ছবি: সৌমেন দাস।
পূর্বানুবৃত্তি: ভোররাতে ঘুম ভাঙার পর জ্যোৎস্নাদেবীর মনে পড়ছিল দীপঙ্করের বাবার শেষ হয়ে যাওয়ার ইতিহাস। তাঁকে চা খাওয়ার জন্য ছাদে নিয়ে আসেন দীপঙ্কর। উনি মাকে কয়েক দিন থেকে যেতে বললেও জ্যোৎস্নাদেবী রাজি হন না। এমন সময় উগ্রমূর্তি ধরে ছাদে উঠে আসে পল্লবী। মা-ছেলের সম্পর্কে কাদা ছিটোতেও দ্বিধা করে না। কিন্তু ছেড়ে দেন না জ্যোৎস্নাদেবী। প্রতিবাদ করেন, পল্লবীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন বলেও শাসান। বিদায় নেওয়ার আগে দীপকে তিনি বলে যান, দীপ এবং তার বাবার জন্যই তিনি আবারও ফিরে আসবেন ওদের বাড়িতে। সরকারি দফতরে শিল্পী ভাতার জন্য আবেদন করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় তাঁর আমলের জুনিয়র অভিনেত্রী মোহনার সঙ্গে। সে এখন চায়ের দোকান চালায়। কথাবার্তায় উঠে আসে নানা স্মৃতি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে জ্যোৎস্নাদেবীর মনে পড়ে পালাকার অমর ঘোষের সঙ্গে তাঁর দেখা হওয়ার কথা। তিনি বলেছিলেন, জ্যোৎস্না অনেক দূর যাবেন।
মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে ফোন পেলেন জ্যোৎস্নাদেবী। তাঁকে জানানো হল, সরকার দুঃস্থ যাত্রাশিল্পীদের বার্ষিক ২৫০০০ টাকা ভাতা দিচ্ছে। ওঁকে অফিসে গিয়ে ফর্ম ভরতে হবে, তার পর আধিকারিক অনুমোদন করে দেবেন। জ্যোৎস্নাদেবীকে যাত্রাদর্পণের ফর্মও দেওয়া হবে।
জ্যোৎস্নাদেবী সেদিনই যাবেন জানালেন। তাঁকে দুপুর তিনটের পর সময় দেওয়া হল।
সামান্য রান্না সেরে স্নান করে নিলেন। একটা তাঁতের শাড়ি কোনও অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন, পরে নিলেন।
সাড়ে তিনটেয় পৌঁছলেন দফতরে।
আধিকারিকের ঘরে ঢোকার সময় তাপস দালাল এক বার মেপে নিলেন জ্যোৎস্নাদেবীকে।
তার পর কাউকে একটা ফোন করে বললেন, “দাদা, যাত্রার জ্যোৎস্নাদেবী আমাদের অফিসে এসেছে! বেশ দামি তাঁতের শাড়ি পরে। অফিসার সঙ্গে সঙ্গে ডেকে নিলেন!”
ও পার থেকে উত্তর এল, “তোর কী!”
একটু ঘাবড়ে গেল তাপস। বলল, “দাদা, উনি তো দুঃস্থ নন!”
“অনেক জালি মালকে পয়সা খেয়ে পাইয়ে দিয়েছিস। এ বার একটু পুণ্য হোক। বেশি কাঠিবাজি করতে যাস না, উপরমহল জানতে পারলে তোর বারোটা বাজবে।”
বিমর্ষ হয়ে রইল তাপস।
কাজ সেরে নীচে নামার সময় জ্যোৎস্নাদেবী একটা চমৎকার সুর শুনতে পেলেন। কেউ বাঁশি আর কেদারা নিয়ে বাজাচ্ছে।
নেমে দেখতে পেলেন সূর্যমুখী মুরমকে। সঙ্গে এক জন যুবক, সে-ই বাঁশি আর কেদারা বাজাচ্ছিল।
বললেন, “তুই তো এখন খলনায়িকা হয়ে
স্টেজ মাতাচ্ছিস।”
প্রণাম করল সূর্যমুখী।
“তোদের যাত্রার স্টেজ কিন্তু একেবারে সিনেমার মতো। বাংলায় যাত্রা হারিয়ে গেছে, আর তোরা এগিয়ে চলেছিস।”
“দিদি, আশীর্বাদ করবেন।”
“আমি দেখলাম তো সে দিন, ‘দুলার জিয়ার তাহেনা’। ভালবাসা অটুট থাকুক।”
“কে তোমায় খবর দিলে দিদি?”
“দুর্গাপ্রসাদ হেমব্রম। সেও তো বেশ করে।”
যুবক ছেলেটি বলল, “দিদি, তুমি ডগর টুডুর গান শুনেছ?”
“শুনেছি, মিষ্টি গলা।”
“শালবনিতে যাত্রা হলে আসবে তো!”
“গাড়ি লাগবে যে!”
“তুমি এলে দিব দিদি। এটুকু দিব না!”
যুবকটিও এ বার প্রণাম করল।
“তোদের দেখে মন ভরে গেল।”
দীপঙ্করের আজ বিষ্ণুপুরে এক জনের সঙ্গে দেখা হল। তিনি শরদিন্দু কর। গল্প লেখেন। পেশায় ছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। রাশিয়ায় ছিলেন দু’বছর। দেখেছেন সত্তর দশকের কলকাতা। আবার দেখেছেন রাঁচির বেঙ্গলি ক্লাব, ভাগলপুরের গঙ্গা নদী বিক্রি হওয়া, মাছের অধিকারের বিভাজন। দেখেছেন স্বপনকুমারকে। এক সময় রাজারা চলে যাওয়ার পর কর পরিবার ছিল এখানকার অধিকাংশ জমির মালিক। তাঁর পূর্বপুরুষেরা অম্বুরি তামাকের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তামাক পাতার সঙ্গে শুধু গুড় না মিশিয়ে ফলের রস মিশিয়ে এক অপূর্ব সুগন্ধি নিয়ে এসেছিলেন ওঁর পূর্বপুরুষ।
জনমেজয়ও এলেন।
এ বার শরদিন্দুবাবু বললেন, “আপনাকেই খুঁজছিলাম, জনমেজয়বাবু।”
শরদিন্দুবাবুর হাতে আমন্ত্রণপত্র, রাঁচির বেঙ্গলি ক্লাবের কোনও একটি যাত্রাদলের রাঁচির দুর্গাবাড়িতে যাত্রা করার। ফিরাইলাল চক হয়ে দুর্গাবাড়ি। যাত্রা করার কথায় মন নেচে উঠল জনমেজয়ের।
বললেন, “কোন সময়ে?”
“এই মহালয়ার সময়।”
অষ্টমীর দিন, ‘ম্যাকবেথ’। এটা একটা ভাল রিহার্সাল হয়ে যাবে। তার পর ভাবলেন, না, ওখানে ‘ম্যাকবেথ’ করা যাবে না। নতুন প্রোডাকশন নিজেদের চেনা মঞ্চে করাই ভাল।
“আপনারা করবেন?” শরদিন্দুবাবু বললেন।
“করব। পালার নাম ‘নর-নারায়ণ’। নির্দেশক পানস চৌধুরী।”
শরদিন্দুবাবু বললেন, “তবে বলে দিচ্ছি। যাতায়াতের ভাড়া, থাকা-খাওয়া ছাড়া পনেরো হাজার টাকা।”
অনেকটা কম হচ্ছে। তবু বললেন, “হয়ে যাবে। রাঁচির বেঙ্গলি ক্লাব ডাকছে মানে তো যেতেই হবে।”
জনমেজয় দীপঙ্করকে জিজ্ঞেস করলেন, “স্যর, আপনি যাবেন?”
“যাব, কিন্তু ছেলেকে নিয়ে যাব।”
“স্যর চলুন। আপনি ছেলেকে নিয়ে কোনও হোটেলে থাকবেন, আর খাওয়াদাওয়া আমাদের সঙ্গে করবেন। দেখবেন, এখনও কেমন কাঠের উনুনে রান্না হয়। আমাদের সঙ্গে হালুইকর বামুনও থাকে। হাতা, খুন্তি, কড়াই সব যায় বাসে।”
“আপনাদের সঙ্গেও থাকতে পারি!”
“ছেলে আছে তো, কষ্ট হবে। আমরা কোনও স্কুলবাড়িতে থাকব। মাটিতে ফরাস পাতা থাকবে। সে আপনি একা হলে আমাদের সঙ্গেই রাখতাম। সেও এক অভিজ্ঞতা।”
“ছেলেটাকে ছেড়ে মন যেতে চাইছে না।”
“ঠিক, বৌদি যাবেন না?”
“বলব, তবে যাবে না।”
শরদিন্দুবাবু জিজ্ঞেস করলেন, “আপনাদের দলের নাম কী?”
“বীণাপাণি অপেরা।”
“ঠিক আছে, আমি তা হলে বেঙ্গলি ক্লাবকে জানিয়ে দিচ্ছি।”
বাড়ি গিয়ে দীপঙ্কর পল্লবীকে বললেন, “রাঁচি যাবে, পল্লবী?”
“কেন, আমি কি পাগল, যে রাঁচি যাব!”
“কেন রাঁচি পাগল ছাড়া কেউ যায় না? রাঁচিতে কত ফলস আছে। হুড্রু, জোনাই। আছে
বেঙ্গলি ক্লাব।”
“টাকাপয়সা খরচা করে ক্লাব দেখতে যাব!”
“ওখানে আমন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে বীণাপাণি অপেরা। যাত্রা করবে, নাম ‘নর-নারায়ণ’।”
“তুমি কি ফিমেল চরিত্রে?”
“না, আমি আর দীপ দর্শক।”
পল্লবী বলল, “দীপও যাবে?”
দীপ পাশের ঘর থেকে এসে বলল, “বাবা, আমিও যাব।”
পল্লবী বলল, “যাও তোমরা, আমার এখানে কাজ আছে।”
মনে মনে বলল, ‘মহালয়ায় পিতৃপক্ষের দিন পেরিয়ে দেবীপক্ষের সময় থেকেই শুরু করতে হবে দেবলের উপর চাপ, ফ্ল্যাট দিতে হবে। শেষ লড়াই লড়তে হবে।’
দীপঙ্কর বললেন, “তুমি উল্টোপাল্টা কিছুতে জড়িয়ে পোড়ো না।”
“আমার কথা তোমাদের ভাবতে হবে না।”
দীপঙ্কর ভাবছিলেন সেই ছায়া-ছায়া অতীতের কথা। তখনও বাবা অপেশাদার যাত্রা করতেন, বিশেষ করে পুজোর সময় ষষ্ঠীর দিন। রাত থেকে শুরু হত, পরদিন ভোররাত অবধি। মৃৎশিল্পী সতীশ পাল দুর্গাপ্রতিমা গড়তেন। কী অপূর্ব সেই প্রতিমা! প্রতিমার মাটি আর রঙের গন্ধ থেকে পুজোর গন্ধ উঠে আসত। বাবা মঞ্চে উঠলে মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়তেন দীপঙ্কর। শেষে মা আর যেতেন না। বালক দীপঙ্কর কত রাত জেগে বাবার অভিনয় দেখেছেন! সে সব এখন কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়। অনন্তদা বলে এক জন ছিলেন, প্রম্পট করতেন, অনেক সময় ভুলেও যেতেন। তখনই হত গোলমাল, বিশেষ করে সুখরঞ্জন কাকুকে নিয়ে, কারণ কোনও তরোয়াল যুদ্ধে কিছুতেই মরতে চাইতেন না তিনি। এ দিকে অনন্তদার হাতের স্ক্রিপ্ট হয়তো পাওয়া যাচ্ছে না। চার দিকে হাসির হররা। অবশেষে স্টেজে উঠে জোর করে, এক রকমের চ্যাংদোলা করে নামাতে হত।
এই সময় খুব শুঁয়োপোকা হয়। শরতের শিউলি গাছ শুঁয়োপোকায় ভর্তি হয়ে যায়। এর পর ওদের নবজন্ম হয়, প্রজাপতি হয়ে মুক্তি ঘটে আগেকার কুৎসিত জীবনের। তবে ভাদ্রের শুরুতেই শরৎকাল টের পাওয়া যায় না। ভ্যাদভেদে একটা গরম ভাব থাকে হাওয়ায়, বেশি গরম পড়লে বৃষ্টি নেমে যায়।
মানুষের জীবনে ঠিক উল্টো। যত রংবাহার যৌবনে, তার পর একে একে সব অলঙ্কার খুলে নেন ঈশ্বর। এই সব সাতপাঁচ ভাবছিলেন জ্যোৎস্নাদেবী। আজ বাইশে শ্রাবণ। বাইশে শ্রাবণ যেন বলে, তুমি মৃত্যুশাসিত। মানুষ নশ্বর। তিনি যে-ই হোন। অবিনশ্বর শুধু সময়। মৃত্যুশাসিত এই পৃথিবীতে তিনি এখন প্রবীণা। হাঁটুতে ধীরে ধীরে ভর করছে জড়তা। এই দেহভার অনেক দিন, অনেক বছর বওয়ার পর সে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে।
এক বার চুড়ো দত্তের অভিনয় করেছিলেন উনি। হাসির নাটক ‘রসিক চূড়ামণি’।
চুড়ো দত্তের হাত কেটে গেছে আপিসে। পালকিতে উঠলেন বাড়ি যাবে বলে। স্টেজে পালকি তোলা হল ছয় বেয়ারা সহযোগে। চূড়ামণি দত্ত ব্রিটিশের বশংবদ জমিদার। হাঁকডাকে দেওয়ান চলে এল, এল ঢাকি। একটা-দুটো ঢাক নয়, বারো জন ঢাকি। যাত্রায় ঢাক বাজতে থাকল, যেন মায়ের বোধনের দিন।
সত্যি সত্যি সেদিন ছিল দুর্গাপুজোর বোধন। চুড়ো দত্তের কথায় পালকি ঘরের উঠোনে নামল। তিনি বললেন, “গিন্নি, যমের দুয়ারে চললেম।”
গিন্নি কান্না জুড়ে দিলেন, “আমার কী হবে গো! আমি বেধবা হয়ে যাব গো! আমার সাধের কেশরাশি, জবাকুসুম তেলের কী হবে গো!”
গিন্নির অভিনয় তিনি করেছিলেন। এ বার বাড়ির মেয়েদের ডাকা হল। তিনি অপুত্রক ছিলেন। চন্দন কাঠের খাটে উঠলেন তিনি।
চুড়ো দত্ত বললেন, “ওরে তোরা বাজা, জোরসে বাজা।” ঘরের মহিলাদের দেখে গাইতে লাগলেন, “শালীরা কাঁদিস নে রে কাঁদিস নে...” দোহারকি ধরা হয়ে একই পদ আবার গাওয়া হল, “ওরা তোরা কাঁদিস নে কাঁদিস নে/ আমি যম জিনতে চলেচি রে চলেচি/ আমি যম জিনতে চলেচি রে চলেচি।”
বেঁচে থাকতেই চুড়ো দত্তের শখ মড়াকান্না দেখবেন, ঢাকের বোল শুনবেন, চন্দন কাঠের চিতায় উঠবেন। এ বার ঢাকিদের বললেন, “বিসর্জনের বাজনা বাজাবি তোরা। এই দিলাম নতুন বোল গানের, ‘দুনিয়া জিনিয়া চূড়া যম জিনিতে যায়/ তোরা দেখবি যদি আয়।/ যম জিনিতে যায় রে চূড়া/ যম জিনিতে যায়।”
এ বার স্টেজের একটু বদল হল। স্টেজে শোভাবাজার রাজবাড়ি। রাজা নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুর ছাদে পায়চারি করছিলেন।
চূড়া তাঁকে দেখতে পেয়ে তারস্বরে গাইতে থাকলেন, “রাজা, চূড়া যম জিনিতে যায়, চূড়া যম জিনিতে যায়।”
রাজা নবকৃষ্ণ দেব জানতেন, ওঁর মাথার গোলমাল আছে। তিনি আমল না দিয়ে চলে গেলেন।
তখন চূড়ামণি বিফলমনোরথ হয়ে নামাবলি ফেলে গঙ্গায় নামলেন আর বললেন, “গঙ্গা নারায়ণ ব্রহ্ম। এসো যম, আজ তোমার পরাজয়।”
বলেই চূড়ামণি দত্ত ইহলোক ত্যাগ করলেন।
এ বার শুরু হল আবার মড়াকান্না, “তুমি আমাকে ফেলে কোতায় গেলে গো!”
জলের শব্দ, আলোর কারসাজি আর দমফাটা হাসির নাটক মিলিয়ে সে ছিল সফল প্রযোজনা।
কত, কত দিন আগেকার কথা!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জ্যোৎস্নাদেবী এক বার বললেন, “মরণ রে, তুহুঁ মম শ্যাম সমান...”
২৪
“আপনি ট্রেনে যাচ্ছেন তো স্যর?”
“হ্যাঁ,” বললেন দীপঙ্কর।
“ছুটিটা চমৎকার পড়েছে। শুক্রবার মহালয়া, তার পর শনি, রবিবার। ফিরব রবিবার দুপুরে। মানে সকাল-সকাল বেরোব। রাতে ছেলেকে নিয়ে
আমার বাড়ি থাকলেন। ভোরে এখান থেকে অফিসে চলে যাবেন।”
দীপঙ্কর হেসে বললেন, “বেশ, তা-ই হবে।”
বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে গঙ্গায় গিয়ে পিতৃতর্পণ, মাতৃতর্পণ সারলেন দীপঙ্কর। তার পর ছেলের আর নিজের পোশাকপত্তর গুছিয়ে নিলেন ব্যাগে। পল্লবীই সবটা করে দিয়েছে। ট্রেনে রাতে খাওয়ার জন্য পোলাও আর মাংস রান্না করে দিল।
যাওয়ার সময় চোখ দুটো ছলছল করে উঠল পল্লবীর। দীপঙ্কর বললেন, “যেতেই পারতে! একটা নতুন জায়গা দেখা হত।”
পল্লবী বলল, “না, এখানে আমার একটা বোঝাপড়া আছে।”
দীপ বলল, “মা, আমাদের কেন আর একটা ফ্ল্যাট দরকার। আমাদের বাড়িটা তো সুন্দর।”
“তোর বাবার মতো উচ্চাশাশূন্য হোস না। গাড়িও চাই। তোর বাবা আর তুই দেখে যা শুধু। একে একে সব করব।”
কড়ে আঙুলটা দাঁত দিয়ে কেটে দিল পল্লবী।
পল্লবী সত্যি খুব সুন্দরী। এক বার দেখলেন দীপঙ্কর। সামনে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল দীপঙ্করকে। দীপও মাকে প্রণাম করেছে।
পল্লবী হঠাৎ বলল, “মন থেকে আমায় আশীর্বাদ করো। তুমি সৎ মানুষ, ভাল মানুষ, তোমার আশীর্বাদের মূল্য আছে।”
হাসলেন দীপঙ্কর। কী অদ্ভুত সুন্দর ভাল একটি মেয়ে। অন্তত বিয়ের পর পর তাই ছিল। কত কষ্ট করেছে। পয়সা নষ্ট করত না একটুও।
দীপঙ্কর বললেন, “ঘুম হচ্ছে তো?”
“না। হবে, যখন আমি ফ্ল্যাটটার মালিক হব।”
“ওটা তো এক জনের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া। সে তো তোমাকে ভালবেসে দিচ্ছে না।”
পল্লবী হেসে উঠল, যেন এক উন্মাদিনী।
তার পরেই পল্লবী বলল, “জ্যোৎস্নাদেবীকে, অর্থাৎ তোমার মাকে বোলো, আমি অনুতপ্ত।
ক্ষমা চেয়েছি।”
দীপঙ্কর বললেন, “দেখা হলে তুমিই বোলো।”
পল্লবী হেসে বলল, “আর কি দেখা হবে!”
তার পর আর এক বার দীপকে কাছে ডেকে অঝোরে কাঁদল।
দীপ বলল, “মা, আমি কি বাবার সঙ্গে যাব না, তোমার সঙ্গে থাকব?”
“না, তুই যা দীপ। আমি পরে আবার কখনও রাঁচি যাব।”
ওদের চলে যাওয়ার পথের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে রইল পল্লবী।
ট্রেনে উঠে কিছুক্ষণ পরেই বাবা, ছেলে দু’জনেই বাড়ি থেকে আনা পোলাও-মাংস খেয়ে নিল।
দীপ বলল, “মা কী করছে বাবা?”
“মায়ের জন্য মন খারাপ করছে?”
“একটু একটু।”
“আমরা সোমবার রাতে ফিরে আসব।”
দীপ জানে, মা খুব ভয় করে সাপকে আর কেয়াফুলও ভালবাসে না। কারণ কেয়াফুলের গন্ধে সাপ আসে।
ক্রমশ
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে