।

গাইয়া হাই লাক্সরি

বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি দুর্লভ কলম। এটি দেখতে যেমন সুন্দর, এর গঠনও তেমনি অতুলনীয়। এই পেনে ১৮ ক্যারাটের সাদা এবং হলুদ সোনা ব্যবহার করা হয়েছে। এই কলমটির বহিরঙ্গের আবরণে ভৌগোলিক বিস্ময়ের বিভিন্ন চিত্র খোদাই করে আঁকা আছে। এতে বড় বড় মাকড়সার ছবি থেকে শুরু করে লতা, পাতা এবং অন্যান্য জন্তু-জানোয়ারদের ছবিও আছে। এই সুন্দর কারুকার্য করা ছবিগুলোই এটিকে অন্যদের থেকে এক পৃথক মাত্রা এনে দিয়েছে। দাম ৪৩,০০০ ডলার।

মার্টে

এই পেনটির ঢাকনায় দু’ক্যারােটর ছোট ছোট হিরে ব্যবহার করে মেরু নির্দেশ করা হয়েছে এবং পেনটিতে কতকগুলো রুবির ব্যবহারও ক্রেতাকে আকর্ষণ করে। এই পেনের সোনার নিবে গ্রিক দেবতা মঙ্গলের চিহ্ন খোদাই করা আছে। এটি সংগ্রহ করতে গেলে ৪৩,০০০ ডলার খরচ করতেই হবে। কারণ, ফাউন্টেন পেন জমানো যাদের শখ তাদের কাছে এর খুব চাহিদা।

ভিসকোন্তি (ফরবিড্ন সিটি)

পেন সংগ্রহকারীদের কাছে এই পেনটি খুবই আকর্ষণীয়। এটি দেখতে কালো রঙের। এই রঙের জন্য ১৮ ক্যারাট সোনা এবং হিরে ব্যবহার করা হয়েছে। এই পেনের বডিতে হারিয়ে যাওয়া শহর এইচ আর এইচ এর ভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এটির মূল্য ৫০,৫০০ ডলার।

ভিসকোন্তি (অ্যালকেমি)

খুব সুন্দর ভাবে হাতের কারুকার্য করা, যা প্রথম দেখাতেই সকলের মন জয় করে। এই লাক্সারি পেনটির বিশেষত্ব হল এটির দু’টি নিব। একটি ১৮ ক্যারাট সোনার ও অন্যটি রুপোর। এই পেনটিতে দু’টি কালির প্রকোষ্ঠ আছে। বাইরের অঙ্গে সোনা ও রুপো দু’টিই ব্যবহার করা হয়েছে। এক দিকের ঢাকনায় সোনার কাজ করা, অন্য দিকে রুপোর। এর মূল্য ৫৭,০০০ ডলার।

ভিসকোন্তি (রিপল্)

ভিসকোন্তি পেনগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে ১৮ ক্যারাট সোনা এবং হিরে। এর নিব তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়েছে ১৮ ক্যারাট সোনা। মূল্য ৫৭,০০০ ডলার। কালির জন্য দুটি প্রকোষ্ঠ আছে। পেনটি সাদা এবং কালো দুটি রঙেই পাওয়া যায়।

ওমাস ফোনিক্স প্লাটিনাম

প্লাটিনাম এবং হলুদ এনামেল ব্যবহার করা হয়েছে। নিব তৈরি করা হয়েছে ১৮ ক্যারাট সোনা দিয়ে। দাম ৬০,০০০ ডলার।

লা মোদের্নিস্তা ডায়মন্ড

নির্মাতা সুইট্জারল্যান্ডের ক্যারন দ্য’আচি কোম্পানি। তারা এই পেনটি ১৯৯৯ সালে বাজারে আনেন। নিবটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে ১৮ ক্যারাটের রোডিয়াম কোটেড গোল্ড, ২০ ক্যারাটের হিরে ও ৯৬টি রুবি।

মিস্ট্রি মাস্টারপিস

এই পেনটি তিন রকমের পাথর বা রত্ন দিয়ে বানানো হয়েছে। উপরিভাগে কারুকার্যের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে রুবি, স্যাফায়ারস, এমারেল্ডস। এগুলো যে বিশেষ পদ্ধতিতে লাগানো হয় তাকে বলা হয় মিস্ট্রি সেটিং। দাম ৭৩,০০০ ডলার।

অরোরা ডায়ামান্টে

এই কলমের নিবটিতে ১৮ ক্যারাটের সোনা ব্যবহার করা হয়। এটি বিশ্বে একমাত্র কলম, যাতে ৩০ ক্যারাটের হিরা ব্যবহার করা হয়েছে। দাম ১,৪৭০,৬০০ ডলার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন