দেশলাইয়ের দেশে কালীপুজো

দেখতে দেখত কালীপুজোও শেষ হতে চলল। বহু জায়গায় নানান আঙ্গিকে বিচিত্র সজ্জায় মণ্ডপে মণ্ডপে কালীপ্রতিমা ঝলমলিয়ে উঠল। যদি হাতে-ধরা দেশলাই বাক্সে মা কালীর ছবি দেখা যেত, তা হলে অন্য অনুভূতি হত। এটি কিন্তু কল্পনা নয়। এক সময় অনেক দেশলাই বাক্সে বা মার্কায় এই দেবীর ছবি ছাপা হয়েছে।

Advertisement

উৎপল সান্যাল

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০
Share:

দেখতে দেখত কালীপুজোও শেষ হতে চলল। বহু জায়গায় নানান আঙ্গিকে বিচিত্র সজ্জায় মণ্ডপে মণ্ডপে কালীপ্রতিমা ঝলমলিয়ে উঠল। যদি হাতে-ধরা দেশলাই বাক্সে মা কালীর ছবি দেখা যেত, তা হলে অন্য অনুভূতি হত। এটি কিন্তু কল্পনা নয়। এক সময় অনেক দেশলাই বাক্সে বা মার্কায় এই দেবীর ছবি ছাপা হয়েছে।

Advertisement

স্বাধীনতার অনেক আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমন সুইডেন, জার্মানি, ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া থেকে আবার এশিয়ার জাপান থেকেও দেশলাই আমদানি করা হত, যাতে ফরমায়েশ মতো দেবদেবীর মূর্তি থাকত। তখন কাঠের বাক্সের ওপরে এক দিকে ছবি সাঁটা থাকত। সে সময় কলকাতায় বিক্রি হওয়া সুইডেনে তৈরি দেশলাই বাক্সের প্যাকেট লেবেলে চমৎকার মা কালীর ছবি পাওয়া গেছে। একই ভাবে জাপানের বাক্সেও তা দেখা গেছে, যেখানে কোনও কোম্পানির নাম নেই। মনে করা হয়, ভারতের প্রথম দেশলাই আমদানিকারক সংস্থা হল কলকাতার ‘এ এম এসাভি’, যারা পরবর্তীতে মানিকতলায় এসাভি ম্যাচ ফ্যাক্টরি চালু করে। সুইডেনে ছাপা ছবির মতো একই ছবি ছোট বড় সাইজে ওই কোম্পানির বাক্সে পেয়েছি। তফাত হল, এখানে ‘স্বদেশি দেয়াশলাই’ লেখা ছিল। ক্যালকাটা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজের বাক্সে অন্য ছবি পাওয়া গেছে।

আবার ‘আব্বাসভয় মহম্মদালি’-র বাজারজাত মার্কায় মা কালীর অন্য ধরনের ছবি আছে। ‘তারা মা’ লেখা দুটি বিরল মার্কা পাওয়া গেছে ‘কে এম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি’র বাক্সে। অন্যান্য লেবেলেও দেবী বা হিন্দু দেবী হিসেবে মা কালী আছেন। সে সময় কালীপুজোর সময় চলতি কথায় ‘লাল-নীল দেশলাই’ খুব বিক্রি হত, যাকে ‘বেঙ্গল ম্যাচেস’ বলা হয়। অত্যন্ত দুষ্প্রাপ্য কালী মার্কা বেঙ্গল ম্যাচে লেখা আছে যে সেটি ব্রিটিশ এম্পায়ারে তৈরি এবং ‘বেটার দ্যান জার্মান গুডস’। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এক সময় জার্মানিতে তৈরি দেশলাই সহ প্রচুর সামগ্রী কলকাতায় সস্তায় বিক্রি হত, এখনকার চিনে জিনিসের মতো। দেশলাই বাক্সে সেই ইতিহাস ধরা পড়েছে।

Advertisement

শিবকালীর শিবকে নিয়েও অনেক দেশলাই বেরিয়েছে। বহু পুরনো মার্কায় দেখা যায়, বাংলাতে ‘জাপানে তৈয়ারি’ ‘মহাদেব দেশলাই’ লেখা আছে কলকাতার ‘এফ পি নাল্লাদারো কোম্পানি’র জন্য। আবার আর একটি জাপানি বাক্সে শিবের ছবি পাওয়া যায়, যেটি বম্বের টাটা অ্যান্ড সন্সের জন্য তৈরি হয়েছিল।

কালীপুজো ভাবলেই দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি আর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের সাধনার কথা মনে পড়বেই। কিছু বছর আগে দক্ষিণ ভারতের একটা কারখানার কার্ডবোর্ডের বাক্সে তিনি ‘ঠাকুরবাবা’ নামে উপস্থিত আছেন। পুজোর অপরিহার্য অঙ্গ হল জবাফুল। বেশ কিছু বাক্সে লাল জবা ফুলের ছবি আছে, এমনকী এখন উঠে যাওয়া টাকির একটি কারখানায় রাঙাজবা ছাপা হয়েছে। অন্যান্য পুজো উপকরণ হিসেবে ধূপ-দীপ, মঙ্গলঘট— সবই পেয়েছি বাক্সে।

কালীপুজোয়, আর সেই সঙ্গে সারা ভারতের দিওয়ালিতে সর্বত্র বাজি পোড়ানো হয়। অনেক বাজি, যেমন তুবড়ি, ফুলঝুরি, রংমশাল, রকেট, চরকি, লাল সবুজ দেশলাই ইত্যাদির ছবিওয়ালা দেশলাই পাওয়া গেছে। এক সময় বাড়িঘর আলোকিত করার জন্য প্রদীপ জ্বালানো হত। ‘প্রদীপ/দীপ’ লেখা বহু বাক্সে পাওয়া গেছে, একটা বাক্সে ‘Diwali’ লেখা আছে। কিছু বছর আগে আলোকসজ্জায় টুনি বাল্‌ব জনপ্রিয় হয়েছিল, সেই নিয়েও একটি দেশলাইবাক্স দেখা গেছিল।

সব মিলিয়ে বলা যায়, দেশলাইয়ের দেশে খুব ঘটা করেই কালীপুজো করা হয়েছে, নয় কি?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement