ভদকা

প্রথমেই ঠোক্কর লাগল ভদকার আদি বাস জানতে গিয়ে। এই পানীয় আর রুশ দেশ প্রায় এক নিশ্বাসে বার হয়, ভদকা মানেই রাশিয়া। কিন্তু দেখা গেল, পোল্যান্ডে যেখানে অষ্টম শতাব্দী থেকে ভদকা বানানো চলছে, রাশিয়ায় প্রথম ডিস্টিলারির সন্ধান মেলে অনেক পরে। ক্লাইনভস্কে। ১১৭৪-এ।

Advertisement

পিনাকী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share:

প্রথমেই ঠোক্কর লাগল ভদকার আদি বাস জানতে গিয়ে। এই পানীয় আর রুশ দেশ প্রায় এক নিশ্বাসে বার হয়, ভদকা মানেই রাশিয়া। কিন্তু দেখা গেল, পোল্যান্ডে যেখানে অষ্টম শতাব্দী থেকে ভদকা বানানো চলছে, রাশিয়ায় প্রথম ডিস্টিলারির সন্ধান মেলে অনেক পরে। ক্লাইনভস্কে। ১১৭৪-এ।

Advertisement

প্রথম দিকে এখনকার ভদকাকে পোল্যান্ডে ‘গর্‌জালিকা’ বলা হত। ওষুধ বানানোয় আর প্রসাধন পরিষ্কারে ব্যবহৃত এক কেমিকালকে বলা হত ভদকা। পানীয় হিসেবে ভদকা প্রথম স্বীকৃতি পায় পোল্যান্ডের স্যান্দোমিয়েজ্‌-এর পালাতিনেত-এর সভায়, ১৪০৫ সালে। পোল্যান্ডের ক্রাকোভ অঞ্চলে প্রচুর ভদকা তৈরি করা শুরু হয় আর সেখান থেকে সাইলেশিয়া, মানে এখনকার চেক রিপাবলিক আর জার্মানিতে রপ্তানি হতে থাকে। ১৫৫০ সালে শুধু পোজনানি শহরেই ৪৯৮টা ভাটি থেকে ভদকা তৈরি হত! পরের দুই শতাব্দীতে পোল্যান্ডের ভদকা মধ্য ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তা রাশিয়া পৌঁছয় রিউরিক সাম্রাজ্যের সময়, ‘কিয়েভেন রুস’ বণিকদের সঙ্গে। পোলিশ রাজারা ভদকা তৈরি থেকে কী পরিমাণ শুল্ক আয় হতে পারে আন্দাজ করতে পেরে প্রায় সব ভাটিখানা নিজেদের কুক্ষিগত করে ফেলেন এই সময়েই।

কিন্তু রাশিয়ানরা তাদের সাধের ভদকার ওপর থেকে তাদের মৌরসিপাট্টা ছাড়বে কেন? সেই দেশের লোককথা বলে, ১৪৩০ সালে ইসিদরে নামে এক জ্ঞানপিপাসু সন্ন্যাসী মস্কো ক্রেমলিনের শুদোভ মনাস্ট্রিতে প্রথম এক নতুন পরিশোধন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, আর তা দিয়ে তিনি প্রথম রাশিয়ান ভদকা তৈরি করেছিলেন। প্রথম যুগে তার নাম ছিল ব্রেড ওয়াইন। তাতে অ্যালকোহলের পরিমাণ বেশ কম ছিল। এই পানীয় বহু দিন ধরে শুধু মস্কোর গ্র্যান্ড ডাচিতেই তৈরি হত। অন্য কোনও জায়গায় তৈরি বারণ ছিল। এই নিয়ম চলেছিল শিল্প বিপ্লব পর্যন্ত। তখন ওযুধ বোঝাতেই ‘ভদকা’ শব্দটা ব্যবহার করা হত। ও দিকে ‘কমেতে যাদের পোষায় না’, তাঁদের কথা মাথায় রেখে ব্রেড ওয়াইন আর ভদকার ফর্মুলা মিশিয়ে স্থানীয় ভাটিখানার মালিকরা এক পানীয় তৈরি করতে শুরু করেন। তা ভদকা নামেই বিকোতে থাকে। এই ভদকার উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় ৮ জুন, ১৭৫১ সালে জারি হওয়া সম্রাজ্ঞী এলিজাবেথের এক ডিক্রি থেকে। এর ফলে বিস্তর বিধি-নিষেধ নেমে আসে ভাটিখানার মালিকদের ওপর। ১৮৬০ সালে বিধি-নিষেধ কমে যায় ও ভদকা অনেক সহজে পাওয়া যেতে থাকে। জারদের সময় মোট শুল্কের ৪০% রোজগার হত ভদকা থেকে। ১৯১১ সালে সারা রাশিয়ায় বিক্রি হওয়া পানীয়ের মধ্যে ৮৯% ছিল ভদকা।

Advertisement

রাশিয়ান বিপ্লবের পর বলশেভিকরা সমস্ত ব্যক্তিগত মালিকানার ভাটিখানা রাষ্ট্রের অধীনে নিয়ে আসে। সমস্ত বড় ভাটিখানার মালিকরা রাশিয়া থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়। বর্তমানের নামী ব্র্যান্ড ‘স্মির্‌নফ’ এই ঘটনার জলজ্যান্ত উদাহরণ। এই পরিবার রাশিয়া ছেড়ে ফ্রান্সে এসে থাকতে শুরু করেন, আর এইখান থেকেই নিজেদের পদবি ব্যবহার করে ভদকা তৈরি করতে শুরু করেন। এই রকম বেশ কিছু পরিবার আমেরিকাতেও পাড়ি দেয়। ফলে নামী ব্র্যান্ডের ভদকা রাশিয়ার বাইরে থেকেই তৈরি হতে থাকে।

ভদকার গল্পের নটেগাছ মুড়নোর আগে হঠাৎ চোখে পড়ল, স্তেফান ফালিমিয়েরজ্‌ তাঁর ১৫৩৪ সালে লেখা নথিতে ভদকার গুণাগুণ লেখার সময়ে বলেছিলেন, ভদকা এক যৌন-বলবর্ধক আর উত্তেজক পানীয়! সেই কারণেই কি ভদকা আমাদের প্রিয় জেমস বন্ডের প্রিয় পানীয়?

pinakee.bhattacharya@gmail.com

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement